বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মসলা ব্যবসা করে সফল উদ্যোক্তা হলেন রাঙ্গুনিয়ার ফেরদৌস

এম. মতিন   |   বুধবার, ০৮ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট

মসলা ব্যবসা করে সফল উদ্যোক্তা হলেন রাঙ্গুনিয়ার ফেরদৌস
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য একজন মডেল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার সফল নারী উদ্যোক্তা ফেরদৌস আক্তার। ছিলেন একজন গৃহিণী। ২০ সালের করোনাকালীন সময়ে স্বামীর অনুপ্রেরণায় মাত্র ১০ কেজি মরিচের গুঁড়া দিয়ে অনলাইনে মসলার ব্যবসা শুরু করেছিলেন। ফেসবুক গ্রুপ ‘উই’র (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) মাধ্যমে ঘরে বসে ‘কুক মাসালা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে রাঙ্গুনিয়া থেকে সারাদেশে গুঁড়া মসলা, শিমের বিচি, বিন্নি চাল ও আতপ চালের গুঁড়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারীর প্রসিদ্ধ মিষ্টি মরিচের গুঁড়া, হলুদ, ধনিয়া, মেজবানি মসলা, বিরিয়ানি মসলা, মাংসের মসলা, জিরাসহ মসলা সামগ্রীর ব্যবসা করছেন এ নারী উদ্যোক্তা।
জানা যায়,২০২০ সালের জুলাইয়ে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্বামীর ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। দুই সন্তান নিয়ে কী করবেন কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। ফেসবুক গ্রুপ ‘উই’-এর সন্ধান পেয়ে ব্যবসা শুরু করেন ফেরদৌস। মাত্র ১০ কেজি মরিচ কিনে সব প্রক্রিয়ার ভিডিও আপলোড দেওয়ার পর গ্রুপে ওই দিন ছয়জন মরিচের গুঁড়ার অর্ডার দেন। প্রতিদিন মরিচ, হলুদ আর মসলার গুঁড়ার অর্ডার বাড়তে থাকে। ওই মাসেই বিক্রি হয় লাখ টাকার। এর পর থেকে ফেরদৌসকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। করোনার অতিমারি পাল্টে দিয়েছে তাঁর জীবন। এখন ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে সারাদেশে ফেরদৌসের নিয়মিত ক্রেতা পাঁচ হাজার জনের ওপরে। গত দুই বছরে অনলাইনের মাধ্যমে প্রায় ২০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন এই নারী উদ্যোক্তা। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ধীরে ধীরে  একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজ এলাকাসহ সারাদেশে পরিচিতিও লাভ করেছেন এ নারী।
ফেরদৌস আক্তার এখন স্বপ্ন দেখছেন, একজন বড় উদ্যোক্তা হওয়ার এবং রাঙ্গুনিয়ায় আধুনিক একটি মসলা কারখানা স্থাপনের। সেই লক্ষ্যে নিরন্তর প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ফেরদৌস আক্তার বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘কুক মাসালা’। চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের গোচরা গ্রাম থেকে আমি ‘উই’-এর (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) উদ্যোক্তা হয়ে কাজ করছি। আমার উদ্যোক্তাজীবন শুরু হয় ২০২০ সালের জুলাই মাসে। আলহামদুলিল্লাহ, অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছি। আমার ভাবনা থেকেও অনেক বেশি। আমার প্রতিষ্ঠান কুক মাসালার প্রোডাক্ট দেশের ৬৪টি জেলায় ছড়িয়ে এখন বিদেশেও সুনাম অর্জন করেছে।’
উদ্যোক্তাজীবনে পরিবার থেকে ভালোই সাড়া পাচ্ছেন জানিয়ে ফেরদৌস বলেন, ‘পরিবারের সবাই আমাকে সাপোর্ট ও সহযোগিতা করেছে। বিশেষ করে আমার স্বামী পারভেজ আমাকে খুব সহযোগিতা করেছে।’ তিনি জানান, ৬৪ জেলার মধ্যে ঢাকার উত্তরা ও মিরপুর থেকে সবচেয়ে বেশি অর্ডার আসে। হাটহাজারীর মিষ্টি মরিচের গুঁড়ার চাহিদা বেশি ক্রেতাদের। এ ছাড়া হলুদ, ধনিয়া, মেজবানি মসলা, বিরিয়ানি মসলা, মাংসের মসলা, জিরা, বিন্নি চাল, শিমের বিচি, আতপ চালের গুঁড়ারও ভাল অর্ডার আসে। রাঙ্গুনিয়ায় স্থানীয়ভাবে প্রথম শ্রেণির কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর শাখা না থাকায় চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে পণ্য ডেলিভারি দিতে হয় বলে জানান ফেরদৌস।
উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম ‘উই’ ফেসবুক গ্রুপ এই কাজে ফেরদৌসকে বেশ সহযোগিতা করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নারী উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন পূরণের প্ল্যাটফর্ম উই না থাকলে আমার উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন হয়তো জন্মই নিত না। উই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হওয়ার পর রাজিব আহমেদ স্যারের অনুপ্রেরণায় আমার ভেতর উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন জন্ম নেয়। উইয়ের প্রেসিডেন্ট নাসিমা আকতার নিশা আপু উই প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি করেছেন।’
ফেরদৌস আক্তার চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গশ্চি মাঝি পাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক্যাল কলেজে। পলিটেকনিক্যালে পড়াকালীন রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের লুৎফুল বারি পারভেজের সঙ্গে বিয়ের বেড়াজালে আটকে পড়েন ফেরদৌস আক্তার।ফলে থমকে যায় তার শিক্ষাজীবন। তখন থেকেই তাঁর স্বপ্ন জাগে উদ্যোক্তা হওয়ার। বৈবাহিক জীবনে তাদের দুই সন্তান রয়েছে। বর্তমানে স্বামী আর দুই সন্তানকে নিয়ে উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের গোচরা গ্রামে সুখেই দিনতিপাত করছেন তিনি। স্বামী, সংসার, সন্তান  সামলিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আজ তিনি সফল একজন নারী উদ্যোক্তা।
এ ব্যাপারে ফেরদৌস আক্তার বলেন, ‘আমি একজন নারী। এই পরিচয় দিতে একসময় দ্বিধা কাজ করত। কিন্তু এর সঙ্গে উদ্যোক্তা শব্দটি যোগ হয়েছে। আর আজ নারী উদ্যোক্তা পরিচয় দিতে আমার অহংকার এবং গর্ববোধ হয়। কারণ আজ আমি বোঝা থেকে নিজেকে সম্পদে পরিণত করেছি। আমার এই কাজে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা যুগিয়েছপ আমার বড় আপা। আমি যখন কাজ শুরু করি, তখন অনেকে বাজে কথা বলেছিল। সেসব বাজে কথা এবং ঝামেলা থেকে আমাকে সাপোর্ট দিয়েছে আমার বড় আপা, যাকে আমি সম্প্রতি হারিয়ে ফেলেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বপ্ন রাঙ্গুনিয়ায় ‘কুক মাসালা’ নামে একটা ফ্যাক্টরি স্থাপন করা। যাতে নিজের পাশাপাশি এলাকার মানুষদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।’ রাঙ্গুনিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সোনিয়া সফি বলেন, ‘ফেরদৌস আক্তার একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। নারীদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হলে অবশ্যই ফেরদৌসের মতো উদ্যোগী হতে হবে। ইচ্ছাশক্তি মানুষকে অনেক দূর নিয়ে যায়। তাঁর স্বপ্ন পূরণ হোক, এ প্রত্যাশা করি। একই সাথে ফেরদৌস আক্তারকে অনুসরণ ও অনুকরণ করে অন্য নারীরাও উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসুক এ আহবান জানাই।
Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৮:৫৫ | বুধবার, ০৮ মার্চ ২০২৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com