নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪ | প্রিন্ট
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি পশ্চিমা বিশ্বকে সতর্ক করে বলেছেন, তার দেশ পরমাণু যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু রাশিয়ার কাছে কত পরমাণু অস্ত্র মজুদ আছে তা কি জানেন?
অন্য দেশের তুলনায় রাশিয়ার সক্ষমতা কতটা?
পৃথিবীর মোট ৯টি দেশের পারমাণবিক অস্ত্র আছে- চীন, ফ্রান্স, ভারত, পাকিস্তান, ইসরায়েল, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য। এর মধ্যে বিশ্বের ১৯১ টি দেশ যারা পরমাণু অস্ত্র-বিস্তার রোধ চুক্তি বা এনপিটি স্বাক্ষর করেছে তাদের মধ্যে চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যও রয়েছে।
তাত্ত্বিকভাবে ওই চুক্তি অনুযায়ী, এই দেশগুলো পারমাণবিক অস্ত্র সম্পূর্ণ নির্মূল করবে, যে লক্ষ্যে তারা ধীরে ধীরে নিজেদের পারমাণবিক ওয়ারহেডের মজুদ কমাবে। এবং ১৯৭০ ও ৮০’র দশকে ওই দেশগুলোর মজুদ করা ওয়ারহেডের সংখ্যা কিছুটা কমেও আসে। তবে ভারত, ইসরায়েল এবং পাকিস্তান কখনো এনপিটিতে সই করে নি। এছাড়া উত্তর কোরিয়া সই করলেও ২০০৩ সালে তা থেকে বেরিয়ে যায়।
আর কোনো দেশের কাছে নেই এত পরমাণু অস্ত্র
ফেডারেশন অব অ্যামেরিকান সায়েন্টিস্ট’ বা এফএএস-এর হিসেবে রাশিয়ার কাছে পাঁচ হাজার ৫৮০টি পরমাণু অস্ত্র আছে। এর মধ্যে ১,৭১০টি অস্ত্র মোতায়েন অবস্থায় আছে। ৮৭০টি আছে ভূমিতে থাকা ব্যালিস্টিক মিসাইলে, আর ৬৪০টি আছে ডুবোজাহাজে থাকা ব্যালিস্টিক মিসাইলে। আরো প্রায় ২০০টি পরমাণু অস্ত্র বিভিন্ন ঘাঁটিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
রাশিয়া ছাড়া আর কোনো দেশের কাছে এতগুলো পরমাণু অস্ত্রের মজুদ নেই।
কখন ব্যবহার করা হবে এসব অস্ত্র
২০২০ সালে রাশিয়ার প্রকাশিত এক নির্দেশিকায় বলা হয়, পরমাণু বা অন্য কোনও গণবিধ্বংসী অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার উপর হামলা হলে বা প্রচলিত অস্ত্র দিয়ে রাশিয়াকে হামলা করে ‘রাষ্ট্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে নিয়ে গেলে’ এই পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা হবে।
পুতিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালালে তারাও তা করবে। সোভিয়েত ইউনিয়ন সবশেষ ১৯৯০ সালে এমন পরীক্ষা চালিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র সবশেষ পরীক্ষা চালিয়েছিল ১৯৯২ সালে। এছাড়া চীন ও ফ্রান্স ১৯৯৬ সালে, ভারত ও পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে এবং উত্তর কোরিয়া ২০১৭ সালে পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়।
চুক্তি থেকে রাশিয়ার সরে আসা
রাশিয়া ১৯৯৬ সালে ‘কম্প্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার-টেস্ট ব্যান ট্রিটি’ বা সিটিবিটিতে সই করেছিল। পরে ২০০০ সালে সেটি অনুমোদন করে। তবে গতবছর এই চুক্তি থেকে রাশিয়াকে সরিয়ে নেয়ার চুক্তিতে সই করেন পুতিন। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৬ সালে চুক্তিটি সই করলেও কখনো অনুমোদন করেনি।
পারমাণবিক অস্ত্র কতটা বিধ্বংসী?
পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিই করা হয়েছে সর্বোচ্চ ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্য। কোন অস্ত্র কতটা বিধ্বংসী হবে সেটি নির্ভর করে বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর। এর মধ্যে রয়েছে-
ভূমির কতটা ওপরে এটি বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম
স্থানীয় পরিবেশ
কিন্তু সবচাইতে ছোট ওয়ারহেডও ব্যাপক প্রাণহানি এবং দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি ঘটাতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমায় যে বোমাটি এক লাখ ৪৬ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটিয়েছিল, তার ওজন ছিল ১৫ কিলোটন। এবং বর্তমান সময়ের ওয়ারহেডগুলো এক হাজার কিলোটনের বেশি হতে পারে। কোন পারমাণবিক বিস্ফোরণ হলে তার চারপাশের এলাকায় কোন কিছু অবশিষ্ট থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।
নিউক্লিয়ার বাক্স
রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেশটির প্রেসিডেন্টের। সেজন্য ‘চেগেত’ নামের একটি নিউক্লিয়ার বাক্স সবসময় তার সঙ্গে থাকে। এই বাক্সের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট তার পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট সামরিক কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন।
Posted ১০:২২ | সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain