শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের সফরের দিনে যুক্তিহীন হঠাত্ রিমান্ডে মাহমুদুর রহমান

  |   বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট

অলিউল্লাহ নোমান

Noman_2

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং বাংলাদেশ সফরে আসার সঙ্গে সঙ্গে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে হঠাত্ নম্বরবিহীন মাইক্রোতে করে কারাগারের বাইরে নেয়া হয়। যা রীতিমতো লুকোচুরি। নম্বরবিহীন মাইক্রো। এমনিতেই সাদা পোশাকধারীদের সাদা মাইক্রো দেখলে লোক আতঙ্কিত হয়। তার ওপর আবার নম্বরবিহীন। কোনো ঠিকানা নেই গাড়িটির। যে কোনো অঘটন ঘটলেও খুঁজে পাওয়া যাবে না কেন, কারা, কী উদ্দেশ্য, এই গাড়ি ব্যবহার করেছিলেন। রিমান্ডে নিতে হলে আদালতের আদেশ লাগে। গ্রেফতারের ৮ মাস পার হতে চলেছে। কথা নেই, বার্তা নেই। হঠাত্ করে নম্বরবিহীন সাদা মাইক্রোতে কারাগারের বাইরে নেয়া, যে কারও গা শিউরে উঠবে। সহকর্মী হিসেবে সরকারের এ লুকোচুরিতে মাহমুদুর রহমানের জীবন নিয়ে আমরা উত্কণ্ঠিত।

প্রতিদিনের মতো সকালে চোখ খুলে বিছানায় শুয়েই ল্যাপটপ অন করি। আমার দেশ-এ ক্লিক করতেই দেখা গেল আমাদের প্রিয় সম্পাদক আমাদের অভিভাবক মাহমুদুর রহমানকে হঠাত্ করেই নম্বরবিহীন মাইক্রোতে করে কারাগারের বাইরে নেয়া হয়েছে। সংবাদটি দেখেই গা চমকে উঠলো। দেরি না করে প্রথমেই ফোন করলাম অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ ডেস্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজনকে। তিনি আমার ফোনটা ধরেই বললেন, এতো সকালে কী তোমার সম্পাদকের অবস্থান নিয়ে ফোন করেছো। আমরা এরই মধ্যে ওয়াকিবহাল বিষয়টি সম্পর্কে। তিনি আরও কিছু বিষয়ে আমার কাছে জানতে চাইলেন। সেগুলো তাকে অবহিত করলাম।

প্রথমে অবশ্য জানা যায়নি তাকে কেন নম্বরবিহীন গাড়িতে করে কারাগারের বাইরে নেয়া হলো। নম্বরবিহীন গাড়িতে করে কারাগারের বাইরে নেয়া মানেই অসত্ কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। আর সেটা হঠাত্ করে কেন! তাও আবার আজ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। মেয়াদ উত্তীর্ণ সরকার কী ভারতের পররাষ্ট্র সচিবকে মাহমুদুর রহমানের রিমান্ড উপহার দিতে চেয়েছেন! তা না হলে কেনইবা আজ হঠাত্ করে রিমান্ডে নেয়া হবে। এরকম নানা প্রশ্ন জাগে মনে। কারণ, মাহমুদুর রহমানই সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন ট্রানজিটের নামে করিডোর থেকে শুরু করে সার্বভৌমত্ব বিরোধী চুক্তিগুলোর বিরুদ্ধে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে পালাটানা বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ভারী যন্ত্রপাতি ভারতের পশ্চিমাঞ্চল থেকে পূর্বাঞ্চলে নিয়ে যেতে ব্যবহার করা হয় বাংলাদেশের ভূমি। এজন্য তিতাস নদীতে বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ করে রাস্তা তৈরি করা হয়। আরও ১৮টি ছোট-বড় নদী-খালে বাঁধ দিয়ে পানির গতি আটকে দেয়া হয় তখন।
ভারতের ভারি যানবাহন চলাচলের সুযোগ করে দিতেই আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া সীমান্ত পর্যন্ত এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রথম নদীপথে আশুগঞ্জে আসে ভারতীয় সামানা। সেখান থেকে আখাউড়া হয়ে ত্রিপুরা সীমান্তে প্রবেশ করতে হবে। এজন্য বাড়তি সুবিধা নিতে ভারতীয়রা নিজের উদ্যোগেই নদীতে বাঁধ দিয়ে রাস্তা বানায়। বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি কেউই তখন স্বীকার করেনি ওই বাঁধের কথা। তাহলে কে দিয়েছে এই বাঁধ? আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে অনুসন্ধানী রিপোর্ট করে বের করা হয় ভারত-ই এই বাঁধ দিয়েছে। এর কোনো প্রতিবাদ হয়নি তখন। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী এতো বড় একটি ঘটনার প্রতিবাদ করা হয়নি কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে। মাহমুদুর রহমান বসে থাকেননি। আমার দেশ-এ লেখালেখির পাশাপাশি সার্বভৌমত্ব বিরোধী এই কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঢাকা থেকে আখাউড়া সীমান্ত পর্যন্ত লংমার্চ করেছিলেন। তিতাসের বাঁধে তিনি কোদাল দিয়ে কেটে প্রতীকী প্রতিবাদও জানান। তার এই প্রতিবাদের পরই দেশের মানুষের ঘুম ভাঙে।

তিস্তার পানিসহ ৫৪টি নদীর উজানে পানিপ্রবাহ ভারত আটকে দিয়ে ভিন্ন গতিপথে প্রবাহিত করার প্রতিবাদে তিনি লিখেছেন। ট্রানজিটের নামে বিনা শুল্কে ভারতকে করিডোর দেয়ার বিরুদ্ধে তার লেখনী ও বক্তব্যগুলো ছিল স্পষ্ট। সীমান্তে ভারতীয় আগ্রাসনে বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি ছিলেন সোচ্চার। ইন্ডিয়াপন্থী আওয়ামী-বাম গণমাধ্যমগুলো প্রকাশ্যে ভারতের এসব সার্বভৌমত্ব বিরোধী আগ্রাসনকে সমর্থন জানিয়ে আসছে। মাহমুদুর রহমানের লেখনী ও সরাসরি প্রতিবাদী বক্তব্যে বাংলাদেশের মানুষ জেগে ওঠে। মানুষ অন্তত জানতে পেরেছে সরকার ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী কোনো কোনো চুক্তি করেছে। এতে বাংলাদেশের স্বার্থ, লাভ-লোকসান মানুষ অবহিত হয়েছেন।
সীমান্তে আগ্রাসনের বিষয়ে আমার দেশ-এর লেখনী বাংলাদেশের মানুষের চোখ খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত যে দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত সেটা এখন স্পষ্ট। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়ও এখন সেই বিষয়টি উঠে আসছে। দৈনিক আমার দেশ-ই সীমান্তের আগ্রাসী তত্পরতাগুলো তুলে ধরেছে বিশ্ববাসীর সামনে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী ভারতীয় পদক্ষেপগুলো সরকার যেভাবে অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছিল, আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমান জাতির সামনে সেটা পরিষ্কার করেছেন। এছাড়া মাহমুদুর রহমান এবং আমার দেশ-এর কোনো অন্যায় রয়েছে বলে কেউ জানেন না। সরকারের দুর্নীতি, বিচার বিভাগে দলীয়করণ, বিচারের নামে কিভাবে প্রহসন এবং অবিচার চলছে সেটাই মাহমুদুর রহমান জাতিকে অবহিত করেছেন।

দৈনিক আমার দেশ প্রধানমন্ত্রীর ছেলের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে। তখন থেকেই সরকার এবং সরকারি দলের রোষানলে পড়ে আমার দেশ। সেই ঘটনায় সারা দেশে ২৫টি’র বেশি মামলা দেয় সরকারি দলের লোকেরা। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরীও একটি মামলা দিয়েছিলেন। সেই মামলাটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সম্প্রতি খারিজ হয়ে গেছে। এতেই কী প্রমাণিত হয় না মাহমুদুর রহমানের সম্পাদিত দৈনিক আমার দেশ যে অভিযোগটি প্রকাশ করেছিলেন সেটা সত্য ছিল! আইন ও যুক্তির লড়াইয়ে হেরে গিয়ে সরকার বার বার মাহমুদুর রহমান এবং আমার দেশ-এর বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করছে।
মাহমুদুর রহমানের কোনো লেখায় ভুল থাকলে, আমার দেশ-এ প্রকাশিত কোনো প্রতিবেদন অসত্য হয়ে থাকলে ভারতপন্থী আওয়ামী-বাম মিডিয়ার অভাব নেই বাংলাদেশে; তারা সেখানে জবাব দিতে পারতেন। অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যগুলো তুলে ধরতে পারতেন। কিন্তু সেটা না করে মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে, আমার দেশ ছাপতে দেয়া হচ্ছে না। এতে সায় দিয়ে যাচ্ছে ভারতপন্থী আওয়ামী-বাম মিডিয়াগুলো। যুক্তি এবং তথ্য প্রমাণের সামনে দাঁড়ানোর হিম্মত তাদের নেই। এজন্য তাদের কব্জায় থাকা রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে মাহমুদুর রহমানকে নির্যাতনের জন্য।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং বাংলাদেশের একটি কঠিন সময়ে সফরে এসেছেন। তার এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো নির্বাচন নিয়ে দূতিয়ালি করা। ভারত বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানাভাবে দূতিয়ালি করছে সেটা এরই মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন মিডিয়ায় প্রকাশ্যে বলেছেন। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের নির্বাচন কিভাবে হবে সেটা নিয়ে ভারত রীতিমত মুরব্বির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। কে ক্ষমতায় থাকবে, কাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় সেটা প্রকাশ্যে বলছেন ভারতীয় মন্ত্রীরা। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এরই মধ্যে যশোরের বেনাপোল সীমান্তে একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে সহযোগিতা করে প্রতিদান দিতে চায়। সেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের বাংলাদেশ সফরের দিনেই মাহমুদুর রহমানকে হঠাত্ করে কারাগারের বাইরে নেয়া হয় নম্বরবিহীন গাড়িতে করে।

মাহমুদুর রহমান ও তার সম্পাদিত পত্রিকা দৈনিক আমার দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সত্য তুলে ধরছে মানুষের সামনে। সেজন্যই মাহমুদুর রহমানের প্রতি সংক্ষুব্ধ ভারতপন্থী মিডিয়া এবং ভারতের সেবাদাস সরকার। তারা যেসব বিষয় গোপন করে ভারতের পক্ষে সাফাই গাইতো আমার দেশ এবং মাহমুদুর রহমানের লেখনীতে সেগুলো জাতির সামনে উন্মোচিত হতো। এতেই তাদের গায়ে এতো জ্বালা। যুক্তির ভাষা হারিয়ে মাহমুদুর রহমানকে নির্যাতনের মাধ্যমে শেষ করে দেয়াই হচ্ছে এখন তাদের মূল লক্ষ্য। আর সেটা করে তারা ভারতের পররাষ্ট্র সচিবকে বলতে চায়—দেখো, তোমাদের স্বার্থবিরোধী মাহমুদুর রহমানকে কিভাবে শায়েস্তা করা হচ্ছে।
লেখক : দৈনিক আমার দেশ-এর
বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৮:৫৭ | বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com