সোমবার ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি

  |   বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি

সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম

71_phtনাগরিকদের কিয়দংশের মনে অনেকগুলো প্রশ্ন ঘুরঘুর করে। কেন বিরোধী দল হরতাল দিচ্ছে? কেন রাস্তায় গাড়িঘোড়া পুড়ছে? বিরোধী দল কি বিকল্প কোনো প্রোগ্রাম দিতে পারে না? ইত্যাদি। আসলে হঠাৎ করে শুধু হরতাল আহ্বান করা এবং আহ্বান না করা নিয়ে কোনো আলোচনা বাস্তবসম্মত নয়। নভেম্বর মাসের হরতাল কর্মসূচিগুলো আসার আগে, অর্থাৎ রোজার ঈদ থেকে নিয়ে কোরবানির ঈদ পর্যন্ত সময়টি- প্রায় দুই থেকে আড়াই মাস সময় বিরোধী দল কর্তৃক কোনো প্রকার কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। বিরোধী দল শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক আন্দোলন এবং জনসংযোগ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছিল। সেই সময় সরকার বা সরকারবান্ধব ব্যক্তিরা একটি কথা প্রায় বলতেন বা অনুভূতি প্রকাশ করতেন যথা- ‘বিরোধী দলের কোনো শক্তিই নেই আন্দোলন করার।’ তাঁরা কখনো বলেননি, বিরোধী দলকে অভিনন্দন এই মর্মে যে তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে এবং আমরা তাদের দাবিদাওয়া বিবেচনা করব। সরকার ওই সময়টির সদ্ব্যবহার করেনি। সরকারও মনে করেছিল, নভেম্বর-ডিসেম্বর হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার সময়। অতএব বিরোধী দল কোনো কঠোর কর্মসূচি দিয়ে সুবিধা করতে পারবে না। সরকার ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার ঘটনাটিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল।
কিন্তু বিরোধী দলের হাতে তাদের আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার জন্য কতটুকু সময় বাকি আছে এবং কী কী পদক্ষেপ বাকি আছে, সেটা যদি নির্মোহভাবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে আমার মনে হয়, সব বিবেচনাকারী একমত হবেন এই মর্মে যে এই মধ্য নভেম্বরের হরতালের কর্মসূচি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটার সঙ্গে সম্পর্ক বিরোধী দলের মূল রাজনৈতিক দাবির সঙ্গে। বিরোধী দলের মূল রাজনৈতিক দাবি, নিরপেক্ষ-নির্দলীয় ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করে, সেই সরকারের আমলে শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এই দাবির বিপরীতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বক্তব্য বা দাবি হচ্ছে, বিদ্যমান সংবিধান মোতাবেকই জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রেক্ষাপটে অনেক বক্তব্য ও ঘটনার অবতারণা ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে। অতি সংক্ষিপ্ত কলামে সব কিছুর আলোচনা সম্ভব নয়। অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি পত্রিকার কলামে, টেলিভিশন টক শোতে এবং সভা-সেমিনারে এসব প্রসঙ্গ নিয়ে বক্তব্য দিয়ে চলেছেন এবং সচেতন নাগরিকরা সেগুলো অনুধাবন ও পর্যবেক্ষণ করছেন।
পছন্দনীয় হোক বা না হোক, কঠিন বাস্তবতা হলো, ১৯৯৫-৯৬ এবং ২০১৩ সালের রাজনৈতিক আন্দোলন ও রাজনৈতিক সংঘাতময় পরিবেশের যথেষ্ট মিল আছে। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সংসদে বিরোধী দল ছিল আওয়ামী লীগ। বিরোধী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের আচরণ, বিরোধী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিগুলো এখন দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। ইতিহাসের আলোকে যেকোনো দৃষ্টান্তই ভালোও হতে পারে মন্দও হতে পারে। ১৯৯১-৯৬ সালের আওয়ামী লীগ কর্তৃক স্থাপিত দৃষ্টান্তগুলো অনেকাংশেই ২০১৩ সালে বিরোধী দল বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোট ঘোষণা ব্যতীত অনুসরণ করছে। অনুসরণ করতে গিয়ে যে কর্মসূচিগুলো দিচ্ছে, সেই কর্মসূচিগুলোর সমালোচনা হচ্ছে সরকারি মহল থেকে। সমালোচনা হতেই পারে। কিন্তু কোনো পর্যায়ে কেউ বলছে না, সরকারি কোনো লোক বা সরকারবান্ধব কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি বলছে না যে ১৯৯১-৯৬ সালে আওয়ামী লীগ কর্তৃক স্থাপিত দৃষ্টান্তগুলো মন্দ ও ক্ষতিকারক ছিল, অতএব অনুসরণ বা অনুকরণ করা উচিত না। যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে প্রচারমাধ্যমের বৃহদংশ বিদ্যমান, যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিনের পর দিন সারা বাংলাদেশ ঘুরে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন, সেহেতু তাঁর বক্তব্যটাই দেশবাসীর সামনে বেশি বেশি ঘুরেফিরে উপস্থাপিত হচ্ছে।
২৭ অক্টোবর ২০১৩ তারিখের পূর্বে যা-ই হয়ে থাকুক না কেন, আপাতত সেটার দিকে নজর না দিলেও, ২৭ অক্টোবর ২০১৩ তারিখের পর থেকে বাংলাদেশ সরকারের নির্বাহী বিভাগ তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর কেবিনেট এবং সরকারের আইন প্রণয়ন বিভাগ তথা জাতীয় সংসদের কার্যক্রম সাংবিধানিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। চার-পাঁচ দিন ধরে মধ্যরাতগুলোতে, বিভিন্ন জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি বিভিন্ন টেলিভিশনের টক শোতে যা বলছেন, সেগুলো অনুধাবন করার চেষ্টা করছি। কয়েকজনের বিশ্লেষণ গুরুত্বের সঙ্গে প্রণিধানযোগ্য। কিছুদিন আগে জিটিভিতে প্রচারিত বাংলাদেশের ইংরেজি ভাষার সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকা ‘ডেইলি স্টার’ সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিশ্লেষণও প্রণিধানযোগ্য। সর্বশেষ ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ‘নিউ এজ’-এর সম্পাদক নুরুল কবির এবং জাতীয় পার্টির বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাংলাদেশের অন্যতম সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদের বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্লেষণ ও অনুধাবনের দাবি রাখে। যে ইস্যু বা বিষয়টি নিয়ে এসব সম্মানিত ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত বক্তব্যের প্রতি আমি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি, সেই বিষয়টি হলো পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন বা নির্বাচন-পূর্ববর্তী সময়ের জন্য বাংলাদেশের সরকারব্যবস্থা প্রসঙ্গে।
পঞ্চদশ সংশোধনী থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত সময় দুই বছর পাঁচ মাস। এই সময় সরকারি মহল বিরোধী দলের দাবির প্রতি কোনো গুরুত্ব দেয়নি। বিশ্লেষকদের উত্থাপিত সংশয়গুলো নিরসনের জন্য কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। অর্থাৎ তাঁরা বিষয়টিকে পরিহার করেছেন। তথা ইংরেজি ভাষায় ‘অ্যাভয়েড’ করেছেন। যখন পরিহার করতে পারেননি বা পরিহার করা সম্ভব হয়নি, তখন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এই প্রসঙ্গটি পাশ কাটিয়ে যেতে চেষ্টা করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা কোনো রকম আলোচনায় আনেননি, সব সময় পাশ কাটিয়ে চলেছেন তথা এড়িয়ে গেছেন, ইংরেজি ভাষায়, ‘বাইপাস’ করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গটি মুখোমুখি বা প্রত্যক্ষভাবে মোকাবিলা না করে, অ্যাভয়েড করার কারণে বা পরিহার করতে গিয়ে একেক সময় একেক রকম কথা উপস্থাপন করা হয়েছে। ফলে দেশবাসী একটা বিভ্রান্তিকর পরিবেশের মধ্যে পড়েছে, একটি ধোঁয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশের মধ্যে পড়েছে। বিভ্রান্তি ও ধোঁয়াশা হলো ইংরেজি ভাষায় ‘কনফিউশন’। বর্তমান সরকার তথা সরকারের জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা দেশবাসীকে এই মুহূর্তের সাংবিধানিক ব্যবস্থা প্রসঙ্গে এবং জাতীয় রাজনীতির গন্তব্য প্রসঙ্গে কনফিউজ করতে সফল হয়েছিলেন। কিন্তু সচেতন দেশবাসী এবং সরকারের বিপরীত পক্ষের রাজনৈতিক মহল সরকারের ‘চাল’ বুঝে ফেলেছে। তারা বিভ্রান্তি ও ধোঁয়াশা থেকে বেরিয়ে আসছে। অতএব দেশে রাজনৈতিক বিপদ অনিবার্য হয়ে উঠেছে। বিপদ ইংরেজি ভাষায় ‘ডেঞ্জার’। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তথা তাঁর সরকার প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে গুরুত্ব না দিয়ে, অ্যাভয়েড করে, বাইপাস করে, কনফিউজ করে দেশকে ডেঞ্জারের মধ্যে নিপতিত করেছেন। আমাদের সেই ডেঞ্জার এবং ডেঞ্জারাস সিচুয়েশন (বিপজ্জনক পরিবেশ ও পরিস্থিতি) থেকে বের হতেই হবে। তার জন্য সংলাপ যেমন প্রয়োজন, যুগপৎ বিরোধী শিবিরের পক্ষ থেকে রাজপথের আন্দোলনও প্রয়োজন। কারণ রাজপথের আন্দোলনবিহীন সময়গুলোতে সরকার যেহেতু কোনো ইতিবাচক বা গঠনমূলক বা স্বাগত জানানোর মতো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি, অতএব রাজপথের আন্দোলনই অনিবার্য। আন্দোলনে সহিংসতা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। কিন্তু ২০১৩ সালে ১৯৯৬ সালের বা তার আগের আমলের মতো রাজপথের আন্দোলন যে হবে না এটাও বোধগম্য। অনেক কিছু ডিজিটাল হয়েছে, রাজপথের আন্দোলনও ডিজিটাল হয়েছে বলে মনে হয়।
আমার অনুভূতি হচ্ছে, বিতর্কিত পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুটি কাজ করছেন। প্রথম কাজ হচ্ছে, বিরোধী শিবিরের ওপর মামলা ও হামলার বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত আক্রমণ চালাচ্ছেন এবং দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে তাঁর নির্বাচনমুখী কার্যক্রম দারুণভাবে, প্রকটভাবে, ইচ্ছাকৃতভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। এই দুটি কাজ চালিয়ে যাওয়ার পেছনে যে চারটি শক্তি কাজ করছে সেই চারটি শক্তি হলো : এক. ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অন্তরে লালিত দুর্দান্ত উচ্ছ্বাস, দুই. ক্রমান্বয়ে দু-তিন বছর ধরে দলীয় রাজনীতির আঙ্গিকে সাজানো প্রশাসনের প্রশাসনিক শক্তি, তিন. প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে প্রায় বিনা শর্তে দিয়ে দেওয়া আকাশচুম্বী সুযোগ-সুবিধাগুলোর বিনিময়ে এবং প্রতিবেশী কর্তৃক অধিকতর পাওয়ার আশায়, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সীমাহীন শুভেচ্ছা ও সমর্থন, চার. বিগত পাঁচ বছরে বিভিন্ন প্রশ্নবিদ্ধ উপায়ে ও নিয়মে উপার্জিত হাজার হাজার বা লক্ষ হাজার কোটি টাকার নির্বাচনী তহবিল। এই চারটি শক্তি প্রসঙ্গে, ভবিষ্যতে আবার লিখব।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৪:৪০ | বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com