| শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
ডেস্ক নিউজ : পৃথিবীর বাইরে থেকে আসা বিভিন্ন টুকরো-টাকরা পাথরের ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের আগ্রহটা বরাবরই বেশী। এতে তারা তারা নতুন কোনো পদার্থ খুঁজে পাবার আশা করেন, এমনকি ভিনগ্রহের প্রাণীর জীবাশ্ম খুঁজে পাবার আশাও করে থাকেন। বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায় সে আশায় গুড়ে বালি এবং সে টুকরো আসলে পাথর নিছক পাথর ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে সাহারা মরুভূমিতে পাওয়া “ব্ল্যাক বিউটি” নামের এই পাথরের খণ্ডটি আসলেই অন্যরকম। এতে রয়েছে অন্যান্য উল্কাপিণ্ডের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেশী পানি,মোটামুটি ৬০০ পিপিএম। পাথরটি নিয়ে ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষণার তথ্য প্রকাশিত হয় Nature জার্নালে।
অনেকে হয়ত “ব্ল্যাক বিউটি” নামের এক ঘোড়ার গল্পটি পড়েছেন। সেই গল্পের ঘোড়াটির মতই কালো জৌলুস রয়েছে এই পাথরটিরও। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিলো পাথরটির বয়স দুই বিলিয়ন বছরের মতো হতে পারে। কিন্তু বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে দেখা গেলো, এর বয়স ৪.৪ বিলিয়ন বছর! মঙ্গল গ্রহ সৃষ্টির প্রাথমিক সময় থেকেই রয়েছে এই পাথরের অস্তিত্ব। এই গবেষণার মূল লেখক অধ্যাপক মুনির হুমায়ুন বলেন, “মঙ্গলের ইতিহাসের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ এক কালের কথা আমাদেরকে জানায় এই পাথর।”
ব্ল্যাক বিউটি মঙ্গল থেকে আসা একমাত্র পাথর নয় বটে। এমন প্রায় ১০০টি উল্কাপিণ্ড এসেছে মঙ্গল থেকে। কিন্তু তার সবগুলোই ব্ল্যাক বিউটির তুলনায় অনেক কমবয়সী, ১৫০ মিলিয়ন থেকে ৬০০ মিলিয়ন বছর বয়স তাদের। মঙ্গলের বুকে ধুমকেতু বা গ্রহাণুর আঘাতের ফলে এরা বিচ্ছিন্ন হয়ে মহাশূন্যে ঘুরে বেড়ায় এবং সুযোগমত পৃথিবীতে এসে পড়ে। সেসবের সাথে তুলনা করলে পাঁচ-খণ্ড বিশিষ্ট এই ব্ল্যাক বিউটি একেবারে প্রাগৈতিহাসিক। এর একটি খণ্ড, NWA 7034 বিশ্লেষণ করে জানা যায় এর বয়স মোটামুটি দুই বিলিয়ন বছর কিন্তু আরেকটি খণ্ড, NWA 7533 এর বয়স বের করা হয় ৪.৪ বিলিয়ন বছর। গবেষকদের মতে, মঙ্গলের বয়স যখন মাত্র ১০০ মিলিয়ন বছর তখন তৈরি হয় এই পাথরটি। দুই খণ্ডের মাঝে বয়সের পার্থক্যের কারণ হিসেবে ইউনিভার্সিটি অফ নিউ মেক্সিকোর কার্ল অ্যাগি বলেন, ১.৫ বছর আগে কোনও অগ্ন্যুৎপাতের মাঝে হয়ত পাথরটি পড়েছিলো আর তাই এর ওপরে নতুন পদার্থের স্তর তৈরি হয়ে যায়। বেশ কয়েক ধরণের পাথরের সমন্বয়ে তৈরি এই উল্কাপিণ্ড নিয়ে কাজ করতে পেরে যারপরনাই খুশি এই বিজ্ঞানীরা।
“এটা মোটামুটি নিশ্চিত করে বলা যায় যে এটা এসেছে মঙ্গলের গর্তে-ভরা দক্ষিণ পার্বত্য অঞ্চল থেকে,” বলেন অধ্যাপক হুমায়ুন। যখন এটা তৈরি হয় তখন মঙ্গলের পরিবেশ ছিলো বেশ চরম। ক্রমাগত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটে চলছিলো চারিদিকে। এ থেকে উদ্গিরণ হওয়া লাভা জমে শক্ত হয়ে যায় এবং দ্রুত মঙ্গলের উপরিপৃষ্ঠ তৈরি হয়ে যায়। তার পরে অগ্ন্যুতপাতের পরিমাণও কমে যায়। এ সময়ে বাষ্প, কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন এবং অন্যান্য গ্যাসের সমন্বয়ে তৈরি হয় একটি আদিম বায়ুমণ্ডল এবং তার সাথে সাথে একটি আদিম সাগর তৈরি হওয়াটাও বিচিত্র কিছু নয়। মঙ্গলে যদি কখনও প্রাণের উদ্ভব হয়ে থাকে তবে সেটা এই সময়েই হয়েছিলো। গবেষকরা প্রাণের চিহ্ন খুঁজে চলেছেন এই পাথরের মাঝে। তবে এটা যতদিন সাহারা মরুভুমির মাঝে পড়ে ছিলো ততদিনে পৃথিবীর প্রাণীরাও এর মাঝে এসে থাকতে পারে যার ফলে ভিনগ্রহের প্রাণীর উপস্থিতির প্রমাণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
Posted ১৪:৫৬ | শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin