সোমবার ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোরবানি দেওয়া সত্ত্বেও যাদের কোরবানি আদায় হবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ১৪ জুন ২০২৩ | প্রিন্ট

কোরবানি দেওয়া সত্ত্বেও যাদের কোরবানি আদায় হবে না

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের একটি মহৎ ইবাদত হলো কোরবানি। ইসলামে কোরবানির অর্থ হলো, আল্লাহ তাআলার সন্তষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের জন্য শরিয়ত নির্দেশিত পন্থায় শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কোনো প্রিয় বস্তু আল্লাহ তাআলার দরবারে পেশ করা এবং শরীয়ত নির্দেশিত পন্থায় তা ব্যবহার করা।

 

কোরবানি আল্লাহর নির্দেশ। সামর্থ্যবানদের ওপর তা আদায় করা ওয়াজিব। যুগে যুগে আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক জাতির জন্য কোরবানি নিয়ম করে দিয়েছেন তেমনি এ জাতির সামর্থ্যবানদের ওপরও কোরবানি আবশ্যক।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরবানির বিধান ও নির্দেশ দিয়েছেন। তা পবিত্র কোরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে এভাবে ওঠে এসেছে-

وَ لِکُلِّ اُمَّۃٍ جَعَلۡنَا مَنۡسَکًا لِّیَذۡکُرُوا اسۡمَ اللّٰهِ عَلٰی مَا رَزَقَهُمۡ مِّنۡۢ بَهِیۡمَۃِ الۡاَنۡعَامِ ؕ فَاِلٰـهُکُمۡ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَلَهٗۤ اَسۡلِمُوۡا ؕ وَ بَشِّرِ الۡمُخۡبِتِیۡنَ

অর্থ: ‘প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে, যে সমস্ত জন্তু তিনি রিজিক হিসেবে দিয়েছেন তার উপর। তোমাদের ইলাহ তো এক ইলাহ; অতএব তারই কাছে আত্মসমর্পণ করো; আর অনুগতদেরকে সুসংবাদ দাও’। (সূরা: হজ: আয়াত: ৩৪)

فَصَلِّ لِرَبِّکَ وَ انۡحَرۡ

অর্থ: ‘আপনি আপনার রবের জন্য নামাজ আদায় করুন এবং কোরবানি করুন’। (সূরা: কাউসার: আয়াত: ২)

কোরবানি দেওয়া সত্ত্বেও যাদের কোরবানি আদায় হবে না

কোরবানি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহর জন্য পরিশুদ্ধ ও একনিষ্ঠ ইবাদত। এ ইবাদতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ সংশয়ের স্থান নেই। কোনো রকম সন্দেহ-সংশয় থাকলে কোরবানি হবে না। কোরবানি দেওয়া সত্ত্বেও যাদের কোরবানি আদায় হবে না, তারা হলো-

> নিয়তে বিশুদ্ধতা না থাকলে: কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য একনিষ্ঠতা তথা নিয়ত বিশুদ্ধতা থাকা জরুরি। কোরবানিতে কাউকে শরিক করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভালোভাবে জেনে-বুঝে অংশীদার নির্বাচন করা। কারণ কোনো শরিকের নিয়ত গলদ হলে কারো কোরবানিই (অন্য শরিকদের কোরবানিও) শুদ্ধ হবে না। কেননা আল্লাহর কাছে কোরবানি রক্ত, মাংস ও হাড় কিছুই পৌঁছায় না বরং পৌঁছে মানুষের নিয়ত তথা তাকওয়া। এ বিষয়টি আল্লাহ তাআলা এভাবে তুলে ধরেছেন-

لَن يَنَالَ اللهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِن يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنكُمْ كَذَلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَبَشِّرِ الْمُحْسِنِينَ

অর্থ: ‘আল্লাহর কাছে কখনো ওগুলোর (কোরবানির পশুর) গোশত পৌঁছে না এবং রক্তও না; বরং তার কাছে পৌঁছে তোমাদের (মানুষের অন্তরের) তাকওয়া (সংযমশীলতা); এভাবে তিনি ওগুলোকে (কোরবানির পশুগুলোকে) তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো। এই জন্য যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন।  আর তুমি সুসংবাদ দাও সৎকর্মশীলদের’। (সূরা: হজ, আয়াত: ৩৭)

> কোরবানির পশুর প্রদর্শনী করলে: কোরবানি হবে শুধু আল্লাহর জন্য। লোক দেখানোর জন্য কিংবা সুনাম-সুখ্যাতির জন্য নয়। মানুষকে দেখানোর জন্য বাজারের বড় বড়, সুন্দর ও দামি পশুই জবাই করলেই কোরবানি হবে না। বরং তাতে ইখলাস থাকতে হবে। তবেই কোরবানি কবুল হবে। কোরবানির পশু প্রদর্শনীর ইচ্ছা থাকলে এ কোরবানি আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। কার কোরবানি আল্লাহর কাছে কবুল হবে তা-ও ওঠে এসেছে কোরআনের বর্ণনায়-

إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ

অর্থ: ‘আল্লাহ তো সংযমীদের কোরবানিই কবুল করে থাকেন’। (সূরা: মায়েদা, আয়াত: ২৭)

> কোরআন-সুন্নাহর বিধানের লঙ্ঘন হলে: আল্লাহ ও তার রাসূলের (সা.) বিধি-বিধান অনুসরণ করা ছাড়া কোনোভাবেই কোরবানি কবুল হবে না। বিষয়টি আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে এভাবে তুলে ধরেছেন-

فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحاً وَّلاَ يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدا

অর্থ: ‘যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে; সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে’। (সূরা: কাহফ, আয়াত ১০)

অতএব, যারা কোরবানি করবেন, তাদের কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনার প্রতি লক্ষ্য রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। যারা শুধু বছরজুড়ে এ পশু জবাই করে গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্যে কোরবানি দেয়; তাদের কোরবানিও গ্রহণযোগ্য হবে না।

> ভাগ-বণ্টনে গড়মিল হলে: কোরবানির পশুতে প্রত্যেকের অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ অন্যের অংশ থেকে কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরিকের কোরবানি শুদ্ধ হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭)

উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কোরবানি করা জায়েজ। (মুসলিম ১৩১৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭)

উটের বয়স পাঁচ বছর হতে হবে। গরু ও মহিষের বয়স দুই বছর হতে হবে। (মুআত্তা মালেক: ৭৫৪)

> গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করলে: যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্য ছাড়া কোরবানি না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে তাহলে তার কোরবানি সহিহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরিকদের কোরবানিও কবুল হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাজিখান ৩/৩৪৯)

> অবৈধ টাকায় কোরবানি করলে: হারাম টাকা দিয়ে কেউ কোরবানি করলে তার কোরবানি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা ‘আল্লাহ তাআলা পবিত্র, তিনি শুধু পবিত্রতাই গ্রহণ করেন…’। (তিরমিজি: ২৯৮৯)

তাছাড়া কোরআনুল কারিমে হালাল সম্পদ থেকে ব্যয় করার নির্দেশ এসেছে ভাবে-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَنۡفِقُوۡا مِنۡ طَیِّبٰتِ مَا کَسَبۡتُمۡ

অর্থ: ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ব্যয় কর তোমাদের অর্জিত হালাল সম্পদ থেকে’। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ২৬৭)

ইয়া আল্লাহ! সব মুসলিম উম্মাহকে একনিষ্ঠ নিয়ত ও কোরআন-সুন্নাহর বিধি-বিধান মেনে একমাত্র আপনারই সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা অর্জনের জন্য কোরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।  আজ : ডেইলি-বাংলাদেশ

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৫:১২ | বুধবার, ১৪ জুন ২০২৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com