বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ রাতে হবে উল্কাবৃষ্টি

  |   শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট

ulka

রাতের আকাশ তো বটেই, দিনের আকাশ চিরেও কখনও কখনও ছুটে যেতে দেখা যায় বিরাট অগ্নিগোলক। জ্বলতে জ্বলতে এরা নিঃশেষ হয়ে যায় আকাশেই। কদাচিৎ মাটিতে এসে পড়ে। এগুলো বড় ধরনের উল্কাখণ্ড, যার ইংরেজি নাম ‘বোলাইড’। কিন্তু খুব ছোট হলে সেগুলো মাটি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না, তার আগেই জ্বলেপুড়ে নিঃশেষ হয়ে যায়।কখনও কখনও রাতের আকাশে কাছাকাছি সময়ে জ্বলে ওঠে হাজার হাজার এ রকম উল্কা। তাদের গমনপথের জমকালো আলোয় ভরে যায় পুরো আকাশ। একে বলে উল্কাবৃষ্টি বা উল্কাঝড়, অনেক ছোট ছোট উল্কার একসঙ্গে পতন। হ্যাঁ, এ রকম একটি উল্কাবৃষ্টির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে পৃথিবী। পুরো নভেম্বর মাসই এটা অল্পবিস্তর থাকবে, তবে চূড়ান্ত আকার ধারণ করবে আজ ১৬ নভেম্বর দিবাগত রাতে। উল্লেখ্য, ধূমকেতু ৫৫পি টেম্পল-টার্টল সূর্যের চারদিকে যে পথ ধরে ছুটে চলেছে, ওই কক্ষপথকে অতিক্রম করতে শুরু করেছে পৃথিবী নভেম্বরের প্রারম্ভ থেকেই। মনে রাখবে, সূর্যের চারদিকে পৃথিবী সেকেন্ডে ১৬ মাইল বেগে ছুটে চলেছে। ৫৫পি টেম্পল-টার্টল ছুটে চলার সময় পেছনে ফেলে যাচ্ছে বিচ্ছিন্ন সব ছোট ছোট টুকরো বা ডেবরি। বছরের এই নভেম্বরে পৃথিবীর চলার পথ টার্টলের কক্ষপথকে অতিক্রম করতে থাকে। তখনই বিচ্ছিন্ন টুকরোগুলোর মুখোমুখি হয় পৃথিবী এবং তা বায়ুমণ্ডলের ঘর্ষণে রাতের আকাশকে দ্যুতিময় করে তোলে। এদের উজ্জ্বলতার মাত্রা থাকে ২ দশমিক ৫ এবং বেগ প্রতি সেকেন্ডে ৭১ কিলোমিটার পর্যন্ত। এটিই সেই প্রত্যাশিত উল্কাবৃষ্টি। আকাশে লিও (সিংহ রাশি) নক্ষত্রমণ্ডলের স্থান থেকে এই উল্কাপাত শুরু হয় বলে এর নাম ‘লিওনিড উল্কাবৃষ্টি’।

১৬ নভেম্বর দিবাগত রাতে এটা ভালোভাবে দেখা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘণ্টায় ১২ থেকে ২০টি উল্কাপাত দেখতে পাওয়ার কথা। আকাশে চাঁদ না থাকলে অনেক স্পষ্টভাবে দেখা যাবে। এবার পূর্ণ চাঁদ থাকায় দেখায় অসুবিধা হতে পারে। তবে উল্কাবৃষ্টি না দেখা গেলেও ভরা পূর্ণিমায় প্লাবিত থাকবে নদীর পাড়। জল, হাওয়া আর বয়ে যাওয়া নদীর স্রোতের সঙ্গে মহাকাশের উল্কাবৃষ্টি একীভূত হয়ে ধরা দেবে আমাদের মনে। ভরা পূর্ণিমায় মানুষকে উদ্দীপনা জোগাবে মহাজাগতিক সংস্কৃতির পথে যাত্রার। এ উপলক্ষে ডিসকাশন প্রজেক্ট ও নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের যৌথ উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যার ৫ নম্বর ঘাটে বিশেষ আয়োজন করা হচ্ছে। বিকেল ৫টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে এ অনুষ্ঠান। উল্কাবৃষ্টি দেখতে আকাশ পর্যবেক্ষণে থাকবে চারটি টেলিস্কোপ। পর্যবেক্ষণের বিষয় হিসেবে আরও থাকবে চাঁদ, শুক্র, মঙ্গল ও শনি। মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে লিওনিড উল্কাবৃষ্টি, শুক্র গ্রহ ও মঙ্গল, ভয়েজার ক্যাসিনি-সংক্রান্ত তথ্যচিত্র দেখানো হবে। এ ছাড়া আলোচনা, প্রশ্নোত্তর পর্ব তো থাকছেই। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় আয়োজন হলো, নদীতে মঙ্গলপ্রদীপ ভাসানো। সূর্য এবং তার আটটি গ্রহকে প্রতিনিধিত্ব করবে এমন নয়টি মঙ্গলবৃত্ত ভাসিয়ে মানুষের মহাকাশচর্চাকে সম্মান জানানো হবে, বৃত্তগুলো ক্রমাগত বড় হওয়ার মধ্য দিয়ে মানবজাতির একতাবদ্ধ দীর্ঘ লাখ লাখ পদযাত্রার কথা বলবে। নদীর পাড়ে আয়োজন করা প্রসঙ্গে উদ্যোক্তারা বলেছেন, কৃষিনির্ভর সভ্যতায় নদীর প্রবাহকেই পরিবহনের জন্য ব্যবহার করেছিল আদি মানুষ। জলে ভাসিয়ে এক জায়গা থেকে অন্যত্র বয়ে নিয়ে যেত ফসলাদি। নদী এভাবে মানুষকে বয়ে নিয়ে এসেছে পরিণত সভ্যতায়। তেমনি এ নদীই আমাদের বয়ে নিয়ে যাবে মহাকাশে, মহাবিকাশের বন্দরে। নদীর তীরে গড়ে ওঠে মানুষের বসতি, গ্রাম-নগর। নদী মরে গেলে সেই গ্রাম-নগর মরে যায় অথবা সরে যায়। লোকায়ত সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে সভ্যতার উৎস ও ধারাবাহিকতা খুঁজলে তা আমাদের কাছে স্পষ্ট হবে। বেঁচে থাকার তাগিদে আমাদের কৃষক, মাঝিরা মহাকাশ ও নক্ষত্রের ওপর নির্ভর করেছিল। আমরা মাঝি ও কৃষকের সন্তান।উল্লেখ্য, ৫৫পি টেম্পল-টার্টল যা আমাদের কাছে পরিচিত ধূমকেতু টেম্পল-টার্টল হিসেবে। এটা আমাদের অতিপরিচিত হ্যালির ধূমকেতুর মতো পিরিয়ডিক ধূমকেতু। অবশ্য হ্যালির মতো ৭৬ বছরে নয়, ৩৩ বছরে একবার ঘুরে আসে। এ ধূমকেতুটি আবিষ্কার করেছিল দু’জন জ্যোতির্বিজ্ঞানী স্বতন্ত্রভাবে। তারা হচ্ছেন আর্নেস্ট টেম্পল (১৯ ডিসেম্বর ১৮৬৫) আর হোরেস পারনেল টার্টল (৬ জানুয়ারি ১৮৬৬ সাল)। লিওনিড উল্কাবৃষ্টির উৎসই হলো এই ৫৫পি টেম্পল-টার্টল। প্রতি ৩৩ বছরে একবার পৃথিবী টেম্পল-টার্টল ধূমকেতুটির সরাসরি ধূলিকণা মেঘের সান্নিধ্যে আসে, তখন প্রতি ঘণ্টায় হাজারের বেশি উল্কাপাত ঘটে থাকে। ২০২৩ সালের লিওনিড উল্কাবৃষ্টিতে এ রকমটি ঘটবে। তার আগে এই হালকা উল্কাচ্ছটায় নিজেরা স্নাত হই।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৭:০০ | শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com