সোমবার ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তোফায়েল ভাইয়ের অশিক্ষিত আহাম্মক! আসলেই কি তাই?

  |   বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৪ | প্রিন্ট

তোফায়েল ভাইয়ের অশিক্ষিত আহাম্মক! আসলেই কি তাই?

গোলাম মাওলা রনি 

rony

ইচ্ছে ছিল ভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখব। শিরোনামও ঠিক করে ফেলেছিলাম- ‘জমিনে খোদায়ি গজব কখন ফরজ হয়!’ মূলত হজরত মুসা আ:-এর জমানার ৯ জন ফেরাউনকে নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আরো কিছু লেখার ইচ্ছে ছিল। এটি হতো একটি গুরুগম্ভীর প্রকৃতির লেখা, যার মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মানুষেরা হয়তো আত্মার খোরাক খুঁজতেন। হঠাৎ করেই ভারিক্কি বিষয়ের দিকে ধাবিত হওয়ার মূলে রয়েছে বিগত দিনের হালকা ইমেজ থেকে বের হওয়ার প্রত্যাশা- যা আমি নিজে নিজেই তৈরি করেছি নয়া দিগন্তের পাঠকদের জন্য। বেশ কিছু দিন হলো নয়া দিগন্তে লিখছি- প্রায় সব লেখাই ছিল ফোক ফ্যান্টাসি প্রকৃতির। তাই সম্মানিত পাঠকদের একটু ভিন্ন আমেজের স্বাদ আস্বাদনের দিনগুলোতে এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত লিখব।

আজকের প্রসঙ্গটি হঠাৎ করেই চলে এলো। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে সাম্প্রতিককালে দু’টি বোমা ফাটানো কাণ্ড করে বসেছেন। প্রথমে একটি অনুষ্ঠানে বললেন- বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমানই হলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনি বিস্তারিত তেমন কিছুই বললেন না। তিনি হয়তো বলতে পারতেন মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের রাষ্ট্রপতি কিংবা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ইত্যাদি। তিনি ভালো করেই জানেন- বাংলাদেশের মানুষ এখন মূলত দু’টি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে- তার ধারার লোকজন কোনো প্রশ্ন ছাড়াই তাকে সমর্থন করবে, অন্য দিকে কোনো কারণ ছাড়াই বিরোধী পক্ষ ঝাঁপিয়ে পড়বে তার বিরুদ্ধে।

কার্যত হলোও তাই- সারা বাংলাদেশ মেতে উঠল প্রথম রাষ্ট্রপতি প্রসঙ্গ নিয়ে। প্রথম তত্ত্বের সফল প্রচারের পর তারেক রহমান দ্বিতীয় পর্ব মঞ্চায়নের উদ্যোগ নিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে বললেন- ‘অবৈধ’ প্রধানমন্ত্রী এবং তার বিরুদ্ধে দুটো অভিযোগ আনলেন- এক. বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি। দুই. তিনি পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। আর যায় কোথায়- বাংলাদেশের আওয়ামীপন্থী মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, উকিল-মোক্তার, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার এবং কট্টরপন্থী নেতাকর্মীরা একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়লেন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। যে যেভাবে পারলেন গালাগাল দিলেন- সমালোচনা করলেন এবং আগামী দিনে আরো কঠোর সমালোচনা করার জন্য তথ্য-উপাত্ত খুঁজতে আরম্ভ করলেন।

এত্তসব গালাগালির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যতা পেয়েছে আমাদের তোফায়েল ভাইয়ের অসাধারণ কিছু উচ্চারিত শব্দমালা। তোফায়েল আহমেদ তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে বলেছেন- ওরে আহাম্মক! লেখাপড়া জানিস না- তোর বাপ আমাদেরকে ‘স্যার স্যার’ বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলত। নাসিম ভাই বললেন, ও একটা বেয়াদব- ও একটা পাগল। ওরে ধরে আনতে হবে। খাদ্যমন্ত্রী লজ্জা পেয়ে বললেন, আমার খুবই লজ্জা লাগছে তারেক রহমানকে এখনো ধরে না আনার ব্যর্থতার জন্য। আইনমন্ত্রী জরুরিভাবে টাস্কফোর্সের মিটিং ডাকলেন তার দফতরে। আইন মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, সচিব ছাড়াও পুলিশ, র‌্যাব ও অন্যান্য সংস্থার অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং সরকারসমর্থক কর্মকর্তারা উপস্থিত হলেন। এই টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছিল গত সরকারের আমলে মূলত বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশ থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসার জন্য। বর্তমান আমলে সেই টাস্কফোর্সের অটো রিনিউয়াল করে জরুরি মিটিং ডাকা হলো। বহু কথা আলোচনার পর কেউ সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না- কে তারেক রহমানকে গ্রেফতার করবে! কে দায়িত্ব নেবে? আইনমন্ত্রী বললেন- এটা তার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়। তিনি সাংবাদিকদের বললেন,  মনে হচ্ছে তারেক রহমানের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তার চিকিৎসা দরকার।

তিনি অবশ্য বলেননি,  চিকিৎসা কে করাবে- সরকার, না জিয়া পরিবার। তিনি এ কথাও বলেননি,  চিকিৎসা কি লন্ডনে হবে, নাকি ঢাকার মানসিক হাসপাতালে কিংবা পাবনায়! সংসদে দাঁড়িয়ে তোফায়েল ভাই যখন তারেক রহমানকে গালি দিচ্ছিলেন, তখন তার ব্যক্তিত্বের মোহময় চিরায়ত এবং আসল রূপটি ফুটে উঠছিল। তিনি রাগে কাঁপছিলেন এবং মনে হচ্ছিল তারেক রহমানকে কাছে পেলে কিছু একটা করে ফেলতেন; কী করতেন? হয়তো ডলা দিয়ে দিতেন বা ছ্যাঁচা দিতেন। পাটার ওপর পুতা দিয়ে মরিচ যেভাবে ডলা দেয় কিংবা হলুদ যেভাবে ছ্যাঁচা হয়- ঠিক সেভাবে নিজ হাতে তিনি কর্মটি করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ঋণ শোধ করতেন। আমার মনে হয়, তারেক রহমান ইচ্ছে করেই এসব কাজ করেছেন। এ মুহূর্তে সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলন করার ইস্যু বিরোধী দলের হাতে নেই। অথচ মাঠ গরম রাখা দরকার। কাজেই তিনি এমন কিছু বলবেন যাতে সরকার রাগে, ক্রোধে এবং উত্তেজনায় ছটফট করতে শুরু করে। নেতারা সব ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারেক নিধনে, আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যেন রাস্তায় নেমে আসে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- তারেক রহমানের পরিকল্পনাই যেন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। দেশময় শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। পক্ষ-বিপক্ষে যে যা ইচ্ছা যাচ্ছেতাই বলছে। সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য পরিস্থিতি হয়ে যাচ্ছে একেবারে শাঁখের করাতের মতো। যদি প্রতিক্রিয়া না দেখানো হয়, তবে সবাই বলবে- ঘটনার মধ্যে সত্যতা নিশ্চয়ই আছে। নইলে আওয়ামী লীগ কিছু বলল না কেন। অন্য দিকে দলটি যখন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তখন বিরুদ্ধবাদীরা যা ইচ্ছা তাই বলে যাচ্ছে। ইদানীং সব কিছুই যেন ইন্টারনেট-নির্ভর হয়ে গেছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এখন ডিজিটাল দুনিয়ার মহব্বতের ছোট ভাই। বাংলা ভাষাভাষী দেশ-বিদেশের প্রায় দুই কোটি লোক ইন্টারনেটের সাথে জড়িত। এদের আবার বেশির ভাগই তরুণ-তরুণী কিংবা যুবক-যুবতী। তারা সবাই দিনরাত ইন্টারনেট নিয়ে থাকে, চ্যাটিং করে। অর্থাৎ একে অন্যের সাথে ইন্টারনেটের মাধ্যমে গল্পগুজব ও রঙ-তামাশা করে। এদের রাজনীতি, প্রেম-ভালোবাসা সব কিছুই কম্পিউটার-নির্ভর। এদেরই একটি অংশ গণজাগরণ মঞ্চের সাথে জড়িত ছিল। সরকারের সাথে যত দিন গণজাগরণ মঞ্চের সুসম্পর্ক ছিল, তত দিন ইন্টারনেটের মাধ্যমে এ জগৎ, যা কিনা সাইবার ওয়ার্ল্ড নামে পরিচিত; তা বলতে গেলে সরকারি দলের দখলে ছিল; কিন্তু ইদানীং পরিস্থিতি ভিন্ন, বলতে গেলে পুরোটাই সরকারবিরোধী হয়ে পড়েছে।

তারেক রহমান জেনে হোক বা না জেনে হোক, এই সাইবার যোদ্ধাদের হাতে কতগুলো মারাত্মক অস্ত্র দিয়েছেন- আর তা নিয়েই চলছে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। আমাদের প্রিয় তোফায়েল ভাই যাকে অশিক্ষিত ও আহাম্মক বলে গালি দিয়েছেন, সেই লোকটির বড় সফলতা হলো- তোফায়েল সাহেবদের মতো কিংবদন্তিদের খেলার মাঠে নামিয়ে নিয়ে আসা। ভদ্র ভাষায় বললে বলতে হয় রিংয়ে নামিয়ে নিয়ে আসা। এতে করে বিএনপি বা তারেক রহমানদের লাভক্ষতি কতটুকু হবে জানি না, কিন্তু ব্যক্তি তোফায়েল আহমেদের অনেক অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে এবং আগামীতে আরো হবে। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে তোফায়েল আহমেদকে নিয়ে এমন সব কথা বলা হচ্ছে- এমন সব তথ্য উপস্থাপিত হচ্ছে, তা আমার পক্ষে লেখা বা বলা সম্ভব হবে না। একটি প্রবাদ আছে- প্রকৃতি কখনো নীরবতা সহ্য করে না।

আবার এ কথাও বলা হয় যে, প্রবল ঝড়ের আগে কিছুক্ষণ পরিস্থিতি বেশ ঠাণ্ডা আর শান্ত থাকে; বৃষ্টি বর্ষণের আগে খুব গরম পড়ে- ইত্যাদি আরো কত কথা যে চালু আছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। আমাদের দেশে গত ৫ জানুয়ারি যা হয়ে গেল- তা আর যা হোক, নির্বাচন হয়নি। তামাম দুনিয়ার সভ্য কোনো দেশ এখনো এই নির্বাচন সম্পর্কে ইতিবাচক কোনো মন্তব্য করেনি। সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গোপনে গোপনে প্রাণান্ত চেষ্টা করছে বিদেশী রাষ্ট্রগুলো থেকে স্বীকৃতি আদায় করার জন্য। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না কিছুতেই। এ দিকে ৫ জানুয়ারিকে ডেটলাইন ধরে পূর্ববর্তী সময়ে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা সংঘটিত হওয়ার পর জনগণ যখন দেখল, কিছুই হলো না- তখন সারা দেশ নিশ্চুপ হয়ে গেল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণের মতে, এই নিশ্চুপ হওয়া ছিল সরকারের জন্য প্রকৃতির দেয়া এক মহা উপহার। ইংরেজিতে একে বলে ইৎবধঃযরহম ঞরসব, অর্থাৎ শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের সময়। অন্য দিকে দেশ ও দশের জন্য সময়টি হলো- অশনিসঙ্কেত। অর্থাৎ ঝড় আসার পূর্বলক্ষণ। তারেক রহমানের বক্তব্যের পর তোফায়েল সাহেবদের চরম প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে বলছেন- মূলত দলীয় প্রধানের কাছে নম্বর বাড়ানোর জন্য যত্তসব হম্বিতম্বি। এর বাইরে প্রশ্ন উঠেছে ১৯৭১ সালের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। লোকজন জানতে চাচ্ছে- কেন তোফায়েল সাহেব বা তারচেয়েও বড় মাপের জাতীয় চার নেতা ২৬ মার্চের ঘোষণাটি দিলেন না? কেনই বা চট্টগ্রামের একজন অখ্যাত আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ঘোষণা দেবেন? যুদ্ধকালীন বঙ্গমাতা বেগম মুজিব তো বলতে গেলে স্বাধীনভাবেই ঘোরাফেরা করেছেন। তিনি কেন এই ঘোষণা সম্পর্কে কিছু বললেন না? সমালোচকেরা বলছে- ’৭১-এর রক্তঝরা দিনগুলোতে ড. ওয়াজেদ মিয়া নিয়মিত সরকারি অফিস করেছেন? মুক্তিযুদ্ধে যাননি।

তিনি জেনারেল রাও ফরমান আলীর সাথেও দেখা করেছিলেন। পাকিস্তানি পাসপোর্টে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, ক্ষমতার সময়ে একবারের জন্যও কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের মুজিবনগরে না যাওয়া, তাজউদ্দীন আহমদ বা অন্য কোনো নেতা বিশেষ করে জেনারেল ওসমানীকে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস সম্পর্কে একটি প্রশ্নও না করা, ওআইসি সম্মেলনে যাওয়ার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ভুট্টোকে ফোন করা এবং সবার বাধা ও নিষেধ উপেক্ষা করে সেই সম্মেলনে যোগদান ইত্যাদি পুরনো বিষয় আবার নতুন করে উত্থাপিত হচ্ছে। সরকারি দল যদি এসব বিষয়ে মেধাদীপ্ত উত্তর দিতে না পারে তবে তোফায়েল ভাইয়ের ‘আহাম্মকে’র লাভই বেশি হবে।

তোফায়েল ভাই তারেক রহমানের শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তারেক রহমানের লোকজন বলছে তিনি নাকি খুব তাড়াতাড়ি ব্যারিস্টার হয়ে যাচ্ছেন। তার স্ত্রীর উচ্চমার্গের শিক্ষাদীক্ষা এবং পারিবারিক ঐতিহ্য নিয়ে তারা গর্ব করছেন এবং তোফায়েল ভাইয়ের শিক্ষাদীক্ষা ও পরিবার নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এই বিতর্ক এবং সংসদের বাইরের বিতর্ক- এর ভবিষ্যৎ যে ভালো হবে না, তা বোঝার জন্য খুব বেশি বুদ্ধিমান হওয়ার দরকার নেই। ভয় হয়- আমরা বিতর্ক করতে করতে না জানি কতটা নিচে নেমে যাই। ইতোমধ্যে আমরা শাড়ির দাম এবং ব্লাউজের মজুরি পর্যন্ত নেমেছি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, আর যেন নিচে নেমে না যাই। আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা, বেশির ভাগ রাজনীতিবিদ লেখাপড়া করেন না। আর যদি বা কেউ একটু লেখাপড়া করেন, তবে পঠিত বিষয় নিয়ে চিন্তা ও চর্চা করেন না। তারা না নিজের জন্য স্বপ্ন দেখেন, না জাতির জন্য। উন্নত ও সভ্য দেশের রাজনীতিবিদেরা বলে দিতে পারেন- আগামী ৫০ বছর পর দেশের রাজনৈতিক অবস্থা কেমন হবে; কিন্তু আমাদের দেশের রাজনীতিবিদেরা কেবল বর্তমান এবং নগদ নারায়ণ নিয়েই ব্যস্ত।

২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে এ দেশের কোনো রাজনীতিবিদ যেমন ভাবেননি ২০১৪ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে, তেমনি আগামী দিনগুলোতে কী হতে পারে, তা নিয়ে কেউ চিন্তা করছেন না। অথচ অনেকেই নিজেকে মহাত্মা গান্ধী কিংবা পণ্ডিত নেহরু ভেবে বসেন। ১৯৫৩ সালে নেহরুকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আগামী দিনে ভারতের ভবিষ্যৎ কিরূপ হবে বলে আপনি মনে করেন? পণ্ডিতজী উত্তর করেছিলেন,  বর্তমান বিশ্বের পরাশক্তি ইংল্যান্ড আর বছর দশেকের মধ্যে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব হারিয়ে ফেলবে। ব্রিটিশদের জায়গা দখল করবে আমেরিকা এবং আগামী ৭০-৮০ বছর পরে আমেরিকাকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে আসবে চীন এবং চীনের পর সেই জায়গা দখল করবে ভারত। আওয়ামী লীগের উচিত, তাদের প্রতিপক্ষ বিএনপিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করা।

বক্তৃতার মঞ্চে গলা ফাটানো অনেক সহজ; কিন্তু বাস্তব জীবনে সফলতা আনা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। আমি তো ভেবে পাই না, যদি বিএনপি চ্যালেঞ্জ করে আওয়ামী লীগকে বলে বসে যে- আপনাদের দলের ৫০ জন নেতাকে মনোনয়ন দিন, আর আমরাও দিই। তারপর উভয় দলের নেতারা জাতির সামনে নিজেদের ব্যক্তিগত জ্ঞান, গরিমা, সততা, সফলতা, দলীয় বিষয়গুলো এবং জাতীয় স্বার্থ নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হোক আমেরিকার মতো। এরপর জাতিই সিদ্ধান্ত নিক কোন দলে যোগ্য লোকের সংখ্যা বেশি। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবে? কিংবা আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী পুরনো দলকে এ ধরনের প্রস্তাব দেয়ার মনোবল কি বিএনপির আদৌ আছে? অথচ এমনটিই হওয়া উচিত।

যদি গণতন্ত্রকে কেউ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চায়, সে ক্ষেত্রে গণমানুষের কাছে নিজেদের জবাবদিহি অতীব জরুরি। এবার শিরোনাম প্রসঙ্গে আসি। আমাদের তোফায়েল ভাই কাউকে ‘তুই-তোকারি’ করে গালি দিয়েছেন। কারো বাবা-মায়ের প্রসঙ্গ তুলে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করেছেন। ভালো কথা, তিনি তা করতেই পারেন। বাংলাদেশে তো তোফায়েল আহমেদ একজনই। তার ভুল ধরে এমন সাধ্য কয়জনের? কিন্তু কেউ যদি প্রশ্ন করেন- ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ তার কী পোর্টফলিও ছিল। কিংবা ১৯৭৭-৭৮ সালে তাকে কে কে স্যার বলে মুখে ফেনা তুলেছিল। তিনি যাকে আহাম্মক বলে গালি দিলেন, সেই লোক যদি বিনয়ের সাথে বলে- আচ্ছা, ১৯৬০-৬৫ সালে আমার বাবা যদি আপনার বাবার মুখোমুখি হতেন, তাহলে কে কাকে স্যার বলত। কিংবা আপনি নিজেও যদি ওই সময় তার সামনে পড়তেন তবে কে কাকে স্যার বলত! তারেক রহমান এসব প্রশ্ন না করলেও কিন্তু অনেকে করছে।

তোফায়েল ভাই ওইসব প্রশ্ন শুনতে পাচ্ছেন কি না আমি জানি না; কিন্তু তার একজন অনুরক্ত হিসেবে খুবই কষ্ট পাচ্ছি। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ জেনে কিংবা না জেনে হোক- আরো কয়েকটি মারাত্মক ভুল করছেন। তারা মরহুম জিয়াউর রহমানকে গালি দিতে গিয়ে তাকে ‘৪০০ টাকা বেতনের মেজর’ বলে ঠাট্টা করছেন। অনেকে তাকে শয়তান বা স্কাউন্ড্রেল বলছেন আর তারেককে বলছেন বাছুর- অর্থাৎ গরুর বাচ্চা। এসব কি ঠিক হচ্ছে- আমি বলব অবশ্যই নয়। তারা না বুঝেই তারেক রহমানের জালে পা দিচ্ছেন। তারা যখন ‘৪০০ টাকার মেজর’ বলে গালি দিচ্ছেন, তখন সেই গালি কিন্তু বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের গায়ে লাগছে- কোনো দেশের সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদেরকে অপমান করার অধিকার কারো নেই।

অন্য বিষয়টি হলো- কেউ স্বীকার করুক বা না করুক, সেনাকর্মকর্তাদের মধ্যে জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তার মাত্রা বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত কেউ অতিক্রম করতে পারেননি। অন্য দিকে সাধারণ সিপাইদের মধ্যে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কিন্তু এখন পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। কাজেই জিয়াউর রহমানকে গরু আর তার ছেলেকে গরুর বাচ্চা বলা যে কতটা স্বাভাবিক কর্ম হলো, তা বক্তাগণই ভালো বলতে পারবেন। সারা দেশ এখন চলছে অস্বাভাবিকভাবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই চাপা ক্ষোভ। মানুষের মনে অপমান আর বেদনার বহু উপাখ্যান দানা বাঁধছে বিক্ষোভে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য। সরকারের কর্তাব্যক্তিদের উচিত জনমনের কষ্ট, ক্ষোভ আর বেদনাকে দূর করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করা; কিন্তু তা না করে গ্রীষ্মকালের কড়া উত্তাপে যদি অনাহূত রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়ানো হয়, তবে আর যাই হোক, ভালো কিছু হবে না।

-সাবেক সংসদ সদস্য

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৫:১৭ | বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com