নওগাঁ : নওগাঁর মান্দার চকগোপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে তার নিজ বিদ্যালয়ের ১৩ জন শিক্ষার্থীকে না জানিয়ে জোরপূর্বক অন্য “চকচম্পক ছোট বালিকা বিদ্যালয়” নামের একটি নন এমপিও বিদ্যালয়ের নামে পরীক্ষা দেওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় ওই প্রধান শিক্ষকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ স্থানীয়রা। তারা অভিযোগ করে বলেন নন এমপিওভুক্ত ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর কোঠা পূরণ করতে এ ধরনের অনিয়ম করে যাচ্ছেন তারা।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, চকগোপাল উচ্চ বিদ্যালয় এলাকার একটি সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এজন্য এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বেশি ভর্তি হয়। ২০২৩ সালে ওই বিদ্যালয়ের ১১৭ জন পরীক্ষার্থী। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলী তার প্রতিষ্ঠান থেকে ১৩/১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত (নন এমপিওভুক্ত) চকচম্পক ছোট বালিকা বিদ্যালয়ের নামে শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে রেজিষ্ট্রেশন ও ফরম পূরণ করেন। তিনি বছরের পর বছর ধরে এসব অনিয়ম করে যাচ্ছেন বলে জানান তারা।
এক অনুসন্ধানে দেখা যায় তিনি চলতি ২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ওই বিদ্যালয় থেকে ১১৭ জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু ওই বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিচ্ছেন ১০৪ জন বাকি ১৩ জন শিক্ষার্থীদেরকে না জানিয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলী চকচম্পক ছোট বালিকা বিদ্যালয়ের নামে ফরম করিয়ে পরীক্ষা দেওয়াচ্ছেন। সেই ১৩ জন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৫ জন বিজ্ঞান বিভাগের আর ৮ জন শিক্ষার্থী মানবিক বিভাগের। বিজ্ঞান বিভাগের ৫ জন শিক্ষার্থী হলো মরিয়ম আক্তার, উর্মিলা, সীমা খাতুন, হিরা এবং সাহরিয়া আর মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা হলেন, হাফিজা আক্তার, ইসরাত জাহান ইভা, সুমি আক্তার, তাসমিন, রাজিয়া সুলতানা রিয়া, রাজ্জুমা এবং নাহিদা আক্তার। এর মধ্যে হাফিজা আক্তার নামের এক পরীক্ষার্থী অপহরণের ঘটনায় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলীসহ ৭ জনের নামে মামলা দায়ের করায় তাকে পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেননি। এজন্য হাফিজা আক্তারের পরীক্ষা দেওয়া হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী কয়েকজন পরীক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা চকগোপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এ বিদ্যালয়ে আমরা ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত নিয়মিতভাবে উপস্থিত হয়ে লেখাপড়া করেছি। করোনাকালীন সময়ে জেএসসি পরীক্ষায় আমরা সকলে অটোপাস করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাউকে কোন সনদপত্র দেয়া হয়নি। এবারের ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বিদ্যালয় থেকে ১১৭ জন পরীক্ষার্থী ছিলাম। ওই স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমাদের ১৩ জন শিক্ষার্থীদের কাউকে উপবৃত্তির টাকা পর্যন্ত দেয়া হয়নি। আমার মত আরো ১৩ জন পরীক্ষার্থীকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অন্য স্কুলে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। চকচম্পক ছোট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আমাদের ১৩ জন ছাত্রীর নামে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে সেসব বিষয়ে আমরা কেউ আগে জানতাম না। পরীক্ষার আগের দিন প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিতে গিয়ে আমরা জানতে পারি চকচম্পক ছোট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে গোটগাড়ি শহীদ মামুন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রের ১১২ নং রুমে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। আর বাকি ১০৪ জন এই স্কুলের শিক্ষার্থী হিসেবে মান্দার প্রসাদপুরে “মান্দা থানা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ” কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে এসব অভিযোগ অস্বীকার চকগোপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলী বলেন, তারা জেএসসি পরীক্ষাও ওই প্রতিষ্ঠান থেকে দিয়েছে। ওই পরীক্ষার্থীরা কোন স্কুলে ভর্তি হয়েছে এবং ক্লাস করেছে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে সাংবাদিককে সাক্ষাৎ করতে বলেন।
চকগোপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৩ জন শিক্ষার্থী আপনার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষা দিচ্ছে কি না সেটা জানতে চাইলে সত্যতা স্বীকার করে চকচম্পক ছোট বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রহিদুল ইসলাম বলেন, শহরের প্রতিষ্ঠানে অনেকে লেখাপড়া করে গ্রামের প্রতিষ্ঠানের নামে পরীক্ষা দিচ্ছে। তাতে সমস্যা কি?
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম শেখ সাংবাদিকদের বলেন, এবিষয়ে আমি কিছু জানিনা। খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখবো।
জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, এব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। স্বীকৃতি প্রাপ্ত এক স্কুলের শিক্ষার্থীকে অন্য কোনো স্কুলের শিক্ষার্থী হিসাবে দেখিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার কোন নিয়ম নেই। এরপরেও যদি এরকম ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Like this:
Like Loading...
Related