রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন : পুলিশের দায়িত্বশীল ভূমিকায় দেশে শান্তি ফিরে এসেছে : প্রধানমন্ত্রী

  |   বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ ২০১৪ | প্রিন্ট

police-shoptaho-udvodon

বাসস : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ পুলিশের নিরলস ভূমিকার প্রশংসা করে বলেছেন, তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকার জন্য দেশে শান্তি ফিরে এসেছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের একটি মডেল রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশসহ দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষই এ সাফল্যের অংশীদার। প্রধানমন্ত্রী গতকাল রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহ ২০১৪-এর উদ্বোধন করেন।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে জনমনে স্বস্তি ও আস্থা ফিরে এসেছে।
কর্তব্যনিষ্ঠার জন্য তিনি পুলিশ সদস্যদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী, জামায়াত-শিবির ও তাদের দোসররা দেশকে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়ার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছিল। তাদের জঙ্গি-সন্ত্রাসী বাহিনী সারাদেশে হরতাল ও অবরোধের নামে ধ্বংসাত্মক ও নাশকতামূলক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছিল। তারা দেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নিশ্চিহ্ন করার হীন ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল।’

পুলিশ সদস্যরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নিরলস পরিশ্রম ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অরাজকতা সৃষ্টি রোধে তারা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। জনমনে স্বস্তি ও আস্থা ফিরিয়ে এনেছে। জনগণের জানমাল রক্ষা করেছে। তা করতে গিয়ে তারা জীবন বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি। এসব ঘটনায় ১৬ জন পুলিশ প্রাণ দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সার্বিক কল্যাণে সম্ভব সবকিছুই করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার পুলিশকে আধুনিক ও জনবান্ধব করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বহুমুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে। ইতোমধ্যেই পুলিশ বিভাগে ৬১৪টি ক্যাডার পদসহ ৩০ হাজার ৮৩৩টি নতুন পদ সৃজন করা হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশ এবং দুটি সিকিউরিটি এন্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। সর্বস্তরের জনগণ এর সুফল পাচ্ছে।

এসআই/সার্জেন্ট পদকে ৩য় শ্রেণীর পদ হতে ২য় শ্রেণী এবং ইন্সপেক্টর পদকে ২য় শ্রেণীর পদ হতে ১ম শ্রেণীর পদে উন্নীত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত আইজিপি’র র্যাংক ব্যাজ পুনঃপ্রবর্তন করা হয়েছে। আইজিপি’র পদকে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় এবং ২টি গ্রেড-২ পদকে গ্রেড-১ পদে উন্নীত করা হয়েছে। এপিবিএন বিশেষায়িত ট্রেনিং সেন্টার গঠন এবং সারাদেশে ৩০টি ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। কনস্টেবল হতে এসআই পর্যন্ত পুলিশ সদস্যদের জন্য ৩০ শতাংশ ঝুঁকিভাতা প্রবর্তন করা হয়েছে। প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং আইন-শৃঙ্খলা খাতে অর্থ বরাদ্দকে সরকার বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

বিশেষ অবদান রাখার জন্য এ বছর ১০৫ জন পুলিশ সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ৩৬ জনকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক ও ৬৯ জনকে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী পুলিশ সদস্যদের মধ্যে চার ধরনের পদক বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম-সেবা), প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম) ও প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা) বিতরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পশ্চাত্মুখী দেশকে উন্নয়নের ধারায় ফিরিয়ে আনতে তার সরকার ২০০৯ সাল থেকে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। গত পাঁচ বছরে দেশের ব্যাপক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো অর্জন, নারীর ক্ষমতায়ন, দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা, জনগণের মৌলিক অধিকার পূরণ, কৃষকের বাড়িগুলোকে খামারে পরিণত করা, যোগাযোগ, দেশকে ডিজিটালকরণসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, একটি সুখী, সমৃদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত জাতি গঠনে আমরা অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি। আমরা প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছি। ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছি। রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও আমরা রফতানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছি। বিদ্যুত্ উত্পাদন প্রায় ১১ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। কর্মসংস্থান, উত্পাদন ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়েছে। অর্থনীতির গতি বেড়েছে। কৃষি উন্নয়নের ফলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।

পুুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের মনোভাব নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে কোনো ত্রুটি ও গাফিলতি সহ্য করা হবে না। তিনি বলেন, জনসেবা নিশ্চিত করতে আমরা থানাগুলো সংস্কার করব। যাতে পুলিশ জনগণের বন্ধু হিসেবে তাদের পাশে থাকতে পারে। যাতে তারা জনগণের সমস্যা আন্তরিকভাবে ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পারে। গ্রামের মানুষের শান্তি নিশ্চিত করতে পারে।

প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকাল জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা অপরাধ সংগঠনে কম্পিউটারসহ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এসব অপরাধ দমনে প্রশিক্ষণ-মডিউল ও কৌশল ঢেলে সাজানো হচ্ছে। চুরি-ডাকাতি, হত্যা-রাহাজানি বন্ধ করার পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, মাদকপাচার, পণ্য চোরাচালান ও নারী-শিশু পাচার প্রতিরোধ, এমনকি জলজ ও বনজ সম্পদ এবং পরিবেশ সংরক্ষণেও পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। পুলিশ বাহিনীকে সেভাবেই গড়ে তোলা হচ্ছে।

‘আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে’— এই আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ জন্য দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা অত্যন্ত জরুরি।’ এ কাজে পুলিশের ভূমিকা মুখ্য উল্লেখ করে তিনি সন্ত্রাস, নাশকতা ও জঙ্গিবাদের মূলোত্পাটনে পুলিশের পাশাপাশি প্রতিটি নাগরিককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, এডিশনাল আইজিপি (প্রশাসন) শহিদুল হক তাকে স্বাগত জানান। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে জাতীয় সালাম প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী একটি খোলা গাড়িতে চড়ে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। কুচকাওয়াজ পরিদর্শন শেষে তিনি পদক বিতরণ করেন। বিএনপি-জামায়াতের হরতাল অবরোধের সময় নিহত পুলিশ সদস্যের স্বজনদের হাতে পদক তুলে দেয়ার সময় তারা কান্নায় ভেঙে পড়লে প্রধানমন্ত্রী তাদের কান্না মুছে দিয়ে সান্ত্বনা দেন।

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচ এম এরশাদ, জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রতিমন্ত্রী এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৩:৩০ | বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com