শাহরিয়ার মিল্টন | বুধবার, ১৭ মে ২০২৩ | প্রিন্ট
শেরপুর : শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কোচ উপজাতি অধ্যুষিত খলচান্দা গ্রামে প্রস্তাবিত বর্ডার হাট স্থাপন নিয়ে নতুন কর্মসংস্থানের স্বপ্ন বুনছেন স্থানীয় কোচ উপজাতিরা । এই গ্রামে বর্ডার হাটটি স্থাপন করা হলে এখানে বসবাসরত ৫৫টি পরিবারসহ পাশের পোড়াগাঁও ও নয়াবিল ইউনিয়নের হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে স্থানীয়রা জানান।
সরেজমিনে জানা গেছে, ভারত-বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্য প্রসার ও স্থানীয় উপজাতিদের সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষে নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পোড়াগাঁও ইউনিয়নের খলচান্দা গ্রামে দুই দেশের জেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহনে গত ৫ এপ্রিল প্রস্তাবিত বর্ডার হাটের স্থানটি পরিদর্শন করা হয়েছে। এরপর থেকেই ওই গ্রামের কোচ উপজাতিরা স্বপ্ন বুনছেন নতুন কর্মসংস্থানের। এখানে ব্যবসা পরিচালনা করে তারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতা পাবেন। স্বচ্ছলভাবে তাদের সংসার পরিচালনা করতে পারবেন। এই গ্রামটি সীমান্তবর্তী পাহাড়ঘেরা হওয়ায় অনেকটা জনবিচ্ছিন্ন।
এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষের নেই কোন স্থায়ী কর্মসংস্থান। এক সময় তারা নিজেদের সামান্য আবাদী জমি চাষাবাদ করে, পাহাড় থেকে লাকড়ী সংগ্রহ করে, বাঁশ দিয়ে চাটাই ও ডোল তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতো। পরবর্তীতে প্রায় দুই যুগ আগে থেকে গারো পাহাড়ে বন্যহাতির তান্ডব শুরু হলে তাদের বেশির ভাগ জমি অনাবাদি থাকতে শুরু করে। কিছু কিছু জমি আবাদ করা হলেও ফসল ঘরে তোলার আগেই চলে যায় বন্য হাতির পেটে। এছাড়া গারো পাহাড়ে বন বিভাগের সামাজিক বনায়ন সৃজন করার পর এখন আর বনে লাকড়ী নেই। তাই এরা জীবিকার সন্ধানে ছুটতে থাকেন দিগবিদিক।
এতে কেউ কেউ দিনমজুরী করে অতিকষ্টে সংসার পরিচালনা শুরু করেন। কেউবা আবার বাড়িতে বেকার বসে থাকেন। কিন্তু দুই দেশের কর্মকর্তাদের প্রস্তাবিত ওই বর্ডার হাটের স্থান পরিদর্শনের পর তারা জানতে পারেন সরকারী উদ্যোগে এই গ্রামে ভারত-বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের যৌথ অংশগ্রহনের বর্ডার স্থাপন করা হচ্ছে। এতেই শুরু হয়েছে তাদের স্বপ্ন বুননের কাজ। তারা নতুন করে ঘুরে দাড়ানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। ওই গ্রামের বাসিন্দা কৃষক শ্রী রমেশ কোচ বলেন, আমাদের গ্রামটি একদম ভারত সীমান্তঘেঁষা।
এখানে কোন কর্মসংস্থান নেই। বছরে আমন ও বোরো আবাদের সময় কিছু মানুষ শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালায়। আর বাকি সময় তাদের বেকার বসে থাকতে হয়। এসময় তাদের সংসার চলে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে। তাছাড়া এ গ্রামের যোগাযোগের রাস্তাটিও তেমন ভালো না। এ গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া যায় না। এখানে বর্ডার হাট হলে আমাদের স্থায়ী কর্মসংস্থান তৈরি হবে। একইসাথে রাস্তাঘাটেরও উন্নয়ন হবে।
এতে ছেলে মেয়েরা নিরাপদে স্কুলে যেতে পারবে। ওই গ্রামের গৃহীনি সীতা রাণী কোচনী বলেন, খলচান্দা গ্রামে বর্ডার হাট বসলে আমাদের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে। ভারত বাংলাদেশের লোকজন কেনাকাটা করতে এখানে আসবেন। এতে আমরা ব্যবসা পরিচালনা করে সংসার চালাতে পারবো। এমনকি কোচ উপজাতিদের ঐতিহ্যবাহী নিজেদের তাঁত দিয়ে তৈরিকৃত পোষাক রাঙ্গাপাতি (রাঙ্গা লেফেন) ও কোচদের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করে আমরা চলতে পারতাম। অপর বাসিন্দা কৃষক পরিমল কোচ বলেন, গারো পাহাড়ে বন্যহাতির তান্ডব থাকলেও হাতি আর মানুষের মাঝে কোন দ্বন্ধ নেই। এখানে বন্যহাতিরা ওদের রাস্তা দিয়ে প্রায় ২৩ বছর ধরে চলাচল করছে।
এ পর্যন্ত চলাচলে কোন সমস্যা হয়নি। তাই এখানে বর্ডার হাট স্থাপন করা হলে বন্যহাতির চলাচলে কোন সমস্যা হবে না। সীমান্তের নো-ম্যানসল্যন্ড এলাকায় অনেক পতিত জমি পড়ে থাকে সেখান দিয়ে বন্যহাতি চলাচল করে। এছাড়া দেশের অন্যতম নাকুগাঁও স্থলবন্দরের পাশ দিয়ে বন্যহাতি চলাচল করে সেখানেও বন্য হাতির চলাচলে কোন সমস্যা হয় না। বারমারী বাজারের মনোহারী ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন বলেন, খলচান্দা গ্রামে বর্ডার হাট স্থাপন করা হলে সেখানে কেনাকাটা ও ব্যবসা বাণিজ্য ছাড়াও দুরদুরান্ত থেকে প্রস্তাবিত বর্ডার হাটের পাশের গারো পাহাড়ের সৌর্ন্দয্য দেখতে পর্যটকরা ছুটে আসবেন।
এতে এলাকার আশপাশের বাজারগুলোতেও বেচাকেনা বাড়বে। এছাড়া বর্ডার হাটে দুই দেশের ক্রেতাসাধারন ছাড়াও তাদের আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করতে এই বর্ডার হাটে মিলিত হবেন। মোটকথা খলচান্দা গ্রামে বর্ডার হাট স্থাপন করা হলে এলাকার মানুষের সার্বিক উন্নয়ন হবে। তাই আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সরকারে কাছে দ্রুত বর্ডার হাট স্থাপনের জোড় দাবী জানাই।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, খলচান্দা গ্রামের প্রস্তাবিত বর্ডার হাটের স্থানটি ভারত ও বাংলাদেশের জেলা প্রশাসন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যৌথ অংশগ্রহনে পরিদর্শনের পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। একইসাথে ভারতীয় কর্মকর্তারাও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। দুই দেশের মন্ত্রনালয় থেকে অনুমোদন পেলেই বর্ডার হাট স্থাপনের কাজ শুরু করা হবে।
Posted ০৮:০৭ | বুধবার, ১৭ মে ২০২৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin