| বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৯ | প্রিন্ট
বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে অন্যান্য পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করার জন্য একটি কমিশন গঠনের বিষয়টি সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও জেল হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। শুধু এ ঘৃণ্য কাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িতরাই নয়, সহায়তাকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে আমরা বদ্ধ পরিকর।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খান (লক্ষ্মীপুর-১)-এর এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চতুর্থবার সরকার গঠন করার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পূর্বে যড়যন্ত্রের ব্যাপারে অনেক তথ্য প্রকাশ পায়। এ সব তথ্য থেকে দেখা যায় পরোক্ষভাবে দেশি-বিদেশি কিছু লোক ও সংস্থা বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মান্তিক ও কলঙ্কিত দিন। এদিন বর্বর ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে আমার বাবা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে শহীদ হন। আমি এদিন হারায় আমার মমতাময়ী মা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবকে। আমার তিন ভাই শেখ জামাল, শেখ কামাল এবং ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেলসহ আমার দুই ভাইয়ের স্ত্রী ঘাতকের বুলেটের আঘাতে নির্মমভাবে শাহাদাৎ বরণ করেন।
বাংলাদেশে ইতিহাসের এটা একটি জঘন্যতম বর্বর হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলখানায় হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। ইতিহাসের সেই খলনায়করা শুধ বঙ্গবন্ধুকে হত্যাই নয়, হত্যা করতে চেয়েছিল পৃথিবার বুকে লাল সবুজের অহঙ্কার নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এ রাষ্ট্রকেও। এমনকি বঙ্গবন্ধু খুনিদের। যাতে বিচারের সম্মুখীন হতে না হয়, সে জন্য খুনি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে অন্যতম জেনারেল জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকাকালীন এসব খুনিদের বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে। এরপর জেনারেল এরশাদ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বহাল রেখে এইসব আত্মস্বীকৃত খুনীদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা অব্যাহত রাখে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। সরকার গঠন করার পর আওয়ামী লীগ সরকার ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার কার্যক্রম শুরু করে। একইসঙ্গে শুরু করা হয় জাতীয় চার নেতার জেলখানার অভ্যন্তরে নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার। কোনো বিশেষ আইনে অথবা কোনো বিশেষ আদালতে তাদের বিচার করা হয়নি। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে প্রচলিত আইনে হত্যাকারীদের বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন এবং আপীল শুনানি শেষে হত্যাকারীদের সাজা ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার কয়েকজন আসামি জেল হত্যা মামলারও আসামি। জেল হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ঘোষিত এবং আপীলসহ বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় উক্ত মামলায় আদালতের রায় অনুযায়ী পাঁচচ জন খুনির দণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া পাঁচ জন আসামির মধ্যে জেল হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ৪ জন আসামি রয়েছে।’
তবে যেসব খুনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে বা আশ্রয় গ্রহণ করে আছে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এ সংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। এখনো যেসব খুনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে এবং আশ্রয় গ্রহণ করে আছে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন। পলাতক আসামি নূর চৌধুরী কীভাবে কানাডায় বসবাস করছেন (লিগ্যাল ট্যাটাস) সে সম্পর্কে তথ্য দিতে কানাডা সরকারকে বাধ্য করতে ফেডারেল কোর্ট অব জাস্টিস-এর আদালতে আবেদন করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ এ বিষয়ে আদালতে শুনানি সম্পন্ন হয়েছে। শুনানি শেষে বিষয়টি আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। পলাতক আসামি রাশেদ চৌধুরীকে আমেরিকা থেকে ফিরিয়ে আনতে কুটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মার্কিন বিচার বিভাগের দ্বারস্থ হতে আইনগত বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সেখানে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, অন্যান্য পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে টাস্কফোর্স কাজ করছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জায়ান চৌধুরীর বাবা মশিউল হক চৌধুরী এখনো জানেন না, তার সন্তান আর নেই।
প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, জায়ান চৌধুরী একটা ছোট্ট বাচ্চা। মাত্র আট বছর বয়স। আজকে সে আমাদের মাঝে নেই। তার বাবাও মৃত্যু শয্যায়। বাবাকে এখনো জানতে দেওয়া হয়নি যে, জায়ান নেই। সে বারবার খুঁজছে। আর তার মা বা পরিবারের অবস্থা বুঝতেই পারেন বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমরা চাই না, এই ধরনের ঘটনা পৃথিবীর কোথাও ঘটুক। এই ধরনের ঘৃণ্য হামলা ঘটকু। আর যারা সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদ, তাদের কোনো ধর্ম নেই। তাদের কোনো দেশ-কাল-পাত্র নেই। জঙ্গি জঙ্গিই, সন্ত্রাসী সন্ত্রাসী। আর ইসলাম ধর্মের নামে যারা করে তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এই পবিত্র সেই ধর্মটাকেই সকল মানব জাতির কাছে হেয় প্রতিপন্ন করে দিচ্ছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং সব ধর্মেই শান্তির কথা বলা আছে। হিন্দু-মুসলমান খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সব ধর্মেই শান্তির কথা বলা আছে। কিন্তু তারপরও কিছু লোক ধর্মীয় উন্মাদনায় তারা যে মানুষের প্রতি আঘাত হানে মানুষের জীবন কেড়ে নেয়, এটা মানবজাতির জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং কষ্টকর।
Posted ২২:০০ | বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৯
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain