সোমবার ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গণতন্ত্রের শেখ হাসিনা স্টাইল : তারা কথা রেখেছেন, ওনারা কথা রাখেননি

  |   সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট

অলিউল্লাহ নোমান
Noman_2

কথা রাখলেন তারা। কিন্তু ওনারা কথা রাখতে পারেননি। আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি ঘোষণা করেছিলেন মাছিও ঢুকতে পারবে না। সেই কথা তিনি রেখেছেন। একজনও নয়া পল্টনে ঢুকতে পারেননি। অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম শেখ হাসিনার ইচ্ছাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে আইন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন আওয়ামী লীগ লাঠি নিয়ে মাঠে থাকবে। সেটাও পালন হয়েছে অক্ষরে অক্ষরে। বরং ক্ষেত্রবিশেষ প্রয়োগ হয়েছে। লাঠির সঙ্গে হকিস্টিক, ক্রিকেট স্ট্যাম্পও ছিল। এই লাঠি, হকিস্টিক, ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে তাণ্ডব চালানো হয়েছে সুপ্রিমকোর্ট অঙ্গন এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবে।


বিএনপি নেতারা বলেছিলেন সকল বাধা অতিক্রম করে যে কোনো মূল্যে মার্চ ফর ডেমোক্রেসি সফল করা হবে। সবার মোহনা হবে নয়াপল্টনে। লাখ লাখ গণতন্ত্রকামী মানুষ ঢাকায় পৌঁছে যাওয়ার গল্প বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই কথা রাখলেন না ওনারা। কর্মীতো দূরের কথা, কোনো নেতাকেও দেখা যায়নি রাজপথে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমদ চৌধুরীসহ মাত্র ১০ জন ছিলেন এর ব্যতিক্রম। যারা নয়াপল্টন এলাকা থেকে পুলিশের হাতে আটক হন। তবে ১৮ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন নয়া পল্টনের দিকে রওয়ানা দিতে। বাড়ির ভেতর থেকে বের হয়েছিলেন গাড়িতে উঠে। গেটেই থামিয়ে দেয়া হয় তার গাড়ি। গাড়ি থেকে নেমে অসুস্থ পায়ে হেঁটে রওয়ানা করতে চেয়েছিলেন। পায়ে হাঁটায়ও গতিরোধ করে আওয়ামী-বাম পুলিশ। তার চেষ্টার কমতি ছিল না। গণতন্ত্রের জন্য তিনি যে আপসহীন সেই প্রমাণ আবারো রাখলেন। কিন্তু তার দলের নেতারা সেই চেষ্টা টুকুন করলেন না। তাকে আওয়ামী-বাম পুলিশ আসতে দেয়নি হয়তো ভালোই হয়েছে। নয়া পল্টন পর্যন্ত পৌঁছাতে দিলে এসে হয়তো : দেখতেন কেউ নেই। তিনি একা।
১৮ দলীয় জোটের নেতারা সবাই হাওয়া। কারো খোঁজ মেলেনি। এখন বলা হচ্ছে এটাও ওনাদের আন্দোলনের কৌশল। ইন্ডিয়াপন্থী আওয়ামী-বাম গণমাধ্যমগুলোকে অন্ত্মত তান্ডব বলা থেকে বিরত রাখা গেছে। নেতারা বের হলে সঙ্গে কর্মীও থাকতেন। তখন বাধা দিত পুলিশ। তারপরও অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালাতো। গুলির শব্দে এদিক-সেদিন ছোটাছুটি হতো। গোয়েন্দারা বোমা সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটাতো। আওয়ামী-বাম মিডিয়াগুলে প্রেরণায় লিপ্ত হতো ১৮ দলীয় জোটের তাণ্ডব বলে। সেই সুযোগটা অন্তত এবার পায়নি আওয়ামী-বাম মিডিয়া।


মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচি ঠেকাতে আওয়ামী লীগ ও বামরা যা করেছে তার সিকি পরিমাণ বিরোধী দল করলে তাণ্ডব বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলতেন ইন্ডিয়াপন্থী আওয়ামী-বাম গণমাধ্যমগুলো। লাঠি, হকিস্টিক, ক্রিকেট স্ট্যাম্প, ইট-পাটকেল নিয়ে পুলিশ পাহারায় মারমুখী আওয়ামী-বাম ক্যাডাররা। দিনভর তাণ্ডব চালানো হয়েছে জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং সুপিমকোর্ট প্রাঙ্গণে। তারপরও তারা জঙ্গি নয়। তারা হলেন গণতন্ত্রের সৈনিক। আর বিরোধী দল রাজপথে খালি হাতে নামলেও বলা হয় জঙ্গি মিছিল। জাতীয় প্রেস ক্লাবে বন্ধ মিডিয়া খুলে দেয়ার দাবিতে সমাবেশকে পুলিশ কমিশনার জঙ্গি বলে আখ্যায়িত করলেন। এত লাঠি, হকিস্টিক, ক্রিকেট স্ট্যাম্প বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হাতে দেখলে আওয়ামী-বাম মিডিয়াগুলো কী প্রচারণা চালাতেন সেটা আল্লাই মালুম। তারা হয়তো তখন স্বপ্ন দেখতেন আফগানিস্তান থেকে তালেবান এসে যোগ দিয়েছে। পাকিস্তান থেকে এসেছে লাঠি, ক্রিকেট স্ট্যাম্প এবং হকিস্টিক। কারণ হকি এবং ক্রিকেট দু’টাতেই পাকিস্তান পারদর্শী।
বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো রাজনৈতকি দলের সরাসরি জঙ্গি আক্রমণের শিকার হয়নি প্রেসক্লাব। এবার সেটা হয়েছে। কিন্তু ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার উল্টা বললেন, তিনি প্রেসক্লাবে জঙ্গিদের আস্তানা দেখেছেন। সুতরাং পুলিশ পাহারায় আওয়ামী-বাম জঙ্গিরা যা করেছে সঠিক। তেমনি প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলের সরাসরি আক্রমণের শিকার হলো সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণ। এই আক্রমণে শতভাগ সহযোগিতা করেছে রাষ্ট্রীয় বেতনভুক্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এসব আক্রমণ যদি বিরোধী দলের পক্ষ থেকে হতো তাহলে ইন্ডিয়াপন্থী’ ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলোতে তাণ্ডব শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে যেত। প্রিন্ট মিডিয়াগুলো লাল কালি দিয়ে ব্যানার হেডিং করত। এবার আর তাদের সেটা করতে হয়নি। গণতন্ত্রের মসৃণ ভাষায় হামলা শব্দটি উল্লেখ করেছে আওয়ামী-বাম মিডিয়াগুলো। সাধুবাদ জানাই তাদের, অন্তত ‘হামলা’ শব্দটি বলা হয়েছে। তারা অন্তত: বেনজির আহমদের মতো বলেননি প্রেসক্লাবে জঙ্গিদের প্রতি গণতন্ত্রকামীদের লাল গোলাপ নিক্ষেপ। সেটা বললেও কিছু করার ছিল না। তবে তারা জামায়াত-বিএনপি সাংবাদিক বলতে কসুর করেনি।


প্রথমে দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে বলা হয়েছিল সরকারি দলের নেতা-কমীরা লাঠি নিয়ে প্রেস ক্লাব ও সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে চড়াও। রাতেই সংস্করণে দেখা গেল একটু উন্নতি হয়েছে। বলা হয়েছে হামলা। ইন্ডিয়াপন্থী দৈনিক সমকাল অবশ্য চড়াও শব্দটিই সংস্করণেও ব্যবহার করেছে। এখন একই ঘটনায় দুই দলের জন্য দুই রকমের শব্দ ব্যবহার মিডিয়াগুলোতে চালু হয়েছে। আগে এমনটা ছিল না। আমাদের সাংবাদিকতার মান উন্নত হয়েছে। শব্দের ব্যবহার করতে হবে দল অনুযায়ী।
সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে এর আগে রাজনৈতিক দলের লাঠিধারী ক্যাডার বাহিনীর আক্রমণ কখনো ঘটেনি। এবার আগের দিন আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী এবং পরের দিন আওয়ামী মহিলা জঙ্গি লীগ লাঠি সোটা নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট অঙ্গনে হামলা করল। অবশ্য ২০০৬ সালের ২৯ নভেম্বর আওয়ামী-বামপন্থি আইনজীবীদের আক্রমণে প্রধান বিচারপতির এজলাস পর্যন্ত ভাংচুর হয়েছিল। অগ্নি সংযোগ হয়েছিল সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণের রাখা চিহ্নিত কয়েকটি গাড়িতে। ভাংচুর করা হয়েছিল অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ভবনের ফটকের কাচ। এবার সরাসরি রাজনৈতিক বহিরাগত ক্যাডার লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে।
সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে শুধু হামলা নয়, মহিলা আইনজীবীর উপর আওয়ামী হায়েনাদের ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়াগুলো দিনভর ভাসছিল। কিল, ঘুষি, লাথি মারার এক পর্যায়ে মাটিতে শুয়ে পড়েন এক মহিলা আইনজীবী। তারপরও তাকে লাথি মারা হচ্ছে, লাঠি দিয়ে পেটানো হচ্ছে। ওই মহিলা আইনজীবী যে আওয়ামী নেতা এইচ টি ইমামের ভাতিজি সেটা হয়তো তারা জানেন না। জানলে হয়তো এত কিল, ঘুষি, লাথি ও লাঠি পেটা তাকে সহ্য করতে হতো না। শুধু এইচ টি ইমামের ভাতিজি সিমকি ইমাম নন, আরো কয়েকজন মহিলা আইনজীবীর উপর একই রকম তাণ্ডব চলেছে। এরকম অনেক ছবি দেখা গেছে শোস্যাল মিডিয়ায়। সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবীর গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। এসব কিন্তু বিরোধী দলের পক্ষ থেকে হলে তাণ্ডব। আর আওয়ামী লীগ করেছে এজন্য গণতন্ত্রের মসৃণ কাজ এগুলো। আওয়ামী-বামপন্থী মিডিয়াগুলোর দৃষ্টিতে এসব হচ্ছে আওয়ামী গণতন্ত্রের মসৃণ রূপ। এজন্য হামলা শব্দটি বাদ দিতে পারলেও তারা রেহাই পেতেন। কিন্তু না। এখন আর কোনোকিছু গোপন করার সুযোগ থাকে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্তত চলে আসে। এজন্য হামলা বা চড়াও লিখে ইজ্জত রক্ষা করা।


প্রেস ক্লাবে এর আগে কখনো এরকম হামলা হয়নি। সাংবাদিকদের সমাবেশ পণ্ড করা হয়েছে, ভাংচুর করা হয়েছে মাইক। আওয়ামী গণতন্ত্রের আক্রমণে বন্ধ হওয়া মিডিয়াগুলো খুলে দেয়ার দাবিতে সাংবাদিকরা সমাবেশ করছিল। অবশ্য ইন্ডিয়াপন্থী আওয়ামী বাম মিডিয়াগুলোর পরিবেশিত সংবাদে সমাবেশকারীদের বলা হয়েছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী। তারই ধারাবাহিকতায় পরের দিন পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমদ বললেন জঙ্গিদের সমাবেশ চলছিল। যারা এটা লিখছেন তারা নিজেরা যে আওয়ামী-বাম ও হিন্দুস্তানপন্থী সেটা কিন্তু ভুলে গেছেন। তাদের নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী নৌকা মার্কা নিয়ে ইলেকশন করেছেন। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা। তারপরও তিনি নিরপেক্ষতার সবক দিলেন। বললেন প্রেস ক্লাব সাংবাদিকদের নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাইলে এরকম হামলা হওয়া স্বাভাবিক। প্রেস ক্লাবের এই নারকীয় তাণ্ডবের পক্ষে সাফাই গাইলেন। তার নেতৃত্বে আওয়ামী-বামপন্থী সাংবাদিকদের সমাবেশ হলো আওয়ামী জঙ্গিদের হামলার সমর্থনে।
এখন যদি কোনো শিশু তার বাবাকে প্রশ্ন করে আচ্ছা পাকিস্তানিরা আমাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতো। পাকিস্তান আমলে এরকম হলে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল কেমন করে! তখনো কি পাকিস্তান সরকার এরকম সিলেকশন করেছিল। নাকি মানুষ ভোট দিয়ে তখন আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করেছিল! পাকিস্তানিরা শেখ হাসিনার মতো এরকম করলে শেখ মুজিবের দল আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় কেমনে! পাকিস্তানিরা এরকম সভা-সমাবেশ বন্ধ করলে ৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ভাষণ দিলেন কেমন করে! তাহলে কী আমরা পাকিস্তান আমলের চেয়েও খারাপ অবস্থায় চলে গেছি! এই প্রশ্নের উত্তর আপনার সন্তানকে কীভাবে দেবেন সেটা খুঁজে বের করত হবে।


কোনো সন্তান যদি প্রশ্ন করেন আচ্ছা, পাকিস্তান আমলে টিক্কা খানকে শপথ পড়াতে অস্বীকার করার পর তত্কালীন প্রধান বিচারপতি সিদ্দিকীর কী পরিণতি হয়েছিল। তখনো কি সুপ্রিমকোর্টে হামলা করা হয়েছিল পাকিস্তানিদের পক্ষ থেকে। অনেক পুস্তকে প্রবীণ সাংবাদিকদের লেখায় দেখা যাচ্ছে পাকিস্তান আমলে রাজনীতিবিদরা প্রেসক্লাবে এসে আশ্রয় নিতেন। তখনো কী এরকম হামলা হতো প্রেস ক্লাবে! অনেক ঘটনা রয়েছে পাকিস্তান আমলে রাজনীতিবদরা প্রেস ক্লাবকে কেন্দ্র করে মিটিং মিছিল বের করেছেন। শুধু তাই নয়, শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ষি বাহিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে জাতীয় প্রেস ক্লাবেই মরহুম সাংবাদিক এনায়েতুল্লাহ খান, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে মানবাধিকার রক্ষায় কমিটি হয়েছিল। তখনো প্রেস ক্লাবকে গণতন্ত্রের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করা হতো। আজ সেই প্রেস ক্লাবও নিরাপদ নয়, আওয়ামী জঙ্গিরা হামলা চালাচ্ছে, পুলিশ সেই হামলায় সহায়তা দিয়ে উল্টা প্রেস ক্লাবে জঙ্গিদের সমাবেশের প্রচারণা চালাচ্ছে। এই হচ্ছে শেখ হাসিনা স্টাইলে গণতন্ত্রের নমুনা!

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৫:১৩ | সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com