বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বঞ্চনার ক্ষোভ থেকেই এ সিদ্ধান্ত

  |   শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট

বঞ্চনার ক্ষোভ থেকেই এ সিদ্ধান্ত

 
earshed

ঢাকা: হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি। ক্ষমতাসীন মহাজোটে ছিলেন। এখন নেই। নানা দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগে মহাজোট ছাড়লেও আওয়ামী লীগের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যোগ দিয়ে চমকে দেন সবাইকে। সে সরকারে তার সাত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপদেষ্টা ছিল। কিন্তু গত মঙ্গলবার হঠাৎ করেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেন। পরের দিন মন্ত্রিসভা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত জানালেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দলের পাঁচ মন্ত্রী তার কাছে পদত্যাগপত্রও দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি দেশে এলেই তারা সরাসরি তার কাছে পদত্যাগপত্র দিবেন।

শেষ সময়ে এরশাদ কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন। এর পেছনে তার বারবার সিদ্ধান্ত পাল্টানো ‘বাতিক’ আছে বলে অনেকে হাস্যরস করলেও প্রকৃতপক্ষে অনেক দিনের বঞ্চনার ক্ষোভ তাকে এ সিদ্ধান্তের দিকে যে তাড়িত করেছে তা কেউ বলছে না। নির্বাচন বর্জন ও মন্ত্রিসভা থেকে সরে আসার ঘোষণার পর অবরুদ্ধ এরশাদ সেই বঞ্চনা ও ‘ব্যবহৃত’ হওয়ার ফিরিস্তি তুলে ধরে তার নিরূপায় অবস্থার কথা জানালেন। সিদ্ধান্ত পাল্টালে মৃত্যুভয়ও করছেন তিনি।
বৃহস্পতিবারও বারিধারায় তার বাসভবন প্রেসিডেন্ট পার্কের সামনে বিপুল সংখ্যক র‌্যাব-পুলিশ। রাত দিন সংবাদকর্মীদের আনাগোনা। সেই ফাঁকে রাতে একান্তে কিছু  কথা বলেন এরশাদ। তার এই একান্ত সাক্ষাৎকারটি স্বাধীনদেশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল :

প্রশ্ন : আপনার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত কী? সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা আছে কি?
এরশাদ: আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেখান থেকে সরে যাওয়ার কোনো পথ নেই। আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এর বাইরে গেলে মরণ।

আমি এই মত পরিবর্তন করতে পারবো না। তাহলে দেশের মানুষ আমাকে ক্ষমা করবে না। শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয় সারা বিশ্বের মানুষ আমার এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে আছে। তারা আমাকে ছেড়ে যাবে না। তাদের জীবনের চেয়েও বেশি আমাকে ভালোবাসে। ইদানীং দেশের যে পরিস্থিতি তাতে রাজনীতি করতে আর ভালো লাগে না। কিন্তু নেতাকর্মীদের ছেড়ে কোথায় যাবো।
প্রশ্ন : আপনি তো দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলেন, সরকারে ছিলেন আবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেও যোগ দিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা কেন?
এরশাদ: আমার প্রতি সুবিচার করা হয়নি। ১৯৯৬ সালে সমর্থন দিয়েছি। তারা ক্ষমতায় এসেছে। আমার সর্মথন নিলে এবারো ক্ষমতায় আসতো। কিন্তু বিনিময়ে আমি কিছুই পাইনি। আমি যা পেয়েছি তা হলো- আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে আমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আমার ওপর মামলা দেয়া হয়েছে। পাঁচ কোটি টাকার মানহানি মামলা করা হয়েছে। মামলাগুলোর একটাও উইথড্রো করেনি।
এবার ১৪ দলের সমাবেশে আমি উঠলাম। পরে মাহজোটে অংশগ্রহণ করলাম। দেশের মানুষ উচ্ছ্বাসভরে আমাকে স্বাগত জানিয়েছিল। নির্বাচন হয়েছে। মহাজোট জয়লাভও করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমি ৪৮টি সিট চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে ৩৬টি আসন দেয়া হয়েছিল। আমাকে ৪৮টি আসন দিলে ৪৮টিতেই জয়লাভ করতাম। বারবার আওয়ামী লীগের কাছে আমি বঞ্চিত হয়েছি। ১৯৯৫ সালে মঞ্জুহত্যা মামলা ১৪ বছর নয় মাস পর আবার চালু করা হয়েছে। শেষ হয়নি। শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে ২২ জানুয়ারি। যা দুই দিনেই শেষ করা সম্ভব। ইচ্ছাকৃতভাবেই আওয়ামী লীগ মামলা দিয়ে আমাকে নিয়ে খেলা করার চেষ্টা করছে। আমি কোর্টে গেলাম হাজিরা দিতে। কিন্তু এক মহিলা জাজ আমার গাড়ি বের করে দিয়ে তার গাড়ি রাখলেন। ওই মহিলা আমার সঙ্গে কোনো কথা না বলেই ২২ জানুয়ারি মঞ্জুহত্যা মামলার শুনানির দিন ধার্য করলেন। মোদ্দা কথা, ওরা আমাকে গ্রহণ করতে পারেনি। গত কয়েকদিন আগে বলেছিলাম, জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচনে যাবে। কারো ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হবো না। কিন্তু আওয়ামী লীগ মনে করতেই পারে না, আমি আছি, জাতীয় পার্টি আছে, জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব আছে। তারা ভুলে গেলেন সবকিছু। আমি সবদিক দিয়েই বঞ্চিত হয়েছি।

গত কয়েকদিন আগেও আমি মহাজোটে ছিলাম। আমি চেষ্টা করেছিলাম মহাজোটে থাকার। কিন্তু তারা আমাকে গ্রহণ করেনি।

প্রশ্ন : তাহলে তাদের মন্ত্রিসভায় যোগ দিলেন কেন?
এরশাদ: মহাজোট ছাড়ার পরেও মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। কিন্তু তারা সেই নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি। সর্বদলীয় সরকারের নামে একদলীয় সরকার হয়েছে। বর্তমানে দেশে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট বন্ধ। মানুষ শান্তিতে নাই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। রাজনৈতিক সহিংসতায় মানুষকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। এসবই ক্ষমতার লোভে।
প্রশ্ন : আপনি আওয়ামী লীগে থেকে নির্বাচনে অংশ নিলে তারা কতোটুকু সুবিধা পেত বলে মনে করেন?
এরশাদ: মহাজোটে থাকলে ইসলামি সমমনা দলগুলোর ভোট পেতাম। মহাজোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাত করতো। আমি নির্বাচনে গেলাম কিন্তু সব দল অংশগ্রহণ করলো না তাতে দেশের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হবে, মানুষ কষ্ট পাবে। শান্তি ফিরে আসবে না। তাই আমি একতরফা নির্বাচন চাই না। এ অবস্থায় একটি দেশ চলতে পারে না।
প্রশ্ন : নির্বাচন হলেই কি দেশে শান্তি ফিরে আসবে?
এরশাদ: বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলেও আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থেকে হরতাল অবরোধ দিয়ে রাজনৈতিক সহিংসতা সৃষ্টি করবে, দেশে শান্তি ফিরে আসবে না। এখন চাই নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন। এ পরিবর্তনের বাইরে কোনো কিছু ভাবার সুযোগ নাই।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৫:৩০ | শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com