ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর  : বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকে সারাদেশে পঞ্চম দফায় ৮৩ ঘণ্টার রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচিতে সারাদেশের সাথে রাজধানীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নৌপরিবহনমন্ত্রীর ঘোষণা সত্ত্বেও দুরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ছিল। অবরোধের ১ম দিন রাজধানীসহ সারাদেশে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, আগুন,  ককটেল বিস্ফোরণ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক ধরাপাকড়ের ঘটনা ঘটেছে।
রাজধানীতে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় পুরান ঢাকার রায়সা বাজার ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে ১০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় পুলিশ অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
সকাল ১০টার দিকে ধোলাইখাল এলাকায় ১৩টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। সকালে হাতিরপুল এলাকায় ঝটিকা মিছিল থেকে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২ জনকে আটক করে। একই সময় শাহজাদপুরে মিছিল থেকে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে অবরোধকারীরা। সকাল ১০টায় বাড্ডা গুলশান লিংক রোডে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় অবরোধকারীরা।
এদিকে, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সিনিয়র সহ-সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদকে আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে মিছিলের প্রস্তুতি নেয়ার সময় এলিফেন্ট রোড থেকে তাকে আটক করা হয় বলে জানা গেছে। পরে তাকে ডিবির মিন্টো রোডস্থ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের পাবলিক রিলেশন ও মিডিয়া বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান সাংবাদিকদের কাছে আবেদনকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে আবেদের সঙ্গে আরও কাউকে আটক করা হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে কিছু জানাননি তিনি।
রাজধানীর বাইরে সিরাজগঞ্জে দুটি মালবাহী ট্রাকে আগুন, বিচ্ছিন্ন পিকেটিং, পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও সটগানের গুলি ছোড়ে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চনপুর এলাকার জিন্দা পার্কের সামনে সকালে অবরোধকারীরা কয়েকটি গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করে। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার সরারচর রেলস্টেশনের অদূরে রেললাইনের প্রায় ১০০ ফুট ফিসপ্লেট খুলে ফেলে দুর্বৃত্তরা।
জনগণের দাবি আদায় এবং প্রহসনের নির্বাচন বাতিলের দাবিতে ১৮ দলীয় জোটের ডাকা ৫ম দফা টানা অবরোধ শনিবার সকাল ৬টায় শুরু হয়। চলবে মঙ্গলবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত। জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত জাতিসংঘ ও স্বাস্থ্য বিভাগের যানবাহন, সংবাদপত্র ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এ অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে বলে জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ নভেম্বর থেকে রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। এর আগে চতুর্থ দফা অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। প্রথম দফায় ২৬ থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ৭১ ঘণ্টা, এরপর ৩০ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩১ ঘণ্টা, তৃতীয় দফায় ৭ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪৪ ঘণ্টা এবং সর্বশেষ ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টার অবরোধ ডাকা হয়।
রাজধানীর বাইরে অবরোধ কর্মসূচির খবর :
সিলেট : পঞ্চম দফা অবরোধের প্রথম দিন শনিবার সিলেটে মিছিল-সমাবেশ করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে তাদেরকে বেশি সময় রাস্তায় দাঁড়াতে দেয়নি পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল ৯টায় কদমতলী পয়েন্টে বিএনপি’র কয়েকজন নেতাকর্মী জড়ো হন। এসময় পুলিশের সাজোয়া যান সেখানে পৌঁছলে নেতারা সটকে পড়েন।
সকাল ১১টায় কদমতলী পয়েন্টে জড়ো হন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে মিছিল বের করে হুমায়ূন রশীদ চত্বর ঘুরে আবার কদমতলী পয়েন্টে এসে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তৃতা করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি এমএ হক।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কাহের শামীম, মহানগরের সিনিয়র সহ সভাপতি নাসিম হোসাইন, সহ সভাপতি বদরুজ্জামান সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা দলের আহ্বায়ক সালেহ আহমদ খসরু, বিএনপি নেতা তাজরুল ইসলাম তাজুল প্রমুখ।
এদিকে, সকাল সাড়ে ১০টায় ক্বিন ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে মিছিল বের করতে চাইলে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাধা দেয় পুলিশ। পরে কিন ব্রিজের পাশে সমাবেশ করেন তারা।
সমাবেশে বক্তৃতা দেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের আহ্বায়ক সালেহ আহমদ খসরু, জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম ফারুক, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ফরহাদ চৌধুরী শামীম, মহানগর মহিলা দল নেত্রী সালেহা কবীর শেপী, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি আবদুল আহাদ খান জামাল প্রমুখ।
এদিকে নগরীতে মিছিল করেছে মহানগর শিবির। বিকাল ৫টার দিকে নগরীর করিম উল্লাহ মার্কেটের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করে জেল রোডের দিকে যায়।
পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে মহানগর শিবিরের প্রচার সম্পাদক সোহেল আহমদ সহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে মহানগর পুলিশের উপ-সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ আয়ুব।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকাল ৫টার দিকে বন্দরবাজার করিম উল্লাহ মার্কেটের সামনে থেকে ৭০ থেকে ৮০ জন শিবির নেতাকর্মীর একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি জেল রোড পয়েন্টে গিয়ে ৫ থেকে ৭টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। দুইটি সিএনজিও ভাঙচুর করে।
পুলিশ পেছন দিক থেকে তাদের ধাওয়া করে এবং ৬ রাউন্ড টিয়ারশেল ও ১২ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। শিবির কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে ঘটনাস্থল থেকে শিবিরের প্রচার সম্পাদক সোহেল আহমদসহ প্রথমে ৬ জনকে আটক করে। পরে ৩ জন পথচারীকে ছেড়ে দেয়া হয়।
সিরাজগঞ্জ : ৮৩ ঘণ্টা অবরোধের প্রথম দিন জেলায় দুটি মালবাহী ট্রাকে আগুন, বিচ্ছিন্ন পিকেটিং, পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও সটগানের গুলি ছোড়ে।
পুলিশ জানায়, ভোরে যমুনা সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার কোনাগাতিতে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী ধানবোঝাই একটি ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করে অবরোধকারীরা। এ সময় ট্রাকচালক, হেলপার ও এক ধান ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে আহত করে অবরোধকারীরা। এর কিছুক্ষণ পর একই স্থানে ইটবোঝাই আরো একটি ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে অবরোধকারীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ২৫ রাউন্ড টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও সটগানের গুলি নিক্ষেপ করে পুলিশ। পুড়ে যাওয়া ট্রাক দুটি যমুনা সেতু পশ্চিম থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে অবরোধের সমর্থনে উল্লাপাড়া উপজেলার বোয়ালিয়া বাজার, শ্রিখোলা মোড়, সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি বাজার, বহুলি বাজার, শিয়ালকোল বাজার ও চন্ডিদাসগাতীঁ বাজারে ভোর থেকেই বিচ্ছিন্নভাবে পিকেটিং করছে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির কর্মীরা।
শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও মহাসড়কে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ : জেলার বাজিতপুর উপজেলার সরারচর রেলস্টেশনের অদূরে রেললাইন মেরামতের পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। শুক্রবার রাতের কোনো এক সময় জেলার বাজিতপুর উপজেলার সরারচর রেলস্টেশনের অদূরে রেললাইনের প্রায় ১০০ ফুট ফিসপ্লেট খুলে ফেলে অজ্ঞাতরা। ফলে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব-ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
শনিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে রেলকর্মীরা রেললাইন মেরামত করা হলে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
জানা যায়, শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত যেকোনো সময় অজ্ঞাতরা রেললাইনের ফিশপ্লেট খুলে ফেলে। ফলে কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাওয়া এগারোসিন্ধু আন্তঃনগর ট্রেনটি সরারচর রেলস্টেশনে ১ ঘণ্টা আটকা পড়ে। পরে রেললাইন মেরামত করা হলে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : জেলায় নাশকতার অভিযোগে বিএনপি-জামায়াতের ৬ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার পুলিশ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে।
এদিকে অবরোধের কারণে ঢাকা-সিলেট, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, অবরোধে নাশকতা এড়াতে শহরের অন্তত ৪১টি পয়েন্টে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
ঝালকাঠি :  অবরোধ শুরুর পূর্বে শুক্রবার রাতে ঝালকাঠিতে শক্তিশালী হাত বোমা ও ককটেল নিক্ষেপ করেছে অজ্ঞাতরা। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় থেকে শহরে পরপর দুটি শক্তিশালী হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ঘটনায় নির্বাচন অফিসের দায়িত্ব থাকা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২ জনকে গ্রেফতার করেছে। এর একটু পরে শহরে আর একটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার জানান, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২ জনকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রিয়াদ নামে একজনের নাম বললেও অন্য জনের নাম তিনি বলতে পারেননি।
এদিকে ঝালকাঠি জেলার নলছিটিতে সেনাবাহিনী অবস্থান করলেও তাদের ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে অবরোধে আটকে পড়া শতাধিক গাড়ি পুলিশ বিজিবি প্রহরায় পারাপারের সময় অন্তত ৪০টি কোচ ভাঙচুর ও ৮টি কোচে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শিবির কর্মী সুমনসহ ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। অবরোধের প্রথম দিনে দুপুর ১২টায় রংপুর-বগুড়া সড়কের জুনদাহ ও ময়েশপুর এলাকায় ভাঙচুর করে। এবং ১ টার সময় রাইগ্রাম নামক স্থানে ৮টি কোচে আগুন দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিজিবি ও পুলিশ যৌথ উদ্যোগে আটকে পড়া গাড়ি পার করার সময় অবরোধকারীরা গাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ৫০ রাউন্ড টিয়েরশেল নিক্ষেপ করে।
অপর দিকে ময়েশপুরে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ২য় দফা হামলা চালালে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ বেশ কিছ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় হামলাকারারীরা পুলিশ ও গাড়িকে লক্ষ করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। সংষর্ষে পুলিশ ও যাত্রীসহ ৫০ জন আহত হয়।
এ ব্যাপারে পলাশবাড়ী থানার ওসি নাছির উদ্দিন ঘটনা নিশ্চিত করে জানান, অবরোধকারীদের বিছিন্ন করতে ৫০ রাউন্ড শট গান ও ২০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রাজশাহী : পড়ে থাকা ককটেল হাতে নিয়ে বিস্ফোরণে হাতের কবজি উড়ে গেছে পাঁচ বছরের এক শিশুর। আহত শিশুর নাম মাহিদুল ইসলাম। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে নগরীর উপশহর এলাকায় আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আহত শিশু মাহিদুল ইসলামের নানি জানান, উপশহর স্থানীয় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে মাহিদুল ইসলাম অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলছিল। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। আশেপাশের লোকজন বিকট শব্দ পেয়ে সেখানে গিয়ে মাহিদুল ইসলামকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। পরে তাকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ককটেলের আঘাতে শিশু মাহিদুল ইসলামের বাম হাতের কবজি উড়ে গেছে।
শিশু মাহিদুল ইসলাম জানায়, সে আওয়ামী লীগের অফিসের পাশে খেলা করছিল। এ সময় পাশে পড়ে থাকা লালা স্কচটেপে মোড়ানো একটি কৌটা হাতে তোলার সঙ্গে সঙ্গে তা বিস্ফোরিত হয়। এরপর সে আর কিছু জানে না। এরই মধ্যে তার বাম হাতের কব্জি উড়ে যায়।
বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি জিয়াউর রহমান জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। ঘটনা তদন্ত করতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
নীলফামারী : শনিবার নীলফামারীতে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা আর যৌথ বাহিনীর আতংকের মধ্যে দিয়ে পালিত হয়েছে। যৌথবাহিনীর অভিযানে শনিবার নীলফামারী সদরের রামগঞ্জ এলাকা থেকে ১ শিবির কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত শিবির কর্মী জেলা সদরের টুপামারী ইউনিয়নের সুখধন গ্রামের নুর মোল্লার পুত্র আবু তাহের ওরফে তাহেরুল (১৬)। জেলার বিভিন্ন সড়কে চলাচলকারী কয়েকটি মোটর সাইকেল ভাঙচুর করেছে অবরোধকারীরা। বিভিন্ন সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়।
টাঙ্গাইল : জেলায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও মিছিল-সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপিসহ ১৮ দলের ডাকা টানা ৮৩ ঘন্টা অবরোধের প্রথম দিন চলছে। শনিবার ভোরে করটিয়া সা’দত কলেজ ছাত্রদল কর্মীরা মহাসড়কের করটিয়া বাইপাস সড়কে লাঠি হাতে অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় তারা দুইটি পিকআপ ভ্যান, ৩টি সিএসজি অটোরিকসা ভাঙচুর করে। পরে মহাসড়কের উপর টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এতে ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু ও ময়মনসিংহ মহাসড়কে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মহাসড়কের আশেকপুর বাইপাসের উপর বসে অবস্থান নেয়। সেখানেই সমাবেশ করে। মিছিল ও সমাবেশে নেতৃত্ব দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট আহমেদ আযম খান ও সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ সামছুল আলম তোফা।
মহাসড়কের উপর অবস্থান নেয়ায় উত্তরবঙ্গ, বঙ্গবন্ধুসেতু ও ময়মনসিংহসহ ২০টি জেলার সাথে ঢাকার সকল প্রকার যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
অপরদিকে মির্জাপুর ও সখীপুর উপজেলা বিএনপি কর্মীরা মহাসড়কের সোহাগপাড়া এবং গোড়াই বাইপাসের উপর অগ্নিসংযোগ করে অবরোধ সৃষ্টি করেছে। টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ড থেকে কোথাও কোন বাস ছেড়ে যায়নি। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ : অবরোধে ঢাকা-মাওয়া ও ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কসহ জেলার বিভিন্ন সড়কে যাত্রীবাহী বাসসহ যানবাহন চলাচল করেছে। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে চলেছে যাত্রীবাহী বিআরটিসি’র বাসও। একইসাথে যোগ হয়েছে সিটিং সার্ভিস পরিবহনসহ গণপরিবহনগুলো। সচল ছিল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুট।
টানা ৮৩ ঘন্টা অবরোধের প্রথমদিনে মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে ভেঙে ভেঙে চলাচল করেছে যাত্রীরা। শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টার পর মাওয়া চৌরাস্তা থেকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু করে আগের মতোই।
ফেরিতে কিছু দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসও দেখা গেছে।
গজারিয়া হাইওয়ে সড়কের সার্জেন্ট মো. সাইফুল ইসলাম জানান, কুমিল্লা ও গজারিয়া থেকে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে লোকাল বাসসহ যানবাহন চলাচল করেছে।
এদিকে, অবরোধে শহর ছাড়া জেলার কোথাও রাজপথে কোন নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি।
সরেজমিন দেখা গেছে,  টানা ৮৩ ঘন্টা অবরোধের ১ম দিনে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে বাসে এবং মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে লঞ্চ ও সি-বোটের যাত্রীদের চলাচল ছিল চোখে পড়ার মতো।
ঢাকা-মাওয়া সড়কে বিআরটিসি, গ্রেট বিক্রমপুর ভিআইপি, ইলিশ, প্রচেষ্টা, গাঙচিলসহ লোকাল পরিবহন চলাচল করে দিনব্যাপী। এ সময় মাওয়া ঘাট থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ, সি-বোট ও ফেরিগুলো ছেড়ে পদ্মা পাড়ি দিয়েছে বিরামহীনভাবে।
এদিকে, ঢাকা-মাওয়া-খুলনা মহাসড়কে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী যানবাহনগুলো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ছিল। তবে পর্যাপ্ত যানবাহনের অভাবে নৌরুটে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মাত্র ৮ ঘন্টায় মাওয়া প্রান্তে চার শতাধিক যানবাহন পারপার করা হয়। ১৫টি ফেরির মধ্যে ১৪ ফেরি চলাচল করে মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে।
নড়াইল : নড়াইল জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক বাচ্চুকে (৬৫) গ্রেফতারের প্রতিবাদে ও মুক্তির দাবিতে জামায়াত-শিবিরের ডাকে শনিবার নড়াইলে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ও কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে অবরোধ পালিত হয়।
হরতাল চলাকালে সকাল ৭টায় নড়াইল-যশোর-ঢাকা সড়কের তালতলা বাসস্ট্যান্ডে ৫টি ট্রাক ভাঙচুর করেছে হরতালকারীরা।
এছাড়া হরতালের সমর্থনে নড়াইল-মাগুরা সড়কের নড়াইল সরকারি মহিলা কলেজ এলাকা থেকে রেজিস্ট্রি অফিস পর্যন্ত মিছিল করেছে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। পরে পথসভায় বক্তব্য রাখেন নেতাকর্মীরা।
এদিকে হরতালে দূর পাল্ল্ল্লাসহ জেলার অভ্যন্তরীণ ৮টি রুটে বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করেনি। সকালের দিকে দোকানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও বেলা ১২টার পর থেকে দোকানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়।
সুনামগঞ্জ : মিছিল সমাবেশের মধ্য দিয়ে সুনামগঞ্জে পালিত হয়েছে ১৮ দলের প্রথম দিনের নিরূত্তাপ অবরোধ। সরকারের পদত্যাগ, গণহত্যা বন্ধ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে টানা ৮৩ ঘন্টা অবরোধের প্রথম দিন শনিবার সকাল থেকে শহরের ওয়েজখালী, লঞ্চঘাট, ইকবালনগরসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান গ্রহণ করেন জোটের নেতাকর্মীরা।
অবরোধ চলাকালে বিভিন্ন স্থানে খন্ড খন্ড মিছিল করেছে তারা। অবরোধে সুনামগঞ্জ থেকে দূরপাল্লার বাস ও লঞ্চসহ সবধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।