সোমবার ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মান্দার খরস্রোতা আত্রাই নদ যেন মরাখাল: সেচ সংকটে ৪৫ হাজার বিঘা জমির বোরো ধান

এম এম হারুন আল রশীদ হীরা   |   রবিবার, ১৭ মার্চ ২০২৪ | প্রিন্ট

মান্দার খরস্রোতা আত্রাই নদ যেন মরাখাল: সেচ সংকটে ৪৫ হাজার বিঘা জমির বোরো ধান

নওগাঁ : পলি পড়ে পড়ে ও নানা সময়ে নদের ভাঙ্গনে ভরাট হয়ে গেছে  নওগাঁর মান্দা উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত এক সময়ের প্রবল খরস্রোতা আত্রাই নদের তলদেশ। এখন খরস্রোতা আত্রাই নদ যেন মরাখালে পরিনত হয়ে গেছে। তাই সেচ সংকটে ৪৫ হাজার বিঘা জমির বোরো ধানের আবাদ অনিশ্চিয়তার কবলে পড়েছে।

এবার বছরেও  কয়েকদিন ধরে নদটির পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। উজানের নিচু এলাকাগুলোতে সামান্য পানি থাকলেও পানিশুন্য হয়ে পড়েছে পুরো ভাটিঅংশ। এনিয়ে ৬ষ্ঠবারের মতো শুকিয়ে গেল নদটি। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে নদকেন্দ্রিক ভাটিঅংশে ৩শর বেশি সেচ পাম্প।

এতে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে এসব সেচ পাম্পের আওতায় চাষ হওয়া অন্তত ৪৫ হাজার বিঘা জমির বোরো ধানের আবাদ। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত কিংবা নদতে পানি না আসলে এ আবাদে ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন কৃষকেরা।

এর আগে সর্ব প্রথম ১৯৯৫ সালের মার্চ মাসে নদটি একেবারেই শুকিয়ে গিয়ে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছিল।সেই সময় উৎসুক মানুষজন নদের মধ্যে ঘাটে ঘাটেসহ নানাস্থানে খনন করে সোনা,রুপাসহ মুলাবান অনেক কিছু পেয়েছিল। ইতিহাসে সেটিই ছিল নদের সবচেয়ে বিস্ময়কর পতন। তারপরে দীর্ঘদিন আর নদটি শুকায়নি।

এদিকে শনিবার দুপুরে শুকিয়ে যাওয়া নদটি পরিদর্শন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এসএম ব্রহানী সুলতান মামুদ গামা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রীর সাথে মহাদেবপুর উপজেলার শেষ সীমানা ও মান্দা উপজেলার শুরু বানডুবি থেকে মিঠাপুুর পর্যন্ত আত্রাই নদ ও শিবনদ সংস্কারসহ খননের বিষয়ে কথা হয়েছে।

সম্প্রতি জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনেই দীর্ঘ ৪২ কিলোমিটার  নদ দুটি সংস্কারসহ খননের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। আশ্বস্ত করেছেন নদ দুটির নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে খুব শিগগিরই উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

নদ-নদী গবেষক ও হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, আত্রাই নদের দিনাজপুর জেলার এলাকায় অপরিকল্পিভাবে একটি রাবার ড্যাম তৈরি করা হয়েছে। মাত্র কয়েকটি গ্রামকে সেচ সুবিধা দিতে এটি নির্মাণ করা হয়। নদটি শুকিয়ে যাওয়ার এটিই প্রধান কারণ। রাবার ড্যাম তুলে নিলে নদটি আবারও আগের জায়গায় ফিরে আসবে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, আত্রাই নদের পানি দিয়ে দুইপাড়ের শতশত হেক্টর উর্বর জমিতে ধান, গম,সরিষা, আলু, ভূট্টা, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ধরণের ফসলের চাষ করেন কৃষকেরা। বিল ও মাঠের জমিতে চাষ হয় বোরো, আমন ও আউশ ধান। কিন্তু প্রত্যেক রবি মওসুমের শুরুতেই অনাকাঙ্খিতভাবে নদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়ছেন কৃষকরা।

তাঁরা আরও বলেন, নদের থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। একই সাথে নদেরপাড়ের মাটি কেটে নেওয়ার মহোৎসব ও প্রতিযোগিতা চলছে। দীর্ঘদিন ধরে এ নদের সংস্কারও নেই। ফলে নদটি নাব্যতা হারানোর পাশাপাশি হারাচ্ছে এর প্রবাহিতের স্বাভাবিক গতিও। এর কারণে খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাচ্ছে নদের পানি। দ্রুত খনন করার উদ্যোগ ও  ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ইতিহাস ও  মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে নদটির অস্তিত্ব।

প্রসাদপুর গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম প্রামানিক ও আয়েজ উদ্দিন ফকির বলেন, উত্তাল নদটি এখন শুধু নামেই নদ। বাস্তবে পরিণত হয়েছে মরা খালে। খরা মওসুম শুরু হলেই এর পানি দ্রুত কমতে শুরু করে। চৈত্র ও বৈশাখ মাসে পানি কমে চলে আসে মানুষের হাঁটুর নিচে। এসময় এলাকার মানুষজন হেঁটেই পারাপার হন নদটি। নদেপাড়ের মানুষের উৎপাদন করা প্রধান ফসলই হচ্ছে বোরো ধান। এবারে সরিষা কাটার পরে রোপণের পর ধানগাছের বয়স মাত্র কোথাও ২০ দিন। আবার যারা সরিষা চাষ করেননি, তাদের ৩৫ থেকে ৪০ দিন হয়েছে। পরিপক্ক ধানগাছ তৈরি হতে এখনও অনেক সময় লাগবে। এ অবস্থায় সেচেকাজ ব্যাহত হলে ফলন বিপর্যয় ঘটার সমূহ সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

নদেরপাড়ের বাসিন্দা শতবর্ষী তনজেব আলী বলেন, আশির দশক জুড়েই নদটির ভরা যৌবন ছিল। নব্বইয়ের দশক থেকে ক্রমেই যৌবন হারাতে বসে নদটি। এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে, নদটির হারানোর আর কিছুই নেই। এক সময় ছোট-বড় নানান প্রজাতির মাছের অফুরন্ত উৎস ছিল এই নদ। এ কারণে নদেরপাড় সংলগ্ন আশপাশের এলাকাগুলোতে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য জেলেপল্লী। নদের পাড়েই ছিল তাঁদের পরিবারের বসতি। নদটি শুকিয়ে যাওয়ায় মাছের সেই উৎস এখন যেন শুধুই অতীতকালের যাদুঘরে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, বোরো ধানের আবাদ মুলত সেচনির্ভর। বর্তমানে ধান কুশি পর্যায়ে আছে। এখন সেচ কম হলেও সমস্যা নেই। ফলনেও তেমন প্রভাব পড়বে না। কিন্তু থোড় অবস্থায় সময়মত সেচ ও জমিতে দুই থেকে তিন ইঞ্চি পানি থাকা জরুরি। না হলে ফলন বিপর্যয়ের সম্ভাবনা থাকবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৯:৩০ | রবিবার, ১৭ মার্চ ২০২৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com