
নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট
জাকাত আরবি শব্দ। অর্থ- পবিত্র হওয়া, পরিশুদ্ধ হওয়া, বৃদ্ধি পাওয়া। পারিভাষিক অর্থে, ধনীদের ধন-সম্পদ থেকে আল্লাহর নির্ধারিত হারে উপযুক্ত ব্যক্তিকে দান করা। জাকাত ইসলামের দৃষ্টিতে অনুদান নয় বরং গরিবের অধিকার।
জাকাত একদিকে দাতার আত্মাকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করে, তার ধন-সম্পদকেও পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র করে দেয়; অন্যদিকে দরিদ্রদের অভাব পূরণে সহায়তা করে এবং সম্পদে ক্রমবৃদ্ধি বয়ে আনে। তাই জাকাত একটি সামাজিক নিরাপত্তার গ্যারান্টি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির অনন্য হাতিয়ার।
তবে এই জাকাত আদায়ের খাতগুলো কী কী? বা কাকে জাকাতা দেওয়া যাবে? এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই জাকাত ফকির, মিসকিন ও সেই সব কর্মচারীর জন্য, যারা সদকা উসুলের কাজে নিয়োজিত এবং যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য। আর দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধ, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের (সাহায্যের) জন্য। এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়’। (সূরা: তওবা, আয়াত: ৬০)
উক্ত আয়াতে আটটি খাতে বা আট শ্রেণির মানুষের মাঝে জাকাতের অর্থ ব্যয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোরআনে উল্লিখিত আট ধরনের লোকদের মধ্যে এক প্রকার হলো, কাফির বা দুর্বল ঈমানের মুসলমানদের মনোরঞ্জনের জন্য জাকাত দেওয়া। হজরত ওমর (রা.) এর শাসনামলে ইসলামের বহুমুখী প্রসার, ইসলামি রাষ্ট্রের সম্প্রসারণ ও মুসলমানদের ব্যাপক শক্তি অর্জিত হওয়ার পর অমুসলিমদের জাকাত দেওয়ার বিধান রহিত হয়ে যায়। ওই সময়ে সব সাহাবায়ে কেরাম হজরত ওমর (রা.) এর এই সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করেন। অবশিষ্ট সাত ধরনের লোক হলো-
(১) ফকির বা অভাবগ্রস্ত: হানাফি মাজহাব মতে, ফকির বলা হয় ওই ব্যক্তিকে, যার মালিকানায় জাকাতের নিসাব পরিমাণ সম্পদ নেই, যদিও ওই ব্যক্তি কর্মক্ষম ও কর্মরত হয়।
(২) মিসকিন বা নিঃস্ব: মিসকিন বলা হয় ওই ব্যক্তিকে, যার মালিকানায় কোনো ধরনের সম্পদ নেই। একটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে যে; নিজের মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি, ফকির-মিসকিন হলেও তাদের জাকাত দেওয়া যাবে না। পক্ষান্তরে নিজের ভাইবোন, চাচা, ফুফু, খালা, মামা, সত্মা, শ্বশুর-শাশুড়ি, জামাতা নিঃস্ব ও অভাবগ্রস্ত হলে তাদের জাকাত দেওয়া যাবে।
(৩) আমেল তথা জাকাতের অর্থ সংগ্রহকারী: ইসলামি সরকারের পক্ষ থেকে জাকাত সংগ্রহে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের আমেল বলা হয়। তাদের সংগৃহীত জাকাতের সম্পদ থেকে বিনিময় দেওয়া বৈধ।
(৪) গোলাম বা দাসমুক্তির জন্য জাকাত দেওয়া: বর্তমানে এই খাতও বিদ্যমান নেই।
(৫) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি: কোনো ব্যক্তি এই পরিমাণ ঋণগ্রস্ত হলে তাকে জাকাত দেওয়া যাবে, যার ঋণ আদায় করার পর তার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ অবশিষ্ট থাকে না।
(৬) আল্লাহর রাস্তায় থাকা ব্যক্তি: যেসব মুসলমান আল্লাহর পথে রয়েছে, তাদের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ-সম্পদ না থাকলে তাদের জাকাত দেওয়া যাবে। বেশিরভাগ উলামায়ে কেরাম ও ইমামের মতে, ‘আল্লাহর রাস্তা’ বলতে এখানে আল্লাহর পথে যুদ্ধরত ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে।
(৭) মুসাফির: কোনো ব্যক্তি যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও কোথাও সফরে এসে সম্পদশূন্য হয়ে পড়ে, তাহলে তাকে বাড়িতে পৌঁছার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জাকাত হিসেবে দেওয়া যাবে।
উল্লিখিত সব খাতে অথবা যেকোনো একটি খাতে জাকাত দিলে তা আদায় হয়ে যাবে। এই খাতগুলো ছাড়া অন্য কোনো খাতে জাকাত দিলে জাকাত আদায় হবে না- সেটি যতই ভালো কাজ হোক না কেন। তাই মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, সেতু ইত্যাদি নির্মাণ এবং কোনো প্রকল্প, যেখানে কোনো ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়- এমন খাতে জাকাতের অর্থ ব্যয় করলে জাকাত আদায় হবে না।
সেটি পুনরায় আদায় করতে হবে। কেননা জাকাত আদায় হওয়ার জন্য কোনো ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেওয়া অপরিহার্য। তবে মাদরাসায় এতিম, অসহায় ও দরিদ্র ছাত্রদের ভরণ-পোষণের জন্য জাকাত দেওয়া যাবে। স্মরণ রাখতে হবে, সমাজের দারিদ্র্যকে ঐশী নিয়মে সমূলে দূরীকরণই জাকাতের কাজ। সাময়িক অভাব পূরণের জন্য জাকাত নয়। সাময়িক অভাব পূরণের জন্য ইসলাম সদকা, ফিতরাসহ অন্যান্য দানের বিধান রেখেছে। তাই দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে পরিকল্পনা অনুযায়ী জাকাত দিতে হবে। জাকাত আদায়ের সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো যাকে জাকাত দেবে, তার মৌলিক অভাব পূরণ করে দিতে চেষ্টা করবে। তাকে যেন আর কাররো কাছে হাত বাড়াতে না হয়।
আল্লাহ সব মুসলিম উম্মাহকে জাকাতের বিষয়ে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন। সূএ: ডেইলি-বাংলাদেশ
Posted ০৯:২৮ | বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain