সোমবার ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাহফুজ আনামের মন্তব্য কলাম : খালেদার সামনে যত চ্যালেঞ্জ

  |   শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ | প্রিন্ট

মাহফুজ আনামের মন্তব্য কলাম : খালেদার সামনে যত চ্যালেঞ্জ

mahfuz

ঢাকা: ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের মতে পুরানো ইস্যু, কৌশল ও জোট বিএনপির জন্য বোঝা। এগুলো এখন আর বিএনপির জন্য কোনো সম্পদ নয়। পুনর্গঠিত এবং পুনরায় চাঙ্গা হওয়ার ব্যাপারে বিএনপির কাছে থেকে নতুন আশার বাণী আসতে হবে। শুক্রবার তার সম্পাদিত ডেইলি স্টারে ‘চ্যালেঞ্জেস বিফোর খালেদা জিয়া’ শিরোনামে এক মন্তব্য কলামে এসব কথা বলেন মাহফুজ আনাম। তার কলামের বিশেষ অংশগুলোর অনুবাদ নতুন বার্তা ডটকমের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
“৮০’র দশকের এরশাদবিরোধী আন্দোলন ছিল একজন বিরোধী দলীয় নেতা  হিসেবে খালেদা জিয়ার জীবনের ‘শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত’। একজন বিধবা হিসেবে তিনি তার স্বামীর হত্যাকারী জেনারেল এরশাদকে উৎখাতের আন্দোলনে অটল ছিলেন। অবিরাম এবং আপসহীন নীতির কারণে তিনি লাখো মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেন। সাধারণ মানুষ বিধবা বেগম খালেদা জিয়ার মাঝে নেতৃত্ব সুলভ দৃঢ় চরিত্র খুঁজে পায় যেটা তার স্বামীর গঠন করা দলকে সামনে এগিয়ে নিতে সক্ষম।”
“রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি ছিলেন একেবারেই নবীন। একজন সাধারণ গৃহবধূ হওয়া সত্ত্বেও তিনি একজন সামরিক শাসককে উৎক্ষাত করতে সক্ষম হওয়ায় তা সবাইকে বিস্মিত করে। তিনি সবার কাছে ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।”
“এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়টি যদি বেগম খালেদা জিয়ার জীবনে ‘শ্রেষ্ঠ সময়’ হয়ে থাকে তবে পরবর্তীতে শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনটি তার জীবনের সবচেয়ে ‘অন্ধকার সময়’। আপসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি খালেদা জিয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে স্বাধীনভাবে চিন্তার মাধ্যমে পরিস্থিতির মূল্যায়ন, দ্রুত সমন্বয় এবং বুদ্ধিদীপ্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে ব্যর্থ হন। এর অন্যতম উদারহরণ প্রধানমন্ত্রীর ফোনের বিষয়টি এবং নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠনে সাড়া দিতে ব্যর্থ হওয়া।”
“এর শুরুটা হয় ২০০৮ এর নির্বাচনকে দিয়ে। ওই নির্বাচনের পরাজয়কে জনগণের রায় হিসেবে না মেনে তাকে তথাকথিত ‘১/১১ সরকারের’ মেকানিজম হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি। এমনকি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সরকার চালানোর সময় তার ছেলে যে ভুল করেছেন তা তিনি পর্যালোচনা করেননি।”
“যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা বিশেষ করে তরুণদের সেই বিষয়টি অগ্রাহ্য করেছে বিএনপি। আমার মতে, ১৯৭১ সালের গণহত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সাধারণ মানুষের মনে যে গভীর ক্ষত রয়েছে সেই বিষয়টি বেগম খালেদা জিয়া কখনোই অনুধাবন করেননি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং শহীদদের বিষয়ে তিনি অমার্জনীয় অসম্মান দেখিয়েছেন। বিশেষ করে ২০০১ সালের মন্ত্রিসভায় মতিউর রহমান নিজামী এবং আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদকে স্থান দেয়া হয়। দুইজনই যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত এবং বিচারের সম্মুখীন। জামায়াতকে সমর্থন দেয়া বা না দেয়াটা এক বিষয়। কিন্তু তাদের সরাসরি মন্ত্রিসভায় স্থান করে দেয়াটা ভিন্ন বিষয়। এই ঘটনাটি মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানসহ লাখো মানুষের কাছে থেকে বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে দুরত্ব সৃষ্টি করেছে। ”
“অপর একটি বিষয়ের জন্য খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে তারেক রহমান দায়ী থাকবেন। সেটা হলো নির্বাচন বয়কট ছাড়া অন্য কোনো সুযোগ না রাখা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করাই ছিল বিএনপির একমাত্র দাবি। কিন্তু যদি আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না করে তবে কী হবে, এই বিষয়ে কোনো সুযোগ রাখেনি বিএনপি। আমরা যেমনটি জানি যে, বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত ছিলেন। অনেকেই বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদীও ছিলেন।”
“বিএনপির এখন উচিত তাদের ভুল-ত্রুটিগুলোর দিকে বিষয়ের দিকে নজর দেয়া। আমাদের প্রায় ৬০ শতাংশ ভোটার তরুণ, যাদের বয়েস ২৫ এর নিচে। তারা কী ভাবছে? তাদের বিষয়ে বিএনপি কী ভাবছে? কেন তারা বিএনপিকে বিশ্বাস করবে? এই বিষয়গুলোর দিকে নজর দেয়া উচিত দলটির।”
“তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোট। এটা শুধুমাত্র রাজনৈতিক জোট বা যুদ্ধপরাধের বিষয়ে বিএনপির অবস্থানের প্রশ্ন না। এটা একটি বুদ্ধিজীবীভিত্তিক দল হিসেবে বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কী ধরনের ভবিষ্যত আমাদের দিতে চাইছে বিএনপি? জামায়াতের সঙ্গে জোট করায় ভবিষ্যতের বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের পার্থক্যই বা কতটুকু হবে? এই প্রশ্নগুলোও উঠে আসছে। বিএনপি দিনকে দিন জামায়াতনির্ভর হয়ে উঠছে, এর ভবিষ্যত কী? আধুনিক সমাজব্যবস্থার সঙ্গে ধর্মীয় ব্যবস্থার তুলনা কিভাবে হবে? ধর্মভিত্তিক রাজনীতির শেষ কোথায়? উগ্রবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বিএনপির অবস্থান কী হবে? এই প্রশ্নগুলোও উঠে আসছে।”
“পুনর্গঠিত এবং পুনরায় চাঙ্গা হওয়া বিএনপির কাছে থেকে নতুন আশার বাণী আসতে হবে। বিশেষ করে উল্লিখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়াটা জরুরি।”

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:৩৭ | শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com