শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

ধর্ষকদের চিহ্নিত করা হোক সবক্ষেত্রে -এমদাদুল হক বাদল

  |   বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২০ | প্রিন্ট

ধর্ষকদের চিহ্নিত করা হোক সবক্ষেত্রে -এমদাদুল হক বাদল

মিডিয়ার কল্যাণে পৃথিবীর কোন প্রান্তে কী ঘটছে তা সাথে সাথে রাষ্ট্র হয়ে যাচ্ছে। নিউজ সেন্সের কারণে একটা সাধারণ মাছিও সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে। কেনো হবে না? সে তো বসেছে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের মাথায়! তাও আবার ডিবেট চলাকালীন; নিখুঁতভাবে ধরা পড়েছে লেন্সে। আমাদের রিপোর্টে ইদানিং বেশি বেশি ধরা পড়ছে ধর্ষণ। দেশের কোনা-কানচি থেকে উঠে আসছে ধর্ষণ সংবাদ। কোথাও কোথাও ধর্ষক ধরা পড়ছে, কোথাও পড়ছে না। প্রতিদিনই চাঞ্চল্যকর ঘটনার প্রকাশ। এক ঘটনা এসে পূর্বের ঘটোনাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। আস্তে আস্তে মানুষের মন থেকেও মুছে যায়। ছাড়া পেয়ে যায় সুবর্ণচরের ধর্ষক।

মাছিরুপি ধর্ষকরা যত নিখুঁতভাবে ধরা পড়বে ততই লাভ। সমাজে চিহ্নিত হবে, মানুষ থু থু দেবে, বলবে ঐ দেখ! ধর্ষক যায়! তাদেরকে এড়িয়ে চলতে, তাদের থেকে সাবধান হতে সহায়তা করবে। মা-বোন-মেয়েরা নিরাপদে থাকবে। মাছি কেনো? আগের লেখায় এক পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেছিলাম যে আমাদের দেশে প্রতি এক লক্ষে মাত্র ৯.৮২জন ধর্ষক। এদের চিহ্নিত করা গেলে এড়িয়ে চলা ও দমন করা সহজে সম্ভব। মুশকিলটা হলো চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে। কারন, ধর্ষকদের কোন জাত-পাত নাই, আত্মীয়তা নাই, নাই কোন বাছ-বিচার। প্রতিবেশি তো দূরে থাক; আপন বাবা, আপন খালু, আপন চাচা, আপন ফুপা, আপন মামা – কে নাই তালিকায়? আছে ক্ষমতার দাপট, আইনের অপপ্রয়োগ! আছে লোকলজ্জার ভয়! সুতরাং, যত পারো চেপে যাও। বলুন তাহলে চিহ্নিত হবে কী করে?

এ পর্যন্ত যতগুলো চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ সংবাদ সামনে এসেছে প্রায় সবগুলো এসেছে মিডিয়ার কল্যানে। এরপর ধরপাকড় তৎপরতা, মিছিল মিটিং, আন্দোলন! এগুলো যখন লিখছি তখন শাহবাগে ধর্ষণবিরোধী বিশাল গণজমায়েতের ডাক দেয়া হয়েছে। কিন্তু ধর্ষণ তাতে বিন্দুমাত্র থামে নি। এদিনের রিপোর্ট যদি উল্লেখ করি তবে তা স্পষ্ট হবেঃ যশোরে যাত্রীবাহী বাসে তরুণী গণধর্ষণের শিকার; বন্ধুর স্ত্রীকে ধর্ষণের ভিডিও বিক্রি; স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে চাচা গ্রেফতার; গাজীপুরে স্কুলের ভিতর কিশোরী ধর্ষণ; চাঁদপুরে ১৩দিন আটকে রেখে স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ; তিন শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে বাড়ির মালিক আটক; যেন করোনার মধ্যে ধর্ষণের মহামারী!

আচ্ছা, এত যে রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে ধর্ষকদের কাছে সেগুলো কি যাচ্ছে না! ওরা কি পড়ছে না! শাহবাগের আন্দোলনের খবর কি ওদের কাছে গুরুত্বহীন! টিভিতে এত টক-শো, এত স্টোরি – ওরা কি দেখছে না! হ্যাঁ, জানলেই বা কী? বড় জোর কয়েক মাস বা বছর হাজতবাস, তারপর তো আবার! ওরা জানে ওদের কদর কাদের কাছে। জানে যে তারা ঠিকই ওদের ছাড়িয়ে নিবে। কাউকে কাউকে ধর্ষক চাচার মত ফুলের মালায় বরণ করে নেয়া হবে। ওরাই তো ভবিষ্যৎ!

গণদাবী – ওদের ফাঁসি দেয়া হোক। একটা অংশের দাবী ওদের castration বা খোঁজা (খাসিকরণ) করা হোক। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকেও এব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। আইনমন্ত্রীর বরাতে বলা হয়েছে, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড রেখে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। কিন্তু সন্দেহের যায়গা হচ্ছে এর প্রয়োগ নিয়ে। জানামতে, পৃথিবীর ৮টি দেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, আফগানিস্তান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, ইরান, পাকিস্তান এবং উত্তর কোরিয়া। সৌদি আরবে শাস্তি কার্যকর করা হয় জনসমক্ষে কতল করে আগে হতো পাথর মেরে। আফগানিস্তানেও জনসমক্ষে তবে গুলি করে। উত্তর কোরিয়াতে ফায়ারিং স্কোয়াডে। চীনে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের পাশাপাশি অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী castration বা খোঁজা করাও হয়। ইন্দোনেশিয়ার কোন কোন প্রদেশেও খোঁজা করা হয়।

কথা হচ্ছে আমাদের দেশে আমরা এ ধরণের শাস্তি কার্যকর করতে কতটা সক্ষম হব? চাঞ্চল্যকর কয়েকটি ঘটনায় আবেগ-আপ্লুত হয়ে মৃত্যুদন্ডের দাবী তোলা যত সহজ আর তা আইন করে কার্যকর করা ততটা সহজ হবে কি! যেসব বুদ্ধিজীবী নামধারীরা এখন গণদাবীর সাথে তাল মিলিয়ে যাচ্ছেন তারাই আবার মৃত্যুদন্ডের মত শাস্তির বিরোধিতা করবেন ইনিয়ে বিনিয়ে। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড হোক তবে তা যেন সঠিক তদন্ত, বিচারের মাধ্যমে কার্যকর হয়। ধর্ষকদের মনে যেন কাঁপন ধরিয়ে দেয়।

ধর্ষণের ঘটনা ঘটা মাত্র পেন্সের মাথার মাছির মত ধর্ষকদের দিকেও ফোকাস করতে হবে সকল মিডিয়ার। খুঁজে বের করে জনসমক্ষে নাম, পরিচয় প্রকাশ করতে হবে। ধর্ষন মানেই জীবন শেষ নয়! কাজেই রুখে না দাঁড়ালে কোন শাস্তিই ধর্ষকদের নিবৃত করবে বলে আশা করা যায় না – সাথে যদি থাকে ক্ষমতার বলয়ে আশ্রয় প্রশ্রয়। রুখে দাঁড়াতে হবে নির্যাতিত, নির্যাতিতের পরিবার, সমাজের আপামর সকলের।

আশার কথা, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন যে ‘ধর্ষণকারীদের জন্য রাজনৈতিক দল যেন আশ্রয়ের ঠিকানা না হয়’। আমরা সাধারন জনগন এটাকে কথার কথা হিসেবে দেখতে চাই না। দল থেকে যেভাবে দূর্ণীতিবাজ, মাদক ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ অভিযান চলছে তেমনি ধর্ষক নির্মূল অভিযান চলুক এটাও হোক গণদাবী। শুধু চুনোপুঁটি নয়, রাঘব বোয়ালদেরকেও নির্মূল করতে হবে। তাহলেই ধর্ষণের প্রকোপ কমবে নিঃসন্দেহে।

এখানেই কিন্তু শেষ নয়! পরিবার, সমাজ থেকে যতক্ষণ না মূল্যবোধ শিখানো হবে, যতক্ষণ না শিখানো হবে যে নারীরা অবলা নন, তাদেরও সমান অধিকার আছে, সম্মান আছে, শিক্ষা-দীক্ষা জ্ঞান-বুদ্ধিতে তারাও পুরুষের সমান এবং সমকক্ষ; ততক্ষণ ধর্ষণ নির্মূল করা বাস্তবে যাবে কি না সন্দেহ! নিজ পরিবারের বাইরে অন্য কোন নারী বয়স ভেদে আমার মায়ের সমান, বোনের সমান, মেয়ের সমান – এই বোধ আসলে তবেই ধর্ষণ নির্মূল হবে বলে আশা করা যায়।

লেখকঃ জাতীয় ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৮:৪৩ | বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২০

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com