মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ঈদে চাই নতুন জামা

  |   রবিবার, ১৯ মে ২০১৯ | প্রিন্ট

ঈদে চাই নতুন জামা

মোঃ ফিরোজ খান

মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ‍্যে বছরে দুটি ঈদ উৎসব একটি হলো মাহে রমজান শেষে বাঙালির ধনী গরীব সকলের প্রাণের উৎসব হলো”ঈদুল ফিতর”অন‍্যটি হলো “ঈদুল আজহার ঈদ”।ধনী গরীব,ছোট-বড় সকলের মাঝে আনন্দের বন্যা বয়ে আনে ঈদুল ফিতর।আর এই ঈদ উপলক্ষে সকলেই চায় তার পছন্দের পোশাক পরতে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী সকলেই কিনে থাকেন তার পরিবারের সদস্যদের জন্য ঈদের নতুন পোশাক। এই ঈদই আবার অনেকের জীবনে দেখা দিয়ে থাকে খুশির পরিবর্তে দুখের হাতছানি।এমন অনেক পরিবার আছে যারা পারেন না তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সামান্য চাহিদাটুকু পূরণ করতে।অনেকেই একটি নতুন জামা কিনে দিতে পারেননা পরিবারের ছেলে মেয়েদের জন্য।

আমার আজও মনে পড়ে আমি যখনই ছোট ছিলাম এবং দাদা, দাদুর সঙ্গে গ্ৰামের বাড়িতে ঈদ করতাম তখন একটি জামার জন্য পুরো রোজার মাস পথ চেয়ে থাকতাম কখন বাবা,মা ও আমার চাচারা ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসবেন আর বাড়িতে এসেই তারা ভোর রাতেই ব‍্যাগ খুলে সকলের হাতে তুলে দিতেন যার যার নতুন পোশাক।কতটা আনন্দ পেতাম তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবোনা এতোটা বছর পর সেই স্মৃতির দিনগুলো আজও মনে পড়ে আর চোখের কোনে দুফোটা জল চলে আসে।কতটা সুন্দর ও সুখের ছিলো সেই দিনের ঈদ।

আজ দাদা,দাদু এবং মা-বাবা কেউই এই পৃথিবীর বুকে বেঁচে নেই কিন্তু সেই সুন্দর সুখের দিনগুলো আজও আমাকে ভাবনার মাঝে হারিয়ে দেয়।এবং খুবই ভাবায় যা শুধুই কষ্টের কথা মনে করিয়ে দেয়।আজ আমারও ছেলে মেয়ে আছে তাদেরকে ঈদ উপলক্ষে নতুন জামা কিনে দিতে মন চায়;কিন্তু জানিনা আমি এই কষ্টের মাঝে তাদেরকে কিভাবে একটি ঈদের জামা কিনে দিবো?আমার মতো এমন হাজার পরিবার আছে তাদের মধ্যে এমন মানুষও আছেন যারা তাদের সন্তানদের জন্য এভাবেই চিন্তা করেছেন যে কিভাবে তাদের সন্তানদের মুখে একটু হাসির ঝলক ফুটিয়ে তুলবে ঈদের পোশাক কিনে দিয়ে। সামনে ঈদ আসছে এই বিষয়ে একজনের সঙ্গে কথা হলো সেও ভেঙে পড়ছেন তাদের সন্তানদের কথা ভেবে বলতে ছিলেন আমাকে উদ্দেশ্য করেই যে ভাইজান কি যে করবো আমার দুটি ছেলে মেয়ে আছে তাদেরকে হয়তোবা ঈদের জন্য কোনো পোশাক কিনে দিতে পারবোনা কেননা আমি বেকার ভাবে দিন যাপন করছি কোনো চাকুরী খুঁজে পাচ্ছিনা আর কোনো উপায় ও দেখছিনা কিভাবে কি করবো।

আমি তার মুখের কথাগুলো শুনে এক পলক তাকিয়ে রইলাম তার মুখের পানে লোকটির চোখে মুখে এক ধরনের কষ্টের ছাপ দেখতে পাই।সত্যিই মানুষের জীবন বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে কেউ এই ঈদুল ফিতর উপলক্ষে তাদের পরিবারের সকলের জন্য একটি জামার পরিবর্তে দুটি তিনটি জামা কিনে দিবেন আর এমন পরিবার আছে যাদের পক্ষে একটি জামা কেনার কোনো উপায় নেই।হে আল্লাহ তাআলা তুমি সবকিছু পার তোমার বান্দাদের জন্য করতে তাই গরীব ধনী সকলের মুখে হাসি ফুটাতে কেবল তুমিই পারো এছাড়া কেউ কিছু করতে পারবে না।

অন‍্যের মতো আমার ও খুবই খারাপ লাগছে এই ঈদ উপলক্ষে কিভাবে কি করবো কোনো উপায় দেখছিনা তবুও মহান আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইছি তিনি যদি সাহায্য করেন তাহলে কেউ কিছু করতে পারবেন না।আবার এ কথা ও ভাবি যে মহান আল্লাহ তাআলা আমাকে হাজার ভালো রেখেছেন আমার চেয়েও অনেক অনেক অসহায় মানুষ পথে ঘাটে পড়ে আছে যাদের দিন আনতে পান্তা ফুরায়।তাদের কথা ভেবে আমি পরক্ষণেই সকল কষ্টের কথা ভুলে যাই কেননা তারা ঠিক মতো এক বেলা পেট ভরে খেতে পারছেন না তাহলে তারা কিভাবে ঈদের জন্য তাদের সন্তানদের জন্য নতুন পোশাক কিনবেন হে আল্লাহ তুমি মহান তুমিই দয়ালু দয়াময় তুমি সবসময় সকলের বিপদ থেকে সকলকে রক্ষা করো তুমি বান্দাদের বিপদে এগিয়ে আসো বান্দাকে সবসময় হাসিখুশি রাখো। আমি প্রার্থনা কামনা করছি এই মাহে রমজান মাসে রোজা রেখে তারাবির সালাত আদায় করে শুধুমাত্র তোমার সাহায্য কামনা করছি তুমি নিশ্চয় সাহায্য করবে তোমার সকল বান্দাদের জন্য।

আমি সেই পুরনো দিনের কথা ভেবে আজ নিজেকে বড়ই অসহায় মনে করছি,কেনো এমন হয় জীবন?কেনোই বা সবকিছু পাল্টে যায় হঠাৎ করেই?আজ বিগত ৬ টি মাস এক হিসেবে বেকার থেকেই জীবন অতিবাহিত করছি কোনো কিছুর হিসাব যেনো সহজে মেলাতে পারিনা,জানিনা জীবনে কি এমন ভুল করেছি? যার খেসারত প্রতিটি মূহুর্তে আমি অনুভব করছি,আমি ব্র্যাক গবেষণা বিভাগে ১৫ বছর ৩ মাস কর্মরত ছিলাম গত নভেম্বর ২০১৮ সালে ব্র্যাক আমাকে রিটায়ার্ড দেয় হঠাৎ করেই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেন ব্র্যাক।ব্র্যাক থেকে যা কিছু টাকা পেয়েছি তাও খরচ হয়ে যায়,তাইতো এখন খুবই চিন্তায় দিন পার করছি,আমার বড় মেয়ে ফারিয়া খানম লাবিবা অষ্টম শ্রেণীতে পড়ছে আর ছোট ছেলেটি মোঃ ফারহান খান বাপ্পি দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ছে,ওদেরকে মহান আল্লাহ তাআলা অনেক ভালো রেখেছেন ওরা বাবার সমস্যা বুঝতে পারেন এটাই আমার পরম পাওয়া এর চাইতে বেশি কিছু কখনও আশা করবোনা সবকিছু মহান আল্লাহ তাআলা ভালো বুজতে পারেন তিনি যাহা করেন তার বান্দাদের মঙ্গলের জন‍্যই করেন এই কথাই চিরন্তন সত্য এই কথা আমাদের সকলকেই মেনে নিতে হবে সহজেই।মহান আল্লাহ তাআলা অবশ্যই দেখবেন আমার ভালো মন্দ তাইতো যদি সাহায্য চাইতে হয়ে থাকে তাহলে কেবল তার কাছেই সাহায্য চাইবো তিনি সকল সমস্যার সমাধান করতে পারেন।

তিনি যাহা করবেন তাহাকে আমি সহজে মেনে নিবো অন‍্য পাচটি পরিবারের কথা ভেবেই কেননা অনেক পথশিশু আছেন যাদেরকে কেউ ঈদ উপলক্ষে একটি জামা কিনে দেননা তবুও তারা ফুটপাতে থেকেও অনেক আনন্দে ঈদ উৎসব পালন করেন তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি সকল কষ্ট সহজেই ভুলে যাবো কেননা মহান আল্লাহ তাআলা আমাকে অনেক সন্মানিত করেছেন এই পৃথিবীর বুকে এই সন্মান টুকুই আমার বড় সম্পদ আর এই সম্পদ সকলে অর্জন করতে পারেন না।তাই আল্লাহ তাআলা যেভাবে এই বছরের ঈদ করতে তৌফিক দান করেন আমি সেই ভাবেই ছেলে মেয়ে ও আমার পরিবারের ভাই বোন ভাগ্নে ভাগ্নি সবাইকে নিয়ে আনন্দে উৎযাপন করবো।হয়তোবা একটি নতুন জামা পাল্টে দিতে পারে ঈদের রূপ রেখা আবার যারা একটি নতুন জামা কিনতে কিংবা পড়তে পারেন না তাদের জীবন ও থেমে থাকেনা মহান আল্লাহ তাআলা সবকিছু পারেন তিনি সবকিছু জানেন তিনিই সবকিছু দেখে থাকেন তাই হতাশা নয় বরং শুকরিয়া আদায় করছি মহান আল্লাহর কাছে তিনি অনেক ভালো রেখেছেন এবং অনেক ভালো আছি তার কৃপায়।

ধৈর্য্য জীবনের একটা বড় কিছু বলেই আমি সবসময় মনে করে আসছি সেই ধৈর্য্য ধরেই বাকি জীবন কাটাতে চেষ্টা করবো হে পরোয়ার দেগার মহান রব্বুল আলামীন আপনি আপনার বান্দাকে নিশ্চয় একটি ভালো পথ দেখাবেন যে পথ ধরে আমি আবারও ঘুরে দাড়াতে পারবো ইনশাআল্লাহ।কেননা আমি মানুষের বিপদে সবসময় এগিয়ে যেতাম ছোট বড় সকলকেই সন্মান ও স্থেহের চোখে দেখতাম তাইতো আমি এখনও নিজেকে হারিয়ে ফেলবোনা কোনো ময়লা আবর্জনার মাঝে নিজেকে শতভাগ কষ্টের মাঝে রেখেও আমি ঘুরে দাড়াবো আল্লাহর উপরে আস্তা ও বিশ্বাস রেখে। তিনিই তার বান্দার সকল বিপদ আপদ রক্ষা করবেন এই মনোবল আমি কখনও হারাবোনা কোনো ঝড়ের কবলে পড়েও আমি ভীতু হয়ে পড়বোনা।

আমার জন্য কখনও চিন্তা করছিনা কেননা আমি সবসময় আমার জীবন সুখের মাঝেই কাটিয়েছি বাস্তবতার নিরিখে নিজেকে তৈরি করেছি,তাই এখন কোনো ধরনের কষ্ট আমাকে ঘায়েল করতে পারবে না,আমি শুধুমাত্র আমার ছেলে মেয়ের জন্য চিন্তা করছি যেনো মেয়েকে পর্দায় রেখে ইসলামের আওতায় রেখে বড় করতে পারি আর ছেলেকে এই বছর ঈদের ছুটির পর মোহাম্মদপুর একটি মাদ্রাসায় হাফেজীতে ভর্তি করাবো এই আশা টুকু যেনো মহান আল্লাহ তাআলা পূরণ করে দেন।আমি চাইনা আমার ছেলে মেয়ে আমার কষ্টের কথা জানুক এবং তারা বাবার কষ্ট দেখে নিজেদেরকে আড়ালে রাখুক।

এইতো গত বছর ঈদের সময়ও আমি ছেলে মেয়েকে একটি নতুন জামা নয় তিন থেকে চারটি নতুন পোশাক কিনে দিয়েছি তাও তাদের পছন্দ মতোই আজ সেই কথা ভেবেই আমি ক্রমাগত ভেঙে পড়ছি বারে বারে মনে হয় একটি কথা যে,”যিনি রাজা থাকেন তিনিও কালকে হয়তোবা রাস্তায় নেমে পড়েন” এটাইতো বিধাতার মহিমা তিনি যাহা করেন তাদের বান্দাদের মঙ্গলের জন‍্যই করে থাকেন।
আজ শুধুমাত্র একটি ঈদের জামার কথা ভেবেই পৃথিবীর অন‍্য সকল দুখিত অসহায় পথশিশুদের কথা মনে পড়ে গেলো তারাও মহান আল্লাহর সৃষ্টির সেরা তবে কেনো এতোটা হতাশায় নিজেকে গুটিয়ে ফেলবো অবশ্যই মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের ভালোর জন্য সবকিছু করে থাকেন আমাদের মাঝে কোনো ভুল ক্রটি থাকলে সেই ভুল গুলো সংশোধন করতে এভাবে পরীক্ষা করছেন আমরা যেনো মহান আল্লাহর দেওয়া পথে সকলেই চলতে পারি সেই তৌফিক তিনি আমাদের সকলকে দান করুন আমীন।

হে আল্লাহ তুমি আমাকে সাহায্য করো যাতে করে আমি সঠিকভাবে সঠিক রাস্তায় চলতে পারি হাসিখুশি জীবন যাপন করতে পারি কোনো লোভ লালসা যেনো আমাকে কোনো ভুল পথে নিতে না পারেন এই আশায় নিজেকে নতুন করে নতুন রূপে প্রকাশ করতে পারি যেনো আমিও সৃষ্টির সেরা মানব এই সন্মান যেনো ধরে রাখতে পারি শতভাগ কষ্টের মাঝে থেকেও।আমার ছেলে মেয়েকে একটি ঈদের নতুন জামা কিনে দিতে পারি।তাদের মুখে আনন্দের উৎসব দেখতে পারি আমি এর চাইতে বেশি কিছু তোমার কাছে চাইবোনা আর কোনো কিছু তোমার কাছে চাওয়ার নেই মহান আল্লাহ তাআলা তুমি আমাকে অবশ্যই সাহায্য করবে এবং কোনো না কোনো পথ দেখাবে এই বিশ্বাস আমার সবসময় ছিলো এবং সবসময় থাকবে।
ইনশাআল্লাহ।

লেখক : সাংবাদিক

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২২:২০ | রবিবার, ১৯ মে ২০১৯

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com