টেকনাফ( কক্সবাজার) প্রতিনিধি : র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বাংলাদেশে বিবিধ অপরাধ নির্মূলে প্রতিনিয়ত অবদান রেখে চলেছে। র্যাব-১৫, কক্সবাজার এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, জঙ্গী দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, জলদস্যু, ডাকাতি, চুরি-ছিনতাই, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাদকসহ দেশে বিরাজমান নানাবিধ অপরাধ দমনে আন্তরিকতার সহিত কাজ করছেন। এরই ধারাবাহিকতায়, র্যাব-১৫, কক্সবাজার এর আভিযানিক দল র্যাবের গোয়েন্দা শাখার তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, মাদক পাচারের হাব হিসেবে ব্যবহৃত কক্সবাজারের টেকনাফ থানাধীন হ্নীলার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে কুখ্যাত মাদক কারবারী ইয়াসিন আরাফাত ওরফে কালু এর মাদক সিন্ডিকেট পার্শ্ববর্তী দেশ হতে বড় একটি মাদকের চালান নিয়ে হ্নীলা ইউনিয়নের পূর্ব জাদিমুড়া এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের প্রেক্ষিতে গত রাতে র্যাব-১৫ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল উক্ত স্থানে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।
এ সময় র্যাবের অভিযানের বিষয়টি বুঝতে পেরে পলায়নের চেষ্টাকালে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী ও পার্শ্ববর্তী দেশ হতে মাদক চোরাকারবারীর অন্যতম হোতা ইয়াসিন আরাফাত ওরফে কালু’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত মাদক কারবারী তার নাম-ঠিকানা প্রকাশসহ নিজ বসত ঘরে মাদকদ্রব্য ইয়াবা আছে বলে স্বীকার করে। পরবর্তীতে উপস্থিত স্বাক্ষীদের সম্মুখে বিধি মোতাবেক বসত ঘর তল্লাশী করে খাটের নিচে বিশেষ কায়দায় লুকায়িত অবস্থা থেকে সর্বমোট ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
অপরদিকে র্যাবের গোয়েন্দা তৎপরতা ও নজরদারীর ফলে নির্ভরযোগ্য তথ্যের আলোকে গতকাল রাতে র্যাব-১৫ কর্তৃক কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানাধীন হোয়াইক্যং ইউনিয়নের রইক্ষং এলাকায় একটি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় রইক্ষং এলাকার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী, ইয়াবা ব্যবসায়ী ও জনমনে আতংক সৃষ্টিকারী আবুল কাশেম’সহ তিনজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।পরে তাদের তল্লাশী করে ০১টি বিদেশী পিস্তল ও ০২ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। জাদিমুরা এলাকার ইমানহোসেনের ছেলে ইয়াছিআরফাত কালু(২১) হোয়াইক্যংইউনিয়নের উনছিপ্রাং রইক্ষং এলাকার মোঃ হোসাইনের ছেলে আবুল কাশেম(৩৮) খুলনা জেলার দা কোপ উপজেলারগুনারু সুতারখালি ইউনিয়নের নওশের মোড়লের ছেলে নুরুজ্জামান(২৮) ও আবুলকালামের ছেলে সাকির আহম্মদ সাগর(২৬) বলে র্যাব জানিয়েছেন।
আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ইয়াসিন আরাফাত ওরফে কালু পার্শ্ববর্তী দেশ হতে মাদক চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। সে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী ও পার্শ্ববর্তী দেশ হতে মাদক চোরাকারবারীর অন্যতম হোতা। সে উক্ত এলাকায় ভয়ংকর একটি মাদক সিন্ডিকেট গড়ে তুলে এবং তার নেতৃত্বে সিন্ডিকেটের সহযোগীরা বিভিন্ন পেশার আড়ালে তাদের সুবিধামত এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট ব্যবহারের মাধ্যমে ইয়াবার বড় বড় চালান দেশের অভ্যন্তরে নিয়ে এসে কয়েক দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে বসতঘরে বিশেষ কায়দায় মজুদ করতো। মজুদকৃত মাদকের চালান স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তার নির্ধারিত এজেন্টদের নিকট সুবিধাজনক সময়ে বিক্রি করে থাকে। পর্যায়ক্রমে পুনরায় বিপুল পরিমাণ মাদকের চালান বাংলাদেশে নিয়ে এসে কোন না কোন অভিনব কৌশলী পন্থায় মজুদ ও বিক্রয়ের মাধ্যমে তার এই রমরমা মাদক ব্যবসার প্রক্রিয়া চলমান ছিল বলে জানা যায়। মাদকের টাকা লেনদেনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে গ্রেফতারকৃত ইয়াসিন আরাফাত ওরফে কালু জানায় যে, পার্শ্ববর্তী দেশ হতে ক্রয়কৃত মাদকের মূল্য বাবদ নগদ অর্থ প্রদান এবং কখনো কখনো হুন্ডী ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পরিশোধ করতো।
গ্রেফতারকৃত আবুল কাশেম একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। সে তার আধিপত্য বিস্তারের জন্য দেশী/বিদেশী অস্ত্র-শস্ত্রের ভয়-ভীতি দেখিয়ে জনমনে আতংক সৃষ্টি, চাঁদা আদায় ও পরিকল্পিত হামলাসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত। একই সাথে সে দীর্ঘদিন ধরে মাদকের ব্যবসা করে আসছিল। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, গ্রেফতারকৃত নুরুজ্জামান ও সাকির আহাম্মদ সাগর দু’জনই অস্ত্র ব্যবসায়ী। তারা খুলনা থেকে দেশী/বিদেশী অবৈধ অস্ত্র-গোলাবারুদ নিয়ে কক্সবাজারের হোয়াইক্যং এর উনচিপ্রাং এলাকায় এসে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নিকট বিক্রয় করে থাকে। অস্ত্রের মূল্য বাবদ নগদ অর্থের পাশাপাশি তারা বিনিময় হিসেবে ইয়াবা ক্রয় করে খুলনায় নিয়ে যেতো এবং সেখানকার মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবীদের নিকট বিক্রয় করতো। গ্রেফতারকৃত নুরুজ্জামান একজন কুখ্যাত মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, চুরি ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে চট্টগ্রাম ও খুলনার একাধিক থানায় সর্বমোট ১৩টি মামলা এবং বিভিন্ন মেয়াদে আটবার কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত সাকির আহাম্মদ সাগর এর বিরুদ্ধে খুলনা সদর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ০১টি মামলা সংক্রান্তে তথ্য পাওয়া যায়।
গ্রেফতারকৃতদের পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত্বে টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছ।
Like this:
Like Loading...
Related