গণতন্ত্র মঞ্চের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু। ১১ মার্চ ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরে মানববন্ধন করবেন তারা।

আজ দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে বিরোধী মতের রাজনৈতিক নেতাদের দমন পীড়ন এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তি‌নি এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘সরকার বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের উপর জুলুম নির্যাতন করছে ও রমজানের আগেই সব কিছুর দাম বাড়িয়েছে। সিন্ডিকেট ব্যবসার জন্য সব কিছুর দাম বেড়েছে। সরকার বিদেশী ভারতীয় প্রভুকে খুশি করতে আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করেছে।

‘ইতিমধ্যেই সরকার সংলাপের বিষয়ে কথাবার্তা শুরু করেছে। আগে আপনাদের ঘোষণা দিয়ে পদত্যাগ করতে হবে, তাহলে আমরা বিবেচনা করব আপনাদের সঙ্গে আলোচনায় যাব কিনা। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

তিনি অবিলম্বে আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করার আহ্বান জানান। তা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান ।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘১৮ সালে দিনের ভোট রাতে করার পরে এই সরকার দেশের ভেতরে ও বাইরে সমালোচিত হয়েছে। জাপানি রাষ্ট্রদূত ‘দিনের ভোট রাতে হয়েছে’ বলেছে। আমেরিকার বিভিন্ন প্রতিনিধিরা এদেশে বার বার আসছে। এতেই বোঝা যায় এই সরকার কত বড় জোচ্চুরি করছে। এই সরকার আবারো বিদেশীদের বলছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করবে। বিদেশীদের যতোই বোঝান আপনার অধীনে আমরা আর নির্বাচনে যাব না। আমরা যেমন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে পারি, তেমনি দূর্বার আন্দোলনও সৃষ্টি করতে পারি।

আন্দোলন দমিয়ে রাখতে সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা মামলা করছে বলে অভিযোগ করেন ।

‘আমি বঙ্গবন্ধু কন্যা আমি মিথ্যে কথা বলি না’- গত নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য উল্লেখ করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ব‌লেন, ‘আমরা দেখেছি তারা কী করেছে গত নির্বাচনে। কিন্তু এবার আর মিথ্যুকদের কথা বিশ্বাস করব না। তাই এই সরকারের পতন ঘটানোর জন্য আন্দোলন করতে হবে, তার কোনো বিকল্প নেই। আমরা এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাব না। তাদের সংলাপের টোপে আমরা পড়ব না। আমরা ইতিমধ্যেই বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করছি এবং অচিরেই বিএনপির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চ সরকার পতনের একদফা কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে থাকবে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আজকেও বিরোধী দলের কর্মসূচির দিনে শান্তি সমাবেশের নামে পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে। এ ধরনের কর্মসূচিকে জনগণ ‘নার্ভাস দলের কর্মসূচি’ নাম দিয়েছেন।

‘সন্ত্রাস না করে আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে সমগ্র বাংলাদেশকে বিবস্ত্র করেছে। তাই তাদের বিদায় করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

‘রোজার আগেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার অস্থির অবস্থায়’ এমন মন্তব্য করে সাইফুল হক বলেন, ‘এরপরেও তারা বলে মানুষ নাকি বেহেস্তে আছে, তারাই শুধু বেহেস্তে আছে। তারা একটি পলিসি নিয়েছে লুটপাট করে টাকা বিদেশে পাচার করে দেওয়া। আমরা জালিয়াতি কোম্পানি আদানি যাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ভারতে আন্দোলন শুরু হয়েছে তাদের সঙ্গে সরকারের চুক্তি বাতিল করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাবে।

রোজার আগে ও পরে গণতন্ত্র মঞ্চ বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকবে জানিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দুই ঈদের মাঝখানে গণআন্দোলন করে এই সরকারের বিদায় করব। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বিএনপির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করব। বিজয় অর্জন ছাড়া মানুষ ঘরে ফিরবে না।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আজকে আমরা যুগপথ আন্দোলনের অংশ হিসেবে পদযাত্রা করছি। আমরা আজকে এমন একটি সরকার ব্যবস্থায় আছি যারা সব জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে জনগণকে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। তারা কীভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা যায় ও নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করা যায় তা নিয়ে ব্যস্ত। তারা ভাবে তাদের হাতে দুটো অস্ত্র আছে, মানুষকে ভয়ভীতি ও হামলা মামলা করা। তাদের নিজস্ব বাহিনী লাঠিয়াল ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়েছে। কুষ্টিয়ায, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্যাতন করছে সাধারণ ছাত্রদের ভয় দেখানোর জন্য। গণ অধিকার পরিষদের সদস্যদের ওপর হামলা করেছে আবার উল্টো মামলা দিয়েছে। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য বিদেশীদের খুশি করছে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই বার আক্রমণ ও বিদেশীদের খুশি করে আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। এবার সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে, তাই আর ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘আপনারা জানেন বাংলাদেশ একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। যাদের জনগণ নিয়ে ভাবার কথা তারা জনগণের টাকা লুটপাট করে বিদেশী কোম্পানির হাতে তুলে দিচ্ছে। আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করে টাকা বিদেশে পাচার করতে যাচ্ছে।

‘সংবিধানের ৪৫ অনুচ্ছেদে বাংলাদেশবিরোধী কোনো কাজ করতে পারবে না- এমন বলা হলেও তারা তা মানছে না’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এখন যেকোনো সমস্যার মূলে এই অবৈধ সরকার। আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ ১৪ দফার ডাক দিয়েছি তা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘আজকে জনগণ কী দুঃসহ জীবনযাপন করছে তা সবাই জানেন। প্রতিদিন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে সরকার জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছে। এই মাফিয়া সরকারের জনগণকে নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। তাই জনগণকে বাঁচতে হলে লড়াই করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এই সরকারের ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রদের ওপর নির্মম নির্যাতন করছে। এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাদের পতন ছাড়া জনগণের মুক্তি নাই।

গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘বাংলাদেশের একটি ভয়াবহ সংকটে আছে। সরকার ইতিমধ্যেই সংলাপের আহ্বান জানাচ্ছে, আমরা সরকারের ধোকায় পা দেব না।

তিনি বলেন, ‘আবারো যদি সরকার দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চায় তাহলে তাদের গলায় গামছা পেঁচিয়ে নামাব। এরশাদ, আইয়ুব খানের মতো অবস্থা হবে আপনাদের।

এসময় সবাইকে রাজপথে নেমে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে দোলার আহ্বান জানান ।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু। সঞ্চালনায করেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু।