সোমবার ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উপজেলা নির্বাচনঃ বিএনপির শত্রু বিএনপি

  |   সোমবার, ১০ মার্চ ২০১৪ | প্রিন্ট

শরিফুজ্জামান চৌধুরী তপন 

topon

দেশের দ্বিতীয় দফা উপজেলা নির্বাচন হয়ে গেলো, বিএনপি উল্লেখ যোগ্য সাফল্য পেয়েছে কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় বিএনপির ভেতরের বিরোধীতার কারণে একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয় এবং এসব জায়গায় সরকারী দলের প্রার্থী সহজে বিজয়ী হয়, যেমন পুরো দেশের কথা আমি বলতে না পারলেও সিলেটের কয়েকটি উপজেলায় যা হয়েছে তার চালচিত্র যে গুলো আমার ভালোভাবে অবগত হওয়ার সুযোগ ছিলো এসব নিয়েই আমার আজকের আলোচনা। আমি প্রথমত কুলাউড়া, গোলাপগঞ্জ, ছাতক, দক্ষিন সুনামগন্জ  এই চারটি উপজেলার হয়ে যাওয়া নির্বাচন নিয়ে একটি বিশ্লেষণ দেই যদিও বিষয়টি আমার একান্ত ব্যক্তিগত, আর এটার সঙ্গে হয়তো দ্বিমত কারো থাকতে পারে।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির ১/১১ পরবর্তী বহিস্কৃত নেতা এম এম শাহীন সমর্থিত একাংশের সভাপতি এস ইসলাম শকুকে মনোনয়ন দেয়া হয় কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষ থেকে আর মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি র সভাপতি নাসের রহমান ও কুলাউড়া ১৯ দলীয় জোট (জামাত ,জাতীয় পার্টি, এলডিপি সহ) সমর্থন দেয় কুলাউড়া কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ও সাবেক ছাত্রদলের নেতা আব্দুল হান্নানকে। আওয়ামী লিগ বিরোধী ভোট দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। যার জন্য আওয়ামী লীগের জয়লাভ করাটা সহজ হয়ে যায়। একই ভাবে গোলাপগঞ্জে ছাত্র দলের সাবেক দুই জাদরেল নেতা এমরান চৌধুরী ও নাসিরুল হক শাহীন ও বিএনপির আরেক বহিষ্কৃত নেতা লেচু মিয়ার সমর্থিত জিলাদ আহমেদকে কেন্দ্রীয় বিএনপি সমর্থন দেয়, কিন্তু স্থানীয় বিএনপির শতভাগ সমর্থন ছিলো এমরান চৌধুরী এবং নাসিরুল হক শাহিনের প্রতি।

এক পর্যায়ে শাহীন ও এমরান দুজনকে বহিস্কার করা হয় পরদিন আবার তা প্রত্যাহারও করা হয়। এমতাবস্থায় সাধারণ আওয়ামী লীগ বিরোধী যে ভোটার তারা জামাতের একক যে প্রার্থী তাকে সমর্থন করে এবং নির্বাচনে জামাত জয়লাভ করে। এ ক্ষেত্রে আমাদের একজন প্রার্থী হলে বিপুল ভোটে আমরাই জয়লাভ করতাম। কারণ বেশির ভাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমাদের। আওয়ামী লিগ বিরোধী ভোটের কারণে লেচু মিয়া এখানে বার বার নির্বাচিত হয়েছেন। গোলাপগঞ্জে আমাদের দলের ছাত্রদল, যুবদলের একটি ভালো অবস্থান রয়েছে, কিন্তু শুধুমাত্র দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থের চিন্তা দেশের যে ভয়াবহ অবস্থা এটা থেকে পরিত্রানের চিন্তাটা যদি এই ক্ষেত্রে করা হত, এবং যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা যদি বিবদমান সকল পক্ষকে একত্রিত করতে পারতেন তাহলে আমরা সহজে জয়লাভ করতে পারতাম।

ছাতকে আমাদের উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক ছাত্রদল নেতা মিজান চৌধুরী, তিনি এবার নির্বাচনে প্রার্থী না হয়ে আরেক সাবেক ছাত্রদলের নেতা নিজামকে প্রার্থী দেন যার সমর্থনে মিজান চৌধুরী দিন রাত পরিশ্রম করেন। কিন্তু সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন সমর্থন দেন জামাতের প্রার্থীকে। ফলাফল একই রকমভাবে আওয়ামী লীগের জয়। দুয়ার বাজারেও একই অবস্থা। যদি এই দুটি উপজেলার একটিতে জামাতকে দিয়ে একটিতে বিএনপির প্রার্থী দেয়া হতো তাহলে দুটি উপজেলাতেই ১৯ দলীয় জোটের প্রার্থী বিজয়ী হতো।

দক্ষিন সুনামগঞ্জে বিগত উপজেলা নির্বাচনে ফারুক আহমেদ বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন কিন্তু এবার প্রবাসী প্রার্থীসহ আমাদের একাধিক প্রার্থী হওয়ায় এখানেও আমরা আমাদের বিজয়কে ধরে রাখতে পারিনি ,এ সবি আমাদের কেন্দ্র থেকে উপজেলা পর্যায়ে প্রচন্ডভাবে সমন্নয়ের অভাব, নেতা হওয়া, এমপি হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা পাশাপাশি আমাদের কার কতো ক্ষমতা আছে তারও যেন একটা প্রদর্শনী আমরা এসবের মধ্যে দেখতে পাই।

কেন্দ্র কোন জায়গায় বলছে যে ১৯ দলীয় জোটের সমর্থিত প্রার্থীর জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে আবার এমন সব উপজেলায় জামাতকে ছেড়ে দিচ্ছে যেখানে আমাদের এমপি ছিলো। আওয়ামি লীগ বিরোধী ভোটের সিংহ ভাগ ভোট আমাদের।এগুলি কোন সঠিক প্রক্রিয়ায় বিবেচনা না করেই ব্যক্তি তুষ্টি, তোষামোদকারী দালাল শ্রেনীর এবং ভঙ্গুর আদর্শিক যে স্খলন শুরু হয়েছে, তার ভিতর থেকে ভালো, সঠিক সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসছে না। যেমন দেশের স্বার্থে দলের স্বার্থে আমরা বৃহত রাজনৈতিক দল হিসেবে না হয় আমরা বেশী ছাড় দিলাম, কিন্তু আওয়ামি লীগ কি গোপালগঞ্জে এরশাদ কে সিট্ ছেড়ে দেবে? বিএনপি কে প্রথমে ভাবতে হবে নিজের কথা নিজ সাংগঠনিক শক্তির কথা।

আমাদের কোমরে যদি জোর না থাকে তাহলে অন্যের জোরে পথ চলা বেশিদিন যাবেনা। আমাদের মধ্যে কিছু নেতা কর্মী আছেন এরা যতনা বিএনপি তার চেয়ে বেশি জামাতের পক্ষে কথা বলেন। এদেরকে আমি বলি যে ভাই তোমরা জামাতেই যাও। এতে তোমাদের আখেরাতে লাভ হবে আর আমরাও আমাদের ইমান নিয়ে লড়তে পারবো। কারণ আমরা যখন এই দলের রাজনীতি শুরু করি তখন মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক দল বিধি জারি করার ফলেই আজকের জামাত,আওয়ামি লীগ এদের রাজনৈতিক পুনর্জনম হয়েছিলো। এবং দেশকে একটি চরম বিভাজন থেকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দর্শন জাতিকে দিয়ে জাতীয় জীবনে এক অনাবিল সুখী সমৃদ্দশালী বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্নের বীজ তিনি রোপন করেছিলেন তার সেই রাজনীতির আজকের চালিকা শক্তি  বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠন এবং সেই রাজনীতির সফল উত্তরাধিকারী দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং দেশনায়ক তারেক রহমান।

আমরা চলমান বাকশাল বিরোধী আন্দোলনে ১৯ দলীয় জোটের  সহযোগী হিসেবে জামাতের অবদানকে খাটো  করে দেখছি না, তাদের প্রতি যে অবিচার, অত্যাচার নির্যাতন হচ্ছে তার প্রতি আমাদের সহমর্মিতা সুহানুভুতি নিয়েই বলছি তাদের রাজনীতি এবং আমাদের রাজনীতি এক না। আমাদের ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলনে সংগ্রামে ঐক্য রয়েছে। এছাড়াও আমরা বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও দেশ বিরোধী সকল চক্রান্ত মোকাবেলায় একসাথে কাজ করে যাবো। আমরা কেউ কারো রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের দায়ীত্ব নেইনি।

যাই হউক লিখছিলাম উপজেলা নির্বাচনের কথা  এখন তৃতীয় পর্যায়ে যে নির্বাচন হচ্ছে তাতে সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আহমেদ প্রার্থী হয়েছেন দক্ষিন সুরমা উপজেলা থেকে, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা থেকে প্রার্থী হয়ছেন সাবেক ছাত্র দল  নেতা  অহিদিজ্জামান সুফি, মৌলভীবাজার সদর থেকে প্রার্থী হয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক  মিজানুর রহমান মিজান,। মিজান কে স্থানীয়ভাবে সমর্থন দিয়েছে ১৯ দলীয় জোটের সকল দল এবং এর বিপরীতে রাজনগরে জামাতের প্রার্থী হচ্ছেন জেলা জামাতের আমির আব্দুল মান্নান। আমার প্রশ্ন হলো কোন জায়গায় জামাতকে ছেড়ে দেয়ার জন্য বলা হচ্ছে যে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জামাতের  কিন্তু এটা যদি সত্য হয় তাহলে ছাতক, দক্ষিন সুনামগঞ্জে তো আমাদের উপজেলা চেয়ারম্যান থাকা স্বত্তেও জামাত তাদের প্রার্থী  দিয়েছে।

এমনকি যে বিশ্ব্নাথের মানুষ এ সরকারের নির্যাতনে বাড়িতে ঘুমাতে পারেনি ইলিয়াস ভাই নিখোঁজ হওয়ার পর সব চেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে; সেই উপজেলা নির্বাচনে যখন বিএনপি থেকে প্রার্থী  করা হলো তার বিরুদ্ধেও জামাত প্রার্থী  দিয়েছে। মানলাম যে কিছু জায়গায় বিগত উপজেলা নির্বাচনে জামাত প্রার্থী  না দেওয়ার কারণে আমরা জয়লাভ করেছি। ঠিক একই কথা কি দক্ষিন সুরমা, ফেন্চুগন্জে  প্রযোজ্য নয় ? একই কথা মৌলভীবাজারে মসব্বিরের বেলায় কি প্রযোজ্য নয়? বিএনপি প্রার্থী দিলে এরা কেউই জয়ী হতে পারতেন না । বরং এই ক্ষেত্রে তৃনমূল নেতা কর্মী যাদেরকে দলের প্রাণ ভোমরা বললেও কম বলা হবে বিষয়টি তাদের উপর ছেড়ে দেন, তাদের সমর্থনে সব প্রার্থীরা বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন তাদের জন্য উপর থেকে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে না দিয়ে স্থানীয় ভাবে ক্লিন ইমেজের মাঠের কর্মী,  তৃণমূলের সাচ্ছা ঈমানদার কর্মীদের সিদ্ধান্ত নিতে দিন। এই উপজেলা নির্বাচনে যারা আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে ছিল  তারাই অধিকাংশ জায়গায় বিজয়ী হয়েছে সাধারন মানুষ কখনো সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে না।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১০:১৭ | সোমবার, ১০ মার্চ ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com