শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী শাসনামলেই সংখ্যালঘুরা বেশি নির্যাতিত

  |   বৃহস্পতিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ | প্রিন্ট

আওয়ামী শাসনামলেই সংখ্যালঘুরা বেশি নির্যাতিত

খানশূরঃ বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে সংখ্যালঘুরা একসময় তাদের ‘রক্ষক’ বলে মনে করলেও এখন আর তা মনে করে না। আর না করার কারনই বা থাকবে না কেন ? সংখ্যালঘুদের ভোটের জন্য মুখে মুখে আওয়ামী লীগ তাদের বন্ধু বলে ঘোষনা দেয়। অথচ সংখ্যালঘুদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা তাদের বাড়িঘর দখল করেছে । শুধু তাই নয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন অন্যান্য দলের চেয়ে আওয়ামী কর্মীরাই বেশি করেছে। কিন্তু সংখ্যালঘুদের উপর আওয়ামী নেতাকর্মীরা অত্যাচার নির্যাতন করলেও সংশ্লিষ্ট আওয়ামী কর্মীদের বিচারের মুখোমুৃখি হতে হয়নি অজানা এক কারনে। তাই সংখ্যালঘুরা এখন আর আওয়ামী লীগকে বন্ধু বা রক্ষক মনে মনে না। অনেক ক্ষেত্রেই আওয়ামী লীগকে ভক্ষকের ভূমিকায় দেখে সংখ্যালঘুদের অসহায়ত্ত্ব এখন চরমে। নিরাপত্তাহীনতা অথবা আত্মরক্ষার তাগিদ থেকে সংখ্যালঘুদের কেউ কেউ এখন অন্যান্য দলে নাম লিখিয়েছে।

স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময় সংখ্যালঘুরা নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হলেও আওয়ামী নির্যাতনের মাত্রা সব সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। ১৯৯৬ সালের আগে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকায় তাদের নির্যাতনের মাত্রা দেখা যায়নি। দীর্ঘদিন পর ক্ষমতা পেয়ে ১৯৯৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘরে লুটপাট শুরু করে। আর অনেক ক্ষেত্রেই সেসব লুটপাটের ঘটনাকে তারা বিএনপি জামাতের কাজ বলে প্রচার করেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রন করে আওয়ামী লীগ নিজেদের অপকর্মকে বিরোধী দলের বলে প্রচার করে। আর সেসময় হিন্দুরা ভাবতো আওয়ামী লীগ তাদের বন্ধু। আওয়ামী লীগ কর্তৃক তাদের ক্ষতি হবে না। কিন্তু সংখ্যালঘুদের ভুল ভাঙ্গে অনেক পরে। এসময়ে মধ্যে তাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি – জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়েও সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন হয়েছে। পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও সামাজিক কারনে অনেক সংখ্যালঘু পরিবার নির্যাতনের শিকার হয়েছে। কিন্তু সংখ্যালঘুদের শত্রু মনে করে তাদের বাড়িঘর দখলের ঘটনা ঘটেনি কোথাও। আর ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে সংখ্যালঘুদের উপর যারা নির্যাতন করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে।

২০০৬ সালের পর নানা ঘটনা প্রবাহের পর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসে। আর তখন থেকেই আবার সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার নির্যাতন শুরু হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সোয়া দুই বছরে ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর উপর অমানবিকভাবে নির্যাতন হয়েছে মাত্রাতিরিক্ত। সংখ্যালঘু নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৮১৩ ব্যক্তি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এ নির্যাতনের কারণে ৩ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৭৬৬ জন এবং ৫১টি মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে। ১২ জনের জমি দখল করা হয়েছে, ৪ জনের ঘর ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের অধিকাংশ ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা জড়িত থাকার প্রত্যক্ষ অভিযোগ রয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার সংগঠন ‘‘অধিকার’’ এর গবেষণাধর্মী রিপোর্ট থেকে এ তথ্য জানা যায়।

মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর ২০১১ সালের জানুয়ারি-মার্চ মাসের রিপোর্টে বলা হয়, ১৩ জানুয়ারি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা পৌরসভা নির্বাচনের পর সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় প্রায় ২০ জন আহত হয়েছেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী তৈয়বুর রহমান পরাজিত হলে তার সমর্থকরা শহরের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে ব্যবসায়ীদের মারপিট করে ও তাদের দোকান বন্ধ করে দেয়। যাদের দোকানে হামলা করা হয় তারা অধিকাংশই হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ী বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনার পর শৈলকুপা শহরের হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মালিকানাধীন স্বর্ণকারপট্টির অধিকাংশ দোকান বন্ধ হয়ে যায়। হামলার শিকার প্রিয়াংকা জুয়েলার্স এর মালিক কজ্জল দে কে আহত অবস্থায় শৈলকুপা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। কজ্জল দে জানান, তিনি রাজনীতি করেন না।

ভোট দেয়ার অভিযোগে তার ওপর হামলা করা হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ ৩ জনকে আটক করেছে। ‘অধিকার’-এর ২০১০ সালে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১০ সালের ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর হামলার ঘটনায় ২ জন নিহত এবং ২৪৪ জন আহত হয়েছে। এছাড়া ২৩টি মন্দির ভাংচুর হয়েছে। অপরদিকে জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর হামলার ঘটনায় ৬ জন নিহত এবং ১৪০ জন আহত হয়েছেন। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১০ মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার দেউলভোগ গ্রামে দুর্বৃত্তরা কালী মন্দিরে হামলা চালিয়ে দূর্গা প্রতিমা ভেঙ্গে ফেলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মন্দির কমিটির নেতারা জানান, আলেক মিয়া, মিজানুর ও আশিকুরের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১০ মন্দিরের জায়গা দখল করতে গেলে তারা বাঁধা দেন। এতে দুর্বৃত্তরা মন্দিরে পূজা করলে তাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় পুলিশ মিজানুরকে গ্রেফতার করেছে।

১১ অগাস্ট ২০১০ ঢাকার সূত্রাপুরের লালমোহন সাহা স্ট্রিটে ৭৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা হাজি ইসলাম ও সুত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেনের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃৃত্ত পিস্তল, রামদা, হকিস্টিক ও শাবল নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্রীশ্রী রাধাকান্ত ঠাকুরানী লক্ষ্মী জর্নাধনচক্র জিওবিগ্রহ মন্দিরে হামলা চালায়। এ সময় দুর্বৃৃত্তরা মন্দিরের দরজা জানালা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে পাঁচটি প্রতিমা ভেঙ্গে ফেলে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মন্দির কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি গৌরগোপাল সাহা ও সেক্রেটারি শ্রী মলচন্দ্র ঘোষ অভিযোগ করেছেন, ‘‘আওয়ামী লীগ নেতারা দুর্বৃত্ত দিয়ে মন্দির ভাঙচুর করে এর মূল্যবান সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এদের ভয়ে তারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।’’ ৭ আগস্ট ২০১০ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার চানতারা গ্রামে একদল দুর্বৃত্ত আহমদীয়া জামাতের মসজিদ নির্মাণের সময় হামলা করে। হামলাকালে দুর্বৃত্তরা আহমদীয়া সম্প্রদায়ের সদস্যদের বেশ কয়েকটি বাড়ি এবং দুইটি পোলট্রি ফার্ম ভাংচুর করে। দুর্বৃত্তদের হামলায় আহমদীয়া সম্প্রদায়ের ১০ জন সদস্য আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় পুলিশ কাউকেই গ্রেফতার করেনি। উল্লেখ্য, ১৭ জুন ২০১০ এই দুর্বৃত্তরাই একই জায়গায় আহমদীয়া জামাতের নির্মাণাধীন মসজিদে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছিল। ১২ জুলাই ২০১০ নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার নাকইলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠির এক পল্লীতে ক্ষমতাসীন দলের শরীফুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল ভূমিদস্যু হামলা চালায়। এ ঘটনায় ক্ষুদ্রজাতি গোষ্ঠির প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট হয়। এ সময় হামলাকারীরা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠির নারী-পুরুষদের প্রচন্ড মারপিট করে। জাল দলিল করে জমি দখল করার জন্যে এ হামলা করা হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন। ১২ জুন ২০১০ হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমার অপহরণের ১৪ বছর উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙামাটি শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে।

আইন-শৃক্মখলা পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক সভার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হওয়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিবাসীদের তাদের নিজ নিজ জমিতে পুনর্বাসিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ। বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি মোঃ দেলোয়ার হোসেনকে নিয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ গত ৬ মে ২০১০ এই নির্দেশ প্রদান করেন। ১৯ এপ্রিল ২০১০ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিবাসীদের পক্ষে শংকর মিত্র অভিযোগ করেন আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবর রহমান ছায়েদ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুল ইসলাম এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান, জালাল, আমির হোসেন মানিক, হাসান হোসেন, তোপা, হারেস ও তাজুলের অত্যাচারে তারা দিশেহারা। তারা তাদের ভিটেমাটিতে থাকতে পারছেন না।

তাদের ৫শ’ বিঘা জমি দখল করে তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর ২০০৯ সালের রিপোর্টে সংখ্যালঘু নির্যাতন সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ বছরে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ব্যক্তি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫৬৯ ব্যক্তি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে ৫০২ জন আহত হয়েছে, ১ জন নিহত হয়েছে, ১২ জনের জমি দখল করা হয়েছে, ৪ জনের ঘর ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে এবং ২৮টি মন্দির ভাংচুর করা হয়েছে। গত ২৭ মার্চ ফেনী সদর উপজেলার কাজীরবাগ বাজারে যুবলীগ ক্যাডার সুমনের নেতৃত্বে বেলাল হোসেন অপেল, মহিউদ্দিন নূরন নবী, অনিক বিশ্বাস, দেলু, মো. ইসমাইল, নিজাম উদ্দিন, মো. আজাদ ও আব্দুর রহিম সশস্ত্র হামলা করে সংখ্যালঘু হীরা বণিকের ঘরবাড়ি ভাংচুর এবং ৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করে। ২৮ মার্চ জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়নের পন্ডিতপুরের হিন্দু ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত সরকার পাড়ার বিমল চন্দ্র সরকারের (৫০) বাড়িতে একদল দুষ্কৃতিকারী অগ্নিসংযোগ করলে গোয়ালঘরে থাকা ৪টি গরু অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায় এবং আরো ৩টি গরু অগ্নিদগ্ধ হয়।

রাজধানী ঢাকার সূত্রাপুরে পঞ্চাশ বছরের পুরানো একটি মন্দির ভেঙ্গে ফেলেছে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। স্থানীয় সূত্র জানায়, ৩২ কাঠার সম্পত্তি রয়েছে এই মন্দিরের। এই সম্পত্তিতে হিন্দু-মুসলমান মিলে মোট ৬৮টি পরিবার বসবাস করে। ৩০ মার্চ আওয়ামী লীগ সমর্থক সালেহ এবং তার দুই ছেলে দিপু ও আসাদ ১৩ টি হিন্দু পরিবারকে উচ্ছেদ করে মন্দিরের সম্পত্তি দখল করে নেয়। এই সময় শিব, কালী এবং সরস্বতীর প্রতিমা ভেঙ্গে ফেলা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর এলাকার উত্তর পৈরতলা দারিয়াপুরে শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুসলিম মিয়া এবং তার পরিবারের অত্যাচার-নির্যাতনে অতিষ্ঠ এলাকার জেলে পরিবারসহ কয়েকশ’ সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবার। নির্যাতিত পরিবারের সদস্য মৎসজীবী হরে কৃষ্ণ দাস বলেন, প্রায়ই তাদের বাড়ি-ঘরে হামলা করে কিশোরী ও মহিলাদের সম্মানহানি এবং লুট-পাট চালানো হয়। ২২ আগস্ট রাজধানী ঢাকার সূত্রাপুরে জমি দখলের উদ্দেশ্যে এক হিন্দু পরিবারের নারী শিশুসহ ৯ সদস্যকে অপহরণের প্রায় আটঘণ্টা পর তাদের উদ্ধার করে পুলিশ। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে হৃষিকেশ দাস লেনের ৯৫ নম্বর বাড়ি থেকে তাদের অপহরণ করা হয়। এ সময় ওই বাড়ি থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা পয়সা লুট করেছে দুর্বৃত্তরা।

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ স্থানীয় আওয়ামী লীগের চার কর্মীকে গ্রেফতার করে। ১০ সেপ্টেম্বর রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় একদল দুষ্কৃতিকারী গভীর রাতে মন্দিরে ঢুকে দুর্গা প্রতিমা ভাংচুর করে। ২৫ সেপ্টেম্বর মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বালাশুর গ্রমে নাগমন্দিরে দুষ্কৃতিকারীদের হামলায় মন্দিরের সেবাইতসহ ৮ জন আহত হন। শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক হানিফ বেপারীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা এই হামলা চালায়। গত ২৮ সেপ্টেম্বর মাদারীপুরের রাজৈরে খালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সাতপাড় গ্রামে রামমোহন মন্ডলের পূজামন্ডপে পুলিশ এক তরুণীকে উত্ত্যক্ত করে। পূজারীরা এর প্রতিবাদ করায় মধ্যরাতে এসআই কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশের সদস্যরা প্রতিমা ভাঙ্চুর করেন। চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলাধীন কারাল গ্রামের নাথপাড়ায় বসবাসকারী নিম্নবর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় ৩০০ সদস্য উচ্ছেদের ঝুঁকিতে রয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ১৯৯০-এর দশক থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করছে যা সরকারিভাবে আরএনআইএমপি-২ নামে পরিচিত। সম্প্রতি এ প্রকল্পে পরিবর্তন আনা হয়েছে।

পরিবর্তিত প্রকল্পে কারাল গ্রামের নাথপাড়ার বাসিন্দাদের ভূমিকে অধিগ্রহণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পটিয়া বাইপাস নির্মিত হবে। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে কারাল গ্রামের নাথপাড়ার বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই মর্মে একটি নোটিশ জারি করা হয় যে, ১৪ অক্টোবর ২০০৯ তারিখের মধ্যে তাদেরকে ওই এলাকা ছেড়ে দিতে হবে, অথচ নোটিশ জারির আগে পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের কোন ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। উচ্ছেদের শিকার বাসিন্দাদের প্রত্যেককে তাদের বাসস্থানের জন্য নতুন জমি কেনার খরচ বাবদ ৫০ হাজার করে টাকা দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে যা যথেষ্ট নয়। তাছাড়া এ ব্যাপারে লিখিতভাবে কোন প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়নি। বাংলাদেশে জমির ঘোষিত বাজার দর ও প্রকৃত বাজার দরের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় এক একর জমির সরকার-নির্ধারিত মূল্য এক লাখ টাকা হলেও বাস্তবে এক একর জমি বিক্রি হয় প্রায় এক কোটি টাকায়। এই এলাকার ৩০০ অধিবাসী পুরুষানুক্রমে হস্তশিল্পের পেশায় জড়িত। নাথ সম্প্রদায়ের দুই নেতা শ্রীমত শুভসন্ধ্যা অবধূত এবং দিলীপ দে মনে করেন, সংখ্যালঘু হিসেবে তারা সরকারের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন।

২০১২-১৩ সালে নির্যাতনের পরিধি বেড়েছে। দেশের ৪৩ জেলায় ব্যাপক হারে নির্যাতন ঘটে চলেছে। এর মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৬ সংখ্যালঘু সদস্য। সাম্প্রতিক সহিংসতায় ৪৩ জেলায় সংখ্যালঘুরা আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম, কঙ্বাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, গাইবান্ধা, সিলেট, মৌলভীবাজার, ঠাকুরগাঁও, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, জয়পুরহাট, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা, গাজীপুর, বরিশাল, দিনাজপুর, চাঁদপুর, খুলনা, মুন্সীগঞ্জ, রংপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, শেরপুর, জামালপুর, সুনামগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, ফেনী, নাটোর, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, ঝিনাইদহ ও রাজশাহী। তবে কয়েকটি জেলায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর মানুষও নিহত এবং তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি দফতর, যানবাহন অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। এসব ঘটনায় সংখ্যালঘু চারজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর বৃদ্ধ দয়াল হরিশীল, সিলেটের জগৎ জ্যোতি তালুকদার, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দাসের বাজার ইউনিয়নের সুশীল বিশ্বাস এবং নোয়াখালীর প্রকৌশলী সুমন ভৌমিক। অন্যান্য সময় সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বাধা হয়ে দাঁড়াতেন। কিন্তু গত চার মাসে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের অনেক ক্ষেত্রেই নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় থাকতে দেখা গেছে।

সিরাজগঞ্জ, খুলনা, যশোর, নরসিংদী, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাই সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ছিলেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। মহাজোট সরকারের গত মেয়াদে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামুতে ১২টি বৌদ্ধ বিহারে এবং ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে বৌদ্ধ ও হিন্দু জনগোষ্ঠী ও তাদের উপাসনালয়ের ওপর তান্ডব চালানো হয়। রামুতে বৌদ্ধ মন্দির, মঠ পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। বান্দরবানে বৌদ্ধ মন্দির ও সংলগ্ন বৌদ্ধপল্লী হামলার শিকার হয়। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জ, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও গফরগাঁওয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় প্রায় ৪০০ নারী-পুরুষ আহত হয়। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর এলাকা খ্যাত পিরোজপুরের বিভিন্ন স্থান সংখ্যালঘুদের জন্য রীতিমতো মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছে। সাতক্ষীরার বেশির ভাগ গ্রামাঞ্চল সংখ্যালঘুদের জন্য বিপজ্জনক হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গৌড়ীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়কে হত্যার মধ্য দিয়ে মন্দিরের পুরোহিত ও সেবায়েত হত্যাকান্ডের শুরু। বছরজুড়ে হত্যা-জখম-নির্যাতনের এই ধারা অব্যাহত ছিল। ধর্মীয় গুরুদের পাশাপাশি সাতক্ষীরার আশাশুনিতে হিন্দুধর্মাবলম্বী সাধারণ মানুষ নির্যাতনের শিকার হন বছরের প্রথমার্ধে। বছর শেষ হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের মধ্য দিয়ে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বছর শেষে মানবাধিকার পরিস্থিতির মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের দিক থেকে ২০১৬ সাল ছিল উদ্বেগজনক।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রতিবেদনটি অনুযায়ী ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ১৯২টি বাসস্থান, ২টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ১৯৭টি প্রতিমা, পূজামন্ডপ ও মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, ৫টি জমি ও বসতবাড়ি দখলের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ৬৭ জন আহত ও ৭ জন নিহত হন। এর বাইরে পঞ্চগড়, গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ঝিনাইদহ, পাবনা, যশোর ও বগুড়ায় মঠের অধ্যক্ষ ও সেবায়েতরা খুন হন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে যশোরের কেশবপুর থেকে প্রবীণ মল্লিক নামের একজন মন্দিরের সেবায়েত নিখোঁজ হওয়ার ১৩ দিন পর বাড়ির পাশ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার হয়।

এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর সহিংসতায় সাতক্ষীরার আশাশুনির চার গ্রামের ১০০ হিন্দু পরিবার ঘরছাড়া হয়। ২৯ মে কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকেরা হিন্দুধর্মাবলম্বীদের শতাধিক বাড়িঘর, মন্দির ভাঙচুর করাসহ পিটিয়ে ৩০ জনকে আহত করেন। ‘ধর্মীয় অবমাননা’র ধুয়া তুলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায়। নাসিরনগর সদর ও হরিণবেড় গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৫টি মন্দির ও অর্ধশতাধিক বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও প্রশাসনের পাহারার মধ্যেও আরও তিন দফায় মন্দির ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। একই অভিযোগ তুলে নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে সংসদ সদস্যের সামনে কান ধরে ওঠবস করানোর ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য সর্বশেষ গত মাসের ১৮ তারিখে ‘জাতীয় নির্বাচন : সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা’ শীর্ষক গোটটেবিল আলোচনা সভা হয় ঢাকায়। সেখানে বলা হয় ঃ সংখ্যালঘুদের ওপর ধারাবাহিক নির্বাচনকেন্দ্রিক সংহিসতার ঘটনাকে দেশের জন্য লজ্জা ও কলঙ্কজনক । তাই এ পরিস্থিতির অবসান চান সচেতন নাগরিক সমাজ। তারা বলেন, এই সহিংসতার দায় ক্ষমতাসীন দলের ওপর যেমন বর্তায়, তেমনি বিরোধী দলও এর দায় এড়াতে পারে না। মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। সূচনা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। আলোচনায় অংশ নেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট তবারক হোসেইন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান প্রমুখ। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. মোহাম্মদ শাহজাহান, এডভোকেট বিনয় কুমার ঘোষ, মানবাধিকার সংগঠক আসিফ ইকবাল, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সদস্য সচিব দীপক কুমার রায় বক্তব্য রাখেন।

সুলতানা কামাল বলেন, সংখ্যালঘুদের নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগে প্রশাসনকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। নির্বাচন যখন চলে এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু জনগণের ওপর নির্যাতনের মাত্রাটা অনেক বেশি বেড়ে যায়। সেটার একটা সাংঘাতিক রকমের প্রকট রূপ আমরা দেখতে পাই। প্রশাসন এবং পুলিশ যদি নিরপেক্ষ না হয়, প্রতিটি মানুষের সমঅধিকারে বিশ্বাসী মনোভাব নিয়ে এ কাজগুলো সমাধা করার চেষ্টা না করে, তাহলে আমরা আশা করতে পারি না যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তাদের ভোটের অধিকারটা নিরাপদভাবে, সহজভাবে প্রয়োগ করতে পারবে।

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নির্যাতনের ক্ষেত্রে রক্ষক ও ত্রাতার ভূমিকার বদলে রাষ্ট্র নিজেই নিপীড়ক কিংবা পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা পালন করেছে উল্লেখ করে পঙ্কজ ভট্টচার্য বলেন, যেভাবে বিচারহীনতার মধ্য দিয়ে দায়মুক্তির উদাহরণ তৈরি করা হচ্ছে তাতে অভয়নগর, নাসিরনগর, ঠাকুরপাড়া, কর্ণাইয়ের মতো হামলা নির্যাতনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

খুশী কবীর বলেন, মার্কা বা দল নয় প্রার্থীকে দেখে ভোট দেয়ার সময় এসেছে। যে প্রার্থী সংখ্যালঘুর ওপর নির্যাতন করেছে তাদের বয়কট করতে হবে। ১৯৭১ সালের আওয়ামী লীগ আর ২০১৮ সালের আওয়ামী লীগ এক নয়। যদি তারা নিজেদের সেই দাবি করেন তাহলে ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাদের সেই প্রমাণ দিতে হবে। শ্যামল দত্ত বলেন, এ দেশে গাছের জন্য, নদীর পানি দূষণের জন্য কাঁদার লোক আছে। কিন্তু গুটিকয়েক সচেতন মানুষ ছাড়া সংখ্যালঘুদের জন্য কাঁদার লোক নেই।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৯:৪৪ | বৃহস্পতিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com