| সোমবার, ১০ মার্চ ২০১৪ | প্রিন্ট
মেহের আমজাদ, মেহেরপুর থেকে: অর্থকরী ফসল হিসেবে সুখ সাগর নামের উচ্চ ফলনশীল জাতের পিঁয়াজের চাষ করছে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার কৃষকেরা। পূর্বে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে এই পিঁয়াজের বীজ আমদানী করা হলেও এখন নিজেদের উৎপাদিত বীজ দিয়েই মাঠের পর মাঠ পিঁয়াজের চাষ করা হচ্ছে। পিঁয়াজের চাহিদা মেটাতে উচ্চ ফলনশীল জাতের এই পিঁয়াজ বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষনের দাবী করেছেন মুজিবনগরের চাষিরা। এদিকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে পিঁয়াজ আসার কারনে দেশীয় জাতের পিঁয়াজের বাজার দর কমে যাওয়ায় হতাশার মধ্যে রয়েছে পিঁয়াজ চাষিরা। ফলন বেশি হওয়ায় সরকারিভাবে বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষনের জন্য দাবি জানান জেলার পিঁয়াজ চাষিরা।
বেশ কয়েক বছর ধরে মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার মাঠ জুড়ে চাষ হচ্ছে উচ্চ ফলনশীল জাতের সুখ সাগর পিঁয়াজ। আগে এই জাতের বীজ আমদানী করা হত ভারত থেকে। এখন কৃষকেরা নিজস্ব পদ্ধতিতে এ জাতের পিঁয়াজ বীজ উৎপাদন করছে। মেহেরপুর কৃষি অধিদপ্তরের সূত্র মতে চলতি বছরে জেলায় পিঁয়াজ চাষ হয়েছে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে চলতি মৌসুমে মুজিবনগর উপজেলায় উচ্চ ফলনশীল জাতের সুখসাগর পিঁয়াজের চাষ হয়েছে ১ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে। যার হেক্টর প্রতি ফলন হয় ৪০ টন। তবে এবার বিঘাপ্রতি ১৮০ থেকে ২’শ মন পর্যন্ত পিঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। পিঁয়াজের বাম্পার ফলন হলেও বাজর দর কমে যাওয়ায় চাষিরা পড়েছে চরম বিপাকে। দীর্ঘ মেয়াদী সংরক্ষণ সহ দেশ ব্যাপি এ জাতের পিঁয়াজ চাষ ছড়িয়ে দিতে কাঁচামাল সংরক্ষনের হিমাগার সহ এর বীজ উৎপাদনে সরকারি উদ্যেগের দাবী করেছেন অনেকেই। পাশাপাশি পিঁয়াজ চাষিদের লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে এলসির মাধ্যমে পিঁয়াজ আমদানী বন্ধ করারও দাবী জানান জেলার পিঁয়াজ চাষিরা।
মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের পিঁয়াজ চাষি ফিকির মালিথা বলেন, এর আগে ভারত থেকে বীজ সংগ্রহ করে পিঁয়াজ চাষ করলেও এখন উৎপাদিত বীজ দিয়ে আমরা পিঁয়াজ চাষ করি। এতে ফলন আসে দ্বিগুন কিন্তু যখন পিঁয়াজ ওঠার সময় হয় ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা পিঁয়াজ আমদানি করায় দেশীয় জাতের পিঁয়াজের বাজার দাম কমে যাচ্ছে।
মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার গৌরিনগরের পিঁয়াজ চাষি স্বপন বিশ্বাস জানান, পিঁয়াজ চাষ করতে বিঘা প্রতি খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। পিঁয়াজ জমি থেকে উঠিয়ে বাজার জাত করতে লেবার খরচ দিয়ে মোট খরচ হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু উৎপাদিত পিঁয়াজ বাজারে বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠছে না। ঘরে থেকে বিঘাপ্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লোকশান গুনতে হচ্ছে চাষিদের।
মেহেরপু জেলার মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের পিঁয়াজ চাষি রেজাউল হক জানান, বর্তমানে পিঁয়াজের বাজার দর যাচ্ছে ৩’শ টাকা। এই বাজার দরের কারনে চরম ক্ষতির মুখে রয়েছে জেলার পিঁয়াজ চাষিরা। জমি থেকে পিঁয়াজ তোলার সময় হলেও বাজার দর কম থাকার কারনে জমি থেকে পিঁয়াজ তুলতে পারছে না জেলার অধিকাংশ পিঁয়াজ চাষি। ফলে একদিকে বাজার দর কম থাকায় চাষিরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অন্য দিকে জমিতে পিঁয়াজ থাকায় পরবর্তী আবাদে যেতে পারছে না চাষিরা।
সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার গৌরিনগর গ্রামের পিঁয়াজ চাষি আকবর আলী জানান, বাজার দর এভাবে চলতে থাকলে চাষিরা পিঁয়াজ চাষের উৎসাহ হারাবে। অন্য দিকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কমে আসবে। লোকসানের হাত থেকে চাষিতের বাঁচাতে এলসির মাধ্যমে ভারত থেকে পিঁয়াজ আমদানী বন্ধ করতে হবে। এতে দেশীয় পিঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেলে জেলার পিঁয়াজ চাষিরা লাভবান হবে। এবং পিঁয়াজ চাষে আগ্রহ ফিরে পাবে।
মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুফাক্খারুল ইসলাম জানান, পূর্বে এই পিঁয়াজের বীজ ভারত থেকে আনা হলেও কৃষি বিভাগের প্রচেষ্টায় চাষিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এখন নিজস্ব প্রচেষ্টায় মুজিবনগরে বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে। এতে পিঁয়াজের ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরেরর উপ-পরিচালক শেখ ইফতেখার হোসেন জানান, পিঁয়াজের বাজার দর কমে যাওয়ায় চাষিরা পিঁয়াজের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বাজার দর বৃদ্ধি পেলে চাষিরা লাভবান হবে এবং পিঁয়াজ চাষ বৃদ্ধি পাবে।
Posted ১২:২৮ | সোমবার, ১০ মার্চ ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin