বুধবার ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজধানীজুড়ে ঝুলছে টু-লেট আর টু-লেট, গ্রামের বাড়িতে গিয়েও মিলছে না কাজ

  |   রবিবার, ১২ জুলাই ২০২০ | প্রিন্ট

রাজধানীজুড়ে ঝুলছে টু-লেট আর টু-লেট, গ্রামের বাড়িতে গিয়েও মিলছে না কাজ

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে একটি স্বনামধন্য টেইলার্সের দোকানে কাজ করতেন সবুজ মিয়া নামে এক তরুণ। গত ঈদুল ফিতরের আগে তিনি কাজ হারিয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর। সেখানে গিয়েও তিনি কোনো কাজ জোগাড় করতে পারেননি। শুধু সবুজ মিয়াই নন, তার মতো ওই টেইলার্সে ২০ জন কর্মী কাজ করতেন। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ওই টেইলার্সে ছয়জন কর্মী কাজ করছেন। বাকি ১৪ জন চাকরি হারিয়েছেন। ওই ছয়জনও কাজ করছেন শর্তসাপেক্ষে। করোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এক মাস পরপর বেতন পাবেন ৬০ ভাগ। কোনো উপায়ান্তর না দেখে মুখ বুজে রয়ে গেছেন ওই ছয় টেইলার্স কর্মী।

এলিফ্যান্ট রোডে শুধু ওই টেইলার্সেই নয়, সেখানে কয়েকশ টেইলার্সের দোকানে একই অবস্থা। পুরান ঢাকায় বাংলাবাজারে প্রকাশনা শিল্পে লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করতেন। সেখানে এখন মাত্র হাজার দশেক শ্রমিক কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা আরও বলছেন, গত তিন মাসে প্রকাশনা শিল্পে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। কার্যত বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, কল-কারখানায়, হোটেল-রেস্তোরাঁ কিংবা ক্ষুদ্র দোকানে কাজ করা লাখ লাখ মানুষ এখন কর্মহীন। কেউ কেউ পেশা বদল করে ঢাকায় টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। তবে বড় অংশই চাকরি হারিয়ে গ্রামের দিকে ছুটছেন। কিন্তু গ্রামে গিয়েও মিলছে না কাজ। নিম্ন বা নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি অংশ গ্রামমুখী হওয়ায় রাজধানীজুড়ে বাসাবাড়িতে ঝুলছে ‘টু-লেট’ আর ‘টু-লেট’। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনায় অর্থনীতিতে একটি ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে। এ কারণেই মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে। চাপ বাড়ছে পুরো অর্থনীতিতে। মানুষের আয় ও চাহিদা কমছে। অতিমারির সময় এভাবেই মানুষের আয় ও চাহিদা কমে একটি দুষ্টচক্রে পড়ে যায়। আমরা দুষ্টচক্রের মধ্যে না পড়লেও এর ভিতরেই আছি। তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়ন-উত্থান সবকিছুই বিপরীতমুখী। কবে করোনামুক্ত হবে দেশ, তা জানি না। তবে এ মুহূর্তে সরকার ঘোষিত সব ধরনের প্রণোদনা বাস্তবায়ন করতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প যেন এই প্রণোদনা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। এতে কলকারখানাগুলো আবার সচল হবে। নিম্ন-নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের অনেক মানুষেরই আবার কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। সরকারকে অনানুষ্ঠানিক খাতে গ্রামের মানুষকে ঋণ দিতে হবে। অতি দরিদ্র মানুষকে নগদ ক্যাশ বা খাবারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’

সম্প্রতি ব্র্যাকের এক জরিপে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে সারা দেশে ৯৫ ভাগ মানুষের আয় কমেছে। রাজধানীতে ৮৩ ভাগ নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ কাজ করছে। এর মধ্যে কাজ হারিয়েছে প্রায় ৬২ ভাগ মানুষ। পুরোপুরি কর্মহীন হয়ে পড়েছে ২৮ ভাগ মানুষ। এই দুই শ্রেণির বড় অংশই এখন গ্রামমুখী। এ প্রসঙ্গে ব্র্যাকের সিনিয়র ডাইরেক্টর (অ্যাডভোকেসি) কে এ এম মোর্শেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তারা করোনাকালে ঢাকাসহ সারা দেশেই নিম্নআয়ের বা মধ্য আয়ের মানুষের আয়-রোজগার নিয়ে জরিপ করেছেন। তাতে করোনাকালে ঢাকার বড় একটি জনগোষ্ঠী কর্মহীন হয়ে পড়েছে। যাদের প্রায় সবাই নিম্ন-নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের লোকজন। চলতি মাসেও তারা এ নিয়ে আরেকটি জরিপ প্রকাশ করবেন। গুলশানে একটি থ্রি স্টার মানের হোটেলে কাজ করতেন জামালপুরের রাশেদ নামে এক যুবক। ভালো বেতনও পেতেন। করোনায় ২৬ মার্চ সারা দেশে লকডাউনের পরপরই ওই আবাসিক হোটেলটি বন্ধ হয়ে যায়। চাকরি হারান রাশেদ। এখন তিনি শাহজাহানপুরে ভ্যানে করে গার্মেন্টের কাপড় বিক্রি করেন। তার সঙ্গে নিয়েছেন ওই হোটেলের আরও এক সহকর্মীকে। গতকাল রাশেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানালেন, নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন। এখনো বুঝে উঠতে পারেননি। প্রথম কয়েক দিন ভুলে কেনা দামের চেয়েও কমে বিক্রি করেছেন। হিসাব ঠিক রাখতে পারতেন না। প্রায় এক মাস ধরে মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে। হিসাবেও ভুল করছেন কম। তিনি আরও জানান, বউ-বাচ্চাকে গ্রামের বাড়ি বরিশালে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আগে ফ্ল্যাট বাসায় থাকলেও এখন এক রুমে দুজন ব্যাচেলর হিসেবে থাকছেন। কোনোমতে টিকে আছেন। আগে গ্রামের বাড়িতে কোরবানি দিলেও এবার দেওয়া হবে না বলে জানান রাশেদ।

শরীয়তপুরের মেয়ে শেফালি বেগম স্বামী-সংসার নিয়ে দেড় যুগ ধরে থাকতেন ঢাকায়। কিন্তু দীর্ঘদিনের পরিচিত এই শহর ছেড়ে এখন গ্রামে পাড়ি দিতে হচ্ছে। স্বামীর হাত ধরে এখন গ্রামে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি। শেফালি বেগমের বাস কন্ডাক্টর স্বামীর আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যায় সাধারণ ছুটি ঘোষণার পরপরই। তিন মাসের বাড়ি ভাড়া দিতে না পেরে শেষমেশ সুদে এবং ধার করে টাকা এনে ভাড়া পরিশোধ করেন। এরপর ছেড়ে যান এই ঢাকা শহর। এরমধ্যে টাকার জন্য নিজের প্রিয় জিনিস ফ্রিজ ও টিভি বিক্রি করে দেন। গত সপ্তাহে বাকি মালামাল নিয়ে স্বামীর হাত ধরে চলে যান গ্রামের বাড়ি। ঢাকা শহরের মহাখালীতে প্রায় এক যুগ ধরে বিভিন্ন ঋতুতে আম, ডাব, সবজিসহ নানা তরি-তরকারি বিক্রি করতেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার লাল মিয়া। চার ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন কড়াইলের বস্তিতে। ভালোই ছিল তাদের সংসার। তিন মাস ধরে উপার্জন বন্ধ থাকায় বউ-বাচ্চাদের গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছেন এই মধ্যবয়সী ব্যক্তি। সর্বশেষ গত সপ্তাহে তিনি ঢাকা ছেড়েছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, গ্রামের বাড়িতেও তার কোনো জমি-জায়গা নেই। সেখানেও কোনো কাজ নেই। মাঝেমধ্যে কৃষকের বাড়িতে দিন হাজিরা হিসেবে কাজ করছেন।

রাজধানীজুড়ে ‘টু-লেট’ আর ‘টু-লেট’ : রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট সংলগ্ন একটি বাড়ির মালিক সাবেক সরকারি কর্মকর্তা আবদুস সালাম। তিনি সপরিবারে থাকেন চারতলায়। বাকি ফ্লোরগুলোতে ছাত্রী মেস ছিল। এখন সবই খালি। টু-লেট ঝুলিয়েও তিন মাস ধরে ভাড়াটিয়া পাচ্ছেন না। শাজহাদপুরে সুবাস্তু নজরভেলী টাওয়ারে সাতটি বহুতল ভবন রয়েছে। সব ভবনের নোটিস বোর্ডে ঝুলছে টু-লেট। সুবাস্তু টাওয়ারের ব্যবস্থাপনা কমিটির এক কর্মকর্তা জানান, তিন মাস ধরে ভাড়াটিয়ারা বাসাবাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। অনেকেই গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ কিছু কম দামের ভিতরে গলিতে ছোট ফ্ল্যাট বাড়িতেও উঠছেন। কেউ কেউ ভাড়া বা সার্ভিস চার্জ না দিয়েও গোপনে বাসা ছাড়ার চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালার মধ্যে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। মামলা পর্যন্তও গড়াচ্ছে। মূল কথা হলো, করোনার কারণে মানুষের আয়-রোজগাড় কমে যাওয়ায় এসব হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৪:৩৩ | রবিবার, ১২ জুলাই ২০২০

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com