শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

আজ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একাদশতম কারাবন্দি দিবস

  |   মঙ্গলবার, ০৭ মার্চ ২০১৭ | প্রিন্ট

আজ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একাদশতম কারাবন্দি দিবস

tarek-rahman

স্বাধীনদেশ অনলাইন :  ২০০৭ সালের এই দিনে সেনাসমর্থিত জরুরি সরকার তাকে গ্রেফতার করে। ৫৪৪ দিন কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে চিকিত্সাধীন আছেন। এক-এগারো সরকারের যন্ত্রণাভরা কারানির্যাতনের পর তিনি এখন আওয়ামী সরকারের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। চিকিত্সার পাশাপাশি তিনি যুক্তরাজ্যে বসেই দেশ ও দলের খোঁজখবর রাখছেন। প্রয়োজনে দিকনির্দেশনাও দিচ্ছেন জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ভবিষ্যত্ এই উত্তরাধিকারী।

বিএনপি ও বিভিন্ন সংগঠন পৃথক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তারেক রহমানের কারাবন্দি দিবস পালন করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম এ উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনার আয়োজন করে। বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল পৃথক আলোচনা সভা করবে। ২০০৯ সাল থেকে এভাবে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তারেক রহমানের কারাবন্দি দিবস পালন করা হয়। তাকে গ্রেফতার, কারা নির্যাতন ও বিভিন্ন মামলা-হয়রানির বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

এক-এগারোর সেনাসমর্থিত সাংবিধানিকভাবে অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নৃশংস প্রতিহিংসায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এ নেতাকে কোনো মামলা ছাড়াই ২০০৭ সালের ৭ মার্চ গ্রেফতার করে যৌথবাহিনী। সীমাহীন নির্যাতন আর দুঃসহ যন্ত্রণায় ৫৪৪ দিন বন্দিজীবন
কাটান বিএনপির বর্তমান সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নির্যাতনের স্টিমরোলার সহ্য করে প্রায় পঙ্গু অবস্থায় তিনি জামিনে মুক্তি পান ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর।

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমান ৬ দফায় ১৩ দিন রিমান্ড, অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে সীমাহীন বর্বরোচিত নির্যাতন, মেরুদণ্ডের হাড় ভাঙা, হাসপাতালে চিকিত্সা, প্রিয় নানিকে হারানো, মা ও একমাত্র ভাইয়ের কারাবরণ ইত্যাদি ঘটনার মধ্য দিয়ে কারাগার ও হাসপাতালের প্রিজন সেলে এক বছর ৫ মাস ২৯ দিন কাটান। বন্দি অবস্থায়ও আইন এবং মানবাধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তত্কালীন সরকার তারেক রহমানের ওপর বর্বর নির্যাতন চালায়। গ্রেফতারের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তারেক রহমানের বাসায় গেলে প্রথমে তিনি তাদের কাছ থেকে কিছুটা সময় নিয়ে অজু সেরে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে মহান আল্লাহর দরবারে বিশেষ মোনাজাত করেন। যাওয়ার সময় তিনি কিছু রাজনৈতিক বই ও পবিত্র কোরআন শরীফ সঙ্গে নেন। ক্যান্টনমেন্ট থানা থেকে পরদিন ৮ মার্চ রাত ১০টায় তারেক রহমানকে কড়া পুলিশি প্রহরায় র্যাবের জ্যাকেট ও হেলমেট পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয়।

গ্রেফতারের ১৬ ঘণ্টা পর গুলশান থানায় এক কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে ব্যবসায়ী আমিন আহমেদ চৌধুরীর দায়ের করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আবেদন করে। গ্রেফতারের পর বিশেষ উদ্দেশ্যে দায়ের করা সাজানো এ মামলায় রিমান্ড মঞ্জুর না করে তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য শত শত আইনজীবী জোরালো আবেদন জানান। আইনজীবীদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। রিমান্ডে তারেক রহমানকে পুলিশ হেফাজতে না নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে অজ্ঞাত লোক দ্বারা চোখ বেঁধে বর্বরোচিত কায়দায় শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয় বলে পরবর্তীতে তিনি আদালতকে অবহিত করেন।

প্রথম দফা চার দিন রিমান্ড শেষে ১২ মার্চ তারেক রহমানকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। পর্যায়ক্রমে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা দায়েরের পাশাপাশি ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ডিটেনশনও দেয়া হয়। তারেক রহমানকে ৬ দফায় ১৩ দিন রিমান্ডের নামে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। একই বছর ১৯ নভেম্বর কারাগার থেকে আদালতে হাজির করে হারুন ফেরদৌসীর দায়ের করা মামলায় দু’দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। ২৬ নভেম্বর সৈয়দ আবু শাহেদ সোহেলের দায়ের করা মামলায় তিনদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। এ মামলার রিমান্ড শেষে ২৮ নভেম্বর তাকে আদালতে হাজির করে খান আফতাবউদ্দিনের দায়ের করা মামলায় ফের দু’দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। এ মামলায় রিমান্ডে নেয়ার আগে তারেক রহমান সরকারের হেফাজতে থেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।

ওইদিন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিচারকের অনুমতি নিয়ে তারেক রহমান তার ওপর অমানবিক নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি আদালতকে বলেন, ‘এবার রিমান্ডে নিলে আমি আর বাঁচব না। আমি রিমান্ডে শারীরিকভাবে এতটাই নির্যাতনের শিকার হয়েছি যে, এখন মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছি না। চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আমাকে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়েছে।’ আদালতে তারেক রহমান বলেন, ‘২৪ ঘণ্টা মোটা কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে নির্জন স্থানে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে আমাকে।’
সেদিনের বক্তব্যে শুধু আইনজীবীরাই নন, আদালতে উপস্থিত সবাই বিচলিত ও বিষণ্ন হয়ে পড়েন। ক্ষুব্ধ হন দেশবাসী। এক মাস বিরতির পর ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি তারেক রহমানকে পুনরায় আদালতে হাজির করে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় একদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। ওই বছরের ২৭ মার্চ খান আফতাবউদ্দিনের দায়ের করা আরেকটি মামলায় তারেক রহমানকে একদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।

২০০৮ সালের ১৮ জানুয়ারি তারেক রহমানের নানি বিশিষ্ট সমাজসেবিকা বেগম তৈয়বা মজুমদার ইন্তেকাল করেন। নানিকে শেষবারের মতো দেখার জন্য তারেক রহমানকে পরদিন দুপুর ১২টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়। নিজের ভগ্ন শরীর নিয়ে প্রিয় নানিকে দেখে সেদিন তারেক রহমান অনেক কাঁদলেন। কাঁদালেন উপস্থিত সবাইকে। এদিন জিয়া পরিবারের কারাবন্দি অপর দুই সদস্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও আরাফাত রহমান কোকোকেও প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়। কিন্তু সরকার তাদের কাউকেই একে অপরের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। অথচ সেই সরকারই প্যারোলে মুক্তিপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতাদের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে বসবাসেরও অনুমতি দেয়।

সরকারের হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন এবং সঠিক চিকিত্সা না হওয়ায় তারেক রহমানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে ২০০৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তাকে পিজি হাসপাতালের প্রিজন সেলে নিয়ে ভর্তি করা হয়। তারেক রহমানকে পিজি হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশেষ আদালতে নেয়া হয়। আদালতে হুইল চেয়ারে তিন মিনিট বসিয়ে রাখার পর তার মেরুদণ্ডের ব্যথা শুরু হয়। সঙ্গে থাকা পিজি হাসপাতালের চিকিত্সকের সুপারিশে তাকে পুনরায় অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
আদালতে চিকিত্সকের দেয়া মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়, তারেক রহমানের স্পেশালাইজড অর্থোপেডিক ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন। তার মেরুদণ্ডের কয়েকটি হাড় ভেঙে গেছে এবং কয়েকটি বেঁকে গেছে।

ফলে তাকে বেশিক্ষণ বসিয়ে রাখা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। পরে তারেক রহমানের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের সমন্বয়ে পর্যায়ক্রমে তিনটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। প্রতিটি বোর্ডই দু্রত উন্নত চিকিত্সার জন্য তারেক রহমানকে বিদেশের অর্থোপেডিক, ফিজিওথেরাপি, কার্ডিওলজি ও রেডিওগ্রাফির সুবিধা সংবলিত যে কোনো হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেয়। সংসদ ভবনের বিশেষ আদালত-৩-এর বিচারক শাহেদ নুরউদ্দিনের আদালতে শুনানিকালে তারেক রহমান কয়েকবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও ৬ জুলাই আদালত তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়। ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি মিললেও চিকিত্সার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানো নিয়ে চলতে থাকে নানা টালবাহানা। শেখ হাসিনাকে বিদেশে পাঠাতে রাতের আঁধারে আদালত বসিয়ে টেলিফোন করে বিচারককে বাসা থেকে ডেকে সরকারি আইনজীবীরা অব্যাহতির ব্যবস্থা করেন। কিন্তু তারেক রহমানের বিষয়ে সরকারি আইনজীবীদের ভূমিকায় বিস্ময় প্রকাশ করেন তার আইনজীবীরা। শেষ পর্যন্ত আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভের পরই তারেক রহমান চিকিত্সার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পান।

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মা খালেদা জিয়া কারামুক্ত হয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত শেষে সরাসরি ছুটে যান অসুস্থ ছেলে তারেক রহমানকে দেখতে। পিজি হাসপাতালের বেডে তখন শয্যাশায়ী তারেক রহমান। দীর্ঘ ৫৫৩ দিন পর মা-ছেলের সাক্ষাত্ হয়। সেই আবেগঘন সাক্ষাতের রাতেই তারেক রহমান উন্নত চিকিত্সার জন্য যুক্তরাজ্য যান। লন্ডনে তার চিকিত্সা চলছে। আল্লাহর মেহেরবানিতে তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। দীর্ঘস্থায়ী ও নিয়মিত চিকিত্সা শেষে কতদিনে তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরতে পারবেন—চিকিত্সকরাও তা বলতে পারছেন না।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৫:২৭ | মঙ্গলবার, ০৭ মার্চ ২০১৭

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com