| সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০১৪ | প্রিন্ট
চট্টগ্রাম : ফেঁসে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম সিডিএর চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন স্বয়ং তারই মতাদর্শের এক দল অনুসারী। অপসারণ চেয়ে ঘোষণা করেছেন কঠোর কর্মসূচি। বলেছেন, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে একের পর এক অনিয়ম করছেন তিনি। তার পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত মাঠ ছাড়বেন না কর্মচারীরা। সর্বশেষ গত ৫ই এপ্রিল প্রেস ক্লাবে ছালামের দুর্নীতি তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শ্রমিক নেতারা। তবে এসব অভিযোগকে ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেছেন সিডিএ চেয়ারম্যান। জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন একটি মহল ঈর্ষান্বিত হয়ে তার বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়াচ্ছে।
শ্রমিক নেতারা অভিযোগ করেন, দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই সিডিএ চেয়ারম্যান ছালাম দুর্নীতিতে মজেছেন। তার নিজস্ব সিন্ডিকেট দিয়ে তিনি এসব কাজ করান। কিছুদিন আগে সিডিএ কর্মচারী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমানকে বদলি করা হয়েছে। কেবল তাই নয়, যেসব নেতা তার বিরুদ্ধে মুখ খোলেন তিনি কৌশলে তাদের বদলি করেন দ্রুত। তার বিরুদ্ধে রয়েছে হয়রানিরও অভিযোগ। নেতারা আরও জানান, সিডিএ চেয়ারম্যানের কাছে কর্মচারী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় সমস্যা সমাধানে নানা দাবি দেয়া হয়। কিন্তু গত ৫ বছরে তিনি একটি দাবিও পূরণ করেননি। সিডিএ চেয়ারম্যান কর্মচারী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমানকে বদলি আদেশের বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় শ্রম আইনের ২২৮ ধারা অমান্য করে গত ১৩ই মার্চ হাবিবুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করেন।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবদুচ ছালাম প্লট বরাদ্দ নীতিমালা লঙ্ঘন করেছেন। তিনি তার পছন্দের মন্ত্রী-এমপি ও তার আত্মীয়স্বজনকে ৬০টি প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন। যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। নিম্ন মানের কাজের জন্য বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার ধস হলে তার পছন্দের প্রতিষ্ঠান নিয়ে কথা উঠে। পরে জানা যায়, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তিনি যোগ্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে একটি নিম্নমানের গ্রুপকে কাজটি দিয়েছিলেন। এ ঘটনায় অনেক লোক মারা গেলে পরে সেনাবাহিনী কাজটি নিজেদের দায়িত্বে শেষ করে। সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি অভিযোগ এনে চলতি মাসের গত ১লা এপ্রিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবদুল মান্নান ও পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলামকে স্মারকলিপি দিয়েছে শ্রমিক নেতারা।
এতে বলা হয়, আবদুচ ছালাম আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী এক ব্যক্তি। সিডিএর চেয়ারম্যান পদে থেকে তিনি দলকে বিক্রি করে নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছেন। তার কাজে সায় না দেয়ায় অন্যায়ভাবে কর্মচারীদের পেটে লাথি মারা হচ্ছে। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক আবদুল আহাদ, শ্রমিক নেতা আবু তাহের, বখতেয়ার উদ্দিন খান। পরে তারা জানান, শহরের চান্দগাঁও এলাকায় ৩ দশমিক ৩০ কাঠা খেলার মাঠের জায়গা একটি সংগঠনকে ১ টাকা টোকেন মূল্যে বরাদ্দ দেয়া হয়। একই ভাবে সিডিএ চেয়ারম্যানের মা-বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত মাবিয়া-রশিদিয়া ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের ?জায়গা ১ টাকা টোকেন মূল্যে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ?মাহবুবুল হক চৌধুরী এটলি বলেন, ‘সিডিএ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে দুর্নীতি করছেন। তিনি টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না।
যারা তার পছন্দের কেবল ওরাই সিডিএর কাজ পান।’ একই রকম মন্তব্য করেন সিডিএ কর্মচারী লীগের সভাপতি বিমান বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘আবদুচ ছালামের কর্মকাণ্ড সমালোচিত হয়েছে। বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার ধসের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় তার কাজে কতটা ত্রুটি রয়েছে। তিনি সিডিএ ভবনকে নিজের মতাদর্শের আখড়া বানিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে।’ চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, আবদুচ ছালামের নিয়োগ নিয়েও রয়েছে নানা বির্তক। নিয়ম অনুযায়ী, কোন রাজনৈতিক দলের পদে থাকা ব্যক্তি সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব পদে থাকতে পারেন না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সে নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ছালাম সিডিএ চেয়ারম্যানের পদে বসেন।
এরপর তার সঙ্গে মতবিরোধ ঘটে নগর আওয়ামী লীগ নেতাদের। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে শেখ হাসিনার কাছে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে পুনরায় নিয়োগ দেয় সরকার। যাকে নিয়ে এতসব অভিযোগ সেই সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, ‘একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। ওরা কোন ধরনের সুবিধা পায়নি বলে আন্দোলন করছে। আমি কোন আন্দোলনকে ভয় পাই না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে ব্যবস্থা নিয়েছি। কারও ওপর খড়গ চালাচ্ছি না। বাড়াবাড়ি আমি একদম পছন্দ করি না।’
Posted ১৩:১৭ | সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin