নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট
পরিস্থিতি ঘোলাটে না করে ১০ ডিসেম্বর শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান। অন্যথায় যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ী থাকবে বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি। নোমান বলেন, নয়াপল্টনেই আমাদের সমাবেশ হবে। সেই সমাবেশে সরকার পতনের আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এই সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের পরাজয় হবে। শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মহান বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র ও শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস। মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র আলাদা করে দেখা যায় না। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি রাষ্ট্র গঠনের জন্য। মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আমরা স্বাধীনতা চেয়েছিলাম অর্থনীতির মুক্তির জন্য, জনগণের কথা বলা জন্য। কিন্তু আজ জনগণের স্বাধীনতা নেই, কথা বলার অধিকার নেই। কথা বললেই মামলা হচ্ছে। বিএনপির সমাবেশে লাখ লাখ লোক আসছে। এর জন্য নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। এই সরকার এখন গায়েবি মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি এবং গ্রেফতার করছে। সরকার মামলা-হামলা করে জনগণের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করতে চায়, যাতে ভয়ে লোক জনসমাবেশে না আসে। এই হামলা-মামলা এবং গ্রেফতার করে সমাবেশ ঠেকানো যাবে না।
বিএনপির এ ভাইস চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমাদের আটটি সমাবেশ হয়ে গেছে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় আরেকটি সমাবেশ হবে। সেই সমাবেশ হবে গণসমাবেশ। এই সমাবেশে যাতে লোক আসতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগ সরকার তাণ্ডব চালাবে। আমাদের সমাবেশের স্থান আমরা নির্ধারণ করবো। নয়াপল্টনে আমাদের সমাবেশ হবে। সেই সমাবেশে সরকার পতনের আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে এবং এই সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের পরাজয় হবে।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এই সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ওবায়দুল কাদেরের কথা শুনলে মনে হয় তার মধ্যে সেন্স নেই। আওয়ামী লীগের ধারণা বিএনপিকে দমিয়ে রাখলে আমরা আগের মতো থাকতে পারবো। নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি দেন। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চাই। দেশের সর্বত্রই গায়েবি মামলা হচ্ছে। ১০ তারিখের সমাবেশে কোনো ব্যত্যয় ঘটলে তার জন্য সরকারকে দায় নিতে হবে।
আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আওয়ামী লীগ শরণার্থী মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাড়িতে বাড়িতে লেখা থাকতো- ‘এই বাড়িতে রাজাকার নেই’। এই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশটাকে এমন এক জায়গায় নিয়ে গেছে যে এরা ক্ষমতা থেকে সরে গেল তাদের একই পরিণতি হবে। তখন বাড়িতে বাড়িতে লেখা থাকবে এই বাড়িতে আওয়ামী লীগ নেই। তিনি বলেন, বর্তমানে কোনো ভোটাধিকার নেই। আওয়ামী লীগ তাদের নেতার কথা মানেন না, তারা আবার কিসের রাজনীতি করেন। বাংলাদেশের টাকা মালয়েশিয়া, কানাডা, আমেরিকায় চলে যায়। মাওলানা ভাসানী মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করেছিলেন। আওয়ামী লীগ তা মানতে রাজি নয়। এদিকে, নিত্যপণ্যের সকালে যে দাম বিকেলে তার ভিন্ন চিত্র। ইসলামী ব্যাংকের চুরি আর দুর্নীতি দেখার অভিভাবক কেউ নেই।
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আরও বলেন, গায়েবি মামলা শুরু হয়েছে। আমরা সমাবেশ করার জন্য যে জায়গা চাই সে জায়গা না দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দিতে চাচ্ছেন। কারণ, সারাদেশে যা করছেন- সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আটকে রেখে সেটা করবেন না তার কী নিশ্চয়তা আছে? পুলিশ আগের মতো মামলা দেওয়া শুরু করেছে। অনেক লোক বিদেশে আছে- তাদেরকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে। যত জুলুম-নির্যাতন আসুক, বিএনপির সমাবেশ নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে হবে। উসকানি মূলক কথায় পা দেওয়া যাবে না।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল এবং মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা মানুষ পেতে শুরু করেছিল। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্র ধ্বংস করে মানুষের ভোটাধিকার বঞ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই বিজয়ের মাসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কেন্দ্র করে ব্যবসা করছে। আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্র ধ্বংস করে ভোটাধিকার হরণ করেছে। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের উপদেষ্টা এম নাজমুল হাসান। এতে আরও বক্তব্য দেন- তাঁতী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মনিরুজ্জামান মনির, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ আব্দুল্লাহ আল বাকি প্রমুখ।
Posted ১৬:১৫ | শুক্রবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২২
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain