শনিবার ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

স্মরণঃ আজ শহীদ বীর রহিম উল্লাহ্’র ১৫৯ তম শাহাদাৎ দিবস -মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম মাসুম

  |   বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট

স্মরণঃ  আজ শহীদ বীর রহিম উল্লাহ্’র ১৫৯ তম শাহাদাৎ দিবস -মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম মাসুম

আজ ২৬ নভেম্বর। ইংরেজ বিরোধী লড়াকু সৈনিক কৃষক নেতা বীর যোদ্ধা শহীদ রহিম উল্লাহ্’র ১৫৯ তম শাহাদাৎ দিবস। আজ থেকে প্রায় ১৬০ বছর পূর্বে ১৮৬১ সালের ২৬ নভেম্বর ভোরে তৎকালীন কুখ্যাত ইংরেজ জমিদার রবার্ট মোরেল বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদাৎ বরণ করেন ইংরেজ বিরোধী লড়াকু সৈনিক কৃষক নেতা বীর যোদ্ধা শহীদ রহিম উল্লাহ্।
১৮৪৯ সালে সুন্দরবন অঞ্চলে (আজকের বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ) আবাস গড়ে তোলেন ইংরেজ জমিদার নীলকর রবার্ট মোরেল পরিবার। তারা তৈরি করে আস্তাবল, পিলখানা, নাচঘর, গুদামঘর, কাছাড়ী বাড়ি, লাঠিয়াল বাহিনীর ব্যারাকসহ প্রজা নির্যাতন কক্ষ সম্বলিত বিশাল কুঠিবাড়ি (যা আজও অত্যাচরা ও নির্যাতনের নির্মম স্বাক্ষী হিসেবে দাড়িয়ে আছে) এলাকায় আবাদি জমি বাড়াতে সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালায় মোরেল পরিবার।ইংরেজ জমিদার নীলকর মোরেল পরিবারের অত্যাচার নির্যাতনের যাতা কলে যখন সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত তখন ক্ষনজন্মা পুরুষ রহিম উল্লাহ ইংরেজি শিক্ষার জন্য অবস্থান করছিলেন কোলকাতায়। কোলকাতায় বসেই রহিম উল্ল¬াহ খবর রাখলেন নিজ মাতৃভূমির কৃষকের রক্তে ভেজা সম্পদ লুট করে নিচ্ছে ইংরেজ জমিদার। ইংরেজদের স্টীম রোলারের যাতাকলে পড়ে বাংলার কৃষকের আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের ঘটনায় বিপ্ল¬বের ছোয়া লেগে যায় রহিম উল্লাহর হৃদয় পটে। স্থির থাকতে পারলেননা দেশপ্রেমিক রহিম উল্লাহ ।
সহপাঠি ও সাথী সাগর দাড়ীর মধুসুদন দত্ত¡ আর সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিম চন্দ্রের কথাকে উপেক্ষা করে ইংরেজি শিক্ষার উচ্চাকাঙ্খাকে দুরে ঠেলে দিয়ে ছুটে এলেন নিজ মাতৃভূমি মোরেলগঞ্জে। ৮ ভাইকে নিয়ে গড়ে তুলে¬ন সুরক্ষিত মাটির কেল্ল¬া। সঙ্গী সাথীদের নিয়ে ১৪’শ বিঘা জমি আবাদ করে বহু লোকের বসবাসের ব্যবস্থা করলেন রহিম উল্লাহ। গঠন করলেন মাতৃ ভূমি রক্ষার দৃপ্ত শপথে বলিয়ান “রহিম বাহিনী”। আর এ রহিম বাহিনীর হাতে নাস্তানাবুদ হয়ে বারবার পিছু হঠে নীল কর ইংরেজ মোরেল বাহিনী।
রহিম উল্লাহকে ম্যানেজ করার শত চেস্টা করে ব্যর্থ হয়ে কৌশলের আশ্রয় নেয় অত্যাচরি ইংরেজ বাহিনী। আর এ কৌশলের অংশ হিসেবে ১৮৬১ সালের ১৯ নভেম্বর রহিম উল্লাহর নিজ এলাকা বারইখালী দখল করতে যায় ইংরেজ মোরেলের লাঠিয়াল বাহিনী। প্রাতিরোধ গড়ে তোলেন রহিম উল্লাহ। রহিম বাহিনীর হাতে মার খেয়ে চরমভাবে পরাজিত হয় মোরেল বাহিনী। নিহত হয় তাদের প্রধান সেনাপতি রামধনসহ ৭/৮ জন লাঠিয়াল। আত্মসমর্পন করে মুচলেকা দিয়ে সে যাত্রা রক্ষা পেল রবার্ট মোরেলের লাঠিয়াল বাহিনীর অন্যরা। কিন্তু দাসখত দেয়ার ৪ দিনের ব্যাবধানে ২৫ নভেম্বর গভীর রাতে রহিম উল্লাহর মাটির কেল্লায় অতর্কিত আক্রমন চালায় মোরেল বাহিনী। চারদিক থেকে শতাধিক রাইফেল একযোগে বৃষ্টির মত গুলি ছুড়তে থাকে রহিম উল্লাহর মাটির কেল্লার ওপর। মোটেই ঘাবড়ালেন না সিংহ পুরুষ রহিম উল্লাহ কাঠ দিয়ে নিজের তৈরী ২ টি গাঁদা বন্দুক নিয়ে একাই শুরু করলেন প্রতিরোধ (বন্দুক) যুদ্ধ। এ বন্দুক যুদ্ধে সহযোগিতা করলেন তার ২ স্ত্রী। এক সময় তার গাঁদা বন্দুকের গুলি ফুরিয়ে গেল। এ পর্যায় স্ত্রীদের পায়ের খড়ু, গলার হাঁসুলি এবং হাতের চুড়ি কেটে কেটে তা দিয়ে গুলির বিকল্প বানিয়ে যুদ্ধ অব্যাহত রাখলেন সিংহ পুরুষ রহিম উল্লাহ । রাত ভোর হতে রনে ভঙ্গ দিয়ে নিরব হয়ে গেল ইংরেজ বাহিনী।
যুদ্ধ থেমে গেছে এমনটিই মনে হল সবার। চারিদিক থেকে গ্রাম বাসীরা ছুটলো রহিম উল্লাহর মাটির কেল্লার দিকে। রাত ভোর হয়েছে প্রায়। সূর্য ওঠার পালা। ফজরের আজান হচ্ছিল। নিজেকে বিপদমুক্ত ভেবে কেল্ল¬ার গেটের বাইরে বের হলেন কৃষক নেতা রহিম উল্লাহ। গর্জে উঠল মোরেল বাহিনীর রাইফেল। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন কৃষক নেতা লড়াকু সৈনিক সিংহ পুরুষ রহিম উল্লাহ্’। যশোরের ইতিহাস ও খুলনা জেলার ইতিহাস নামে ২টি বইয়ে লড়াকু ওই কৃষক নেতার বিষয়ে কিছু উদ্বৃতি রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ ১’শ ৬০ বছরেও রচিত হয়নি বৃটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শাহাদাৎ বরনকারী কৃষক নেতা বীর রহিম উল্লাহ্’র বিষয়ে কোন অনুসন্ধ্যানী ইতহাস । কুখ্যাত ইংরেজ জমিদার রবার্ট মোরেল বাহিনীর অত্যাচার নির্যাতনের স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে আজও স্বগৌরবে দাড়িয়ে আছে তাদের নির্মিত কুঠিবাড়ি ও স্মৃতি স্তম্ভ কিন্তু শহীদ রহিম উল্লাহর স্মৃতিকে ধরে রাখতে গ্রহন করা হয়নি কোন উদ্যোগ। এমনকি তার স্মৃতি বিজড়িত বারইখালীর বসতভিটাটিও আজ নিশ্চিহ্নের পথে। অথচ এ শহীদ বীর রহিম উল্লাহ্’ই বৃটিশ অত্যাচারিদের বিরুদ্ধ যুদ্ধ করতে গিয়ে এ দেশের প্রথম শহিদ কৃষক নেতা বলে কথিত রয়েছে।

লেখক :
মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম মাসুম,(সাংবাদিক)।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৩:৫১ | বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com