বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘আমরা আর দুই নেত্রীর ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার শিকার হতে চাই না’

  |   মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট

‘আমরা আর দুই নেত্রীর ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার শিকার হতে চাই না’

mahfuz
 

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় অবর্ণনীয় দুর্দশার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম তার পত্রিকায় এক মতামত বিশ্লেষণে এই কথা বলেছেন।
‘আর আওয়ার লিডার অ্যাট ওয়্যার অ্যাগেইন্সট সিটিজেন’ শিরোনামে এই বিশ্লেষণে মাহফুজ আনাম লিখেছেন “যুদ্ধের সময় শত্রু পক্ষ শুধু তাদের বিরোধী সৈন্য কিংবা অস্ত্রই ধ্বংস করে না, সাধারণ মানুষকে দুর্দশায় ফেলতে একে অপরের শিল্পকারখানা, কৃষি, রাস্তাঘাট, সেতু, খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায়ও হামলা চালায়।আমাদের দুই নেত্রী কোনো সমঝোতায় যেতে যেভাবে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন তাতে এর প্রভাব পড়ছে শিল্প, কৃষিপণ্য, নিম্নবিত্তের আয় এবং খাদ্য সরবরাহসহ বিভিন্ন খাতে। এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে এখন প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক যে, তারা কি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন না ? তাদের কি এটাই ইচ্ছা যে, তাদের এই ধরণের নেতৃত্বের জন্য বাংলাদেশের সম্ভাবনা খাতগুলো ধ্বংস হয়ে যাক ? তাদের কি এটাই ইচ্ছা যে , আমরা সেই ‘ঝুড়ি তত্ত্বে’ ফিরে যাই ?”
সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রসঙ্গে বলা হয়, “তাই যদি না হবে, তো কেন তারা দেশকে এই রকম একটি ধ্বংসাত্মক পথের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন ? কেন তারা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়ে তাদের ভবিষ্যত প্রশ্নের মুখে ফেলছেন? দিনের পর দিন কিভাবে তারা হরতাল এবং অবরোধের মাধ্যমে মানুষকে দারিদ্রসীমার নিচে নিয়ে যাচ্ছেন ? কিভাবে তারা জেনে বুঝে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যেখানে তৈরি পোশাক শিল্পের ক্রেতারা অন্য দেশের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছেন? কেন তারা গণপরিবহনে আগুন লাগিয়ে সাধারণ যাত্রীদের পুড়িয়ে মারছেন? কিভাবে তারা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এবং বেসরকারি সম্পদ ধ্বংস করছেন?”
বাংলাদেশে বর্তমান সহিংসতার চিত্র অতীতকে ছাড়িয়ে গেছে। চলন্ত বাসে পেট্রল বোমা ছুঁড়ে মারার উদ্দেশ্য একটাই- মানুষ হত্যা। রাজনৈতিক সহিংসতায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৭৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত চার হাজার ৬০০। হতাহতের কারণ একটাই, রাজনৈতিক সহিংসতা। এখন প্রশ্ন হলো, দুই নেত্রীর সমঝোতা না হওয়ায় একজন সাধারণ মানুষ কেন প্রাণ হারাবেন?”
দুই নেত্রীর মতবিরোধের কারণ কি? শেখ হাসিনা চাচ্ছেন বর্তমান সংবিধান মানতে। খালেদা জিয়া চান আগের সংবিধানে ফেরত যেতে। কিন্তু হঠাৎ শেখ হাসিনার বর্তমান সংবিধানকে এত ভালোবাসার কারণ কি ? কারণ, তিনি ২০১১ সালে কারো সঙ্গে আলোচনা না করেই সংবিধান সংশোধন করেন। কিন্তু কেন তত্ত্বাবধায় সরকার এত গুরুত্বপূর্ণ ? ইতিহাস বলছে, অতীত নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় প্রভাব খাটানো হয়েছে। তত্ত্বাবধায় সরকার ব্যবস্থা জনপ্রিয় করেছেন শেখ হাসিনা এবং তার দল। খালেদা জিয়া তখন এর বিরোধিতা করেন। পরে আওয়ামী লীগের চাপেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রবর্তন করা হয়।
কিন্তু আজকে পরিস্থিতি পুরো পাল্টে গেছে। তখন যারা তত্ত্বাবধায়ক চায়নি তারা এখন চাইছে। আবার যারা ওই সময় তত্ত্বাবধায়কের দাবি করেছিল তারাই এখন তা বিরোধিতা করছে। আর আমরা সাধারণ মানুষ প্রাণ দিচ্ছি। কারণ, দুই দল এই বিষয়ে একমত হতে পারছে না। শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া যা করছেন তাতে কোনো নীতি, আদর্শ কিংবা নৈতিকতার বিষয় নেই। এটা পরিষ্কার তারা যা করছেন সেটা শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্য।”
একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এবং দেশের একজন গর্বিত নাগরিক হিসেবে এটা আমার কাছে অত্যন্ত লজ্জার বিষয় যে বর্তমান সমস্যার সমাধানে জাতিসংঘ প্রতিনিধিকে আসতে হয়েছে। একজন বিদেশী আমাদের শেখাবেন কিভাবে পারস্পারিক সভ্য আচরণ করতে হয়। এমনকি তাই যদি হয়, তবুও যদি আমরা শিখতে পারি তাহলেও আমরা কৃতজ্ঞ হই।
আমরা আর দুই নেত্রীর ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার শিকার হতে চাই না।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৮:৫৫ | মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০১৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com