| সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত কানাডিয়ান হাইকমিশনার হিদার ক্রুডেনের বৈঠক চলাকালে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজেকে ‘দেশের মালিক’ বলে দাবি করেন। গতকাল সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর কক্ষের সামনে থেকে তাকে আটক করা হয়।
বৈঠক চলাকালে ধূসর সোয়েটার পরা, মুখে দাড়িওয়ালা এক মধ্যবয়স্ক লোক মন্ত্রীর কক্ষের সামনে যান। সেখানে দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি দেন তিনি। ভিতরে বৈঠক চলতে দেখে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। কিছুক্ষণ পর ফের ভেতরে উঁকি দিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে অর্থমন্ত্রীকে ডাকতে থাকেন। এ সময় বৈঠক থেকে অর্থমন্ত্রী এসে সজোরে ধমক দেন। ‘ইউ স্টুপিড’। গেট লস্ট বলে তিনি নিজেই আবার দরজা আটকে দেন।
এ সময় শোরগোল শুনে সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন লোকটিকে তাত্ক্ষণিক আটক করে অর্থমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব তানভীর বাশারের রুমে নিয়ে যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তিনি সৌদি আরবের বর্তমান বাদশা আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ আল সউদের পিতার বন্ধু।
সেই লোকটির জন্য কোথাও কোন জায়গা হচ্ছে না। এহেন ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে কোথায় রাখা যায়, তা নিয়ে চিন্তিত পুলিশ।
সমাজসেবা অধিদফতর পুলিশকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা মানসিক রোগীদের পুনবার্সন কেন্দ্রে কোন সিট খালি নেই। তাই বাধ্য হয়ে সেই লোকটিকে শের-ই বাংলা নগরের মানসিক চিকিত্সা কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য আগারগাঁও থানায় পাঠানো হবে।
সেখানেও কোনো জায়গা না হলে তার জন্য অপেক্ষা করছে ভবঘুরে আইনের ৫৭ ধারা। এ ধারায় গ্রেফতার হয়ে শ্রীবাসে যেতে হবে নিজেকে ‘অসাধারণ’ বলে দাবি করা এ তাবত দুনিয়ার মালিককে।
পাস ছাড়া আপনি সচিবালয়ে ঢুকলেন কীভাবে—নিরাপত্তারক্ষীদের এ প্রশ্নে লোকটি বলেন, ‘আমার কোনো পাস লাগে না। আমি মন্ত্রীর কাছে এসেছি একটি মেশিন নিতে। দেশের মালিকের মেশিনটি অর্থমন্ত্রীর কাছে। সেটি নিতে এসেছি।’
কোথা থেকে এসেছেন জানতে চাইলে তিনি কখনও নিজ বাড়ি কুমিল্লা, কখনও কিশোরগঞ্জ বলে দাবি করেন। পরে লোকটিকে নিয়ে যান সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মসিউর রহমান।
এদিকে নিরাপত্তা ভেঙে এভাবে কক্ষে ঢুকে পড়ার কারণে নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করছেন কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘আমি লোকটিকে চিনি না। সে একজন ইতর। তবে আমি নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছি না। কারণ, আল্লাহর মেহেরবানীর কারণেই ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত আমি সুস্থ আছি।’
সন্ধ্যায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মসিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, লোকটির নাম শাকিব। বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদিতে। সে এখনও নিজেকে বাংলাদেশসহ পুরো পৃথিবীর মালিক বলে দাবি করছে। বলছেন, সৌদি আরবের বর্তমান বাদশার বাবা তার বন্ধু। এই ক্ষমতাধর লোকটিকে নিয়ে বেকায়দায় পড়েছি। এখনও সে আমার কাছেই আছে। তার জন্য কোথাও কোনো জায়গা পাচ্ছি না। সমাজসেবা অধিদফতরে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা জানিয়েছে তাদের অধীনে যে মানসিক পুনর্বাসন কেন্দ্র আছে, সেখানে কোনো সিট খালি নেই। এতো ক্ষমতাধর, ওজনদার মানুষকে তো আমি কাঁধে নিয়ে ঘুরতে পারব না। তাই আপাতত আগারগাঁও থানায় যোগাযোগ করেছি। তারা নিয়ে যাতে শের-ই বাংলা নগরের মানসিক চিকিত্সা কেন্দ্রে ভর্তি করায়। ওই হাসপাতালেও জায়গা না হলে তাকে ভবঘুরে ও মানসিক রোগীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ৫৭ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে।’
সচিবালয়ের কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে তিনি কিভাবে ভেতরে ঢুকলেন জানতে চাইলে মসিউর রহমান বলেন, গত তিন মাস ধরেই লোকটি সচিবালয়ে ঢোকার চেষ্টা করেছে। সচিবালয়ের আশপাশে তাকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। অনেকের কাছেই সে পাস চেয়েছে। রোববার হয়তো কোনো ফাঁকে সে ভেতরে ঢুকে গেছে।
Posted ০০:৪৯ | সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin