বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চোরাই ফোন কেনার জেরে হত্যার শিকার কবি নজরুলের ছাত্র পিয়াস

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪ | প্রিন্ট

চোরাই ফোন কেনার জেরে হত্যার শিকার কবি নজরুলের ছাত্র পিয়াস

চোরাই মোবাইল ফোন কেনা-বেচার ব্যবসা করতো আমির উদ্দিন আহমেদ অনিক। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি অনিকের কাছ থেকে কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী পিয়াস ইকবাল নূরের বন্ধু মাহির ৪৩০০ টাকা বাকিতে ১টি চোরাই বাটন মোবাইল ফোন কেনে।

কেনা মোবাইলের টাকা ২৫ ফেব্রুয়ারি পরিশোধ করার কথা থাকলেও মাহির আর্থিক সমস্যার কারণে তা পরিশোধ করতে পারেনি। যথাসময়ে টাকা পরিশোধ না করায় বিক্রেতা অনিক তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে। গত ৭ মার্চ রাতে অনিকসহ কয়েকজন মাহিরের বাসায় যায়। না পেয়ে মাহিরের মায়ের সঙ্গে অশোভন আচরণ করে। ওই রাতেই বিষয়টি জানতে পেরে মাহির তার বন্ধু পিয়াস ও শামীমকে জানায়।

এটা নিয়ে মধ্যস্থতা করতে গিয়ে কথাবার্তার মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। ক্ষিপ্ত হয়ে পিয়াস ও শামীমকে কুপিয়ে পালিয়ে যায় অনিকসহ অন্যরা। পরবর্তীতে স্থানীয়দের সহযোগিতায় হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক পিয়াসকে মৃত ঘোষণা করেন।

বহুল আলোচিত রাজধানীর উত্তর মুগদায় কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী পিয়াস ইকবাল নূরকে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় জড়িত অন্যতম প্রধান ৩ আসামিকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামতসহ রাজধানীর মুগদা ও মানিকগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছে র‍্যাব।

সোমবার (১১ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ৭ মার্চ ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর উত্তর মুগদা এলাকায় ১টি পুরাতন মোবাইল ফোন বিক্রির টাকা পরিশোধের দ্বন্দ্বে কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী পিয়াস ইকবাল নূর এবং শামীম হোসেনকে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাত করা হয়।

পরে স্থানীয় লোকজন তাদেরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পিয়াসকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার পরদিন নিহত পিয়াসের পিতা বাদী হয়ে মুগদা থানায় ৬ জনকে আসামি করে এবং কয়েকজন অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। গত রাতে র‍্যাব-৩ এর একটি দল রাজধানীর মুগদা এবং মানিকগঞ্জের হরিরামপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত অন্যতম প্রধান তিন আসামি খালিদ হাসান (১৮), আরিফ হোসেন (২১) এবং মেহেদী হাসান মিরাজকে (২০) গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, হত্যা মামলার প্রধান আসামি আমির উদ্দিন আহমেদ অনিক চোরাই মোবাইল ফোন কেনা-বেচার ব্যবসা করতো। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি অনিকের কাছ থেকে নিহত পিয়াসের বন্ধু মাহির ৪৩০০ টাকা বাকিতে ১টি চোরাই মোবাইল ফোন কেনে। যথাসময়ে টাকা পরিশোধ না করায় অনিক তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে।

গত ৭ মার্চ সন্ধ্যায় অনিক খালিদ, আরিফ, মিরাজ ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্য আসামি অর্নব এবং রাব্বীকে নিয়ে মোবাইল বিক্রির বাকি টাকা আদায়ের জন্য মাহিরের বাসায় যায়। তারা মাহিরকে বাসায় না পেয়ে মাহিরের মায়ের কাছে মোবাইল বিক্রির পাওনা টাকা দাবি করে এবং অশোভনীয় আচরণ করে। সেখানে মাহিরের মা একদিন পর টাকা পরিশোধ করে দেবে বলে তাদের জানিয়ে দেয়। টাকা পরিশোধের আশ্বাস পেয়ে তারা মাহিরের বাসা থেকে চলে যায়। পুরো বিষয়টি মাহির তার বন্ধু ভিকটিম পিয়াস ও শামীমকে জানায়।

জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, ভুক্তভোগী পিয়াস ও শামীম মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য ঘটনার দিন সন্ধ্যায় অনিকের সঙ্গে উত্তর মুগদা এলাকায় অনিকের আড্ডার পয়েন্টে দেখা করে। এসময় অনিক, পিয়াস এবং শামীমকে তুই তুকারি সম্বোধন করে। পরে একইদিন রাত ১০টা ৩০ মিনিটে পিয়াস অনিককে ফোন দিয়ে লিটল এঞ্জেল স্কুলের গলিতে পুনরায় আসতে বলে। অনিক সেখানে পোঁছালে পিয়াস এবং শামীম অনিকের কাছে কেন সে তাদের তুই তুকারি সম্বোধন করেছিল তার ব্যাখ্যা চায়।

আগে থেকেই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, গ্রুপিং এবং সিনিয়র জুনিয়র দ্বন্দ্ব থাকায় তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এসময় তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। অনিক ভিকটিম পিয়াস ও শামীমকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য গ্রেপ্তার অন্যদের ফোন করে সেখানে আসতে বলে। অনিকের ফোন পেয়ে অনিকের বন্ধু গ্রেপ্তার খালিদ, আরিফ, মিরাজসহ মামলার অপর আসামি অর্নব মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং গ্রেপ্তার খালিদ পার্শ্ববর্তী একটি গ্যারেজ থেকে বেসবল খেলার স্টিক নিয়ে আসে। এসময় তারা বেসবল খেলার স্টিক ও লাঠি দিয়ে পিয়াস ও শামীমকে নৃশংসভাবে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে।

একপর্যায়ে মামলার অপর আসামি রাব্বী পার্শ্ববর্তী একটি দোকান থেকে আচমকা জোরপূর্বক একটি নতুন ধারালো ছুরি নিয়ে ভিকটিম পিয়াসের পিঠের ডান পাশে এবং শামীমের ডান কাঁধে আঘাত করলে তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পিয়াস এবং শামীমের চিৎকারে লোকজন জড়ো হলে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পিয়াসের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে জড়িতরা আত্মগোপন চলে যায়।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে খালিদ স্থানীয় একটি স্কুল থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে। পরবর্তীতে সে তার বাবার সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের কাজে সহযোগিতা করতো। সে উত্তর মুগদা এলাকায় ‘গ্যাং স্টার রাব্বী’ গ্রুপের সদস্য হিসেবে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, অলিগলিতে মাদক ব্যবসা, মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। সে আগে রাজধানীর মুগদা থানায় সড়ক পরিবহন আইন মামলায় ১ মাস কারাভোগ করে জামিনে বের হয় বলে জানায়। এছাড়াও সে রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় মাদক সংক্রান্ত মামলায় ১৫ দিন কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।

গ্রেপ্তার মিরাজ স্থানীয় একটি স্কুলে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে। সে মামলার আসামি রাব্বীর অন্যতম সহযোগী এবং ‘গ্যাং স্টার রাব্বী’ গ্রুপের সদস্য হিসেবে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে জানা যায়। হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেপ্তার এড়াতে মানিকগঞ্জ এলাকায় আত্মগোপন করেছিল মিরাজ।

গ্রেপ্তার আরিফ এইচএসসি পাশ করে স্থানীয় এলাকায় একটি ইন্টারনেট অফিসে কাজ করতো। সে অনিকের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করতো। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৮:১৮ | সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com