বুধবার ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

কর্মজীবী নারীর ফ্যাশন

  |   সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট

nari
 

পারভীন আফরোজা::  পৃথিবীতে বেশীরভাগ মানুষই তথা নারী-পুরষ নির্বিশেষে তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশু সবাই যে যার বয়সের সাথে তাল মিলিয়ে যার যার সাধ্য অনুযায়ী ফ্যাশন বা স্টাইল করে থাকেন। মেয়েদের ফ্যাশনে ছেলেদের তুলনায় বেশী উপকরণের প্রয়োজন পড়ে। ফ্যাশনের শাব্দিক অর্থ ঢং, কেতা, কায়দা, ধরন এবং স্টাইল অর্থাৎ শৈলী, উৎকর্ষ বা বৈশিষ্ট্য সুচক গুণ। বাচন, পোশাক-পরিচ্ছদ, হাঁটা চলার ভঙ্গি, ও আচরণ- এর সব কিছুই শৈলী যা সৌখিন মানুষেরা জনপ্রিয় হবার জন্য চর্চা করে থাকেন। নিজেকে গুছিয়ে সুন্দর ভাবে অন্যদের সামনে উপস্থাপন করা মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট। সারা পৃথিবীতে মেয়েদের জন্য যত সাজগোজের দোকান আছে তা অন্য যে কোন দ্রব্যের দোকানের চেয়ে সংখায় অনেক বেশী।

পোশাক ও ফ্যাশনের জিনিসপত্রের যত বৈচিত্র পাওয়া যায় অন্য কিছুতে তেমন বৈচিত্র পাওয়া যায় বলে আমার জানা নেই। প্রতিটি মানুষের সাধ বা স¦প্ন নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করা। বাংলাদেশের বেশীরভাগ মেয়েরাই ভারতের স্টাইল অনুকরণ করেন। সেলুনে বা বিউটি পার্লারে বহু ভারতীয় নায়ক নায়িকাদের ছবি টানানো থাকে। লোকজন সেইসব ছবির মধ্যে থেকে যে কোন একটা ছবি পছন্দ করে সেই অনুযায়ী চুল কাটান। নিজেকে সুন্দর বা সুন্দরী দেখানোর চেষ্টা কোন অপরাধের বিষয় নয়। বরং নিজেকে মার্জিত ভাবে অন্যের কাছে উপস্থাপন করায় অসুবিধের চেয়ে সুবিধেই অনেক বেশী। যার আয় যেমনই হোক না কেন, সেই অবস্থান থেকেই নিজেকে ফুটিয়ে তোলা একটি যোগ্যতা বা দক্ষতা।

বিশ্বের সব দেশেই এলাকা বিশেষে আর্থিক সঙ্গতি, ধর্মীয় বিশ্বাস, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করেই মানুষের ফ্যাশন। যে এলাকায় ধনীদের বসবাস সেখানের ফ্যাশন এক রকম, যে এলাকায় মধ্য বিত্তের বসবাস সেখানে অন্যরকম। জীর্ণ শীর্ণ কুটিরে বসবাসরত শতছিন্ন বস্ত্রের মানুষেরও স্বপ্ন থাকে ভাল কাপড় পরার বা ফিটফাট থাকার, তবে সাধ্য না থাকাতে তারা সেই সপ্ন সত্যিতে পরিণত করতে পারে না। প্রতিটি ছেলেমেয়েদের স্মার্ট হতে গেলে বিশেষ কিছু বিষয় মেনে চলা দরকার যেমন- পরিস্কার, পরিপাটি এবং ইস্ত্রি করা পোশাক, কথায় সুদ্ধ উচ্চারণ ও পালিশ র্ক জুতো, শরীর পরিস্কার রাখা বাঞ্চনীয়। হাটা চলায় অবশ্যই মেরুদন্ডণ্ড সোজা রাখা ও কুঁজো হয়ে বা ঝুলে না হাঁটা।  টেলিভিশনের খবর দেখেই হোক বা পত্রিকা পড়েই হোক স্মার্ট ছেলে মেয়েদের দেশ ও বর্তমান বিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজনীয়। নিজের মধ্যে অতিরিক্ত জড়তা নিয়ে কেউ স্মার্ট হতে পারে না। পরিচিত কারো সাথে দেখা হলে তাকে স্বাগত জানানো, অপরিচিতের সাথে কোন পার্টিতে বা কোন পরিবেশে দেখা হলে প্রয়োজন অনুসারে করমর্দন করে নিজের পরিচয় দেওয়া এবং তার পরিচয়টা জেনে নেয়া ইত্যাদি এক ধরনের  স্বাভাবিক ভদ্রতা। একটু হাসিখুশি মানুষকেই অন্যেরা বেশী পছন্দ করে। যতদূর সম্ভব দুঃখ বিষয়ক চর্চা এড়িয়ে যাওয়া এবং খুব ঘনিষ্ঠজন ছাড়া দুঃখ নিয়ে অলোচনা না করাই ভাল। কেউ কোন উপহার দিলে, উপকার করলে এমনকি কেউ কোন পোষাক, চেহারা বা কাজের প্রশংসা করলে তাকে হাসি মুখে ধন্যবাদ দেয়াটা অত্যন্ত জরুরি।

প্রতিটি মানুষের দিনের কিছুটা অংশ নিজের শরীরের জন্য ব্যয় করা উচিৎ। প্রত্যেকটি মানুষেরই উচিৎ যাতে বেশী মুটিয়ে না যান বা বেশী চিকন না থাকেন সে বিষয়ে সতর্ক থাকা। এর জন্য দরকার খাদ্যাভ্যাসের দিকে খেয়াল রাখা, ব্যায়াম করা এমনকি প্রয়োজনে যোগাসন করা। পেশাজীবী নারীদের ফ্যাশন বা সাজসজ্জা সম্পর্কে বলতে গেলে যেটা প্রথমেই মনে আসে সেটা হলো পোশাক। আমাদের দেশে সচরাচর অফিসে মেয়েরা শাড়ি পরে থাকেন। আজকাল অফিসে মেয়েরা সালোয়ার কামিজও ব্যবহার করছেন। গার্মেন্টেসে বা বিভিন্ন ফ্যাক্টরীতে যে সকল মেয়ে কাজ করেন তাঁরা সালোয়ার কামিজ ব্যবহার করতে স¦াচ্ছন্দ্য বোধ করেন। অনেক অফিস আছে যেখানে নারী পুরষ সকলেই ইউনিফর্ম ব্যবহার করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে পোশাকের ফ্যাশনের কোন প্রয়োজন হয় না। শ্যামলা বা কালো মেয়েদের জন্য সব সময় গাঢ় রংয়ের ব্লাউজ পরলে শরীরের রংটা উজ্জল দেখা যায়। শাড়ীর রং হালকা অথবা গাঢ় দ’ুটোই হতে পারে। তবে বেশী টকটকা রঙের পোশাক অফিসে না পরাই ভাল। অফিসের কোন পার্টিতে সোনালী রংয়ের ভারী গহনা না পরে রূপালী অথবা কাপড়ের রংয়ের সাথে মিলিয়ে পাথরের গহনা পরা যেতে পারে। শাড়ীর সাথে একটু উঁচু স্যান্ডেল বা হিল মানায়। সালোয়ার কামিজ বা জিন্স প্যান্টের এর সাথে ফ্ল্যাট বা পেন্সিল হিল দুইই মানায়। অফিসগামী নারীদের ফ্যাশনের ক্ষেত্রে চুল একটু ছোট থাকলে ভাল, যাতে কম সময়ে চুলের ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হয়। চুল ছাড়া থাকলেও ক্লিপ বা অন্য কিছু ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে কাজের কোন ব্যাঘাত না ঘটে, সে জন্যে পিছনে ব্যান্ড ব্যবহার করা বা  বেণী করে রাখা ভাল। স্যাম্পু করে চুল ঝরঝরে রাখলে দেখতে বেশী মার্জিত লাগে। যারা চুল ছাড়া রাখেন তারা ঘাড়ে একটু পারফিউম বা সুগন্ধী পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। ।

সপ্তাহে একদিন উষ্ণ গরম পানিতে হাত পা ও সারা শরীর চুবিয়ে সাবান ব্যবহার করে বেশী সময় নিয়ে  নিজেকে পরিস্কার করা দরকার। সপ্তাহের অন্য ছ’দিন যারা কম ঘামেন তারা সাবান বা লিকুইড বডি ওয়াস বুলিয়ে নিলেই পারেন। যারা বেশী ঘামেন তাদের একটু বেশী সময় নিয়ে ভাল করে গোসল করা উচিৎ। গোসলের পর প্রত্যেকেরই দুই বাহুর নীচে ঘাম নিরোধক ডিওডোর‌্যান্ট ব্যবহার করলে সারাদিন ঘামের র্দুগন্ধহীন এবং ঝরঝরে থাকা যায়। শুধুমাত্র ঘামের র্দুগন্ধের কারণে একজন অন্যের কাছে ঘৃনার পাত্র হতে পারেন। এ কারণে বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় এনে সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার। সপ্তাহে একবার একটু সময় নিয়ে হাত ও পায়ের নখের কোনাগুলো পরিস্কার করা বিশেষ প্রয়োজন। নখগুলো একটু লম্বা রাখলে ভাল। সপ্তাহে দুইদিন নেইল পালিশ ব্যবহার করলে সেটা সবচেয়ে সুন্দর দেখায়। পেশাজীবী নারীদের হাতে সিলভার কালার অথবা হালকা গোলাপী নেইল পালিশ ব্যবহার করলে যে কোন পোশাকের সাথে সেটা মানিয়ে যায়। যারা ঘরে রান্নার কাজ করেন থালাবাটি পরিস্কার করার সময় গ্লাভস ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে নখ ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভবনা কম থাকে এবং হাতও সুন্দর থাকে।

প্রতিদিন তৈলাক্ত মুখে অন্তত দুবার এবং শুষ্ক মুখে একবার সাবান ব্যবহার করবেন  এবং সেটা বাইরে থেকে আসার পরে। দিনে অন্ত:ত দু’বার যে কোন ধরণের ভ্যানিসিং ক্রিম মুখে ব্যবহার করে বাইরের ধুলোবালী ও রোদের তাপ থেকে ত্বককে রক্ষা করলে অবশ্যই ত্বক ভাল থাকবে। একদিনও যদি কোন ভ্যানিসিং ক্রিম ছাড়া যদি বাইরে যাওয়া হয় এতে ত্বকের উপরে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তা সেরে উঠতে বিশ দিন থেকে একমাসও লেগে যেতে পারে। সুতরাং কোন ভ্যানিসিং ক্রিম না মেখে একটু সময়ের জন্য রোদে বাইরে যাওয়া ত্বকের জন্য ঝুঁকি হয়ে যেতে পারে। অনেক মেয়েরা ভ্রু মোটা থাকা সত্বেও প্লাক করতে লজ্জা পান। কিন্তু ভ্রু প্লাক করলে চেহারার সৌন্দয্য বৃদ্ধি পায়। যাদের ভ্রু ঘন তাদের অন্তত মাসে একবার এবং যাদের ভ্রু হালকা তাদের দু’মাসে একবার পার্লারে গিয়ে প্লাক করা দরকার। যাদের মুখ তৈলাক্ত তারা সপ্তাহে অন্ত:ত একবার উপটান মাখলে ত্বক ভাল থাকে। লিপ লাইনার লিপষ্টকের রঙেরই তবে তার চেয়ে গাঢ় হলে সুন্দর হয়। পোশাকের সাথে মিলিয়ে লিপষ্টিক লাগানো ভাল। হালকা গোলাপী লিপষ্টিক যে কোন পোশাকের সাথে ব্যবহার করা যেতে পারে। চোখে কাজল বা আইলাইনার ব্যবহার করা যেতে পারে।

শুধুমাত্র পোশাক বা চেহারায় মানুষের স্মার্টনেস আনেনা। এর জন্য চাই সুন্দর ভাষা, সুন্দর স্বাস্থ্য বা ফিগার এবং সুন্দর চলার ভঙ্গি। স্মার্ট হওয়ার জন্য আরো কিছু গুণের প্রয়োজন পড়ে যার মধ্যে অন্যের কোন জিনিস দেখলে বা কোন ভাল কাজ দেখলে সেটা প্রশংশা করা অন্যতম ও এতে মানুষের সাথে সুসম্পর্ক তৈরী করা সম্ভব। মানুষের সাথে গাঢ় সম্পর্ক না হওয়া পর্যন্ত চট করে খারাপ দিকগুলো ধরিয়ে দিতে গেলে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। মানুষের মধ্যে কোন গুণ খুঁজে পেলে তার প্রসংশা সবার সামনে করাই ভাল। তবে কোন নিকটতম না হলে কারো ভুল দিকটা ধরিয়ে দেবার প্রয়োজন নেই। নিকটতম কেউ হলে এবং তার ভুল দিকটা ধরিয়ে দেবার প্রয়োজন হলে একটু গোপনে ও একাকী পরিবেশেই বিষয়টি আলোচনা করা উচিৎ যাতে অন্য কারো কাছে সে অপ্রস্তুত না হয়ে ওঠে। বেশী ঘনিষ্ঠ কেউ না হলে আগবাড়িয়ে কাউকে উপদেশ দিতে গেলে বিষয়টা অন্যেরা ভালো চোখে দেখে না। মোট কথা প্রতিটা মানুষের উচিত নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করা এবং এমন আচরন করা যাতে কেউ কষ্ট না পায় এবং অন্যেরা তাকে পছন্দ করে। এতে সমাজে মানুষের গুরত্ব সম্মান দু’টোই বাড়ে।

লেখক :  নির্বাহী পরিচালক,

               নারী উন্নয়ন শক্তি

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৯:০২ | সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com