শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পঞ্চম সংশোধনী আইন এবং দশম সংসদ নির্বাচনে বাধা ও চ্যালেঞ্জ

  |   শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট

অ ধ্যা প ক বো র হা ন উ দ্দি ন খা ন

edi_borhan-uddin

সুপ্রিমকোর্ট সংবিধানের পঞ্চম এবং ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল করে রায় দেয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করেছে। সংবিধানের এই সংশোধনী যতটা না আইনি, তার চেয়ে ঢের বেশি রাজনৈতিক। এটা বহুবিধ রাজনৈতিক ও আইনি উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। বর্তমান নিবন্ধে দুটি বিষয় যথা—নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং সংসদ বাতিল নির্বাচনের ওপর আলোকপাত করা হবে।
১. নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান : ১৯৯০ সালে এক গণঅভ্যুত্থানে তত্কালীন স্বৈরাচার সরকারের পতন হলে বাংলাদেশ জনপ্রিয় গণতন্ত্রে ফিরে আসে। এরপর সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সংসদীয় সরকার এবং সনাতনী পদ্ধতিতে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থার বিধান রাখা হয়। কিন্তু এ ব্যবস্থা বিরোধী দলগুলোর আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বিদায়ী নির্বাচিত সরকার সত্যিকার অর্থে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ করতে এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে পারবে—এ কথা বিরোধী দলগুলো বিশ্বাস করেনি। ফলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তারা রাজপথে সহিংস বিক্ষোভ শুরু করে। এই আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখে তত্কালীন বিরোধী দল এবং বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
এর ফলে সংসদে সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধীন) আইন, ১৯৯৬ পাস করে অভিনব নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। এই ব্যবস্থা অনুসারে বিদায়ী নির্বাচিত সরকার কার্যত পদত্যাগ করে এবং একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য দেশ পরিচালনা করে। গতানুগতিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং এই নির্দলীয় সরকারের মধ্যে পার্থক্য হলো—এই ব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যা নিশ্চিত করে যে, এই অন্তর্বর্তী সরকার শুধু তার কর্মকাণ্ডেই দলনিরপেক্ষ নয়, তার গঠনপ্রণালীটিও দলনিরপেক্ষ।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিনের আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্কটের কারণেই মূলত বাংলাদেশে সনাতনী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করতে হয়েছে। এটাও অনস্বীকার্য যে, সহিংসতা এড়ানো এবং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই সমাধান নিয়ে এগিয়ে এসেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনের পেছনে যুক্তি হলো—ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে দলীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহারের মাধ্যমে ভীতি প্রদর্শন, বল প্রয়োগ এবং অবৈধ হস্তক্ষেপের ফলে নাগরিকরা ব্যালট পেপারের মাধ্যমে তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে না, যা সংবিধানের অত্যন্ত মৌলিক বৈশিষ্ট্য গণতন্ত্রের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে।
অবাধ, স্বচ্ছ এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে সরকার বাছাই করতে দেয়ার মৌলিক অধিকারকে সমুন্নত ও অগ্রাধিকার দেয়ায় ত্রয়োদশ সংশোধনী সত্যিকার অর্থেই এখন পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় বিরাট ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশে বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে বিচার করলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাটি সহজাত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধতাড়িত এ কারণে যে, তা গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ খুলে দিয়েছে। সংবিধানে এ ব্যবস্থা সংযোজন করায় তা গণতন্ত্রের সহায়ক সাংবিধানিক মেকানিজম হিসেবে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়। আরও গুরুত্বপূূর্ণ হলো, সব রাজনৈতিক দলের সর্বসম্মত ঐকমত্যের ভিত্তিতে সৃষ্ট এ ব্যবস্থাটি নিয়ে জনগণের কোনো অংশও আপত্তি তোলেনি।
সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনের বিষয়টি চালেঞ্জ করে প্রথমে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন (পিটিশন নম্বর ১৭২৯, সাল ১৯৯৬) সৈয়দ মশিউর রহমান। বিচারপতি মোজাম্মেল হক এবং বিচারপতি এমএ মতিনের ডিভিশন বেঞ্চ পিটিশনটি খারিজ করে দেয় এবং মন্তব্য করে যে, “সংসদের এই আইনের বিরুদ্ধে আমরা অসাংবিধানিক কিছু পাইনি এবং এ কারণে ত্রয়োদশ সংশোধনী আইনে আমরা হস্তক্ষেপ করার কোনো কারণ খুঁজে পাইনি।”
এরপর ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয় রিট পিটিশন (নম্বর ৪১১২) দায়ের করেন এম সালিম উল্লাহ। বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীন, বিচারপতি মো. আওলাদ আলী এবং বিচারপতি মির্জা হুসেইন হায়দারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানির পর ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট প্রদত্ত রায়ে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বৈধ বলে ঘোষণা দেয়া হয়।
সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের আপিল আদালতে আবেদন শুনানির দিন ধার্য করা হয় ২০১১ সালের ১ মার্চ। আমরা চরম বিস্ময়ের সঙ্গে দেখলাম যে, ২০১১ সালের ১৭ মে এক সংক্ষিপ্ত আদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে আপিল আবেদনটি মঞ্জুর করা হয়।
এরপর ত্রয়োদশ সংশোধনীকে ভূতাপেক্ষভাবে বাতিল, ক্ষমতাবহির্ভূত এবং সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতিহীন বলে রায় দেয়া হয়। সেই রায়ে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বিদ্যমান বাস্তবতার নিরিখে দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে অর্থাত্ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার অনুমতি দেয়া হয়। আদালতের ভাষায়, “সাধারণভাবে বেআইনি হলেও প্রয়োজনের নিরিখে তা আইনসিদ্ধ—দীর্ঘকাল ধরে চলা আসা এই মৌলিক নীতির ভিত্তিতে উল্লিখিত ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। জনগণ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন।”
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সংসদে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধনী) আইন, ২০১১ পাস করা হয়। এর মাধ্যমে বিরোধী দলের নির্বাচনী জয় ঠেকিয়ে দেয়ার ক্ষমতাসীন দলের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলিত হয়েছে। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলেই শুধু বিরোধী দলের জয় সম্ভব ছিল। পরিহাসের বিষয় হলো—বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার অপরিহার্য এবং বিশ্বাসযোগ্য মেকানিজম হওয়া সত্ত্বেও এবং জনগণের কাছে তা ব্যাপকভাবে নন্দিত হলেও সংবিধান সংশোধনের জন্য আপিল বিভাগের সংক্ষিপ্ত আদেশকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে, যদিও তখনও—
ক. বিস্তারিত রায় প্রকাশ করা হয়নি,
খ. সংক্ষিপ্ত আদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত কোনো বিধান বাতিল করার কথা বলা হয়নি এবং
গ. ওই আদেশে পরবর্তী দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার কথা বলা হয়েছিল। কাজেই, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধান থেকে বাতিল করে দেয়ার সংসদের এই উদ্যোগ একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পদক্ষেপ। এর সঙ্গে সুপ্রিমকোর্টের রায়ের কিংবা সাধারণ জনগণের মতামতের কোনো কার্যকারণ সম্পর্ক নেই।
২. সংসদ বাতিল করে নির্বাচন : সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেয়ার পাশাপাশি সাধারণ নির্বাচনের বিধান নিয়ে আরও একটি ঝামেলাপূর্ণ হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। সংবিধানের ১১৩ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বলা হয়েছে যে, আগের নির্বাচিত সংসদ বাতিল না করেই সাধারণ নির্বাচন হতে পারে। এর মানে হচ্ছে, সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারবেন না যতক্ষণ না আগের সংসদের মেয়াদ শেষ হয়।
এটা একটা বিপজ্জনক অভিনব ব্যবস্থা এবং এই ব্যবস্থা সংসদীয় গণতন্ত্রের ঐতিহ্যের সঙ্গে একেবারেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এই ব্যবস্থায় সংসদ সদস্যরা নির্বাচনে অসম প্রতিযোগিতার সুযোগ পাবেন। কারণ, নির্বাচনের সময়ও তাদের অনেকেই সংসদ সদস্য হিসেবে বহাল থাকবেন এবং এমপি হিসেবে সাংবিধানিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এর ফল সংসদ নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না, যা স্বচ্ছ ও সব ধরনের হস্তক্ষেপমুক্ত নির্বাচনের পূর্বশর্ত।
উপরন্তু শোনা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দল প্রয়োজন হলে শেষ অস্ত্র হিসেবে এই অস্ত্র প্রয়োগ করে নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে দিতে পারে। এটা এ কারণে যে, বিরোধী কোনো দল যদি আসন্ন নির্বাচনে জয়ী হয়, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সংসদে থাকা ক্ষমতাসীন দলটি ছুঁতো-নাতার অজুহাতে নির্বাচনের বিরুদ্ধে সংবিধান সংশোধন করতে পারে।
এটা চরম অগণতান্ত্রিক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ হলেও এই আশঙ্কা বাতিল করে দেয়া যায় না। কারণ এর আগে আওয়ামী লীগ চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি কোনো সম্মান না দেখিয়েই সংসদের মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়েছে এবং নির্বাচন ছাড়াই সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়েছে।
৩. চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণ : যখন কোনো ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে প্রবণতা দেখা যায় যে, (ক) বিচার বিভাগ, পুলিশ ও প্রশাসনকে সম্ভাব্য প্রায় সব উপায়ে অপব্যবহার এবং (খ) দলীয় নেতাকর্মীদের বেআইনি কার্যকলাপের পক্ষ নেয়া, প্রশ্রয় দেয়া, রক্ষা করা এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করা, তখন এটা মনে করা ঠিক হবে না যে, সাধারণ নির্বাচনে সেই ক্ষমতাসীন দলের আচরণ ভিন্ন কিছু হবে, বিশেষ করে যেখানে দলীয় স্বার্থে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে।
সহজেই এটা ধারণা করা যায় যে, বর্তমান বাস্তবতায় কোনো ক্ষসতাসীন দল বিরোধী দলকে সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সুযোগ দেবে না, যেখানে বিরোধী দলের আইনসঙ্গত রাজনৈতিক অধিকারকে প্রায়ই অস্বীকার করা হয়।
উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে ‘তথাকথিত অবাধ নির্বাচনের প্রদর্শনী’ সাধারণ নির্বাচনকে অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য করার গ্যারান্টি হিসেবে দেখা যায় না এবং অবশ্যই দেখা ঠিক হবে না। বিশেষ করে যখন দলীয় স্বার্থে রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার বাড়ছেই, তখন তথাকথিত এই অবাধ নির্বাচনকে বিরোধী দলের জন্য একটি ফাঁদ হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে—যেখানে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে কিন্তু চূড়ান্ত খেলায় বর্তমান ক্ষমতাসীনদের জয়ই পূর্বনির্ধারিত।
ব্যাপক জনপ্রিয় দুটি দল বা জোটের মধ্যে সংঘাতমুখর রাজনীতির কারণে বিশ্বাসযোগ্য বা অংশগ্রহণমূলক কোনো নির্বাচন না হলে তা সার্বিক রাজনীতির পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকেও অনিবার্যভাবে অস্থিতিশীল করে তুলবে। এ ধরনের অস্থিতিশীলতার কারণে যা ঘটতে পারে :
(ক) অসাংবিধানিক হস্তক্ষেপ, যার ফলে সাংবিধানিক ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়তে পারে এবং
(খ) অংশগ্রহণহীন নির্বাচনের ফলে গণঅসন্তোষ/নৈরাজ্য

ক্ষমতাসীন দল যদি অবাধ নির্বাচন করতে চায়, তাতেও পরিস্থিতি ভিন্ন কিছু হবে না। কারণ তা বিরোধী দলগুলোর কোটি কোটি সমর্থকের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা পাবে না। তাছাড়া পুরো প্রশাসন তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এই কুখ্যাতি অর্জন করেছে যে, তারা ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে মারাত্মক রকমের অনুগত, হোক তা বাস্তবিক কিংবা ধারণাপ্রসূত।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিশ্বাস ও আস্থার সঙ্কটের রাজনৈতিক সংস্কৃতি সব সময়ই ছিল। যেসব দেশ সংসদীয় ব্যবস্থা সফলভাবে অনুশীলন করে এসেছে, এখানে সেই সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশে বৈধ কারণ ছাড়াই অতীতে সব সময়ই বিদায়ী রাজনৈতিক সরকারকে নিজের জয় নিশ্চিত করার জন্য ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে কারচুপির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের ইতিহাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, বিদায়ী রাজনৈতিক সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই তেমন বিশ্বাসযোগ্যতা পায়নি। শুধু তা-ই নয়, এদেশে একটি দল আরেকটি দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে—এমন নজিরও নেই।
[ইংরেজি থেকে অনূদিত]
পাদটিকা :
১. সংবিধান (দ্বাদশ সংশোধনী) আইন, ১৯৯১
২. সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধনী) আইন, ১৯৯৬-এর ৫৮বি থেকে ৫৮ই ধারা
৩. সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দীন সরকারের সাময়িক হস্তক্ষেপ ছাড়া
৪. এর মানে হলো সব সংসদ সদস্যই বহাল থাকবেন এবং তাদের সবাই বা কেউ কেউ সংসদ নির্বাচনে পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন
৫. ওয়েস্টমিনস্টার ধাঁচের গণতন্ত্রের সূতিকাগার যুক্তরাজ্য, পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারত, নিউজিল্যান্ড, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার সংবিধানে এরকম কোনো বিধান নেই
৬. যেসব দেশে এই ব্যবস্থা আছে, সেখানেও সংসদ সদস্য হিসেবে বহাল থেকে আবার নির্বাচন করার বিধান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে
৭. সংবিধান (চতুর্থ সংশোধনী) আইন, ১৯৭৫-এর ৩৪ ধারায় বলা হয়েছে—প্রথম সংসদের মেয়াদ বর্ধিতকরণ : সংবিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইন পাসের পর আগেই প্রেসিডেন্ট সংসদ ভেঙে না দিলে ৫ বছর মেয়াদ শেষে সংসদ ভেঙে যাবে
৮. সংবিধান (চতুর্থ সংশোধনী) আইন, ১৯৭৫-এর ৩৫ ধারায় বলা হয়েছে—প্রেসিডেন্ট সংক্রান্ত বিশেষ বিধান : সংবিধানে যাহাই থাকুক না কেন, এই আইন পাসের পর—
(ক) এই আইন পাসের আগে যিনি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন, তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন;
(খ) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং সংবিধানের সংশোধনী পাসের পর তিনি এমনভাবে দায়িত্ব পালন করবেন যেন তিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

লেখক :

অধ্যাপক

আইন বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০০:০৮ | শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com