সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাতছড়ির পাহাড়ি টিলায় রহস্যঘেরা বাড়ি !

  |   রবিবার, ০৮ জুন ২০১৪ | প্রিন্ট

Habiganj Satsori Arms Recover 6Th Day 8 June 2014  Pic  1 -1

আবু হাসিব খান চৌধুরী পাবেল (হবিগঞ্জ) ৮ জুন : হবিগঞ্জের চুনারুঘাট সাতছড়ির গহীন অরণ্যে রয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় ঠিলা। সমতল ভূমি থেকে ওই সব ঠিলা ৫০ থেকে দেড়শ ফুট পর্যন্ত উচু। ভুতুরে এলাকা। সাপ-বিচ্ছুদের বাস এখানে। সাতছড়ি তেলিয়াপাড়া-চুনারুঘাট সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার অদুরে। ত্রিপুরা পল্লীর দক্ষিণ দিকে অবস্থিত ওইসব টিলায় টিলায় রয়েছে বসতির চিহ্ন।

সরেজমিনে গিয়ে তাই পরিলক্ষিত হয়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় প্রতিটি টিলার উপর সাজানো গুছানো ঘরবাড়ি। ঘরের বেড়া মাটি দিয়ে আর চালে রয়েছে টিন। ঘরের ভেতর রয়েছে অত্যাধুনিক সু-স্বজ্জিত ফার্ণিচার। এর সাথে ৪০/৫০ জন একসঙ্গে বসে খাবার উপযোগি ডাইনিং টেবিল। চিকিৎসার জন্য মাটির নিচে রয়েছে বেশ কিছু যন্ত্রপাতিসহ মিনি হাসপাতাল। সেই সাথে কাপড় সেলাই করার জন্য রয়েছে সেলাই মেশিন। ঘরের বেড়ায় ও চালে ঝুলে আছে মেয়েদের পড়নের সেলোয়ার-কামিজ। রয়েছে এটাস বাথরোম। কমন বাথরোমও আছে। বড় চুলা। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় এখানে ছিল অনেকগুলো মানুষের বাস। আর এগুলোতে ৫/৬দিন আগেও মানুষের আনাগুনা ছিল বলে মনে হচ্ছে। ঘরের সামনে সদ্য রোপন করা আছে বেগুন গাছের চারা। আর এসব বসতির আশপাশেই রয়েছে বেশ কিছু বাংকার ও সুরঙ্গপথ। ঘরের ভেতরেও রয়েছে ছোট ছোট গর্ত। মাটি খুড়াখুড়িতে বুঝা যায় এসব গর্তগুলো নতুন। আর এ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে লুকায়িত কিছু। ওইসব পাহাড়ি বাড়িঘর এখন জনমানবশূন্য। পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় অসংখ্য বাড়িঘর পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়।

একটি টিলার উপরে উঠতেই বেশ কয়েকটি কুকুর আমাদের ঘিরে ফেলে। আমরা আতংকিত। কিন্তু না কামড়ায়নি। কিছুক্ষণ ঘিরে রাখার পর সরে দাড়ায় কুকুরগুলো। তবে প্রশিক্ষিত কুকুরের মতো আমাদের পিছু নেয়। যে যেদিকেই যাচ্ছি একটি করে কুকুর আমাদের পিছু নেয়। সব মিলিয়ে বুঝা যায় এই আতংকিত স্থানে বাস করতো ভারতীয় সন্ত্রাবাদ বা বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্র“পের সদস্যরা। ওই এলাকার বেশকিছু টিলা এক সময় ছিল ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে। বহু বছর ধরেই এ পাহাড়গুলোকে ব্যবহার করেছে নিজেদের আস্তানা হিসেবে। পাহাড়ী জনগোষ্ঠীরও ওই সব টিলায় যাতায়াত করতো না। টিলায় রয়েছে নিরাপত্তা চৌকি। পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর কাছে ‘উগ্রপন্থী টিলা’ নামে পরিচিত একটি পাহাড়ে গিয়ে দেখা যায়, বিচ্ছিন্নতাবাদী বা বিপ্লবীদের মূল ঘাঁটি। বাড়ি এবং ক্যাম্পের চারপাশে রয়েছে বিশাল ঝোপঝাড়। টিলার উপর হঠাৎ দুর থেকে ‘সাবধান’ ‘সাবধান’ একটি শব্দ ভেসে আসলো। মনে হচ্ছিল মানুষের শব্দ। এতে আমরা ভীত হয়ে পড়ি। কিন্তু না। কুকুর গুলোই ছুটোছুটি করতে লাগলো। কিন্তু একটু এগিয়েই দেখা গেল একটি পাখি এভাবেই ডাকছিল। পোষমানা পাখিটিকে হয়তো সাবধান শব্দটি শিখিয়ে দেয়া হয়েছিল। কারো মতে বিচ্ছিন্নতাবাদীরাই নিজেদের স্বার্থে শালিক পাখিটিকে পোষ মানিয়ে ‘সাবধান’ শব্দটি শিখিয়েছে।

ঘরের ভেতর পাওয়া কিছু কাগজ পত্রে দেখা গেছে ইংরেজি ও ত্রিপুরী ভাষায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণের বিভিন্ন বই, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ে ভারতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের কাটিংসহ অস্ত্র ও গোলাবারুদ রাখার বিভিন্ন বেল্ট ও খাঁপ। বাড়িতে পুরনো আসবাবপত্র, ওয়াকিটকির ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।

বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সময় সাতছড়ির গহীন অরণ্যে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদ ‘ত্রিপুরা পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (টিপিডিএফ), ন্যাশনাল লিবারেল ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা (এনএলএফটি), ইউনাইটেড লিবারেশন অব আসাম (আলফা), অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স (এটিটিএফ), ট্রাইবাল ফোর্স, ত্রিপুরা কিংডম, পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ), রয়েল বরাক আর্মি (আরবিএ), পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ), প্রিপাক ও উলপার নিয়ন্ত্রণে।
সাতছড়িতে ত্রিপুরা আদিবাসীদের একটি পুরনো আবাসস্থল। তাই এ অঞ্চলকে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করছিল বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। গড়ে তুলেছিল মূল আস্তানা। কয়েক বছর ধরে এদের আনাগোনা নেই বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায় আদিবাসী ত্রিপুরা পল্লীর কেউ কেউ।

র‌্যাব-৯ এর কমান্ডিং অফিসার সানা শামীনুর রহমান কর্মকর্তা জানান, অভিযান চলছে। পার্শ্ববর্তী সন্দেহভাজন টিলাগুলোতেও অভিযান চালানো হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত অস্ত্র উদ্ধারের সম্ভাবনা থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত অভিযান চলবে। গতকাল এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা অমূল্য কুমার চৌধুরী জানান, মামলার তদন্ত চলছে। দোষিদেরকে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হবে। কোন নিরপরাধ লোককে হয়রানি করা হবে না। ঘটনার পর থেকে সাতছড়ি পর্যটক শূণ্য হওয়ার বিষয়ে বন বিভাগের সাতছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মনির হোসেন খান বলেন, আমি এখানে যোগদানের পর থেকে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বা আস্থানা তার চোখে পড়েনি। গত কয়েকদিন যাবত অভিযান চলায় পর্যটকদের উপস্থিতি কম ছিল। এ ব্যাপারে র‌্যাব-৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের অধিনায়ক সানা শামিনুর রহমান বলেছেন সাতছড়ি উদ্যানের সকল টিলা ও পাহাড় পর্যায়ক্রমে অনুসন্ধান করা হবে। র‌্যাবের সদস্যরা এগুলো কর্ডন করে রেখেছেন। পত্রপত্রিকায় এখনও বিচ্ছিন্নবাদিদের আস্থানা রয়েছে সম্পর্কে তিনি বলেন, এরা স্থানীয় বাসিন্দা। অভিযানের ভয়ে তারা পালিয়ে গেছেন।

উল্লেখ্য গত মঙ্গলবার ভোর থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাতছড়ির ত্রিপুরা পল্লী ও আশপাশের বিভিন্ন পাহাড়ে অভিযান চালায় র‌্যাব। ওই এলাকার ৯টি বাংকার থেকে ১টি রকেট লাঞ্চার, ৪০ মিলিমিটার ২২২টি রকেট, ২৪৮টি রকেট চার্জার, ৪টি মেশিনগান, মেশিনগানের ৫টি ব্যারেল, ১২ হাজার ৯শ’ ৮৭ রাউন্ড বুলেটসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। যা ঢাকার সেন্ট্রাল এমুনেশন ডিপো ও সেন্ট্রাল অর্ডিনেন্স ডিপোতে জমা দেয়া হয়েছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:১৬ | রবিবার, ০৮ জুন ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com