নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ০৮ মার্চ ২০২৪ | প্রিন্ট
বাংলাদেশে দখলের রাজনীতি চলছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘সিলেকশনে রাজনীতি চলছে। গতকাল হাইকোর্ট প্রাঙ্গন পর্যন্ত যে দখল করার প্রক্রিয়া চলেছে তা আপনারা ইতোমধ্যে দেখেছেন। আইনজীবীদের ভোট হচ্ছে… ওখানে দখল করার কী আছে? সারাদেশে জনগণের ভোট তো দখল হয়ে গেছে… এখন আইনজীবীদের ভোটও দখল করতে হবে।’
বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (৮ মার্চ) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক র্যালিতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বিশ্ব নারী দিবসে দেশের নারী সমাজকে অভিনন্দন জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘আজ দেশের নারীরা অবহেলিত, নির্যাতিত। আজকে তাদের দুরাবস্থার কথা বলতে হয়…বাংলাদেশ আজকে একটা ধর্ষণের দেশে পরিণত হয়েছে…।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, বড় দুঃখের ও কষ্টের বিষয় হচ্ছে, এই ধর্ষণের ব্যাপারে কোনো বিচারের প্রয়োগ আমরা দেখতে পারছি না। কারণ এই ধষর্ণের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের অনেকে জড়িত, তাদের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা জড়িত। আরও দুঃখের বিষয় এই বিষয়ে যারা নারীবাদী হিসেবে পরিচয় দেন, যারা নারীদের পক্ষে কাজ করে বলেন তারা কিন্তু খুব একটা সোচ্চার হচ্ছেন না। কারণ তারাও ভয়ভীতির পরিবেশের মধ্যে আছেন। নারীদের ওপর ধষর্ণের বিষয়ে কেউ মুখ খুলে কথা বলছে না।’
আমীর খসরু বলেন, ‘সারাদেশে ভয়ভীতির একটা পরিবেশ বিরাজ করছে… কেউ মুখ খুলতে চাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে দখলের রাজনীতি চলছে, সিলেকশনে রাজনীতি চলছে। গতকাল হাইকোর্ট প্রাঙ্গন পর্যন্ত যে দখল করার প্রক্রিয়া চলেছে তা আপনারা ইতোমধ্যে দেখেছেন। আইনজীবীদের ভোট হচ্ছে … ওখানে দখল করার কী আছে? সারা দেশে জনগণের ভোট তো দখল হয়ে গেছে… এখন আইনজীবীদের ভোটও দখল করতে হবে, এখন ব্যবসায়ীদের ভোটও দখল করতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে এই যে দখলের প্রতিক্রিয়া এটা শুধু নারী নয়, বাংলাদেশের নাগরিকরা বঞ্চিত হচ্ছে, সব অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে।
এমন অবস্থা থেকে উত্তরণে নারী সমাজকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, দেশের নাগরিকরা যদি অধিকারহীন হয়ে যায়, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয় তাহলে নারীদের ক্ষমতায়নের সুযোগ থাকবে না, কারো ক্ষমতায়নের সুযোগ থাকবে না।
তিনি বলেন, দেশের সাংবিধানিক, রাজনৈতিক ও মানুষের নাগরিক অধিকার ফিরে পাওয়া না গেলে এখন যে অবস্থা আছে সেখান থেকে উঠে আসার কোনো সুযোগ নাই। তাই নারী-পুরুষ সবাই মিলে একত্রে প্রথমে আমাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। নারীদের ক্ষমতায়ন সেখান থেকে শুরু করা যাবে।
বাংলাদেশে নারীদের ক্ষমতায়নে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বিএপির এই নেতা আরও বলেন, আজকে আমরা কোথায় আছি? আমরা দেশকে বাঁচাতে পারছি না, মানুষও বাঁচাতে পারছি না। খালেদা জিয়া আজ তিল তিল করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। আসুন আমরা আজকের দিনে সবাই মিলে প্রতিজ্ঞা করি আমরা দেশ বাঁচাব, মানুষ বাঁচাব। আমরা নারী আমরাই পারি। আসুন আমরা সকলে মিলে এক কাতারে দাঁড়িয়ে এমন প্রতিজ্ঞা করি যেন দেশনেত্রীর মতো আমরাও বলতে পারি দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও।’
দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে আমীর খসরু বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের এরকম দাম অতীতে কখনো ছিল না। খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন পণ্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ছিল, স্থিতিশীল ছিল।
র্যালিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘আমরা চাই, আমরা নারী সমাজ মিলে যেন দেশ ও সমাজটাকে বদলে দিতে পারি। যে সমাজে আমরা রুখে দাঁড়াতে পারব, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারব, মাথা সকলে উঁচু করে দাঁড়াতে পারব এবং নারীদের পক্ষে দাঁড়াতে পারব সেই সমাজ চাই আমরা। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন…তিনি যে আন্দোলন করতেন তার একটাই দাবি ছিল…দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও।’
দেশের বর্তমান অবস্থা পরিবর্তনে মহিলা দলের কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান রেখে তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা শপথ নিতে চাই, আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, নারীর অধিকার ফিরিয়ে আনব, দেশ বাঁচাব, মানুষ বাঁচার, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব।
বিশ্ব নারী দিবসে মহিলা দলের র্যালির এই অনুষ্ঠানে ব্যাপক পুলিশের উপস্থিতির প্রসঙ্গ তুলে আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘আজকের এই দিনে বিশ্ব নারী দিবসে আমরা নারীরা এখানে যতজন উপস্থিত হয়েছি তার চেয়ে দেখুন কত বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এখান থেকে নাইটেঙ্গল রেস্তোরাঁ পর্যন্ত। কতটা ভয় পায় ওরা। আমরা যদি ৫ জন নারী থাকতাম সেখানে ৫শ পুলিশ মোতায়েন থাকতো। এখানেই আমাদের বিজয়। কেনো ভয় পায়? কারণ আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করি, সত্য কথা বলি।
অভিযোগের বিষয়ে পুলিশের এডিসি ফারজানা ইয়াসমিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেটা পারমিশন ছিলো ওনারা সমাবেশ করেছেন বক্তব্য দিয়েছেন সেখানে আমরা বাধা দেয়নি। যতটুকু পারমিশন ছিল সেটা আমরা করতে দিয়েছি।
আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, নেওয়াজ হালিমা আরলি, নায়েবে ইউসুফ, শাহানা আখতার সানু, রুমা আখতার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।
বিশ্ব নারী দিবসে মহিলা দলের র্যালি উপলক্ষে ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন গলিতে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। রায়ট কার, জলকামানের গাড়িও ছিল সেখানে।
Posted ০৮:৩৭ | শুক্রবার, ০৮ মার্চ ২০২৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain