সোমবার ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যান্টিনের খাবার মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের দুঃখ-ক্ষোভ

  |   বৃহস্পতিবার, ১৭ মে ২০১৮ | প্রিন্ট

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যান্টিনের খাবার মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের দুঃখ-ক্ষোভ
ডেস্ক রির্পোট : দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর খাবারের মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের অন্ত নেই। ডাইনিংয়ের খাবারের মান এতোই নিম্নমানের ও স্বাদহীন-যে অনেকেই এখানে খেতে চায় না। যারা খায় তারা বাধ্য হয়েই খায়। ভাত, ছোট এক টুকরা মাছ বা মাংস এবং হলুদ রংয়ের পাতলা ডাল এখনো হলের ডাইনিংয়ের খাবার মেনু।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বেশিরভাগ ডাইনিং ম্যানেজার বাজার থেকে কম মূল্যে নিম্নমানের তরকারি, মাছ ও মাংস সংগ্রহ করেন। তারা এ সবজি, মাছ ও মাংস ফ্রিজে রেখে পরবর্তীতে তা রান্না করে শিক্ষার্থীদের পরিবেশন করেন। অনেক সময় রাতের তরকারি, ডাল গরম করে পরদিন দুপুরে শিক্ষার্থীদেরকে খাওয়ানো হয়। কখনো কখনো ডাল, তরকারি ও ভাতের মধ্যে মাছি ও পোকা পাওয়া যায়। রান্না করার স্থানসহ খাবার পরিবেশনের জায়গাটি বেশির ভাগ সময় থাকে অপরিষ্কার, অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা। ডাইনিং-এর কর্মচারীরাও নোংরা হাতে খাবার পরিবেশন করে। এতে শিক্ষার্থীদের খাবারের রুচি নষ্ট হয়ে যায়। টাকা বাঁচাতে রান্নার সব উপকরণই কম দেয়া হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ হলের মধ্যে অর্ধেক হলেই ডাইনিং বন্ধ। আর বন্ধ হবার কারণ হলো নিম্নমানের খাবার। নিম্নমানের বাসি খাবার পরিবেশন করার কারণে শিক্ষার্থীরা এসব খাবার ডাইনিংয়ে খান না। ফলে লোকসান থেকে বাঁচতে ডাইনিং বন্ধ করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
নীল নামে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, হলে এতো নিম্নমানের খাবার দেয়া হয় যা খেয়ে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে। পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা শারিরীকভাবে দুর্বল থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ টি হলের মেয়েরা বাধ্য হয়েই ক্যান্টিনে খেতে বাধ্য হয়। ভাসানী হলের এক শিক্ষার্থী জানান, ‘ছাত্রসংগঠনের কিছু নেতা ফাঁও খান নিয়মিত। এ কারণে খাবারের মান ঠিক রাখতে পারে না ডাইনিং কর্তৃপক্ষ। রুবাইয়া নাসরিন সেজুতি বলেন, মেয়েদের বেশির ভাগ হলে ডাইনিংয়ের নাজুক অবস্থা থাকায় আমাদের বটতলার খাবারের দোকানে যেতে হয়। সেখানেও নিম্নমানের খাবার বেশি দামে খেতে হয়। অনেক সময় নোংরা পরিবেশে তৈরি পঁচা বাসি খাবারও খেতে হয় আমাদের।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে শিক্ষার্থীরা ডাইনিং বিমুখ হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
অপরদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ টি হলে ডাইনিং চালু থাকলেও ক্ষোভে ফুঁসছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের ছাত্র মেহেদী জানান, এ হলে ছোট মাছ বা মুরগি বা ডিম থাকে। এক প্রকার সবজিও থাকে। কিন্তু অন্যান্য হলে কোন সবজি থাকে না। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও দুঃখ রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, হলগুলোর ডাইনিংয়ের ডালের রং দেখে মনে হয়, এতে কোন ডাল দেয়া হয়নি। শুধু পানির মধ্যে হলুদ দেয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ আবাসিক হলে দু’ধরণের পদ্ধতি আছে। একটি ক্যান্টিন অন্যটি শিক্ষার্থী পরিচালিত মেস সিস্টেম। মেস সিস্টেমের খাবার মান তুলনামূলক ভালো হলেও ক্যান্টিনের খাবার নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হলের এক ছাত্র জানান, কাওরান বাজার থেকে নষ্ট সবজি কিনে এনে এখানে রান্না করা হয়। এছাড়া যে মাছ মেনুতে রাখা হয় তাও অনেক সময় পচা থাকে। প্রায়ই খাবারে পোকা পাওয়া যায়। কোন খাবারেরই স্বাদ নেই।
ছাত্রদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা মানেন না ক্যান্টিন ম্যানেজাররা। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে দাম কমানো যাচ্ছে না দাবি ক্যান্টিন ম্যানেজারদের।
গত বছর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ‘বয়স ও পরিশ্রম অনুপাতে প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর প্রতি দিনের খাবারে গড়ে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার কিলোক্যালরি থাকা উচিত। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ক্যান্টিন ও মেসে খাবার গ্রহণ করা শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪৪৯ কিলোক্যালরি। সে হিসাবে প্রয়োজনের অর্ধেক ক্যালরিও পান না এসব শিক্ষার্থী।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নিজামুল হক ভুইয়া বলেন, ‘একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ যদি চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার না পায় তাহলে তার শরীর ক্ষয়প্রাপ্ত হতে পারে এবং নানা রোগব্যাধি হবার আশংকা বেশি থাকে।’
দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর ডাইনিং ও ক্যান্টিনের খাবার নিম্নমানের, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রধান সমস্যা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমস্যা কী? এমন প্রশ্নের জবাবে সব শিক্ষার্থীই ক্যান্টিন ও ডাইনিংয়ের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। বলেন খাবার নিয়ে তাদের ক্ষোভ ও কষ্টের কথা।
{প্রতিবেদনটি ইত্তেফাকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদদাতাদের সহযোগিতা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে।} সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক।
Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:৪১ | বৃহস্পতিবার, ১৭ মে ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com