সোমবার ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লাখো কণ্ঠে ‘ভুল’ জাতীয় সংগীত

  |   শনিবার, ২৯ মার্চ ২০১৪ | প্রিন্ট

ফারুক আফিনদী

jateyo songit

২৬ মার্চ ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা’ অনুষ্ঠান। প্রায় ২ লাখ ৫৫ হাজার নাগরিক সমস্বরে এই জাতীয় সংগীত গাওয়ার মধ্যদিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশ। এই রেকর্ড প্রতিবেশী ও বন্ধু রাষ্ট্র ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে।
যেকোনো বিষয়ে প্রতিবেশীকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মধ্যে মানুষমাত্রই আনন্দ অনুভব করে। যদিও ভারতের ক্ষেত্রে এই মনস্তত্ত্ব প্রযোজ্য হবে না, এটা হবে নেহায়েত ‘অসভ্যতা’। কেননা, আমরা অর্থাৎ বাংলাদেশি বাঙালিরা সভ্যতায় ভব্যতায় এতটাই এগিয়ে রয়েছি যে আমাদের কাছে সভ্য দুনিয়ায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে ট্রানজিট দিয়ে ফি নেয়াটাও অসভ্যতার শামিল! আওয়ামী লীগের গত সরকারের সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান এই ‘দর্শন’ ‘ম্যানুফেকচার’ করেছিলেন। ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার বিপরীতে ফি নেয়ার বিষয়ে তিনি এই অদ্ভুদ ‘মাল’ জনগণকে ‘উপহার’ দেন।
আমাদের এই ‘নতুন সভ্যতার’ বিচারে ‘লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা’ গেয়ে প্রতিবেশীকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মধ্যে আমরা কোনো আনন্দ প্রকাশ করতে পারি না। পারতাম যদি আমাদের নিচে ভারত না হয়ে পাকিস্তান হতো। রেকর্ড গড়ার পর উল্লাসে ফেটে পড়ত জনতা। প্যারেড গ্রাউন্ড কেঁপে উঠত। সেনাবাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সামাল দিতে ব্যর্থ হতো। হা করে তাকিয়ে থাকতে হতো তাদের। এটাই কোনো জাতির ঐকতানিক স্বতঃস্ফূর্ততা। এটা এক প্রকারে জাতীয়তার প্রকাশ।
প্যারেড গ্রাউন্ডে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ জন ও বাইরে আরো দেড় লাখেরও বেশি মানুষের সুশৃঙ্খলভাবে সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পাওয়া শুধু গিনেজ বুকের রেকর্ড নয়, ইতিহাসও বটে।
২০১২ সালে কানপুরে ১ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটিয়ে জাতীয় সংগীত গেয়ে পাকিস্তানকে অতিক্রম করে ভারত। ওই বছরের ডিসেম্বরে কানপুর গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামে ওই অনুষ্ঠানে কানপুর শহরের ১ লাখ অধিবাসী অংশ নেয়। ওই সমাবেশে ১ লাখ লোকের টার্গেট নেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে লোকসংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় তড়িঘড়ি করে অনুষ্ঠান শেষ করা হয়। অবশ্য সে আয়োজন সরকারিভাবে করা হয়নি। করেছিল বর্তমানে দুর্নীতির জন্য অভিযুক্ত সাহারা গ্রুপ।
ভারতীয়রা খুব গৌরব বোধ করেছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের রেকর্ড ভাঙার ওই আয়োজনে অংশ নিতে পেরে। তাদের এ গৌরববোধের পেছনে রয়েছে জাতীয়তা ও দেশপ্রেম। আমাদের আনন্দটা ওই রকম নয়। আমরা ‘অসভ্য’ হতে শিখিনি না। আমাদের আনন্দ ‘সভ্য’ জাতির মতো!
তবু ‘লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা’ গেয়ে যে রেকর্ড আমরা গড়েছি এর আনন্দ ও গৌরবের মাত্রা প্রতিবেশীকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে কম নয়, বরং অনেক বেশি এবং এজন্য যে, জনগণের যে স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা গেছে এ আয়োজনে তা নজিরবিহীন, আয়োজনস্থল ছাড়াও সারা দেশে যেভাবে জাতীয় সংগীত গেয়ে নির্মল আনন্দ অনুভব করেছে জনগণ তা আর কোনো জাতির পক্ষে সম্ভব হয়েছে বলে মনে হয় না। এটা নিঃসন্দেহে একটা ইতিহাস।
এ ইতিহাস গিনেজ বুকে ভারতের বিপরীতে। কিন্তু জাতীয় চেতনাগতভাবে এ ইতিহাস পাকিস্তানের বিপরীতে। কারণ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের মর্মমূল হচ্ছে একাত্তরে পাক অপশক্তি ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে বিজয় এবং স্বাধীনতার চেতনা। আমাদের এ বিশ্ব রেকর্ডের মর্ম এটাই, ২ লাখ ৫৪ হাজার মানুষের অংশগ্রহণ নয়। যে সময়ে পাকিস্তান দেখছে তাদের মিত্র যুদ্ধাপরাধীদের মানবতাবিরোধী অপরাপধের বিচার, যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসিতে সংসদে শোক প্রস্তাব পাস করেছে, সে সময়ে দেখল কীভাবে বাঙালি সমবেত হয়েছে শুধু পাকিস্তানের বুকে পদাঘাত হানা লাল সবুজ পতাকা ও ‘আমার সোনার বাংলা’র জন্য। বিশ্বও দেখেছে এ ইতিহাস গড়ার মুহূর্তটি।
কিন্তু যে সংগীত গেয়ে এই অনন্য রেকর্ড, যে সংগীত আমাদের জাতীয়তার বন্ধনসূত্র, সে সংগীতের প্রতি যে অবহেলা বিকৃতি লক্ষ্য করেছি ‘লাখো কণ্ঠে’ তা কীভাবে মেনে নিচ্ছে জাতি আমার বোধগম্য নয়।
স্বাধীনতা দিবসে যখন লাখো কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছিল আমার প্রাণের সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ তখন আচমকা কেমন যেন নির্লিপ্ত হয়ে যাই। ফিরে যাই সোনার দিনগুলোতে, ছাত্রজীবনে। সে কতকাল আগের কথা। বিদ্যালয় জীবন পার হয়েছে আশির দশকে। যুগটা ছিল স্বৈরাচারের। কিন্তু তখনো বাংলাদেশের রাজনীতিতে আদর্শের চর্চা হতো। মানুষের ব্যক্তিক সামষ্টিক জীবনেও সততা ও আদর্শের প্রতিফলন দেখতে পেয়েছি। ওই সময় বিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিতভাবে অ্যাসেম্বলি করে জাতীয় সংগীত গাওয়া হতো। আমার স্পষ্ট মনে পড়ে, দশম শ্রেণী পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলিতে গেয়েছি ‘আমার সোনার বাংলা/ আমি তোমায় ভালবাসি/ চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস/ আমার প্রাণে…।’
কিন্তু খুব অবাক হয়েছি গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে ‘লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা’য়। কবিগুরুর সংগীত তথা বাঙালির হৃদয়ের মূলস্থানে গ্রথিত আবেগে জাতীয় সংগীত বিকৃত করে গাওয়া হয়েছে, ‘আমার সোনার বাংলা/ আমি তোমায় ভালবাসি/ চিরদিন তোমার আকাশ/ চিরদিন তোমার আকাশ…।’ এটা ভুল সংগীত।
১৯৭১ সালের ১ মার্চ স্বাধীন বাংলার কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের পরে ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে ঘোষিত ইশতেহারে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটিকে জাতীয় সংগীত ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে গানটিকে প্রথম জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে স্বরলিপিসহ জাতীয় সংগীত বিল পাস হয়। গানটির প্রথম দশ লাইনকে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করা হয় ওই বিলে। পরে সংগীতজ্ঞ সমর দাসের (প্রয়াত) তত্ত্বাবধানে লণ্ডনের বিবিসি স্টুডিও থেকে জাতীয় সংগীতের অর্কেস্ট্রেশন তৈরি করে আনা হয়। ওই অর্কেস্ট্রেশন এবং স্বরলিপি অনুযায়ী গানের ‘চিরদিন তোমার আকাশ’ অংশটি একবার গাওয়া হয়। অর্কেস্ট্রেশনে বঙ্গবন্ধুর পছন্দ অনুযায়ী সুচিত্রা মিত্রের গায়কীকে অনুসরণ করা হয়।
তবে এ প্রসঙ্গে ভিন্নমত ছিল প্রয়াত সংগীতজ্ঞ আবদুল আহাদের। তিনি তার আত্মজীবনী ‘আসা-যাওয়ার পথের ধারে’ (বাংলা একাডেমী, প্রকাশকাল : ডিসেম্বর ১৯৮৯) গ্রন্থে লিখেছেন, ‘… অর্কেস্ট্রেশন… রেকর্ড হয়ে যাওয়ার পর কেমন রেকর্ডিং হলো তা শোনার জন্য একটি মিটিং ডাকা হয়েছিল রেকর্ডিংয়ের ছয় নম্বর স্টুডিওতে। মিটিংয়ে তথ্যমন্ত্রী তাহেরউদ্দিন এবং দুজন সেক্রেটারি তৌফিক ইমাম ও মুজিবুল হক, স্থানীয় মিলিটারি ব্যান্ডের পরিচালক, সনজীদা খাতুন, জামিল চৌধুরী এবং আমি উপস্থিত ছিলাম। সমর দাসও উপস্থিত ছিল। … টেপটি বাজিয়ে শোনানো হলো এবং শোনার পর যে প্রতিক্রিয়া হলো তা বলার নয়। ঘোর আপত্তি উঠল যে, গানটির সুর বিকৃত করা হয়েছে। …প্রথম দিনের মিটিং হৈচৈয়ের মধ্যে শেষ হয়ে গেল। কয়েক দিন পর আবার মিটিং ডাকা হলো। সে মিটিংয়েও একই অবস্থা। সবাই একবাক্যে বললো, সোনার বাংলার এই অর্কেস্ট্রেশন আমরা কিছুতেই অনুমোদন করব না। … আমাকে সম্মতি দিতে হলো।’
এসব তথ্য গবেষক সাংবাদিক আজিজুল পারভেজের একটি লেখায় পাওয়া গেছে। তার ওই লেখায় জানা গেছে, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী জাতীয় সংগীত বিভিন্নভাবে গাওয়ার প্রসঙ্গটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশততম জন্মজয়ন্তী পালন জাতীয় কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে উত্থাপন করেছিলেন। কামাল লোহানীর মতে, দুইভাবে জাতীয় সংগীত গাওয়া হচ্ছে, কোনোটাই ভুল নয়। তবে স্বরলিপি অনুসরণ করে গান করা শিল্পীদের দ্বারা সম্ভব। সাধারণ মানুষের গাওয়ার জন্য জাতীয় সংগীতের ক্ষেত্রে সহজ সুর বেছে নেয়া হয়েছে, এটাই যথার্থ।
এর পরও আমরা শুদ্ধ হতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতীয় সংগীতের মতো জাতীয় ঐকতানের বিষয়য়ে মনোযোগী হতে পারেননি, এ যে বড়ো পরিতাপের কথা!
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও সংগীত পরিচালক খান আতাউর রহমানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে এবং স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পীদের গাওয়া রেকর্ডে দেখা গেছে, ‘চিরদিন তোমার আকাশ’ একবারই গাওয়া হয়। স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্রের রেকর্ডটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদের প্রামাণ্য চিত্র ‘মুক্তির গান’-এ ব্যবহার করা হয়েছে।।
এ প্রসঙ্গে উদীচীর সহসভাপতি ও গণসংগীত শিল্পী মাহমুদ সেলিম বলেন, ‘আমার সোনার বাংলা গানটি রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, তবে এটি নেয়া হয়েছে জাতীয় সংগীত হিসেবে, রবীন্দ্রসংগীত হিসেবে নয়। রবীন্দ্রনাথের সুর করা গানটি অন্যরকম। সুচিত্রা মিত্রের গায়কী অনুসরণ করেই জাতীয় সংগীতের অর্কেস্ট্রেশন তৈরি করা হয়। একটি গান যখন শুধু গান হিসেবে গাওয়া হয় তখন শিল্পী তার দক্ষতা অনুসারে কারুকাজ ফুটিয়ে তুলবেন- এটা স্বাভাবিক। কিন্তু যেহেতু এটি জাতীয় সংগীত তাই সাধারণ মানুষ যেন গাইতে পারে সেজন্য গানটি কারুকাজবর্জিত রাখা হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘জাতীয় সংগীতের বর্তমান সুর নিয়ে উদীচী বেশ কয়েকবার আপত্তি তুললেও সনজীদা খাতুনের (ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বর্তমান সভাপতি) জন্য তা সংশোধন করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা চাই সুরটিকে একটি জায়গায় রাখা হোক।’
স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পীসহ অনেক সংগীত ব্যক্তিত্ব  ‘লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। পরিচালনা করেছেন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শব্দসৈনিক সুজেয় শ্যাম। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, অনুষ্ঠানটি যে মন্ত্রণালয় আয়োজন করেছে সে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হচ্ছেন দেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠানের আগে জাতীয় সংগীতের একটি রেকর্ড করা হয়। ওই রেকর্ডে কে বা কারা কণ্ঠ দিয়েছেন তা জানার সুযোগ হয়নি। তবে এর যেকোনো ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় বর্তায় সুজেয় শ্যামের ওপর। কারণ তিনি অনুষ্ঠানের সংগীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
অনুষ্ঠানের আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি রেকর্ড বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয় অনুশীলনের জন্য। যৌক্তিক কারণেই বলা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দেয়া রেকর্ডটিই মূল রেকর্ড। গিনেজ বুক কর্তৃপক্ষকেও রেকর্ডের একটি কপি দেয়া হয়। অনুষ্ঠানের দিন চূড়ান্ত পর্বের আগে মঞ্চে দুদফা অনুশীলনও হয়েছে। এরপরও, এতদিনেও কারো কাছে বিষয়টি ধরা পড়েনি কেন, জাতীয়ভাবে রবীন্দ্রনাথের গান তথা জাতীয় সংগীতের বিকৃতি হলো কীভাবে? এ প্রশ্ন উন্মুক্ত, সব মানুষের কাছে।
তবে সব মানুষের আগে সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার উত্তরটা আমি দিয়ে রাখি। যেকোনো সাংস্কৃতিক বিকৃতির মূলে থাকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অতিমাত্রার লোভ, অসততা, রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি। জাতি হিসেবে আমরা এতটাই নিচে নেমে গেছি, লোভের বশে পড়ে আমরা কখনোই সত্য কথা বলি না, ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি এবং অসততার আশ্রয় নিয়ে সম্পদ অর্জনে বেশ মনোযোগী হয়ে পড়ি। এ থেকে বাদ যান না কেউ- কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী। কেউ না। এভাবে সংস্কৃতির প্রতি আমরা অবিচার করে চলেছি। এভাবে কবি কবি হতে পারছেন না, শিল্পী সিম্পলি একজন গায়ক হচ্ছেন, সাংবাদিক হচ্ছেন নির্লজ্জ চাঁদাবাজ।
দেখা যায়, যার যোগ্যতা রয়েছে স্কুটার চালিয়ে খাওয়ার তিনি হয়ে যাচ্ছেন সাংবাদিক, যার গ্রামের মেঠোপথের একজন অন্ধবয়াতীর সমান প্রতিভা নেই তিনি হয়ে যাচ্ছেন জনপ্রিয় শিল্পী, যিনি বাংলা ভুল লেখেন এবং সারা জীবনে একলাইনও উত্তীর্ণ কবিতা লিখতে পারেননি তিনি সুপরিচিত কবি। এই অপ্রিয় সত্য কথাগুলো এ জন্য বলছি যে, এই প্রত্যেকটি শ্রেণীর মানুষেরই কাজ কিন্তু সংস্কৃতির বিকাশ, চর্চা এবং পরিচর্যা। আর সংস্কৃতির ভূমিকা জাতির চরিত্র ও আদর্শ গঠনের। একটি জাতির এ চরিত্র ও আদর্শের জায়গাটি নষ্ট হয়ে গেলে অস্তিত্ব আর অটুট থাকে কোথায়?  যে সংগীত সবাইকে এককাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়, যে সংগীত তিরিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ভূখণ্ড রক্ষার প্রেরণা যোগায়, সে সংগীতের এমন বিকৃতি প্রশ্নাতীতভাবে রাজনৈতিক অসততা ও চারিত্রিক স্খলনের প্রমাণ বহন করে। এ বড়ো লজ্জার কথা যে জাতীয় সংগীতও আমরা ভুল গাই। তাহলে জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয় কী?

রবীন্দ্রনাথ এখন বেঁচে থাকলে কী বলতেন জানি না, হয়তো বলেতেন, ‘…আমি নয়ন জলে ভাসি…।’
Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:৫১ | শনিবার, ২৯ মার্চ ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com