রবিবার ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

আইনি কাঠামোয় আনার উদ্যোগ চলছে ঢাকায় উবারের ব্যবহার বাড়ছে

  |   বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল ২০১৭ | প্রিন্ট

আইনি কাঠামোয় আনার উদ্যোগ চলছে  ঢাকায় উবারের ব্যবহার বাড়ছে

ট্যাক্সি-সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান উবারের কার্যক্রম ঢাকায় প্রসারিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, পাঁচ মাস ধরে প্রতি মাসে ১০ শতাংশের বেশি হারে চালক ও যাত্রী বেড়েছে তাদের। এশিয়ার শহরগুলোর মধ্যে এই বৃদ্ধির হার ঢাকাতেই সবচেয়ে বেশি।

ঢাকার বেশির ভাগ উবার ব্যবহারকারী ব্যক্তি তাঁদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে এই সেবা যেন ঢাকার সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা ট্যাক্সির মতো না হয়ে যায়, সে জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার কড়া তদারকি জরুরি।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ট্যাক্সি-সেবাদাতা উবারের নিজস্ব কোনো গাড়ি নেই। এটি মুঠোফোন অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ির মালিক-চালকদের সঙ্গে যাত্রীদের সংযোগ ঘটিয়ে দেওয়ার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। এখানে গাড়িচালক ও যাত্রী—দুই পক্ষকেই আগে থেকে নিবন্ধিত হতে হয়, যা এই অ্যাপ ব্যবহারকারী যাত্রী ও চালক—উভয়েরই নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ঢাকায় প্রতি ট্রিপের ২৫ শতাংশ অর্থ পায় উবার। বাকিটা গাড়ির মালিক ও চালক পাবেন।

সরকারি সূত্রগুলো বলছে, উবার ট্যাক্সি-সেবাদাতা না শুধু অ্যাপ হিসেবে নিবন্ধিত হবে, তা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। উবার নিজেকে ‘স্মার্টফোন অ্যাপ’ হিসেবে দাবি করে। এটি ব্যবহার করে ঢাকায় যে গাড়িগুলো ভাড়ায় চলছে, সেগুলোর সবই ব্যক্তিগত হিসেবে নিবন্ধিত। ভাড়ায় গাড়ি চালাতে হলে সরকারকে রাজস্ব দিয়ে রুট পারমিট নিতে হয়।

গত বছরের ২২ নভেম্বর ঢাকায় উবার চালুর ঘোষণা দেওয়ার তিন দিন পর সড়ক যোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে উবারকে বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করে। এই নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রয়েছে। তবে এ ঘোষণার পরও উবারের সেবা বন্ধ হয়নি। চালু হওয়ার দুই মাসের মাথায় গত ২৩ জানুয়ারি থেকে উবারের ভাড়া বেড়েছে। শুরুতে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১৮ টাকা ছিল, বর্তমানে তা বেড়ে ২১ টাকা হয়েছে। থেমে থাকা অবস্থায় প্রতি মিনিটের জন্য ২ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩ টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ৫০ টাকা ভিত্তি ভাড়া (বেজ ফেয়ার)।

যাত্রীরা সন্তুষ্ট, চালক-মালিকদের মুনাফাও থাকছে

উবার ব্যবহারকারী মরিয়ম নেছার অভিজ্ঞতায় উবারের সেবা ভালো। তিনি বলেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া দিয়ে প্রায় শীতাতপনিয়ন্ত্রিত গাড়িতে ভ্রমণ করা যায়। সবচেয়ে বড় বিষয়, কর্মজীবী নারীদের একা যাতায়াতের ক্ষেত্রে উবার একধরনের নিরাপত্তার বোধ তৈরি করতে পেরেছে।

বেসরকারি চাকরিজীবী আবদুল্লাহ মামুন বলেন, উবারে ঘরে বসেই গাড়ি ডাকা যায়। ভাড়া নিয়ে ঝামেলা নেই। চালকদের মূল্যায়নের সুযোগ রয়েছে, তাই তাঁদেরও ন্যূনতম দায়বদ্ধতা রয়েছে। এত সব সুযোগ যে সেবায় পাওয়া যাচ্ছে—সেটি বেআইনি হলে তাকে আইনি কাঠামোয় আনতে হবে।

উবারে গাড়ি চালাচ্ছেন, এ রকম গাড়িমালিকদের কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তাঁদের প্রায় সবাই পেশাদার ট্যাক্সি সার্ভিসের মতো চালক দিয়ে গাড়ি চালান। কয়েকজন একাধিক গাড়ি উবারে চালাচ্ছেন। প্রতিদিন সব খরচ বাদ দিয়ে গাড়িপ্রতি গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা করে মুনাফা থাকছে। ভালো ও নতুন গাড়ি হলে আয়ও বেশি হয়।

ঢাকায় উবারে চলা গাড়িগুলোর প্রায় সবই টয়োটার। বাংলাদেশে আসা টয়োটার সর্বশেষ মডেলের প্রিমিও, এলিয়ন, করোলা (এক্সিও), ফিল্ডার থেকে শুরু করে ১৯৯০ মডেলের গাড়ি পর্যন্ত উবারে চলছে। এখানে উবারের পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা গাড়ির শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র ঠিক রাখা এবং গাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন।

কয়েকজন গাড়িচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোট পাওয়া ভাড়ার ২৫ শতাংশ প্রতিদিন সার্ভিস চার্জ হিসেবে কেটে নেয় উবার কর্তৃপক্ষ। উবারের দেওয়া একটি হটলাইন নম্বরে ফোন করলে তারা জানিয়ে দেয়, কোন এলাকা থেকে বেশি কল আসছে। তারা সেসব এলাকায় চালকদের ছড়িয়ে পড়ার পরামর্শ দেয়। ব্যক্তিগত গাড়ি অবৈধভাবে ভাড়ায় চালানোর অভিযোগে থানা-পুলিশের ঝক্কি পোহানোর কথাও জানিয়েছেন কয়েকজন চালক।

উবারে এক মাস ধরে গাড়ি চালাচ্ছেন জুয়েল শেখ। তিনি বলেন, তাঁর করোলা ১৯৯৫ মডেলের গাড়িটি
নিয়ে তিনি এক দিনে সর্বোচ্চ ১৪টি ট্রিপ দিয়ে প্রায় ৫ হাজার টাকা আয় করতে পেরেছেন।

আইনি প্রস্তুতি

উবারকে একটি ব্যবস্থাপনার আওতায় আনার পক্ষপাতী সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘উবার লেটেস্ট টেকনোলজি, আগেই বলেছি, এর বিরোধিতা আমি করি না। নতুন টেকনোলজিকে স্বাগত জানাতে হবে। এটাকে সিস্টেমের আওতায় আনতে একটি কমিটি করা হয়েছে এবং আলাপ-আলোচনা চলছে। এটি চলুক, বন্ধ করে না দিয়ে একটি সিস্টেমে আনতে হবে।’

উবারকে আইনি কাঠামোতে আনতে যে কমিটি কাজ করছে, তার প্রধান বিআরটিএর পরিচালক (প্রশাসন) নাজমুল আহসান মজুমদার। ১৯ এপ্রিল তিনি  বলেন, ‘উবারের বিষয়ে এখনো প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ হয়নি। ওরা (উবার) বাংলাদেশে ওদের ব্যবসার নীতি, কর্মপরিকল্পনা ইত্যাদির বিষয়ে একটি প্রস্তাব দিয়েছে। সেই প্রস্তাব ধরে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এরপর নিজেরা বসে আরেকটি সভা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। চলতি সপ্তাহেই এ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।’

বিআরটিএর দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, উবারের মতো সেবা চালুর জন্য অনুমোদন চেয়ে কয়েকটি দেশি প্রতিষ্ঠানও বিআরটিএর কাছে আবেদন করেছে। এর মধ্যে টপ আইআই নামের একটি প্রতিষ্ঠান উবারের আগেই প্রস্তাবসহ আবেদন করেছিল। তাদের প্রস্তাব যাচাই করে এরই মধ্যে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তাদের প্রস্তাবে মন্ত্রণালয়ও ইতিবাচক সাড়া দিয়ে বিধি অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে বলেছে।

অনুমোদন দিতে নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন, এদের জন্য ব্যক্তিগত হিসেবে নিবন্ধিত গাড়ি ভাড়ায় চালানোর বিষয়টি ট্যাক্সিক্যাব নীতিমালায় আনতে হবে। মন্ত্রণালয় থেকে নীতিমালা পরিবর্তনের জন্য বিআরটিএর কাছে প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে।

উবারের বক্তব্য

ঢাকায় চলমান আলোচনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে ১৯ এপ্রিল উবারের গণমাধ্যম শাখায় ই-মেইল পাঠানো হয়। দুদিন পর জবাবে উবারকে ‘স্মার্টফোন অ্যাপ’ এবং এর সেবাকে ‘রাইড শেয়ারিং’ উল্লেখ করা হয়। উবারের মুখপাত্র বলেন, তাঁরা এখন সরকারের সঙ্গে কাজ করছেন। তাঁরা নীতিমালার আওতায় আসতে চান এবং এই আলোচনা একটি সঠিক দিকে গেলে তাঁরা খুশি হবেন। এখানে রাইড শেয়ারিং ব্যবস্থার সম্ভাবনা রয়েছে, যা এই শহরে ভালো একটি প্রভাব ফেলবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১০:৩৬ | বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল ২০১৭

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com