শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

স্বাধীন সাংবাদিকতার পথপ্রদর্শক

  |   সোমবার, ০৯ এপ্রিল ২০১৮ | প্রিন্ট

স্বাধীন সাংবাদিকতার পথপ্রদর্শক

রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ : পুরো নাম আবুল বাশার মোহাম্মদ মূসা। মূসা ভাই হিসেবে সাংবাদিক সমাজে বহুল পরিচিত। আজ থেকে চার বছর আগে তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। প্রায় ষাট বছর কাল দাবড়িয়ে বেড়িয়েছেন সাংবাদিকতা পেশায়। পেশাগত জীবনে কখনও রিপোর্টার, কখনও নিউজ এডিটর আবার কখনও এডিটর ছাড়াও সাংবাদিক ইউনিয়ন আর প্রেস ক্লাবের নেতা হিসেবে শেষদিন পর্যন্ত কাজ করে গেছেন।

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল মূসা ভাইয়ের সঙ্গে তদানীন্তন পাকিস্তান অবজারভারে কাজ করার।
আমি ছিলাম রিপোর্টার আর মূসা ভাই ছিলেন নিউজ এডিটর। ষাটের দশকের শেষদিকে সারা পাকিস্তানে মূসা ভাই ছিলেন দাপুটে নিউজ এডিটর। পেশার দক্ষতা আর স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নির্ভীক সাংবাদিকতা নিজে করেছেন আর সহকর্মীদের দিয়ে করিয়েছেন। সেদিন আমরা যারা পেশায় নতুন যোগ দিয়েছিলাম তিনি ছিলেন তাদের শিক্ষক। প্রতিটি রিপোর্ট নিয়ে এর ভালো-মন্দ আলোচনা করতেন, ভুল ধরিয়ে দিতেন। সেই শিক্ষায় দীক্ষা নিয়েই আমরা মূসা ভাইয়ের নির্দেশিত পথে পেশায় নেতৃত্ব দিয়ে চলেছি।

পেশার দক্ষতা নিয়ে মূসা ভাইয়ের কর্মযজ্ঞ আজও নতুনদের অনুপ্রাণিত করে। মূসা ভাই ছিলেন নির্ভীক সাংবাদিকতার প্রতীক। একটি দৃষ্টান্ত দিলেই তা পরিষ্কার হবে। ১৯৭০ সালের নভেম্বর মাস। উপকূলে প্রলয়ঙ্করী ঝড়ে লাখ লাখ লোকের প্রাণহানি হয়েছে। আমরা রিপোর্টারের দল সারাদিন ব্যস্ত খবর সংগ্রহে। পাকিস্তানি শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আমরা সত্য তুলে এনে জনগণকে জানানোর চেষ্টা করি। এই চেষ্টা কখনই বাধাহীন নির্বিঘ্ন ছিল না। যে কথা বলছিলাম, বৃটিশ রয়াল নেভীর হেলিকপ্টারে আমাদের কয়েকজন রিপোর্টারকে পটুয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা দেখলাম চারদিকে অব্যবস্থাপনা, হাজার হাজার লাশ লণ্ডভণ্ড অবস্থায় পড়ে আছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ছিল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে। কিন্তু তারা চাইতো না যে, এগুলো পত্রিকায় প্রকাশিত হোক। ঢাকায় ফিরে যখন রিপোর্ট লিখতে বসলাম তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর সিদ্দিক সালেক তাদের মতো করে কীভাবে রিপোর্ট লিখতে হবে তার একটি নমুনা আমার হাতে দিলেন। আমি মূসা ভাইকে ফোন করে খবরটি জানালাম। মূসা ভাই দ্রুতই অফিসে এসে মেজর সিদ্দিক সালেককে তিরস্কার করলেন এবং বললেন ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের কাজ আর না করেন। এরকমই সাহসী ছিলেন মূসা ভাই। এরকম অনেক দৃষ্টান্ত আছে যা সমস্ত বাধা দূর করে সহকর্মীদের মূসা ভাই সুরক্ষা দিতেন। তিনি পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য নিয়ে রিপোর্ট করার জন্য আমাদের দায়িত্ব দিতেন এবং নিজে স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতেন।

মূসা ভাই সাংবাদিকতার স্বাধীনতা, মানবাধিকার, স্বায়ত্তশাসন ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ, বিজয়ের পর দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। মূসা ভাইয়ের জীবনের পরিণতি ছিল ‘সব ভালো যার শেষ ভালো তার।’ মূসা ভাইয়ের জীবনের শেষটা ছিল গৌরবোজ্জ্বল। তিনি লিখে গেছেন নির্বিঘ্নে, সাহসের সঙ্গে, কথা বলেছেন উচ্চকণ্ঠে। মূসা ভাই ভূষিত হয়েছিলেন জাতীয় মুরব্বির খেতাবে। আজ তার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করে আমাদের পেশাকে আরো মহিমান্বিত করার শপথ নেবো। যুগে যুগে মূসা ভাই বেঁচে থাকুক আমাদের মধ্যে একজন সাহসী, সত্যনিষ্ঠ আর স্বাধীন সাংবাদিকতার পথপ্রদর্শক হিসেবে। লেখক: সম্পাদক, ইন্টারন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি। সূত্র : মানবজমি

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০০:৪৭ | সোমবার, ০৯ এপ্রিল ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com