রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঈদে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর রংপুরের বিনোদন কেন্দ্রগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ১২ এপ্রিল ২০২৪ | প্রিন্ট

ঈদে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর রংপুরের বিনোদন কেন্দ্রগুলো

সকাল থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে। চৈত্রসংক্রান্তিতেও রৌদ্রময় নীলাকাশ। বৈশাখের শুভাগমনে নেই ঝড়ের আভাস। রোদেলা দুপুরেও সহনীয় তাপমাত্রা। এমন ঝলমলে পরিবেশে ঈদ আনন্দে মেতেছে শিশু-কিশোররা। বাদ পড়েনি তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সবাই ঘুরছেন বিনোদন কেন্দ্রজুড়ে। ঈদের প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনও কাটছে হইচই আর আনন্দমুখর পরিবেশে।

শুক্রবার  সকাল থেকেই রংপুরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, বিনোদন কেন্দ্র ও পার্কগুলোতে শিশু-কিশোরদের চোখে পড়ার মতো উপস্থিতি দেখা গেছে। ওদের অনেকেই ঘুরছে বাবা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানির হাত ধরে। সববয়সী মানুষের সরব উপস্থিতিতে বিনোদন কেন্দ্রগুলো এখন লোকে লোকারণ্য। দু-একটিতে বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ থাকলেও বাকি বিনোদন কেন্দ্র ও পার্কে গুনতে হচ্ছে দর্শনীর বিনিময়।

রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে শিশু-কিশোররা দোলনায় চড়ছে। অভিভাবকেরা দাঁড়িয়ে কিংবা বসে আছেন। কেউবা হাঁটছেন। আবার অনেকে পশুপাখি দেখতেও ভিড় করছেন। চিড়িয়াখানার ভেতরে থাকা শিশুপার্কে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরাই বেশি ভিড় করেছেন। দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় টিকিটের জন্য দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন দেখা যায়। টিকিট কেটে প্রবেশ করতে সেখানে যেন রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে।

চিড়িয়াখানার ভেতরে প্রবেশের পর এক খাঁচা থেকে আরেক খাঁচার সামনে হেঁটে হেঁটে বিভিন্ন পশু-পাখি দেখছেন দর্শনার্থীরা। বড়রা তাদের শিশুসন্তানকে বিভিন্ন পশুপাখির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। বাঘের নতুন খাঁচার পাশাপাশি ভিড় দেখা যায় সিংহের খাঁচার সামনেও। খুব কাছ থেকে বাঘ-সিংহকে দেখে শিশুরা বেশ খুশি। বানরের ভেংচি কাটা আর লাফালাফি দেখতে বানরের খাঁচার সামনেও ছিল দর্শনার্থীর ভিড়। এ ছাড়া কুমির, ঘড়িয়াল, জলহস্তি, ঘোড়া, হনুমান, গাধা, ভাল্লুক, হরিণ, ময়ূর, উটপাখি, ইমুপাখি, অজগর সাপসহ চিড়িয়াখানার সবগুলো খাঁচার সামনেই ছিল জটলা। এসব দেখে সববয়সী মানুষের চোখে মুখে আনন্দের ছাপ।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ি সেরুডাঙ্গার এলাকার বাসিন্দা সেলিম মিয়া। তিনি ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে গ্রামে এসেছেন। শুক্রবার তিনি পরিবারসহ চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছেন। চিড়িয়াখানার খাঁচাবন্দী পশুপাখি দেখার পর সঙ্গে থাকা শিশুদের নিয়ে প্রবেশ করেন শিশুপার্কে। সেখানে একেক করে তাদের বিভিন্ন রাইডে চড়িয়ে আনন্দ দিচ্ছেন। এই চাকরীজীবী জানালেন, ‌‘তার স্ত্রী ও ছয় বছর বয়সী ভাতিজি ও ভাগ্নিকে সঙ্গে নিয়ে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছেন তিনি। টিকিট নেওয়া থেকে শুরু করে সবখানেই ভিড়। শিশুপার্কেও একই অবস্থা। এত বেশি মানুষ, কোথাও স্বস্তিতেও চলাফেরাও করা যাচ্ছে না। তারপরও বাচ্চারা ভীষণ আনন্দ করছে। শিশুদের আনন্দের মধ্যেই নিজের আনন্দ খুঁজে পাচ্ছি।’

সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে না হতেই চিড়িয়াখানায় দেখা যায় মানুষের ঢল। চিড়িয়াখানার মতো বিনোদনপ্রেমী মানুষেরা ভিড় করছেন তাজহাট জমিদার বাড়ি ও জাদুঘর, সিটি চিকলি বিনোদন পার্ক, প্রয়াস সেনাপার্ক, চিকলি ওয়াটার পার্ক ও রূপকথা থিম পার্কেও। মানুষের আনন্দ-উচ্ছ্বাসে তাজহাট জামিদার বাড়িও রঙিন হয়ে উঠেছে। খোলামেলা সবুজে ঘেরা নান্দনিক পরিবেশে সেখানকার জাদুঘরে ঘুরতে এসেছেন অনেকেই। শিশু-কিশোরসহ বন্ধুরা দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেখানে। অনেকেই আবার পুরো পরিবার মিলেও বেরিয়েছেন। বিনোদনের পাশাপাশি ইতিহাসের সঙ্গে মিশে যেতে তাজহাট জামিদার বাড়িতে দর্শনার্থীদের নজর কাড়ার মতো উপস্থিতি দেখা গেছে।

 

নগরীর হাজীপাড়া শাপলা চত্বর এলাকার লাভলু ইসলাম তাঁর স্ত্রী, বোন ও শিশুসন্তানকে নিয়ে তাজহাটের সবুজ চত্বরসহ জাদুঘরে ঘুরতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘বাড়ির পাশে এত সুন্দর দর্শনীয় স্থান হলেও সন্তানদের নিয়ে সবসময় আসার সুযোগ হয় না। ঈদের সময়ে পরিবারকে নিয়ে এভাবে ঘুরতে আসার মজাই আলাদা। পরিবেশটা সুন্দর হওয়ায় বেশ ভালো লাগছে। খোলামেলা নির্মল পরিবেশে শিশুরা বেশি খুশি।’

এছাড়াও রংপুর নগরীর কালেক্টরেট সুরভি উদ্যান, মহানগর থেকে একটু দূরের খলেয়া গুঞ্জিপুরের ভিন্নজগত, পীরগঞ্জের আনন্দনগর, বদরগঞ্জের মায়াভুবন, কাউনিয়ার তিস্তা পার্ক, পীরগাছার আলী বাবা থিম পার্কেও ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের ঢল নেমেছে। ঈদ উদযাপনের খোরাক যোগাচ্ছে এসব বিনোদন কেন্দ্রের পাশাপাশি রংপুর টাউন হল চত্বর, কাউনিয়ার শতবর্ষী তিস্তা রেলওয়ে সেতু, গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতুর মহিপুর পয়েন্টসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানজুড়ে এখন মানুষ আর মানুষ।

এদিকে রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. মো. আমবার আলী তালুকদার জানান, চিড়িয়াখানাসহ রংপুরের সকল বিনোদন কেন্দ্রে ঈদকে ঘিরে দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। ঈদের প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও শিশু-কিশোরাসহ সব বয়সী মানুষ স্বস্তির সঙ্গে চিড়িয়াখানাসহ বিভিন্ন পার্কে ঘুরতে বেরিয়েছেন। প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্রে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পক্ষ থেকে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

অন্যদিকে রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. মোস্তাফিজার রহমান জানান, ঈদের দিন বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) দেশের প্রায় সর্বত্র তাপমাত্রা মোটামুটি সহনীয় ছিল। কিন্তু ওইদিন দুপুর থেকে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বয়ে গেছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ। আজ শুক্রবার থেকে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। আর বৈশাখের শুরুর দিকেই দেশে তীব্র তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা আছে। কোথাও কোথাও আকাশ মেঘলা থাকতে পারে, এক্ষেত্রে বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৭:০৪ | শুক্রবার, ১২ এপ্রিল ২০২৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com