শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

আদালতে চার্চিলের স্বীকারোক্তি : বিচলিত নূর হোসেন বার বার হত্যাকাণ্ডের আপডেট নিচ্ছিলেন

  |   শনিবার, ১৪ জুন ২০১৪ | প্রিন্ট

image_95953_0
 

নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনার মামলার প্রধান আসামি কাউন্সিলর নূর হোসেনের প্রধান বডিগার্ড সিদ্ধিরগঞ্জের ত্রাস মোর্তুজা জামান চার্চিল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সাত খুনের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় চার্চিল এ জবানবন্দি দেন।

শনিবার দুপুর ১২টার পর থেকে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম মহিউদ্দিনের আদালতে এ জবানবন্দি রেকর্ড শুরু হয়। শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৪টায়।

নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান সাংবাদিকদের জানান, চার্চিল ছিলেন নূর হোসেনের বডিগার্ড। নূর হোসেন যেখানেই গিয়েছেন তার সঙ্গেই ছিলেন চার্চিল। তিনি পুরো বিষয়টাই জানেন। নূর হোসেনের অপকর্মের সাক্ষী তিনি। আদালতে সাত খুন নিয়ে কোথায় কখন পরিকল্পনা হয়েছে সে ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।

আদালতের একটি সূত্র জানায়, আদালতে চার্চিল তার দীর্ঘ জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করলেও দাবি করেছেন, মূলত নূর হোসেনের নির্দেশ পালন করতে গিয়েই এ ঘটনায় জড়িয়েছেন।

চার্চিল আদালতে বলেছেন, মূলত নূর হোসেন র‌্যাবের সঙ্গে বৈঠক করেই প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামকে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু অ্যাডভোকেট চন্দন সরকার অপহরণের ঘটনাটি দেখে ফেলায় তাকেও হত্যা করা হয়েছে। নূর হোসেনের বডিগার্ড হিসেবে কর্মরত থাকায় নূর হোসেনের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতেন চার্চিল। তার অনেক অপকর্মের সাক্ষী এ চার্চিল। নূর হোসেনের সঙ্গে থাকায় র‌্যাবের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হতো চার্চিলের। বিভিন্ন সময়ে উপঢৌকন পাঠানো সহ টাকার লেনদেন হতো চার্চিলের মাধ্যমে।

আদালতে চার্চিল আরো জানান, ২৭ এপ্রিল দুপুরে নজরুল ইসলাম সহ সাত জনকে অপহরণের পর রাত ৯টার পরে নূর হোসেন চার্চিলকে ফোন করেন। তখন নূর হোসেনের নির্দেশে চার্চিল কাঁচপুর ব্রিজের পশ্চিম পাড়ে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরভূমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বালু-পাথর ব্যবসাস্থলে থাকা লোকজনদের সরিয়ে দেন। রাত ১০টার দিকে এখানে গাড়িতে করে সাতজনকে আনা হয়। তখন র‌্যাবের তারেক সাঈদ, আরিফ ও এম এম রানাসহ র‌্যাবের লোকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তখন গাড়ি থেকে মৃত অবস্থায় সাতজনকে নামানো হয়। পরে লাশ উঠানো হয় একটি ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে। লাশ পরে তিন নদীর মোহনাতে ফেলে দেয়া পর্যন্ত র‌্যাবের সঙ্গেই ছিলেন চার্চিল। আর ওই সময়ে বেশ বিচলিত থাকা নূর হোসেন বার বার মোবাইলে চার্চিলের সঙ্গে কথা বলে সবশেষ আপডেট নিতে থাকেন। এর মধ্যে কয়েকবার নূর হোসেনের সঙ্গে কথা বলেন আরিফ। লাশ ফেলার পর নূর হোসেনকে ফোন করে আরিফ বিষয়টি জানান। লাশ ফেলে দেয়ার পর সর্বশেষ তথ্যটি যখন নূর হোসেনকে জানানো হয় তখনই মূলত নূর হোসেন কিছুটা শান্ত হন। তিনি নিজেই র‌্যাব কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান।

চার্চিল আরো জানান, নূর হোসেনের পরিকল্পনাতেই মূলত র‌্যাব সাতজনকে অপহরণের পর লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছে। আমি শুধু শীতলক্ষ্যা সেতুর নিচে লাশ গাড়ি থেকে নামানো ও পরে ট্রলারে করে নদীতে ফেলা পর্যন্ত অবলোকন করে বিষয়টি হোসেনকে জানিয়েছি। এর বেশি আমার কোনো কাজ ছিল না।

সাত হত্যাকাণ্ডের পর অভিযোগের তীর যখন নূর হোসেনের দিকে উঠতে থাকে তখনই চার্চিল নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে যায়।

এর আগে গত ৬ জুন সকালে ফরিদপুরের নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের সালামখার ডাঙ্গী এলাকা চার্চিলকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। চার্চিল ফরিদপুর শহরতলীর ভাটিলক্ষীপুর গ্রামের মৃত মশিউর রহমানের ছেলে। পরে তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালত থেকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক হাবিবুর রহমান জানান, চার্চিলকে বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এম শফিকুল ইসলামের আদালতে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে বিচারক ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর মধ্যে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন।

উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল সাতজনের অপহরণের পর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে লাশ উদ্ধারের ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠার পর র‌্যাব-১১ এর তৎকালীন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ ও মেজর আরিফ হোসেন ও নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমএম রানাকে ২৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করা হয়। গত ৩০ এপ্রিল তিন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়।

সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের দেয়া ৬ কোটি টাকার বিনিময়ে র‌্যাবের ওই তিন কর্মকর্তাসহ অন্যরা সাতজনকে হত্যা করেছেন, এমন অভিযোগ করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নিহত নজরুল ইসলামের পরিবার।

নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও তার বাবা (নজরুলের শ্বশুর) শহীদুল ইসলাম জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে র‌্যাবের বিরুদ্ধে পরে লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় ওই তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেন হাইকোর্ট।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৩:৩০ | শনিবার, ১৪ জুন ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com