| মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ | প্রিন্ট
রাজধানীতে আবাসন নিয়ে মহাসঙ্কটে ব্যাচেলররা। তাদের আবাসন সঙ্কট পুঁজি করে চলছে রমরমা ব্যবসা। আবার ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া দিয়ে বিপাকে পড়ছেন বাড়ির মালিকরা। ব্যাচেলর ও বাড়ি মালিকদের এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। নগরজুড়ে বাড়ি ভাড়ার অসংখ্য নোটিশ সাঁটানো থাকলেও সেগুলোতে ব্যাচেলরদের ঠাঁই নেই।
ব্যাচেলরদেরকে মাথা গোঁজার জন্য প্রতিনিয়ত পড়তে হচ্ছে বিপাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মালিকরা বাসাভাড়া দিতে রাজি হন না। কেউ রাজি হলেও দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া, রাতারাতি ভাড়া বাড়ানো ও মাসের শেষদিকে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেন। এমতাবস্থায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগে কাটছে শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ লাখো ব্যাচেলরের জীবন।
জঙ্গি, জেএমবি, হিজবুত তাহরীরসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের কারণে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে যথাযথ খোঁজ-খবর না নিয়ে বাড়ি ভাড়া দিতে বারন করা হচ্ছে। এই অবস্থায় বাড়ির মালিকরা শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।
পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজার এলাকায় ১০ নম্বর হোল্ডিংয়ের ১১১ নম্বর বাড়ির চারতলায় একটি ব্যাচেলার মেসে ৫ বছর ধরে থাকেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মনির উদ্দিন। তিন রুমের ওই বাসায় থাকেন আরো পাঁচজন। এরা সবাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্র।
মনির জানান, গত চার বছর বেশ ভালো কাটলেও গত এক বছরে তিনবার ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। বাসা ছেড়ে দিলে কোথাও পাবো না। তাই বাধ্য হয়েই থাকতে হচ্ছে।
তিনি জানান, নিরাপত্তার জন্য ভাড়াটিয়া ফরম পূরণ করে জাতীয় পরিচয় পত্র, ভার্সিটি আইডি কার্ডের ফটোকপিসহ প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট দিয়েছি। তবুও নিরাপত্তার ধোঁয়া তুলে এই মাসের (জানুয়ারি ২০১৭) বাসা ছাড়ার নির্দেশ দিলেন। অথচ বাড়ির মালিক আমাদের গ্রামের বাড়িতেও বেড়াতে গেছেন।
রাজধানীর ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ২য় বর্ষের ছাত্র জোবায়ের ইহতেশাম। তিনি যাত্রাবাড়ীর নবীনগরের ১২১/এ এর ষষ্ঠ তলায় ছয়জন মিলে তিন রুমের একটি বাসা নিয়ে থাকেন।
জোবায়ের ইহতেশাম জানান, আমাকে এক বছরে ছয় বার বাসা ‘চেঞ্জ’ করতে হয়েছে। ফ্যামিলি ভাড়াটিয়াদের ৮/১০ হাজার টাকায় ভাড়া দেয়া হলেও ঠিক একই বাসা আমাদের নিতে হচ্ছে ১২/১৫ হাজার টাকা দিয়ে। এরপরেও আমাদেরকে বিনা নোটিশে বাসা ছাড়তে বাধ্য করা হয়।
কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, বাড়ির মালিকেরও দু’টি ছেলে আছে। আমরা তো তাদের মতই কোন বাবা-মায়ের সন্তান। আমরা তো সব ডকুমেন্ট দিয়েছি। বাবা-মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দিয়েছি। তবুও কেন আমাদেরকে এত বেশি ভাড়া দিতে হবে?
ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া সম্পর্কে জানতে চাইলে ‘আজিমপুর সমাজ কল্যাণ সমিতি’র সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান জনান, ডিএমপির কঠোর নিষেধাজ্ঞা আছে। কারো বাসায় কোন জঙ্গি ভাড়া দেয়া হলে সম্পূর্ণ দায়ভার বাড়ি মালিকের। তাই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, এলাকায় কোনও ব্যাচেলরকে বাসা ভাড়া দেয়ার যাবে না।
ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহারানে সুলতান বাহার জানান, ব্যাচেলরদের বাসাভাড়া সম্পর্কে একটা নীতিমালা করা জরুরি। এজন্য সরকারের কাছে স্মারকের মাধ্যমে অনেক অনুরোধ জানিয়েছি।
এদিকে, দেশের এমন পরিস্থিতিকে পুঁজি করে ব্যাচেলরদের নিয়ে রমরমা ব্যবসা শুরু করেছেন কিছু অসাধু লোক। তারা স্বল্প টাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে ব্যাচেলরদের কাছে সিট ভাড়া দেন।
সাদিয়া আফরিন নামে এমনই একজন মেস ব্যবসায়ীর সন্ধান পাওয়া যায় রাজধানীর আজিমপুরে। তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। আপনার মেসের সিটভাড়া থেকে কেমন লাভ হয়? সাদিয়া আফরিন এই প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে উল্টো বলেন তাকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই মেসের একজন সদস্য বলেন, ৩ রুমের মেসে আমরা ১৭ জন থাকি। ২ হাজার টাকা করে ১৩ জন এবং ২ হাজার ৭০০ টাকা করে ৪ জন ভাড়া দেই। এ থেকে প্রতিমাসে প্রায় ৩৬ হজার ৮০০ টাকা আসে। এছাড়াও নানা চার্জ দিতে হয় আমাদের।
বাড়ির মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার বাড়িতে সর্বোচ্চ ১৭ হাজার টাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া দেয়া আছে। ১৭ হাজার টাকার বাসায় সাদিয়া আফরিন প্রতিমাসে দ্বিগুণের বেশি মুনাফা করছেন। এই হিসাবের বাইরে নিজের থাকা খাওয়াও সম্পূর্ণ ফ্রি।
ব্যাচেলরদের আবাসনের সঙ্কটকে কাজে লাগিয়ে রাজধানীতে বহু সাদিয়া এ ধরনের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের খপ্পড়ে পড়ে ব্যাচেলরদের প্রতিমাসে গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
Posted ১১:১৪ | মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি ২০১৭
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain