সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মৌসুমি ফলের আদ্যোপান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩ | প্রিন্ট

মৌসুমি ফলের আদ্যোপান্ত

মাহফুজা আফরোজ সাথী :  ফল আমরা কম-বেশি সবাই ভালোবাসি কিন্তু তাই বলে কি যে কোনো ফল যখন-তখন খাওয়া যাবে? উত্তর হলো না, ফলের ধরন ভেদে খাওয়ার পরিমাণ ও কখন খাব তারও রয়েছে ভিন্নতা। চলছে মধুমাস, বাজারে আছে পাকা আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু ছাড়াও আরও অনেক ফলের সমারোহ। আপনার পরিবারে নিশ্চয়ই শিশু আছে তেমনি আছে বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যও। সবাইকে কি একই ফল খেতে দিচ্ছেন?

 

সবাই একই ফল খেতে পারবে তবে মানতে হবে কিছু নির্দেশনা। যেমন-

আম : স্বাদ, পুষ্টি ও গন্ধে অতুলনীয় জনপ্রিয় একটি ফল আম। আয়রন ও সোডিয়ামের ঘাটতি পূরণে বেশ কার্যকরী আম। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের হতে হবে সচেতন। আম খেলে তার সঙ্গে সারা দিনের শর্করার সমন্বয় করতে হবে। ভালো হয় খালি পেটে না খেয়ে সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবারের মাঝে খেলে। সকালের নাস্তায় খেতে চাইলে চিরা/ওটসের সঙ্গে টক দই মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তাহলে হুট করেই রক্তে চিনির মাত্রা বাড়বে না। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে  উল্টো, স্কুলে যাওয়ার সময় আম খেলে ব্রেন স্ট্রমিং ভালো হবে। 

জাম : অরুচি ভাব ও বমি ভাব নিরাময়ে জামের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এতে খাদ্যশক্তি, শর্করা, আমিষ, চর্বি, আঁশ, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ভিটামিন-সি ও ক্যারোটিন থাকে।

 

এটি শরীরের হাড়কে মজবুত করে, ডায়রিয়া ও আলসার নিরাময়ে ভূমিকা রাখে। জাম ত্বক টানটান করতে, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে আর ডিটক্সিফায়ার হিসেবেও কাজ করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে- জামের নির্যাস ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি র‌্যাডিকেলের কাজে এবং বিকিরণে বাধা দেয়। জাম পরিবারের সবার জন্য সমানভাবে উপকারী। কড়া রোদ থেকে ঘরে ফিরে জাম মাখানো বা জামের জুস দিতে পারে প্রশান্তি।

 

কাঁঠাল : আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল। কাঁচা কাঁঠালে ফাইবারের পরিমাণ পাকা কাঁঠালের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কাঁচা কাঁঠাল উপকারী। রক্তের চিনির মাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য কাঁচা কাঁঠালের জুড়ি নেই। তবে পাকা কাঁঠাল খাওয়ার ব্যাপারে সাবধানতা প্রয়োজন। কাঁঠালে আছে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং নায়াসিনসহ বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান। এ ছাড়া কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় তা মানবদেহের জন্য বিশেষ উপকারী। তাই শিশু কিশোরদের কাঁঠাল খাওয়ায় উৎসাহিত করা উচিত।

 

লিচু : স্বাদ ও গন্ধের জন্য লিচু অনেকের কাছেই প্রিয়। শুধু স্বাদই নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর এ ফল, তবে বেশি খেলে হতে পারে ক্ষতি। মাত্রাতিরিক্ত লিচু খেলে রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে, রক্তের গ্লুকোজ কমে গিয়ে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে। এ ছাড়াও লিচু ওজন বৃদ্ধি করে।

 

তাই খেতে সুস্বাদু হলেও ইচ্ছামতো লিচু খাওয়ার সুযোগ নেই। দিনে ১০-১২টি লিচু খাওয়া যেতে পারে। বয়স, শরীর, অসুস্থতা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পরিমিতভাবে লিচু খেতে হবে।

 

তালের শাঁস : প্রচ- গরম। হাঁসফাঁস অবস্থা। অতিরিক্ত ঘামে সারা দেহ যেন সর্বক্ষণ ভিজে থাকে। দেহে পানি সমতা রক্ষা অনেকটাই যেন কঠিন এ সময়। কাঁচা তালের শাঁস আমাদের মতো দেশগুলোতে খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। এখনকার অসহ্য গরমে একটু স্বস্তি এনে দিতে পারে এ সুস্বাদু রসালো তালের শাঁস। হালকা মিষ্টি স্বাদের মজাদার তালের শাঁসে ৮৭.৬% পানি রয়েছে। এর পাশাপাশি ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন সি, শর্করা এবং খাদ্যআঁশ রয়েছে। জলীয় অংশ আর খনিজ লবণ বেশি থাকায় পানি সমতা রক্ষা করে দেহের ক্লান্তিভাব দূর করে। অতএব, গরমে তৃপ্তি ও স্বস্তি পেতে এ মৌসুমে তালের শাঁস খেতেই পারেন। পরিবারের ছোট-বড় সবাই হালকা নাস্তায় রাখতে পারেন এ ফল, ওজন কমাতে চাইলে এ ফলের কোনো তুলনাই হয় না।  সারা বছরই কোনো না কোনো ফল বাজারে পাওয়া যায়, তাই ফল খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা মেনে চললে কোনো মৌসুমি ফল খাওয়া থেকে কেউ বঞ্চিত হবেন না।

লেখক: প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হসপিটাল, চট্টগ্রাম। সূএ : বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৬:৩১ | শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com