| বুধবার, ২১ মে ২০১৪ | প্রিন্ট
২১ মে: পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণের কাজ পাচ্ছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। তাদের আর্থিক প্রস্তাবনা মূল্যায়ন শেষে গত রোববার তা এ-সংক্রান্ত সরকারি ক্রয় কমিটিতে পাঠায় সেতু বিভাগ। তবে নানা জটিলতায় ঠিকাদার নিয়োগ এরই মধ্যে পিছিয়ে গেছে তিন বছর। এতে মূল অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় বাড়ছে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।
২০১০ সালের ১১ মে পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণে প্রাথমিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। চূড়ান্ত মূল্যায়ন শেষে ২০১১ সালের মাঝামাঝি ঠিকাদার নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল। সে সময় মূল সেতুর ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ৯ হাজার ১২৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। তবে বিশ্বব্যাংকের আপত্তিতে ২০১১ সালের আগস্টে প্রকল্পের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এ রকম নানা জটিলতায় প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালের ২৬ জুন চূড়ান্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। আর গত ২৪ এপ্রিল মূল সেতুর আর্থিক প্রস্তাব জমা পড়ে। এতে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা দর প্রস্তাব করে চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি, যা ২০১০ সালে প্রাক্কলিত ব্যয়ের তুলনায় ৩ হাজার ৬ কোটি ২২ লাখ টাকা বেশি।
এ প্রসঙ্গে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ২০১১ সালের মাঝামাঝি পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল অবকাঠামোর ঠিকাদার নিয়োগ দেয়ার কথা থাকলেও তা তিন বছর পিছিয়ে গেছে। ফলে ব্যয়বৃদ্ধি স্বাভাবিক বিষয়। তবে চূড়ান্ত দরপত্র আহ্বানের সময় মূল সেতু নির্মাণে যে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়, তার চেয়ে কম দর প্রস্তাব করেছে চায়না মেজর ব্রিজ।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৬ জুন চূড়ান্ত দরপত্র আহ্বানের পর মূল সেতু নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ১৩ হাজার ৮৮৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি এ ব্যয় প্রাক্কলন করে। এ হিসাবে চায়না মেজর ব্রিজ প্রায় ১২ দশমিক ৬২ শতাংশ বা ১ হাজার ৭৫২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা কম দর প্রস্তাব করেছে। কারিগরিভাবে যোগ্য অন্য দুই প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি করপোরেশন ও ডেলিম-এলঅ্যান্ডটি জেভি আর্থিক প্রস্তাব জমা না দেয়ায় চায়না মেজর ব্রিজের আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়ন শেষে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, ১০টি প্রতিষ্ঠান প্রাক-যোগ্যতা বাছাই দরপত্রে অংশ নিলে পাঁচটি যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। পরে বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্তির কারণে চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানির দরপ্রস্তাব বাতিল করে বাকি চারটি প্রতিষ্ঠানের কাছে চূড়ান্ত দরপত্র আহ্বান করা হয় ২৬ জুন। এতে তিন প্রতিষ্ঠান অংশ নিলে সবই কারিগরিভাবে যোগ্য বিবেচিত হয়। তবে গত ৬ মার্চ আর্থিক প্রস্তাব চাওয়া হলে ২৪ এপ্রিল তা জমা দেয়নি দক্ষিণ কোরিয়ার দুই প্রতিষ্ঠান। ফলে একমাত্র দরদাতা হিসেবে চায়না মেজর ব্রিজকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ক্রয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মনসেল-এইকম ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি)। সে অনুযায়ী, মূল সেতু নির্মাণের জন্য চায়না মেজর ব্রিজকে মোট চুক্তি মূল্যের ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ বা ৩ হাজার ১০৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা দেশী অর্থে ও ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ বা ৯ হাজার ২৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা বৈদেশিক মুদ্রায় (ডলারে) পরিশোধ করতে হবে।
এদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অন্য তিন অংশ জাজিরা সংযোগ সড়ক, মাওয়া সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এলাকা ২-এর নির্মাণকাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। এ তিন অংশের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের প্রতিষ্ঠান এএমএল-এইচসিএম। অংশ তিনটির পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। আর প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
Posted ১০:৫০ | বুধবার, ২১ মে ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin