মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শত বিলিয়ন ডলার ক্লাব: বিশ্বের ১৪ শীর্ষ ধনী ব্যক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ০৫ এপ্রিল ২০২৪ | প্রিন্ট

শত বিলিয়ন ডলার ক্লাব: বিশ্বের ১৪ শীর্ষ ধনী ব্যক্তি

গত বছর ফোর্বসের তালিকায়, মাত্র ছয়জন টাইকুন (অত্যন্ত ধনাঢ্য ও ক্ষমতাবান ব্যক্তি) ছিলেন, যারা ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি সম্পদ গড়ে আগের সব রেকর্ড ভেঙেছিলেন।

অভিনব বিষয় হল ২ এপ্রিল সবশেষ তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে এই এক্সিকিউটিভ ক্লাবে এবারে মোট ১৪ জন জায়গা করে নিয়েছেন।

এই ১৪ জন হলেন শুধু তারাই, যাদের মোট সম্পদের মূল্য ডলারে অন্তত ১২ ডিজিটে ঠেকেছে।

মেক্সিকান টাইকুন কার্লোস স্লিম, দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। কিন্তু এতগুলো বছর তিনিও এই তথাকথিত ‘ওয়ান হান্ড্রেড বিলিয়নেয়ার’ গ্রুপে প্রবেশ করতে পারেননি।

কেন না তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ মাত্র অল্পের জন্য এই ক্লাবের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছিলেন। তবে এবারে তিনি পেরেছেন।

১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা পেতে, একটি দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকারের দিকে তাকাতে হবে।

জিডিপি হল একটি দেশে উৎপাদিত সমস্ত পণ্য ও পরিষেবার সমষ্টি। অর্থাৎ বোঝাই যায় এই তালিকার একেকজন কেনো কোনো দেশের জিডিপির সমান বা তারও বেশি সম্পদ নিয়ে আছেন।

এই ১৪ জন ম্যাগনেটের অনেকের ব্যক্তিগত সম্পদ পানামা, উরুগুয়ে, কোস্টারিকা বা বলিভিয়ার মতো দেশের জিডিপিও ছাড়িয়ে গিয়েছে।

ফোর্বসের সিনিয়র সম্পদ সম্পাদক চেজ পিটারসন-উইথর্ন বলেছেন, এটি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের জন্য এক ‘আশ্চর্যজনক’ বছর ছিল।

তিনি বলেন, এমন কী অনেকে যখন আর্থিক অনিশ্চয়তার সময় পার করছে, তখনও এই অতি-ধনীরা উন্নতি করে গিয়েছেন।

ফোর্বস জানায়, ২০২৪ সালে বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে দুই হাজার ৭৮১ জনে দাঁড়াবে। যা আগের বছরের তুলনায় ১৪১ জন বেশি এবং ২০২১ সালের আগের রেকর্ডের চেয়ে ২৬জন বেশি।

অভিজাতরা আগের চেয়ে বেশি ধনী হবে এবং তাদের কাছে ১৪ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পদ জমা হবে।

নিচে এই ‘ফরটিন ক্লাব’-এর তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে, ফোর্বসের মতে যা এই গ্রহের টাইকুনদের সবচেয়ে স্বতন্ত্র একটি গ্রুপ।

১. বার্নার্ড আর্নল্ট (ফ্রান্স)

মোট সম্পদ: ২৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে তালিকায় নিজের নাম তুলেছেন বার্নার্ড আর্নল্ট। তার সম্পদ ২০২৩ সালে আগের বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তার বিলাসবহুল সমন্বিত ব্যবসা এলভিএমএইচ-এর কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। তিনি একাধারে লুই ভিটন, ক্রিশ্চিয়ান ডিওর এবং সেফোরার মালিক।

সম্পদ অর্জনে বছর শেষে আরেকটি রেকর্ড গড়ায় এলভিএমএইচ-কে ধন্যবাদ দেওয়াই যায়।

 

২. ইলন মাস্ক (যুক্তরাষ্ট্র)

মোট সম্পদ: ১৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

ইলন মাস্ক বেশ কয়েকবার ‘বিশ্বের সবচেয়ে ধনী’ খেতাব জিতেছেন এবং বেশ কয়েকবার শীর্ষ স্থান থেকে ছিটকে পড়েছেন।

বিশ্বের সবচেয়ে ধনীর এই র‍্যাঙ্কিংয়ে তার অবস্থান ক্রমাগত পরিবর্তিত হওয়ার কারণ হল তার স্পেসএক্স, টেসলা এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এক্স (আগের টুইটার) প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে।

৩. জেফ বেজোস (যুক্তরাষ্ট্র)

মোট সম্পদ: ১৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

অ্যামাজনের স্টক মার্কেটের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য বিদায়ী বছরে বেজোস আরও ধনী হয়েছেন।

৪. মার্ক জুকারবার্গ (যুক্তরাষ্ট্র)

মোট সম্পদ: ১৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

মেটার নির্বাহী পরিচালকের জন্য গেল বছর বেশ সংকটপূর্ণ ও জটিল ছিল।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই জায়ান্টের শেয়ারের মূল্য ২০২১ সালে তার সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে এক লাফে ৭৫ শতাংশ পড়ে যায়।

তা সত্ত্বেও গত বছরে আবার এই শেয়ারের মূল্য প্রায় তিন গুণ বেড়েছে।

৫. ল্যারি এলিসন (যুক্তরাষ্ট্র)

মোট সম্পদ: ১৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

গত বছর, প্রযুক্তি কোম্পানি ওরাকলের শেয়ার ৩০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে, যা তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেয়।

ল্যারি এলিসন কোম্পানির সিইও পদ থেকে পদত্যাগ করলেও তিনি কোম্পানির প্রেসিডেন্ট পদে রয়ে গেছেন।

সেই সাথে তিনি এই কোম্পানির প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা এবং এর সব চেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার।

৬. ওয়ারেন বাফেট (যুক্তরাষ্ট্র)

মোট সম্পদ: ১৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

ওয়ারেন বাফেট বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সফল বিনিয়োগকারী হিসেবে বিবেচিত।

তিনি মূলত বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে নামে একটি একটি সমন্বিত ব্যবস্থা পরিচালনা করেন।

যার অধীনে বেশ কয়েকটি কোম্পানি রয়েছে। যেমন বীমাকারী প্রতিষ্ঠান গেইকো, ব্যাটারি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ডিউরাসেল এবং রেস্টুরেন্ট চেইন ডেইরি কুইন ইত্যাদি।

বার্কশায়ারের শেয়ার রেকর্ড হারে গত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

৭. বিল গেটস (যুক্তরাষ্ট্র)

মোট সম্পদ: ১২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ১৯৯৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই ২৩ বছর সময়ের মধ্যে ১৮ বার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি জায়গা দখল করেছিলেন।

তার বিপুল পরিমাণ সম্পদ থাকা সত্ত্বেও, ফোর্বস অনুসারে, প্রযুক্তি খাতে কঠিন প্রতিযোগিতা, সেই সাথে ২০২১ সালে এক ব্যয়বহুল বিবাহবিচ্ছেদ এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানে তার অনুদানের কারণে গেটস তার তালিকা থেকে নেমে গিয়েছেন।

৮. স্টিভ বলমার (যুক্তরাষ্ট্র)

মোট সম্পদ: ১২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

ডট-কম সংকটের পর মাইক্রোসফটের সাবেক সিইও স্টিভ বলমার ২০০০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

ডট-কম সংকট হল নব্বই দশকের শেষে প্রযুক্তির স্টক হঠাৎ বাড়তে শুরু করে, তখন অনেকে তাতে বিনিয়োগ করে। পরে এই স্টক হঠাৎ পড়েও যায়।

যার প্রভাবে অনেক ডট-কম স্টার্টআপ কোম্পানি তাদের ব্যবসার মূলধন খুইয়ে ফেলে। অনেকেই ব্যবসা থেকে বেরিয়ে যায়।

স্টিভ বলমার সফলভাবে মাইক্রোসফট পরিচালনা করেছেন।

মাইক্রোসফট থেকে অবসর নেওয়ার পর, বলমার এনবিএ (ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশন) এর লস অ্যাঞ্জেলেস ক্লিপার্স বাস্কেটবল দল কিনে নিয়েছিলেন, যার মান সাম্প্রতিক বছরগুলোয় শুধুই বেড়েছে।

আজ এটি এনবিএ-র পঞ্চম সব চেয়ে মূল্যবান দল।

 

৯. মুকেশ আম্বানি (ভারত)

মোট সম্পদ: ১১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

আম্বানির সম্পদ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তার সমন্বিত কোম্পানি, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার কারণে।

কোম্পানিটি পেট্রোকেমিক্যাল, তেল ও গ্যাস, টেলিযোগাযোগ, রিটেল এবং আর্থিক পরিষেবাগুলোয় বিনিয়োগ করেছে।

১০. ল্যারি পেজ (যুক্তরাষ্ট্র)

মোট সম্পদ: ১১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং বোর্ড সদস্য ল্যারি পেজ।

সের্গেই ব্রিন এবং তিনি এই প্রযুক্তি জায়ান্টের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত শেয়ারহোল্ডার হিসাবে রয়ে গেছেন।

 

১১. সের্গেই ব্রিন (রাশিয়া/ যুক্তরাষ্ট্র)

মোট সম্পদ: ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

অ্যালফাবেটের আরেক সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং বোর্ড সদস্য হলেন সের্গেই ব্রিন ।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ব্রিন কোম্পানির প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

কিন্তু তিনি ল্যারি পেজের সাথে কোম্পানির সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ারহোল্ডার হিসেবে রয়ে গেছেন।

 

১২. মাইকেল ব্লুমবার্গ (যুক্তরাষ্ট্র)

মোট সম্পদ: ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

মাইকেল ব্লুমবার্গ হলেন অর্থ ও বাণিজ্য বিষয়ক সংবাদ এবং মিডিয়া কোম্পানি ব্লুমবার্গ এলপির সহ-প্রতিষ্ঠাতা।

তিনি বর্তমানে ব্যবসার ৮৮ শতাংশের মালিক। তিনি ১২ বছর নিউইয়র্ক সিটির মেয়র ছিলেন।

১৩. আমানসিও ওর্তেগা (স্পেন)

মোট সম্পদ: ১০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

পোশাক কোম্পানি, ইনডিটেক্স-এর শেয়ার ৪৩ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার কারণে গত বছর ভাগ্য বদলে গিয়েছে আমানসিও ওর্তেগার।

ইনডিটেক্স কোম্পানি বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড জারার চেইন পরিচালনা করে।

ওর্তেগার আবাসন সংক্রান্ত ব্যবসার হিসেবের মধ্যে লজিস্টিকস, আবাসন এবং অফিসের নানা সম্পত্তি রয়েছে।

এগুলো বেশির ভাগ প্রাথমিকভাবে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

১৪. কার্লোস স্লিম (মেক্সিকো)

মোট সম্পদ: ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

এই ব্যবসায়ী এক সময় বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির স্থানে ছিলেন এবং এখনও লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি তিনি।

মেক্সিকান পেসোর মান বেড়ে যাওয়া এবং তার সমন্বিত শিল্প গ্রুপো কারসোর শেয়ারের দাম ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য গত বছরে তার ভাগ্য বদলে যায়।

কার্লোস স্লিম এবং তার পরিবার দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম মোবাইল টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি আমেরিকা মোভিল নিয়ন্ত্রণ করে।

<<<সূত্র: বিবিসি বাংলা>>>

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৭:১৭ | শুক্রবার, ০৫ এপ্রিল ২০২৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com