| বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০১৪ | প্রিন্ট
১৩৪২ বাংলার ৭ই বৈশাখ মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের শুভজন্মদিন। মাসিক মদীনার সম্পাদক হিসেবে সকল মহলে যিনি পরিচিত মুখ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তিনি এদেশের শীর্ষস্থানীয় জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্ব হিসেবে সমাদৃত। ইসলামের মননশীল ও সাবলীল উপস্থাপনা এবং খেদমতে খালক এর জন্যও তিনি স্বীয় কর্ম গুণেই ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। দেশের প্রাচীনতম বাংলা পত্রিকা ‘মাসিক মদীনা’ মাধ্যমে মাতৃভাষায় দ্বীন ইসলাম প্রচারে ব্যাপক অবদান রেখে যাচ্ছে। আমাদের দেশে অনেক লোকই জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন এবং প্রতি বছরই পাচ্ছেন। নিরপেক্ষ বিচারের মাধ্যমে যোগ্য এবং দেশ-জাতির জন্য অবদান রেখেছেন এমন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে যদি জাতীয় পুরস্কার প্রদান করা হয় তাহলে মাসিক মদীনা সম্পাদক, বহুগ্রন্থ প্রণেতা মাওলানা মুহিউদ্দীন খানকে জাতীয় পুরস্কার প্রদান করা সময়ের দাবী।
মুসলিম সাংবাদিকতার জনক মাওলানা মুনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, মাওলানা আকরম খা, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর উত্তরসুরী হিসেবেই মাওলানা মুহিউদ্দীন খান জাতীয় পর্যায়ে বহুবিদ কর্মকান্ডে অবদান রেখে যাচ্ছেন। বাংলা একাডেমী ছাড়া আরো যে ক’টি প্রতিষ্ঠান প্রতি বছরই বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করে থাকে, এসব পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে যেন কোন কারসাজির বা স্বজনপ্রীতির অভিযোগ না ওঠে, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। গুণীজনের কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ তার জীবদ্দশায় পুরস্কার দেয়া উচিত।
আর এক্ষেত্রে দল ও মতের উর্ধ্বে উঠতে হবে, গুণী ব্যক্তি কোন দলের, তার আদর্শ কি এসব না দেখে তার কর্মের সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে। এটাই স্বাভাবিক। আশার কথা হল মাওলানা মুহিউদ্দীন খানকে ‘জালালাবাদ স্বর্ণ পদক’ প্রদান করছে জালালাবাদ লেখক ফোরাম। লেখক ফোরাম-এর এ ঘোষণাকে যুগোপযোগী যথার্থ এবং সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করি।
মৃত্যুর পর যেহেতু কেউ নতুন করে কোন যোগ্যতা অর্জন করে না, যেটুকু যোগ্যতা তা তো মৃত্যুর আগেই অর্জিত। তাই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ও বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকা চরিত্রবান ও দেশাত্মবোধে অনবদ্য খ্যাতি অর্জনকারীদের জীবদ্দশায় মূল্যায়ণ করা উচিত। সমাজসেবা, শিক্ষা, ধর্মপ্রচার, সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চা তথা বাংলাভাষায় ইসলামী সাহিত্যের ব্যাপক চর্চা, প্রচার প্রসারে যিনি নিজস্ব পরিমন্ডল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন এমনি একজন জ্ঞান তাপস, গুণীজন হলেন মাওলানা মুহিউদ্দীন খান।
দেশ ও জাতির কল্যাণে দীর্ঘ অর্ধশতাব্দি ব্যাপী তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে যুক্তির আলোকে বিচার করলে নিঃসন্দেহে মূল্যায়নের মানদন্ডে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কৃতি সন্তান। মাতৃভাষায় ইসলামী পঠন-পাঠনে তার অবদানের জাতীয় স্বীকৃতি সময়ের দাবী। বাংলাভাষা ভাষীদের মধ্যে সীরাত চর্চার বিরল নজীর তিনিই স্থাপন করেছেন। তার লিখিত, অনুদিত গ্রন্থাবলী মুসলিম মিল্লাতের জন্য (আকর) লাইফ গাইড হয়ে থাকবে। মহাগ্রন্থ আল কোরআনের ব্যাখ্যাগ্রন্থ বঙ্গানুবাদ তার জীবনের সাফল্যের এক মাইল ফলক।
বিগত ২০০৯ সালের ১৯ মার্চ সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে জালালাবাদ লেখক ফোরাম মাওলানা মুহিউদ্দীন খানকে বাংলা সাহিত্যে অনন্য সাধারণ অবদানের জন্য জালালাবাদ স্বর্ণপদক ও সংবর্ধনা প্রদান করে।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ঃ মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, পিতাঃ হাকীম মাওলানা আনছার উদ্দীন খাঁন, মাতাঃ রাবেয়া খাতুন, দাদাঃ মুন্সি তৈয়ব উদ্দীন খাঁন, দাদীর নাম কলমজান বিবি। এক বছর বয়সে তিনি দাদাকে হারান। তাঁর পৈত্রিক নিবাস মোমেনশাহীর গফরগাঁও থানার আনছার নগরে। মৌলভী আনছার উদ্দীন খাঁন, ৬ ভাইয়ের মধ্যে ছোট ছিলেন। জন্মঃ ১৩৪২ সনের ৭ই বৈশাখ শুক্রবার জুমার নামাজের আযানের সময় মাতুলালয়ে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান জন্মগ্রহণ করেন। নানা মুন্সি আব্দুল হামিদ তখন পাশের বাড়ীর মসজিদে জুমার আযান দিচ্ছিলেন। মা-বাবার নিকট তিনি বুনিয়াদি শিক্ষাগ্রহণ করেন।
শিক্ষা ঃ স্বীয় পিতামাতা এই দুই উস্তাদের পাঠশালাতেই প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। তাঁর বয়স যখন ১২ তখনই তার কলিজার টুকরা স্নেহময়ী মাতা মোছাঃ রাবেয়া খাতুন ইহধাম ত্যাগ করে পরপারে পারি জমান। তিনি তার মাতার নিকটই কায়দা-ছিপারা অধ্যয়ন করেন। “আল কাওসার” আরবী-বাংলা অভিধান তাঁর (৪র্থ শ্রেণী) বাল্যকালেরই বিরল কীর্তি। পঞ্চাশ দশকের শুরুতে তিনি রাজধানী ঢাকায় লেখাপড়া করতে আসেন। মাদ্রাসায়ে আলীয়া ঢাকায় থাকাবস্থায়ই তিনি সাপ্তাহিক কাফেলা, সাপ্তাহিত নেজামে ইসলাম, দৈনিক ইনসাফ, দৈনিক আজাদ ও দৈনিক মিল্লাত প্রভৃতি পত্রিকায় লেখা-লেখির অভ্যাস গড়ে তুলেছিলেন। ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পাসবান এর শিক্ষানবীস লেখকরূপে পরে জীবিকার টানে ১৯৫৫ ঈসায়ী সনের শেষের দিকে কামেল পরীক্ষার পর দৈনিক পাসবান পত্রিকায় তিনি সাব অডিটর (বাংলা থেকে উর্দু অনুবাদ) নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি আনুষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাঠ সমাপ্ত করেন।
সাহিত্য সাংবাদিকতায় আলেম সমাজকে উৎসাহিত করতে সর্বদা ফিকির করেন, তরুণ প্রজন্মের আলেমদের সর্বোতভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছেন তিনি। সংবাদপত্র জগতে প্রকাশনা, পরিচালনা ও সম্পাদনার ক্ষেত্রে তিনি যে বৈপ্লবিক ভূমিকা পালন করে চলেছেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তা এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। পবিত্র তাফসিরে মারেফুল কোরআন সহ ১০৫টি গ্রন্থ অনুবাদ রচনা করেন। মাতৃভাষায় সীরাত সাহিত্যে ও যে অবদান রেখেছেন তা বিরল। তিনি আজ জীবন সায়েহ্নে উপনিত। আমরা মহান মাওলার দরবারে তাঁর সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
Posted ২৩:৫০ | বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin