শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মসলার বাজারে ঈদের উত্তাপ

  |   শনিবার, ১৮ আগস্ট ২০১৮ | প্রিন্ট

মসলার বাজারে ঈদের উত্তাপ

ডেস্ক রিপোর্ট : ঈদুল আজহা যতই ঘনিয়ে আসছে ততই গরম হচ্ছে মসলার বাজার। পেঁয়াজের দাম এরই মধ্যে বেড়েছে কেজিতে প্রায় ১০ টাকা। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬২ টাকা দরে। আদার দাম ১০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা। রসুনের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা। দাম বেড়েছে জিরা, গোলমরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ প্রভৃতিরও। খুচরা বিক্রেতাদের দাবিÑ পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদেরও বাড়াতে হয়েছে। আর পাইকারেরা দায়ী করছেন আন্তর্জাতিক বাজারকে। এ নিয়ে জনমনে ক্ষোভ-কষ্ট থাকলেও সবই চলছে নিজস্ব নিয়মে।

রমজানের শেষ দিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। ঈদের পরেও বহাল ছিল এ দাম। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। দুই মাসের ব্যবধানে বেড়ে হয় দ্বিগুণ। খুচরা বাজারে গতকাল ৫৫ থেকে ৬২ টাকা কেজিদরে বিক্রি হয় প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ। বিক্রেতাদের আশঙ্কা আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে আগামী কয়েক দিনে পেঁয়াজের দাম আরো বেড়ে যেতে পারে।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, পেঁয়াজের বাজারমূল্য ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে গত ২০১৬ সালে রোজার আগে সরকার পেঁয়াজের ওপর থেকে আমদানি শুল্ককর প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর আর শুল্ককর সংযোজন হয়নি। তবে অতিরিক্ত লাভ করতে বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট হঠাৎ করে অস্বাভাবিক হারে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়। ভারতের রফতানিমূল্যে প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে ২০৫ মার্কিন ডলারে। বাংলাদেশী টাকায় যা ১৭ হাজার ২০০ টাকা। এই হিসাবে কেজিপ্রতি আমদানি খরচ পড়ছে ১৮ টাকা। এলসি খরচসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে বেনাপোল স্থলবন্দর পর্যন্ত পেঁয়াজ পৌঁছতে খরচ পড়ছে কেজিপ্রতি ২০ টাকা। অথচ আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। খুচরা বাজারে এসে বাড়ছে আরো অন্তত ৫ টাকা।

ভারতীয় পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন দেশী পেঁয়াজেরও। পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে গতকাল দেশী পেঁয়াজের দাম ৬০ টাকায় পৌঁছেছে। অথচ এ বছর আবহাওয়া বেশ ভালো। পেঁয়াজের ফলনও হয়েছে গত বছরের চেয়ে প্রায় দেড় লাখ টন বেশি। গত বছর যেখানে সারা দেশে ১৮ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়েছিল সেখানে এ বছর উৎপাদন হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৯ লাখ মেট্রিক টন।

গতকাল একাধিক বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি ইন্ডিয়ান ও চায়না জিরা বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে। খুচরা বাজারে এসে এ দাম হয়ে যাচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা। গত সপ্তাহে এ জিরা পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় এবং খুচরা বাজারে ছিল ৩৫০ থেকে ৩৭০ টাকা। পাইকারি বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকায়। গত সপ্তাহে যা ছিল ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে। লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়। গত সপ্তাহে যা পাওয়া যেত কেজিপ্রতি ৯০০ টাকার মধ্যে। পাইকারি বাজারে বর্তমানে এলাচ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৫৫০ টাকায়। সপ্তাহ তিনেক আগেও যা বিক্রি হয়েছে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকার মধ্যে। প্রতি কেজি লাল মরিচের দাম এখন ১৬০ টাকা। মসলার বাজারে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে কাবাব চিনির (বিরিয়ানি রান্নাতে যেটি অপরিহার্য উপাদান হিসেবে বিবেচিত)। প্রতি কেজি ১০০০ বেড়ে ১৫০০ টাকার কাবাব চিনি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ টাকায়। খুচরা বাজারে এসব মসলার দাম বেড়েছে আরো বেশি।

পাইকারি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারে বর্তমানে এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি জয়ত্রী বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। সপ্তাহ দুই আগেও এখানে পাইকারিতে পণ্যটির মূল্য ছিল ১ হাজার ৪০০ টাকা। সে হিসাবে পাইকারিতে জয়ত্রীর দাম বেড়েছে কেজিতে ৪০০ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সিরিয়া থেকে আনা প্রতি কেজি জিরার দাম বেড়েছে ২০ টাকা। পাইকারি বাজারে চীন থেকে আনা দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২২৫ থেকে ২৩০ টাকায়। ১৫ দিন আগেও বাজারে একই মানের দারুচিনি ২০০ থেকে ২১০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছিল। সে হিসাবে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে দারুচিনির দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। একই সময়ে ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা দারুচিনির দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ টাকা। গত সপ্তাহে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ভিয়েতনামের দারুচিনি বিক্রি হয়েছিল ২৫০ টাকার নিচে। কিন্তু বর্তমানে এর দাম কখনো কখনো প্রতি কেজি ২৬৫ টাকাও ছাড়িয়ে যায়।

গরম মসলার কয়েকজন আমদানিকারকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জিরা আমদানি করা হয় প্রধানত তুরস্ক, সিরিয়া, আফগানিস্তান ও ভারত থেকে। বিশ্বের মোট জিরা উৎপাদনের ৭০ শতাংশই ভারতের দখলে। দারুচিনি আমদানি করা হয় ইন্দোনেশিয়া, চীন ও ভিয়েতনাম থেকে। লবঙ্গ আমদানি করা হয় ইন্দোনেশিয়া, মাদাগাস্কার ও তানজানিয়া থেকে। বিশ্বের মোট লবঙ্গ উৎপাদনের ৮০ শতাংশই ইন্দোনেশিয়ার দখলে। এলাচ আমদানি করা হয় গুয়াতেমালা, ভারতের কেরালা ও তামিলনাডু থেকে। গুয়াতেমালা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এলাচ উৎপাদক দেশ। বাংলাদেশে বেশির ভাগ এলাচ আসে তামিলনাডু থেকে। সেখানে এ বছর অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে এলাচের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে তারা বলেন, এজন্যই দেশের বাজারে এলাচের দাম বাড়তি।

বিক্রেতাদের দাবিÑ আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব ও বাজেটে শুল্ক বাড়ানোর কারণে মসলা পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। তারা জানান, দেশে চাহিদা বাড়লেও যেসব পণ্যের মজুদ ও সরবরাহ যথেষ্ট, সেগুলোর দাম স্থির রয়েছে। আর যেগুলোর দাম বিশ্ববাজারে বেড়েছে সেগুলো দেশের বাজারেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে এ কথা সবাই স্বীকার করছেন যে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যে হারে বেড়েছে আমদানিকারকেরা বাড়িয়েছেন তার চেয়ে অনেক বেশি। আবার পাইকারি বাজারে দাম ১০ টাকা বাড়লে খুচরা বিক্রেতারা বাড়িয়ে দেন ৫০ টাকা। এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে এ দেশের বাজারব্যবস্থা কোনোদিনই ক্রেতাবান্ধব হবে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।নয়াদিগন্ত।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৩:৪৯ | শনিবার, ১৮ আগস্ট ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com