সোমবার ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জামায়াত – বিএনপির ফার্স ফর ডেমোক্রেসি

  |   বুধবার, ০১ জানুয়ারি ২০১৪ | প্রিন্ট

আবুল হাসনাৎ মিল্টন

milton

আকাশে গাঢ় মেঘ জমলে ঝড় না হোক, সামান্য বৃষ্টি তো হতে পারত। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের পেটে আরেকটি বাঘ না হোক নিদেন পক্ষে একটা হুলো বেড়াল। কিন্তু তার কিছুই হলো না। গত ২৯ ডিসেম্বর জামায়াত – বিএনপির নেতৃত্বাধীন আঠারোদলীয় জোটের সারা বাংলাদেশ থেকে ঢাকামুখী মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচিটি চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কর্মসূচিটি অবশ্য ব্যর্থ হবারই কথা। আন্দোলনের এই পর্যায়ে যতটুকু গণসম্পৃক্ততা থাকার দরকার ছিল, বিগত দিনে তার সামান্য পরিমাণও পরিলক্ষিত হয়নি। বরং আঠারো দলের বর্তমানের আন্দোলনটি ছিল সন্ত্রাস নির্ভর। পরিণতিতে যা হবার তাই হয়েছে।
বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া দলীয়-জোটের নেতা-কর্মীর পাশাপাশি দেশবাসী, বিশেষ করে ঢাকাবাসী সবাইকে মার্চ ফর ডেমোক্রেসির এই কার্যক্রমে যোগ দিয়ে নয়া পল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিতে বলেন। কিন্তু তার এই ডাকে জোটের ও দলের নেতা-কর্মীরাই কোনো সাড়া দেয়নি, দেশ বা নগরবাসী তো অনেক দূরের ব্যাপার। কেবল সাড়া দিয়েছিলেন কুমিল্লা থেকে আগত জহিরুল ইসলাম আপন নামের এক ছাত্রদল কর্মী। নেত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেচারা জহিরুল পল্টন অফিসের সামনে এসে দলের কোনো নেতা-কর্মীকে না পেয়ে মনের দুঃখে মিনিট দশেক আপন মনে নেচেছেন। যেন তার নাচের মুদ্রায় চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়েছেন জামায়াত-বিএনপির নেতৃত্বাধীন আঠারো দলের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব!
কর্মসূচির ঘোষণানুযায়ী গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় সারা দেশ থেকে নেতা – কর্মীরা এসে নয়া পল্টন অফিসের সামনে সমাবেশ করবে, চাইলে হয়তো সেখানেই তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান করে মিশরের ‘আরব বসন্ত’ স্টাইলে সরকারের পতনও ঘটিয়ে দিতে পারে। এরকম একটি কর্মসূচিতে সরকার নিশ্চয়ই হাত-পা গুটিয়ে চুপ করে বসে থাকবে না। সরকার ও সরকার সমর্থক ১৪ দলের পক্ষ থেকে এই কর্মসূচি ব্যর্থ করে দিতে সবরকমের আয়োজন থাকবে এটাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিক ঘটনা। সুতরাং, যারা মার্চ ফর ডেমোক্রেসির মতো কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন, তারা নিশ্চয়ই সরকারের পদক্ষেপ কী রকম হবে সেটা আগেই ধারনা করেছিলেন। কিন্তু ২৯ ডিসেম্বর উল্লেখ করবার মতো কিছুই ঘটেনি। শোনা গিয়েছিল, জামায়াত না কী সারাদেশ থেকে তাদের সব প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনীকে ঢাকায় নিয়ে এসেছে। অথচ মালিবাগের মোড়ে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ ছাড়া সারা শহর জুড়ে জামায়াত-শিবিরের আর কারো টিকিটাও দেখা যায়নি। বরং আইনজীবী-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো পেশাজীবীরা কিছুটা হলেও মাঠে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করেছেন।
জামায়াত-বিএনপির রাজনীতির সমর্থক না হয়েও তাদের বর্তমান রাজনৈতিক দৈন্যতায় যুগপৎ বিস্মিত ও ব্যথিত হয়েছি। ১৮ দলের অন্তত আঠারো জন নেতাও যদি সাথে কয়েকশ’ কর্মী-সমর্থক নিয়েও নয়া পল্টনের বিএনপি কার্যালয়ের সামনে আসতেন তাও বলা যেতো যে তারা ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের ব্যাপারে আন্তরিক ছিল। পার্টি অফিসের সামনে যদি সমাবেশও না করতে পারত, অন্তত পুলিশের বাধা পেরোনোর চেষ্টা করতে পারত। হতো না হয় কিছু ধাক্কাধাক্কি কিংবা সংঘর্ষ, না হয় জেলে যেতেন নেতৃবৃন্দ। কিন্তু সবকিছুই কাজীর গরুর মতো হয়ে গেল, কিতাবেই থাকল কিন্তু গোয়ালে আর খুঁজে পাওয়া গেল না।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া নিজেও নয়া পল্টনে আসেননি। আন্দোলনের কৌশলের অংশ হিসেবে বারবার সময় পরিবর্তন করে দুপুরের পর পুলিশি বাধার মুখে তিনি বাসা থেকে বেরোতেই পারলেন না। তবে অফিসের উদ্দেশে না বেরোতে পারলেও তার মুখ থেকে কথার মতো করে যা বেরিয়েছে তা নিয়ে এখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসহ প্রায় সব মাধ্যমেই চলছে বিরূপ সমালোচনা। তার গুলশানস্থ বাসায় পাহারারত মহিলা পুলিশদের তিনি বেয়াদব বলে গালাগালি করেছেন। অথচ তিনি নিজেও একাধিকবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি তো ভালোই জানেন এইসব পুলিশ সদস্যারা কীভাবে, কাদের নির্দেশে দায়িত্ব পালন করেন। তবে কেবল বেয়াদব বলেই ক্ষান্ত হননি, গোপালগঞ্জের উপরও এক হাত নিয়েছেন। গোপালগঞ্জবাসীদের গোপালি বলে কটাক্ষ করে তিনি রীতিমত হুমকি দিয়েছেন, গোপালগঞ্জ জেলার নামই বদলে দেবেন, গোপালগঞ্জ নাকি আর থাকবে না। সঙ্গত কারণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মস্থান গোপালগঞ্জের উপর বেগম জিয়ার এত ক্ষোভ কেন সেই প্রশ্নও উঠেছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এটি তার পাকিস্তানপ্রীতির নমুনা হিসেবেই জনসম্মুখে তুলে ধরছে। জনশ্রুতি আছে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ভাষণ লিখে দেন সুবিধাবাদী সাংবাদিক শফিক রেহমান, যার লেখার হাত চমৎকার। বেগম জিয়া যখন লিখিত স্ক্রিপ্ট দেখে ভাষণ পাঠ করেন, তখন তাতে সুন্দর শব্দের সমাহার দেখে আমরা মুগ্ধ হই। কিন্তু তিনি যখন লিখিত স্ক্রিপ্ট ছাড়া কথা বলেন, তখন মাঝে মধ্যেই বিপত্তি ঘটে যায়। সেদিন ছিল এরকম একটা দিন। মার্চ ফর ডেমোক্রেসি ব্যর্থ হয়ে কেবল ফার্সই হয়নি, শেষ বেলায় তার মুখ নিঃসৃত শব্দাবলী ব্যর্থতার আগুনে ঘি ঢেলেছে। টেলিভিশন চ্যানেলের কল্যাণে তার এই হুমকি-ধামকি বিশ্বময় ছড়িয়ে যাওয়ায় তিনি সবখানেই ভীষণভাবে নিন্দিত হচ্ছেন।
তারপরও মহাফ্লপ ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিকে লাগাতার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপির কর্মী – সমর্থকরাও এই মুহূর্তে দ্বিধান্বিত!আমার মনে হয়, এইভাবে অনিশ্চিতের পথে না হেঁটে বিএনপির উচিত সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বাস্তবতার প্রেক্ষিতে আন্দোলনের নতুন কৌশল ঠিক করা। পাঁচটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে ১৮দলীয় জোটের আগামীতে সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, পরবর্তীতে ক্রমাগত অপরিপক্ক ও ভুল রাজনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে বিএনপি যেন সেই সম্ভাবনাকে ক্রমাগত দূরে ঠেলে দিচ্ছে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্যও এটি ক্ষতিকর।
আবুল হাসনাৎ মিল্টন: কবি ও চিকিৎসক

বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনারত।

ই – মেইল: milton_ah@hotmail.com

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০২:৪৪ | বুধবার, ০১ জানুয়ারি ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com